ডাষ্টবিনে পড়ে থাকা নিথর দেহ
লিখেছেন লিখেছেন রাজু আহমেদ ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ১২:২৪:৪০ রাত
মাঝে মধ্যে খোঁজ মেলে কিছু পরিচয়হীন শিশুর । ডাষ্টবিনের ময়লার মধ্যে, রাস্তার পাশে, মন্দির-মসজিদের সামনে, কিংবা ড্রেনে দেখা যায় সদ্য ভূমিষ্ট জীবন্ত কিংবা মৃত শিশু । অতীতে নাটক-সিনেমার যে সব দেখা যেত সেসব দৃশ্য এখন বাস্তবতায় অহরহ ঘটছে । পিতৃপরিচয়হীন শিশুর ধারণা আমাদের সমাজে যুগ-যুগান্তরজুড়ে পরিচিত থাকলেও কোন শিশু মাতৃপরিচয়হীন হয়ে জন্মাতে পারে না । তবুও ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে অনেক শিশুর কোন পরিচয়ই পাওয়া যায় না । গ্রামে এমন ঘটনা না ঘটলেও শহরের ইট-পাথরের বন্দীশালায় এমন নির্মম ঘটনার সংখ্যা নিছক উপেক্ষা করার মত নয় । পত্রিকার পৃষ্ঠা কিংবা টিভির পর্দায় যখন এমন পরিচয়হীন শিশুর ছবি প্রকাশ পায় তখন মানুষের জৈবিক প্রবৃত্তির মেটানোর নির্মমতা পশুর প্রবৃত্তিকেও হার মানায় ।
…..
মুক্তির সংগ্রামের বছর আমাদের অসংখ্য মা-বোন শত শত পিতৃপরিচয়হীন শিশুর জন্ম দিয়েছিল । সেটা ছিল দূর্ঘটনা । তখন আমাদের কিছুই করার ছিল না । পাকিস্তানী হায়েনাগোষ্ঠী এবং তাদের এদেশীয় দোসসরা আমাদের মা-বোনকে উপর্যপুরি ধর্ষণ করেছে, খুবলে খেয়েছে । ফলাফলে স্বাধীনতার সাথে আমরা উপহার পেয়েছিলাম তেমন অসংখ্য যুদ্ধশিশু । কিন্তু দেশে এখন যা ঘটছে তা কিসের লক্ষণ ?
……
ক্ষণিকের উচ্ছ্বাস, মোহ মেটাতে গিয়ে যে অবৈধ শিশুর জন্ম হচ্ছে তার ভাগ্য ময়লার স্তুপে চাপা পড়ে যাবে কেন ? কাকে দোষ দেব আর কাকে নয়-তা ভেবেই মিলাতে পারছি না । পুতুলের মত ফুটফুটে দেহ, যে দেহ মায়ের নিরাপদ আদরের আঁচলে জড়িয়ে থাকার অধিকার নিয়ে পৃথীবিতে আসে সেই দেহটি যখন কাক-কুকুরে ছিঁড়ে খায় তখন এর অভিশাপ কার ওপর বর্তাবে ? পশুর জৈবিক বৃত্তি পূরণের পদ্ধতিও তো মানুষের চেয়ে উত্তম দেখছি । মূহুর্তের কথিত ভালোবাসার এই কি উপহার ? নিজেদের অপকর্মের বলি হয়ে কেন জন্মাবে নিষ্পাপ মুখ ?
………
যিনি মায়ের জাতি তিনি কেমনে পারেন তার কলিজা ছেঁড়া ধণকে রাস্তায় ফেলে দিয়ে আসতে কিংবা ফেলে আসার উপলক্ষ্য তৈরি করতে ? আবার কোন মা হয়ত, তার অভিভাবকদের এ ঘৃণ্য-জঘন্য ঘটনার জন্য দায়ী করবেন কিন্তু যে কারণে একটি অবৈধ সন্তান পৃথিবীতে আসার উপলক্ষ্য তৈরি হয় সেটা থেকে দূরে থাকা হয়নি কেন ? রক্তের অস্থায়ী অনুরণন কেন নারী-পুরুষকে অবৈধ কাজে প্রলুব্ধ করবে ? শিক্ষা-সংস্কার কেন ক্ষণিকের মোহের কাছে হার মনে যাবে ? বিবেকের কৈফিয়ত কোন নিরব হয়ে রবে ? যদি মানুষের নীতিশক্তি হেরে যায় তবে মানুষ আর পশুর মধ্যে পার্থক্য কোথায় ? ভাদ্র মাসে রাস্তার পরিচিত-অপরিচিত কুকুরগুলো বংশবৃদ্ধিতে মন দেয় কিন্তু তেমন আচরণ তো মানুষের দ্বারা সংগঠিত হতে পারে না । ধর্ম-সমাজ স্বীকৃত পন্থা মানুষ কেন নিজের জন্য বাধ্যতামূলক পালনীয় বানাচ্ছে না । যৌনাচার যখন সবকিছুকে গ্রাস করে নিচ্ছে তখন এ জাতিকে অসংখ্য পরিচয়হীন শিশুর ভার বইতে হবে কিন্তু সে নিষ্পাপ শিশুগুলোকে দোষ দেওয়া হবে কেন ? পৃথিবীর সকল ঘৃণা পতিত হোক সেই সকল নারী-পুরুষের প্রতি যারা নিজেদের অবৈধ আকাঙ্খা পূরণ করতে গিয়ে শিশুর জীবনকে অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলছে এবং ইচ্ছাকৃত তাদের হত্যা করছে ।
…….
ধর্মের শাস্তির কথা না হয় বাদ দিলাম কিন্তু বিবেকের শাস্তি থেকে এই সম্প্রদায় কি কোন কালে মুক্তি পাবে ? অকৃতজ্ঞ পুরুষ জাতি হয়ত মনে রাখবে না সেই চরম পুলকালীন সময়ের কথা কিন্তু যেই মায়ের জঠরে একটি শিশু একাধিক মাস লালিত হয়েছে এবং মা অসহ্য প্রসব বেদনা সহ্য করে যে শিশুকে জীবিত কিংবা মৃত অবস্থায় পৃথিবীতে এনেছে সেই শিশুকে ভুলে যাওয়া কোন মায়ের পক্ষে সম্ভব কি ? কাজেই অবৈধ মনোস্কামনা পূরণের ক্ষেত্রে পুরুষের চেয়ে নারীকে বেশি সচেতন ও সাবধান থাকতে হবে । ধর্মীয় অনুশাসন ও সামাজিক রীতি মেনে স্বীকৃত পন্থায় জৈবিক চাহিদা পূরণ ও সন্তান উৎপাদনের ক্ষেত্র তৈরি হওয়া অত্যাবশ্যক । কয়েক মিনিটের রতিক্রিয়া হয়ত কোন নারী-পুরুষকে ভবিষ্যতে অনুশোচিত করে না কিন্তু এর ফল সরূপ অনাকাঙ্খিতভাবে যে সন্তানটি পৃথিবীতে চলে আসে, প্রতিকূল পরিবেশে সে শিশুটির বেড়ে ওঠা কিংবা মরে যাওয়ার দায়ভার অবশ্যই সেই নারী-পুরুষের, যাদের অপকর্মের সৃষ্টি এ নিষ্পাপ সন্তান । কোন ডাষ্টবিন কিংবা অন্য কোথাও যেন সদ্য ভূমিষ্ট কোন পরিচয়হীন শিশু পড়ে থাকার দৃশ্য দেখতে চাইনা কিংবা তাদের কান্নার ধ্বনি-প্রতিধ্বনি আর শুনতে চাইনা । যা কিছু অবৈধ-অন্যায় তা ত্যাগ করে বৈধ-ন্যায়ের চর্চায় মনোযোগী হলে নিজেরা যেমন ভালো থাকা যাবে তেমনি সমাজকেও ভালো রাখা যাবে ।
রাজু আহমেদ । কলামিষ্ট ।
facebook.com/rajucolumnist/
বিষয়: বিবিধ
৮৫০ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন