বাঙালীর প্রাণ বৈশাখী মেলার ঐতিহ্য

লিখেছেন লিখেছেন রাজু আহমেদ ১৩ এপ্রিল, ২০১৫, ০২:৫৪:১৬ দুপুর

‘এ বুঝি বৈশাখ এলেই শুনি মেলায় যাইরে,

বাসন্তী রঙ শাড়ি পড়ে ললনারা হেটে যায়,

বখাটে ছেলের ভীড়ে ললনাদের রেহাই নাই’ ।।

-মাকসুদুল হক ।

বাঙালী এবং বৈশাখী মেলা একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিট । বাঙালী তার নিজস্ব জাতি সত্ত্বার অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখার জন্য যতগুলো উৎসব পালন করে তার মধ্যে বৈশাখ বরণ বা বাংলা সনকে বরণ অন্যতম । বৈশাখ বরণের সাথে যে অনুষ্ঠানটি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত তা হল বাঙালীর ঐতিহ্যবাহী বৈশাখী মেলা । মূলত সমগ্র বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিম বঙ্গে বৈশাখ মাসের পহেলা দিন থেকে একযোগে যে মেলা অনুষ্ঠিত হয় তাকেই বৈশাখী মেলা বলা হয় । পয়েলা বৈশাখ উপলক্ষ্যে যে সকল অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয় তার মধ্যে যেমন পান্তা-ইলিশ থাকে তেমনি মেলাও বসে । এ মেলায় শুধু দু’ই বাঙলার তরুন-তরুনীরাই অংশগ্রহন করে না বরং যে সকল মানুষেরা বাঙালীত্বকে হৃদয়ে লালন করে, বাঙালীর কৃষ্টি-কালচার এবং ঐহিত্যকে ভালবাসে তারা সবাই বৈশাখী মেলায় অংশ গ্রহন করে । তাইতো দেখা যায় বৈশাখী মেলায় অংশগ্রহনকারীরা বিভিন্ন বয়সের হয়ে থাকেন । এখানে বয়স কোন বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না । বৈশাখি মেলার মাধ্যমে বাঙালীদের মধ্যে একটি মেল বন্ধনের সুতিকাগার রচিত হয় । সকল ভেদাভেদ ভূলে বাঙালীরা তাদের প্রকৃত সংস্কৃতিকে লালন এবং ধারণ করার শপথে আগুয়ান হয় । এ মেলা যেমন দেশীয় পরিমন্ডলের মধ্যে বাঙালীকে ঐক্যবদ্ধ হতে সাহায্য করে তেমনি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাঙালীকে তাদের নিজস্ব সংস্কৃতির সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় । যে কারনে বাঙালীকে বিশ্ববাসী স্বতন্ত্র জাতি হিসেবে, নিজস্ব স ংস্কৃতির ধারক হিসেবে আজও সম্মান করে । ১৫৮৬ খ্রিষ্টাব্দের ৫ই নভেম্বর থেকে হিজরী, চন্দ্রাসন ভ্যতা ও স ও ইংরেজী সৌরসনকে ভিত্তি করে বংলা সন প্রবর্তিত হয় । নতুন সনটি প্রথমে ফসলি সন নামে পরিচিত থাকলেও পরবর্তীতে তা বঙ্গাব্দ নামে পরিচিতি পায় । তাই বলা যায় বংলা নববর্ষ যেহেতু স¤্রাট আকবরের সময় থেকে পালন করা হত এবং সে সময় বাংলার কৃষকরা চৈত্রমাসের শেষদিন পর্যন্ত জমিদার, তালুকদার, এবং অন্যান্য ভূ-স্বামীদের খাজনা পরিশোধ করত । এ উপলক্ষ্যে তখন মেলা এবং অন্যান্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হতো । পরবর্তীতে বৈশাখ উপলক্ষে যে মেলার আয়োজন করা হত সে মেলাকে ‘বৈশাখী মেলা’ নামে নামকরণ করা হয় । সুতরাং বৈশাখী মেলার সূচনার সঠিক তারিখ নির্ধারিত করা না গেলেও এ মেলা যে বাংলা বঙ্গাব্দ পালনের সূচনা থেকেই সূচিত হয়েছে তাতে সন্দেহ থাকার খুব বেশি অবকাশ নাই ।

বাংলা নববর্ষের মূল আকর্ষণ বৈশাখী মেলা । মূলত নতুন বছর বরণকে উৎসবমূখর করে তোলে এ মেলা । বৈশাখী মেলা মূলত সার্বজনীন লোকজ মেলা হিসেবে স্বীকৃত । এ মেলা অত্যন্ত আনন্দঘন হয়ে থাকে । উপস্থিত দর্শকদের আনন্দ দেয়ার জন্য নানাবিধ আয়োজন করা হয় । এ সব আয়োজনের মধ্যে স্থানীয় কৃষিজাত দ্রব্য কারুপণ্য, লোকশিল্পজাত পণ্য, কুটির শিল্পজাত সামগ্রী, সকল প্রকার হস্ত শিল্পজাত ও মৃৎশিল্পজাত সামগ্র উপস্থিত করার রেওয়াজ রয়েছে। এছাড়া শিশু-কিশোরদের খেলনা, মহিলাদের সাজ-সজ্জার সামগ্রী ইত্যাদি এবং বিভিন্ন লোকজ খাদ্যদ্রব্য যেমন ঃ চিড়া, মুড়ি-মুড়কি, খৈ, বাতাসা ইত্যাদি বিভিন্ন প্রকার মিষ্টি প্রভৃতির বৈচিত্র্যময় খাবারের সমারোহ থাকে । মেলায় বিনোদনেরও ব্যবস্থা থাকে । বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের লোকগায়ক ও লোকনর্তকদের উপস্থিত করা হয় । তাঁরা যাত্রা, পালাগান, কবিগান, জারিগান, গম্ভীরাগান, গাজীর গানসহ বিভিন্ন ধরনের লোকসংগীত, বাউল-মারফতি-মুর্শিদি-ভাটিয়ালী ইত্যাদি বিভিন্ন আঞ্চলিক গান পরিবেশন করেন । লাইলী-মজনু, ইউসুফ-জোলেখা, রাধা-কৃষ্ণ প্রভৃতি আখ্যানও উপস্থাপিত হয় । চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, নাটক, পুতুল নাচ, নাগরদোলা, সার্কাস ইত্যাদি বৈশাখী মেলার বিশেষ আকর্ষণ । এছাড়া শিশু-কিশোরদের আকর্ষণের জন্য থাকে বায়োস্কোপ । শহরাঞ্চলে নগর সংস্কৃতির আমেজে এখনও বৈশাখী মেলা বসে এবং এই মেলা বাঙালীদের কাছে এক আনাবিল আনন্দের মেলায় পরিণত হয় । বৈশাখী মেলা বাঙালীর আনন্দঘন লোকায়ত সংস্কৃতির ধারক । বৈশাখ বরণ উপলক্ষে এবং বিনোদন দেয়ার মানসে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে বৈশাখী মেলার প্রচলন আছে । তবে এমন অনেকগুলো স্থান রয়েছে যেখানে শতাব্দীর পর শতাব্দীধরে বৈশাখী মেলা বসছে এবং সে স্থানগুলো দেশাবাসীর কাছে বিখ্যাতির মর্যাদা পেয়েছে । বৈশাখী মেলা বসায় যে স্থানগুলো সবার কাছে পরিচিতি পেয়েছে তার সংখ্যাও নেহাত কম নয় । এ সকল বিখ্যাত স্থানের মধ্যে কয়েকটি হল-নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, সাভার, রংপুরের পায়রাবন্দ, দিনাজপুরের ফুলছুড়ি ঘাট এলাকা, মহাস্থানগড়, কুমিল্লার লাঙ্গলকোট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, মহেশপুর, খুলনার সাতগাছি, ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইল অঞ্চল,সিলেটের জাফলং, মণিপুর, বরিশালের ব্যাসকাঠি-বাটনাতলা, গোপলগঞ্জ, মাদারীপুর, টুঙ্গিপারা, মুজিবনগর এলাকা ইত্যাদি ।

বৈশাখী মেলার ঐতিহ্য বহু প্রাচীন । বৈশাখী মেলা বাঙ্গালী সংস্কৃতির একটি খুবই পুরনো অনুষঙ্গ এবং ইতোমধ্যে তা আমাদের অন্যতম লোকঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে । এক সময় গ্রামাঞ্চলে ৩০শে চৈত্র অর্থ্যাৎ চৈত্রসংক্রান্তিতে যে মেলার আয়োজন করা হতো, সেটাই ক্রমান্বয়ে বৈশাখী মেলার রুপ ধারন করেছে । পরে রবীন্দ্রনাথের উদ্যোগে ও স্পর্শে তা আরও মনোগ্রাহী ও দৃষ্টিনন্দন হয়ে ওঠে এবং বর্তমানে তা বাঙ্গালীর অন্যতম ও সর্বজনীন জাতীয় উৎসবে পরিনত হয়েছে । বৈশাখী মেলার প্রচলন গ্রাম থেকে শুরু হলেও এর আয়োজন এবং এতে অংশগ্রহনের ব্যাপ্তি এখন নাগরিক সমাজের মধ্যেই অধিকতর প্রবল । তাই বলে গ্রামীণ পরিমন্ডল থেকে তা পুরোপুরি হারিয়ে গেছে, এমনিটও বলা যাবে না । তবে বৈশিষ্ঠ্যগতভাবে গ্রামীন বৈশাখী মেলা এখন যতটা না লোকজ উৎসব, তার চেয়ে অনেক বেশি অর্থনৈতিক কর্মকান্ড দ্বার নিয়ন্ত্রিত ব্যবসায়িক উপলক্ষ্য । অবশ্য ইতিবাচকভাবে দেখলে এটাও বলা যায়, বৈশাখী মেলার সঙ্গে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড যুক্ত হওয়ার ফলে এর জৌলুসই শুধু বাড়েনি, ক্রমশ এর ব্যপ্তিও সম্প্রসারিত হচ্ছে । ধারণা করা চলে, তৃনমূল পর্যায়ে মানুষের দৈনন্দিন গেরস্থালির সঙ্গে নিবিড়ভাবে সম্পর্কিত এসব অর্থনৈতিক অনুষঙ্গের কারনেই হয়তো বৈশাখী মেলা দিনে দিনে আরও শক্তভিত্তির ওপর দাঁড়াতে এবং সর্বজননীনতার আরও উচ্চতর মাত্রা অর্জনে সক্ষম হবে । নববর্ষ উদযাপনের অংশ হিসেবে বর্তমানে যে বৈশাখী মেলার আয়োজন হয়ে থাকে, সেখানে উৎসবের আমেজটাই মূখ্য এবং সেটা দোষেরও কিছু নয় বরং বলা চলে, নববর্ষ উদযাপনই হচ্ছে বাঙ্গালীর সবচেয়ে বড় অসাম্প্রদায়িক ও সার্বজনীন উৎসব । ফলে এ উৎসবের জৌলুস ও ঔজ্জ্বল্য বস্তুত আমাদের জাতিগত মর্যাদার প্রতীক । বৈশাখী মেলা এক সময় মূলত গ্রামীণ সংস্কৃতির অংশ হিসেবে ঐতিহ্যবাহী লোকজ উৎসব হিসেবে যাত্রা শুরু করলেও এখন তা শহরেই অধিক জৌলুস ও ঔজ্জ্বল্য নিয়ে উদযাপিত হচ্ছে । নাগরিক চরিত্র ও বৈশিষ্ট্যের কারনে শহরে বৈশাখী মেলার সে জৌলুস ও ঔজ্জ্বল্য হয়ত ক্রমশ আরও বৃদ্ধি পাবে । পাশাপাশি এটাও খেয়াল রাখতে হবে, এটি যেন শিকড় বিচ্ছিন্ন হয়ে না পড়ে । অর্থ্যাৎ গ্রামীণ বৈশাখী মেলাগুলো যেন আবার স্বরুপে ফিরে আসতে পারে, সে ব্যাপারে রাষ্ট্রীয়ভাবে উদ্যোগ গ্রহন করতে হবে ।

কী মজা ! কী মজা ! নাগরদোলা, মাটির পুতুল, বাঁশের বাঁশি, চরকির মজার সঙ্গে বাতাসা, কদমা, মুড়কি, গজা, মুরালির মতো লোভনীয় খাবারের টানে মেলায় যাই অনেকে । তবে বৈশাখী মেলায় এমন কিছু আকর্ষণ আছে যা শিশু কিশোর থেকে শুরু করে আবাল-বৃদ্ধ-ভণিতার সবাইকে মেলায় টানে । এমন কিছু আকর্ষনের মধ্যে থেকে কয়েকটি হল-

* মাটির পুতুল : বৈশাখী মেলায় মাটির পুতুল কিন্তু থাকবেই । মানুষের আদলে গড়া রঙিন পুতুল সহজেই নজর কাড়ে মেলায় । কত রকমের পুতুল ! প্রথমে কাঁচা মাটি দিয়ে পুতুল বানিয়ে আগুনে পোড়ানো হয় । তারপর রং করে মেলায় আনা হয় । নানা রঙের নানা পুতুল । মেয়েরা এসব পুতুল দিয়ে পুতুল খেলে । পুতুলকে সাজায় । পুতুলের সাথে পুতুলকে বিয়ে দেয় । শ্বশুড়বাড়ী পাঠায় আবার নিয়ে আসে । কেউ আবার পুতুল দিয়ে ঘর সাজায় ।

* বাঁশের বাঁশি : চিকন একখন্ড বাঁশ দিয়ে তৈরি করা হয় বাঁশি । বাঁশ রোদ্রে শুঁকিয়ে মাপ মত কেটে নেওয়া হয় । এর পর টুকরোগুলো মসৃণ করে আগুনে পোড়ানো লোহার শলাকা দিয়ে ছিদ্র করা হয় । ব্যস ! হয়ে যায় বাঁশি । কিছু বাঁশিতে আবার নঁকশাও আঁকা হয় । শিশুদের ঠোঁটে বাঁশির পোঁ পোঁ শব্দে মুখরিত হয় থাকে মেলা ।

* বাতাসা : মিষ্টি স্বাদের খাবার বাতাসা । শিশুদের কাছে খুবই মজার খাবার এটি । একসময় কোন শুভ কাজে বাতাসা বিতরণের প্রচলন ছিল । এখন আর তেমন দেখা যায় না । তবে মেলায় গেলে বাতাসা মিলবেই । আর এখন বাতাসা তৈরি হয় চিনি দিয়ে । একটা সময় বাতাসা ছিল কয়েনের আকারের মত এক টুকরো গুড় । গুড়ের বাতাসা এখন আর চোখে পড়ে না ।

* মুড়কি : মুড়কি হচ্ছে খই আর গুড়ে মেশানো এক ধরনের খাবার । বেশ মজার বটে ! তবে একে খইয়ের মোয়া বলা যাবে না । মুড়কি তৈরি করতে প্রয়োজন হয় বিন্নি ধানের খই আর গুড় । আগুনে গুড় জাল দিয়ে হলুদ রং মিশিয়ে তার উপর খই ঢেলে দেয়া হয় । একটু নাড়ার পর হয়ে যায় মুড়কি । মুড়কি একসাথে শক্ত করে লাগান থাকে । সেখান থেকে কেটে কেটে বিক্রয় করা হয় ।

* গজা : কেহ এটাকে আঙুল গজাও বলেন । কেননা দেখতে এটা অনেকটা হাতের আঙুলের আকৃতির । মেলার আরও একটি অন্যতম মজার খাবার হল গজা । দেখতে অনেকটা মুরালির মত । লবন, ময়দা আর তেল মিশিয়ে তেলে ভেজে গজা তৈরি করা হয় । ময়দা গুলে পুরো রুটির মত তৈরি করা হয় । সেটা টুকরো টুকরো করে তেলে ভাজা হয় । তেল থেকে তুলতেই হয়ে যায় গজা ! কোথাও কোথও তেল থেকে তুলে আবার চিনির রসে ভেজানো হয় গজা । ওটা মিষ্টি গজা ।

বৈশাখী মেলার বিশেষ আকর্ষণ বউমেলা । বার ভূঁঈয়া প্রধান ঈশা খাঁর সোনারগাঁয় বৈশাখ উপলক্ষ্যে এক ব্যতিক্রমী মেলা বসে । যা বউমেলা নামে প্রসিদ্ধ । জয়রামপুর গ্রামের মানুষের ধারণা, প্রায় ১০০ বছর ধরে পয়লা বৈশাখে শুরু হওয়া এই মেলা পাঁচ দিনব্যাপী চলে । প্রাচীন একটি বটবৃক্ষের নিচে এই মেলা বসে, যদিও সনাতন ধর্মাবলম্বীরা সিদ্ধেশ্বরী দেবীর পুঁজো হিসেবে এখানে সমবেত হয় । বিশেষ করে কুমারী, নববধূ, এমনকি জননীরা পর্যন্ত তাঁদের মনস্কামনা পূরণের আশায় এই মেলায় এসে পূজা-অর্চনা করেন । সন্দেশ-মিষ্টি-ধান দূর্বার সঙ্গে মৌসুমী ফলমূল নিবেদন করে ভক্তকূল । পাঁঠাবলির রেওয়াজও পুরনো । বদলে যাচ্ছে পুরনো অর্চনার পালা । এখন কপোত-কপোতী শান্তির বার্তা পেতে চায় দেবীর কাছ থেকে । বউমেলায় কাঙ্খিত মানুষের খোঁজে কাঙ্খিত মানসীর প্রার্থনা কিংবা গান্ধর্ব প্রণয়ও যে ঘটে না সবার অলক্ষ্যে, তা কে বলতে পারবে ?

বৈশাখ উপলক্ষ্যে ঘোড়ামেলা যেন মেলার আকর্ষণ বহুগুনে বাড়িয়ে দেয় । বউমেলা ছাড়াও সোনারগাঁ থানার পেরাব গ্রামের পাশে আরেকটি মেলায় আয়োজন করা হয় ঘোড়ামেলা নামে। লোকমূখে প্রচলিত জামিনী সাধক নামের এক ব্যক্তি ঘোড়ায় করে এসে নববর্ষের এই দিনে সবাইকে প্রসাদ বিতরণ করতেন । তিনি মারা যাওয়ার পর ওই স্থানেই তার স্মৃতিস্তম্ভ নির্মান করা হয় । প্রতিবছর পহেলা বৈশাখে তার স্মৃতিস্তম্ভে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা একটি করে মাটির ঘোড়া রাখে এবং এখানে মেলার আয়োজন করা হয় । এ কারনে লোকমূখে প্রচলিত মেলাটির নাম ঘোড়ামেলা । এ মেলার অন্যতম আকর্ষন হচ্ছে নৌকায় খিচুড়ি রান্না করে রাখা হয় এবং আবাল-বৃদ্ধ-ভনিতা সবাই কলাপাতায় আনন্দের সঙ্গে ভোজন করে । সকাল থেকেই এ স্থানে লোকজনের আগমন ঘটতে থাকে । শিশু-কিশোররা সকল থেকেই উদগ্রীব হয়ে থাকে মেলায় উপস্থিত হওয়ার জন্য । একদিনের এ মেলাটি জমে ওঠে দুপুরের পর থেকে । হাজারো লোকের সমাগম ঘটে । যদিও সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কারনে এ মেলার আয়োজন করা হয় । তথাপি সব ধর্মের লোকজনেরই প্রাধান্য থাকে এ মেলায় । এ মেলায় শিশু-কিশোরদের ভিড় বেশি থাকে । মেলায় নাগরদোলা, পুতুল নাচ ও সার্কাসের আয়োজন করা হয় । নানারকম আনন্দ-উৎসব করে পশ্চিমের আকাশ যখন রক্তিম আলোয় সজ্জিত উৎসবে, যখন লোকজন অনেকটাই ক্লান্ত, তখনই এ মেলার ক্লান্তি দূর করার জন্য নতুন মাত্রায় যোগ হয় কীর্তন । এ কীর্তন চলে মধ্যরাত পর্যন্ত । এভাবেই শেষ হয় বৈশাখের এই ঐতিহ্যবাহী মেলা ।

কবির ভাষায়- ‘ঋতুরাজ বসন্ত শেষে এল বৈশাখী মেলা /রাবণের চিতা ভুলে সবে মিলেমিশে খেলছে নতুন খেলা /অতীতের যাতনা যত সব ভুলে গিয়ে/হয়রান হয়েছে সবে/ যে যার মতো মেলা নিয়ে/ যাতনা পরে না এখন আর কারোর মনে/ প্রফুল্লিত হয়ে ছুটছে সর্বজন মেলায় এই দিনে/ মনের শ্রান্তি দূর করে নরগণ আজ এ সাঁঝের বেলা/ দেখতে যাবে তারা তখন পুষ্প সজ্জিত বৈশাখী মেলা/ মেলা শেষে আসবে তারা গভীর রাত্রি করে/ প্রতিক্ষায় রবে বধূর মাতুয়ারা স্বামীর ঘরে/ হয়ত স্বামী বধূর লাগি আনবে অনেক উপহার/ ফিরবে হাসি থাকি থাকি বধূর আবার/ বৈশাখী মেলা হোক সবার সূখময়/ ব্যর্থতা,বিফলতা আর কান্না, লোভ হোক সব ক্ষয়’। হাজার বছরের বাঙালীত্বের নিদর্শন বৈশাখি মেলা । এ মেলায় বাঙালী খুঁজে পায় তাদের জাতি সত্ত্বার উৎস । পহেলা বৈশাখে বৈশাখী মেলার আয়োজন ছাড়া যেন বাঙালীত্ব পূর্ণতাই পায় না । দিন, মাসের অপেক্ষা শেষে যখন বাঙালীর দোড়গোরায় পহেলা বৈশাখ এবং বৈশাখী মেলা উপস্থিত হয় তখন বাঙালীর চেয়ে খুশি আর বুঝি কোন জাতির থাকে না । সকল অশুভ তৎপড়তা কাটিয়ে বাঙালীর বেশাখী মেলা আরও লক্ষ বছর বেঁচে থাকুক তার স্বতন্ত্র ঐতিহ্য নিয়ে ।

রাজু আহমেদ । কলামিষ্ট ।

facebook.com/raju69mathbaria/

বিষয়: বিবিধ

৮৮২ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

314777
১৪ এপ্রিল ২০১৫ রাত ০৩:৪০
314818
১৪ এপ্রিল ২০১৫ সকাল ১০:৩৬
মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম লিখেছেন : মান্যবর মুসলিম ভাই-বোনেরা । বাংলাদেশের জনগণের ৯১% মুসলিম । কিন্তু মুসলিমরা অমুসলিম ও নাস্তিকদের সুদুর প্রসারী ষড়যন্ত্র ও কর্মকান্ডের কারণে আজ হিন্দুয়ানী শিরকী-কুফরী-শালীনতাবর্জিত ও ঈমানবিধ্বংষী বাংলা নববর্ষ পালন করছে । মুসলিমদের এই অবস্হা হতে বের হয়ে আসতে হবে । আর এই লক্ষ্যে মুসলিমদের ইসলামী নববর্ষ পালন করতে হবে । সারা বিশ্বে মুসলিমরা ইসলামী নববর্ষ পালন করে (সৌদি আরব ব্যতিক্রম ) । আমি ধারাবাহিকভাবে কীভাবে ইসলামী নববর্ষ সারা বিশ্বে পালিত হয় তা তুলে ধরবো । আজ আমি মালয়েশিয়ায় কীভাবে ইসলামী নববর্ষ পালিত হয় তা তুলে ধরেছি ।

আমরা কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে ইসলামী নববর্ষ পালন করছি । এবার আমরা ১৫ অক্টোবর ২০১৫ খৃস্টাব্দ মোতাবেক ১ লা মহররম ১৪৩৭ হিজরী তারিখ ইসলামী নববর্ষ পালন করবো । আশা করি আপনারাও আমাদরে সাথে একাত্মতা ঘোষনা করে নিজেদের ইমান ও আমলকে সুদৃঢ় করার পাশাপাশি দুনিয়া ও আখিরাতের কামিয়াবী হাসিল করবেন । বিস্তারিত জানার জন্য আমার এই লেখাটা পড়ুন : http://www.today-bd.net/blog/blogdetail/detail/1864/fakhrul/63998#.VSySy_D4bCA

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File