বিবাহিত ভাইয়ের কাছে ছোট বোনের চিঠি…..

লিখেছেন লিখেছেন রাজু আহমেদ ৩০ অক্টোবর, ২০১৫, ১০:৪৫:৪৪ সকাল

প্রিয় ভাই আমার….

……

ভালো থাকার প্রকৃত সংজ্ঞা কি তা আমার জানা নাই কিন্তু সবাই ভালো থাকা বলতে যা বোঝাতে চায় তাই যদি ভালো থাকার সংজ্ঞা হয় তবে আমি নিশ্চিত করে জানি তুমি ভালো নেই । তোমার ভালো না থাকার কারনও আমি । এজন্য পারলে ক্ষমা করো । তোমার যোগ্য বোন হতে পারিনি কিংবা চেষ্টাও করিনি বোধহয় । যাইহোক, তোমাকে ভাইয়া বলে সম্বোধন করবো নাকি ভাই বলে তা নিয়ে খুব ভাবনায় পড়েছি সেই কবে থেকে । ভাইয়া আর ভাই-শব্দ দু’টিকে তুমি সমার্থে দেখলেও ভাই এর শেষে শুধু ‘য়’ বর্ণটি যুক্ত হয়ে ভাইয়া শব্দটি আমার কাছে ব্যাপক গুরুত্ববহ । অথচ দূর্ভাগ্যের হলেও আমি তোমাকে ভাইয়া ডাকার অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছি । এ জগতে ভাই অনেক হয় কিন্তু ভাইয়ার সংখ্যা খুব কম । এক মায়ের গর্ভের হওয়ায় ভেবেছিলাম সারাজীবন তুমি আমার ভাইয়া হয়ে থাকবে অথচ আজ তোমাকে খুব দূরের মনে হয় । কখনো কখনো মনে হয় তোমার বোন না হয়ে শালী হতে পারলে বোধহয় আরেকটু ভালো থাকতাম ! আমার এসব কথা পড়ে হয়ত তুমি আমার প্রতি রেগে লাল হয়ে যাচ্ছ কিন্তু সত্যটাকে লুকাবো কোন ভরসায় ?

……

……

মনে পড়ে ভাইয়া ! প্রথমে আমাদের ছেড়ে চলে গেল মা এবং তার কয়েক বছর পর বাবা । বাবা মারা যাওয়ার সময় আমি খুব ছোট ছিলাম । তুমি যে খুব বড় ছিলে তা নয় । আমি সপ্তম শ্রেণীতে পড়তাম আর তুমি একাদশ শ্রেণীতে । আমাদের আপনজন বলতে আর কোন অভিভাবক না থাকায় তখন তোমার কাঁধে আমার আমার সুখ-দুঃখের দায়িত্ব পড়েছিল । বিদায় বেলায় বাবা তোমার হাতকে তার হাতের মুঠোয় চেপে বলেছিল আমার ময়নাকে দেখিস । বাবার কথা শুনে আমি একটু দূরে দাঁড়িয়ে কাঁদছিলাম; তুমিও হাউমাউ করে কাঁদছিলে । বাবা মারা যাওয়ার পর কয়েক বছর আমাকে ছাড়া তুমি ভাত খাওনি । এক প্লেটে ভাত নিয়ে তুমিও খেতে আর আমাকেও খাইয়ে দিতে । তখন আমার চোখের কোনে পানি এসে যেত । মনে পড়ত, সেই ছোট্ট বেলার কথা । যখন মা প্লেটে ভাত নিয়ে তোমাকে, আমাকে আর বাবাকে খাইয়ে দিত । তোমার আদর ভালোবাসায় আমি বাব-মায়ের শুণ্যতা অনুভব করতে পারিনি বহুদিন । অথচ তুমি হঠাৎ করে কেন এতটা পর হয়ে গেলে ?

……

সোনভাই, সংসারের টুকটাক কাজ করা, ঘর পাহারা এবং রান্নাবান্না করার জন্য আমার আর অষ্টম শ্রেণীতে ভর্তি হওয়া হল না । তাতেও আমার কোন দুঃখ নাই । তুমি মানুষ হলে আমাকে যত্নে রাখবে এ আশায় বুক বেঁধে ছিলাম । লেখাপড়া শেষ করে তুমি চাকরি পেলে । বড় ঘর থেকে একটা টুকটুকে ভাবিও নিয়ে এলে । এতে আমার চেয়ে বেশি খুশী কে হয়েছিল বল ? ভাবী আর তোমাকে নিয়ে কত স্বপ্ন ছিল তা তোমাকে বলে বোঝাতে পারবো না । তোমার বিবাহের আগে আমার জন্য সম্বন্ধ এলেও আমি কখনো রাজি হইনি । আমি তোমাকে একা রেখে সুখের ঘরে গিয়ে থাকব এটা দুঃস্বপ্নেও ভাবিনি । আজ তোমাদের আচরণ দেখে আমার আর এক মূহুর্তও তোমাদের সাথে থাকতে ইচ্ছা করে না তবুও আমি যে মেয়ে; আমার ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় এই সামজের কি আসে যায় !

……

লক্ষ্মী ভাই আমার, আমি তোমার সংসারে থাকলে অশান্তি বাড়তেই থাকবে । কাজেই তুমি এতদিন যে ব্যবস্থা করতে চেয়েছিল অথচ আমার নিষেধে করতে পারনি সে ব্যবস্থা করে ফেল । খুব ভালো পরিবার দরকার নাই । তাড়াতাড়ি যেখানে হয় সেখানেই । আমার কারণে ভাবী রাগ করে তার বাপের বাড়ীতে গেলে আমাদের বদনাম হয় । আমাদের ভাই বোনের সম্পর্ক কোনদিন ম্লান হবে না । ভাইয়া না হয়ে থাকতে পারো অন্তত ভাই হিসেবে চিরকাল থাকবে । ভাবী যা বলে সে মতই সিদ্ধান্ত নিও । তুমি ভালো থাকলে আমিও ভালো থাকবো । বিশ্বাস করো, তোমাদের প্রতি কোন রাগ নাই কিংবা ক্ষোভও । নিয়তিকে বদলাতে পারে এমন সাধ্য এ জগতে কার আছে ? যা ঘটছে তার সবটাই নিয়তির অমোঘ বিধান বলে আমি মেনে নিতে পেরেছি; তুমি কেন পারবে না ? ছোটদের ভুল হতেই থাকে; আমিও যেহেতু ছোট তাই ভুল করেছি আর তুমি নিরবে অনেক কষ্ট পেয়েছে । পারলে ক্ষমা করো । ভালো থেকো ভাই !

……….

ইতি,

তোমার কলিজার টুকরো বোন !

পাশের রুম ।

বিষয়: বিবিধ

১৭৭১ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

347809
৩০ অক্টোবর ২০১৫ সকাল ১১:৩৯
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : মর্মস্পর্শি কিন্তু সত্য ঘটনা।
347811
৩০ অক্টোবর ২০১৫ দুপুর ১২:৪৫
আবু জান্নাত লিখেছেন : Crying Crying Crying Day Dreaming Day Dreaming Day Dreaming
347815
৩০ অক্টোবর ২০১৫ দুপুর ০২:১৬
হতভাগা লিখেছেন : এসব অশান্তি মেয়েরাই তৈরি করে এবং এর সাফারিংস হতে মেয়েরাও রক্ষা পায় না ।

বোনটি যে কারণে তার ভাইয়ের কাছে অনুযোগ / অভিযোগ করছে , বিয়ের পর তার ননদও একসময়ে একই অনুযোগ/অভিযোগ করবে তার ভাইয়ের কাছে ।

সমগোত্রীয়দের এই চুকলিবাজির জন্য মেয়েরা নিজেরাই যে সাফার করে সেটা তারা বুঝেও না বোঝার ভান করে । অযথা ভাই/স্বামী/ছেলে সন্তানদের দোষারোপ করে ।

নিজেরা যদি ঠিকঠাক ভাবে মিলমিশ করে চলে তাহলে সংসারে শান্তিই বিরাজ করবে , কারণ সংসারে অশান্তি কেবল মাত্র মেয়েদের আলগা মাতবরীর কারণেই আসে।

সংসার হচ্ছে পুরুষের , সে এখানে একজন মেয়েকে আনে শান্তির জন্য । অশান্তির জন্য নয়।

কারণ জীবিকার কাজে পুরুষদের বাইরেই থাকতে হয় । চুকলিবাজি পুরুষদের ব্যক্তিত্বের সাথে যায় না এবং সংসারের অর্থনৈতিক দিকটাতে দেখভালের জন্য সদা তটস্থ থাকতে হয় বলে এর জন্য তার টাইমও নেই।
347834
৩০ অক্টোবর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:১৫
শেখের পোলা লিখেছেন : বাস্তবে যাই হোক এ চিঠিটা আসলেই মর্মস্পর্শী৷ পৃথিবীর সব ভাইয়েরা সব বোনেদের ভাইয়া হয়েই যেন থাকে৷ ভাইরা বোনেদের অবহেলা করলেও বোনেরা ভাইদের অবহেলা করেনা৷
347840
৩০ অক্টোবর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:৫২
সাদিয়া মুকিম লিখেছেন : আসসালামুআলাইকুম।

মনটা কেঁপে উঠলো!

347890
৩১ অক্টোবর ২০১৫ রাত ০১:৪২
আব্দুল গাফফার লিখেছেন : মর্মস্পর্শী! শেয়ার করার জন্য অনেক ধন্যবাদ
347899
৩১ অক্টোবর ২০১৫ রাত ০৩:৩৬
আফরা লিখেছেন : আমার বাবা নেই আমার ভাইয়ার অনেক আদর পেয়ে বড় হয়েছি । আলহাদুল্লিলাহ ! আমার ভাবী ও অনেক ভাল আমার ভাইয়া ভাইয়াই আছে ।
347933
৩১ অক্টোবর ২০১৫ সকাল ১১:২৮
দ্য স্লেভ লিখেছেন : সকলে এক রকম হয়না। অনেক সময় কারো কাছে আশা অনেক বেশী হলে অল্পতেই আঘাত লাগে। আপনার জন্যে দোয়া রইলো।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File