রাজন-রাকিবের কাছে একখানা চিঠি
লিখেছেন লিখেছেন রাজু আহমেদ ১০ নভেম্বর, ২০১৫, ১১:৫৪:৩২ রাত
প্রিয় ভাই আমার রাজন-রাকিব
****
তোদের কাছে দীর্ঘ চারমাস জিজ্ঞাসা করতে পারিনি তোরা কেমন আছিস । কোন মুখে, কোন সাহসে জিজ্ঞাসা করতাম বল ? পাষন্ডদের নির্মমতায় তোদের হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়েছিলাম । বিশ্বাস কর, তোদের বিরহে প্রতিটা প্রহর অন্তরাত্মা ঘুমরে কেঁদেছে । তোদের সাথে নরপিশাচগুলো যে আচরণ করেছে তাতে মানুষ হিসেবে পরিচয় দিতে লজ্জা হয়েছে । আজ দীর্ঘদিন পর তোদের হত্যাকারীদের শাস্তি ঘোষিত হয়েছে । আজ বল, কেমন আছিস তোরা । ক্ষমা চাওয়ার মত যোগ্যতা কি তোদের অথর্ব ভাইরা অর্জন করতে পেরেছে ? করবিতো আমাদের ক্ষমা ? নাকি এখনো ঘৃণা করবি আমাদের ? ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে মুখ ভার করে বলবি, ‘ভাইয়া খুব পানির পিপাস লেগেছে, একটু পানি দাও । মামা, মরে যাচ্ছি আর বাতাস দিও না ।’
****
ও রাজন ! কে হতিস তুই আমার । অথচ আজ দীর্ঘ চারমাস হল তুই আমার ভাইয়ের স্থান দখল করে নিয়েছিস । তোকে হত্যার ভিডিও দেখে আমার চোখ কোন বাঁধ মানেনি । রীতি, পরিবেশ সব ভুলে গিয়েছিল । তোর হত্যার বিচার চেয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা রাস্তায় দাঁড়িয়েছিলাম, কলম দিয়ে অবিরাম লিখেছিলাম । এসবের বিনিময় নয় বরং শুধু ভ্রাতৃত্বের দোহাইয়ে বল, এবার ক্ষমা করে দিবি । যারা তোকে বেঁধে রড দিয়ে আঘাতের পর আঘাত করে তোর তুলতুলে শরীরটাকে লাল রক্তে রঞ্জিত করেছিল, একটু পানি খেতে চেয়েছিলি বলে যে হায়েনার দল তাকে ঘাম খেতে বলেছিল, যে পাষন্ড দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে অট্টহাসিতে মেতে তোর অসহায় মূহুর্তের ভিডিও করেছিল, কেউ পাড় পায়নি; কেউ না । ওদের ফাঁসির রায় হয়েছে । এ ভাই ! তুই শুনছিস ? নাকি এখনো রাগ করে মুখ ভার করে আছিস । আজ ওদের ফাঁসির রায় হয়েছে । তোকে হারিয়ে যে বিধ্বস্ত অবস্থায় এতদিন কাটিয়েছি তা থেকে আজ কিছুটা হলেও মুক্তি পেয়েছি । শান্তি পাচ্ছি খুব । তুই, বিশ্বাস কর । ওদেরকে ফাঁসিতে ঝুলাবোই । সেই কামরুল যে তোকে মেরে টাকার বিনিময়ে বিদেশে পালিয়ে গিয়েছিল তাকেও মুক্তি দিইনি; দোষী কাউকে না ।
***
প্রিয় রাকিব ! সোনামানিক ভাই আমার ! শুনতে পাচ্ছিস তোকে ডাকছি । আর রাগ করে থাকিস না । তোকে যারা বর্বরভাবে মেরেছিল তাদেরকে আজ শাস্তির পয়গাম শুনেয়েছি । তোর পায়ুপথে যে কম্প্রেসার মেশিন লাগিয়েছি, যে মেশিন চালু করেছিল-কেউ মুক্তি পায়নি; কেউ না । তোর চাঁদমুখে এবার একটু হাসি দে । দেখে পরাণ জুড়াই । ‘মামা, মরে যাচ্ছি । আর বাতাস দিও না’-ভাই তোর এ কথাটি বারবার কানে বাজে আর দিশেহার হয়ে যাই । তুই কি এখন তোর ভাইদেরকে ক্ষমা করে দিবি না ? তুই নিশ্চিত থাক, তোর খুনীরা মুক্তি পাবে না । তোর মায়ের কান্না, তোর বোনের কান্না বৃথা যেতে দেবো না । অতিশীঘ্র খুনীদের শাস্তি কার্যকর হবেই ।
****
প্রিয় রাজন-রাকিব ! তোরা তো প্রভূর কাছে রয়েছিস । নিশ্চয় তার সাথে তোদের খুব ভালো সম্পর্ক হয়েছে । এবার আমাদের কথা একটু তাদের বল । না ! আমাদের নামে বিচার দিস না । তোরা আমাদের আসামীর কাঠঘড়ায় দাঁড় করালে আমাদের মুক্তি নাই । তোরা শুধু তাকে এটুকু বল, মানুষকে সুমতি দিতে । মানুষ যেন কেবল মানুষের মত আচরণ করে । মানুষ যেভাবে পশুসূলভ আচরণে মেতেছে তাতে আমরা অসভ্যতার যুগে প্রবেশ করছি । আমাদের সবকিছু ঢেকে ফেলছে পৈচাশিক কুকর্মে । আমাদের জন্য একটু বলনা ! বলবি তো ? আমরা যেন মানুষ হতে পারি, সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব হিসেবেই থাকতে পারি । তোদের ভাইগুলো যেন মানুষ হয়, আইনের চোখ যেন সাম্য হয়, রাষ্ট্র যেন সুশৃঙ্খল হয় এবং তোদের মত শিশুদের জন্য, সব মানুষের জন্য নিরাপদ হয় ।
***
ইতি,
তোদের ভাই ।
****
বিষয়: বিবিধ
১৪৩৬ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন