কতটা মনোবিকৃতি হলে এমনটা সম্ভব !

লিখেছেন লিখেছেন রাজু আহমেদ ৩০ জানুয়ারি, ২০১৫, ১২:০৬:৪৬ দুপুর

শতাব্দীর সেরা বিস্ময় ইন্টারনেট । এ বিস্ময়কর সৃষ্টি মানুষের জীবনকে যে কতটা সহজ করেছে তা বর্ণনা করে শেষ করার নয় । মানুষের জীবনের জন্য যতকিছু প্রয়োজন তার সবটাকেই এর মধ্যে সমন্বয় করে দেয়া হয়েছে । যোগাযোগ ব্যবস্থায় এক বৈপ্লবিক ধারার সূচনা করেছে ইন্টারনেট । দূরকে এত কাছে টেনেছে যা বলে বোঝাবার নয় । ইন্টারনেটের এ ক্ষমতা দেখলে মনে পড়ে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের, ‘বিশ্ব জগৎ দেখব আমি আপন হাতের মুঠোয় পুরে’ বাণী । কবির সে আকাঙ্খাকে পূর্ণতা দিয়েছে ইন্টারনেট । কোটি কোটি মাইল দূরত্বের কোন বস্তু সম্পর্কে তথ্য জানতে চাইলেও তা জানতে মাত্র কয়েক সেকেন্ডের বেশি সময় লাগবে না । চিকিৎসাশাস্ত্র, ব্যবসাশাস্ত্র, বিজ্ঞানসহ যাবতীয় ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের ভূমিকা অস্বীকার করার নয় । লেখাপড়া থেকে শুরু করে বিশ্বের টুকিটাকি তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করার দ্বার খুলে দিয়েছে ইন্টারনেট এবং কিছু সার্চ ইঞ্জিন । সকল সার্চ ইঞ্জিনের মধ্যে বহুল ব্যবহৃত হিসেবে জনপ্রিয়তা পেয়েছে গুগল । একজন মানুষের যে ধরণের তথ্যের প্রয়োজন হোক তা নিমিষেই উপস্থিত করে দেয় গুগল নামক সার্চ ইঞ্জিনটি । ইন্টারনেট শিক্ষা ক্ষেত্রে বিল্পবের যে নব্য দিগন্ত সূচনা করেছে তাতে পৃথিবীর দেশসমূহের ভৌগলিক সীমাকে আর সীমা মনে হয় না । অনলাইন শিক্ষা কার‌্যক্রমের মাধ্যমে বিশ্বের নামকরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠ সহজেই বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে সংগ্রহ করা সম্ভব হচ্ছে । বিদেশী ডাক্তারদের পরামর্শ গ্রহন করা যাচ্ছে ঘরে বসেই । বিদেশী সংস্কৃতির আদান-প্রদান হচ্ছে নিমিষেই । হাজার কিলোমিটার দূরে অবস্থানরত ছেলে-মেয়েদের মধ্যে সম্পর্ক সৃষ্টি হচ্ছে । শ্রেণী কিংবা জাতি বৈষম্যের বাধা পেরিয়ে কিছু কিছু সম্পর্ক পরিণয় সূত্রেও আবদ্ধ হচ্ছে । বিশ্বায়ণের ধারণার পূর্ণতা দিতে যাচ্ছে ইন্টারনেট । নতুন প্রজন্ম ইন্টারনেট বিহীন এক মূহুর্তও নিজেদেরকে ভাবতে পারছে না । সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ ইন্টারনেট সংযোজিত বহু মাধ্যমেই মানুষের জীবনকে জড়িয়ে রেখেছে । অফিস-আদালতসহ সকল কর্মক্ষেত্রে ইন্টারনেট যুগান্তকারী ভূমিকা রাখছে । কোটি কোটি ইতিবাচক ভূমিকার সাথে ইন্টারনেট মানুষের জীবনে নৈতিবাচক অনেক প্রভাব ফেলছে । যেখানে ক্রিয়া আছে সেখানে যদি প্রতিক্রিয়া না থাকে তবে স্যার আইজ্যাক নিউটনের সূত্রই যে বৃথা হয়ে যায় । তবে ইন্টারনেটের নৈতিবাচক প্রভাব যে এত মারাত্মক অরুচিকর ও মনুষত্ব্য বিবর্জিত হবে তা কল্পনায়ও ভাবতে পারিনি । অবশ্য নেতিবাচক প্রভাবের জন্য সরাসরি ইন্টারনেটকে দায়ী করতে পারিনা তবুও ইন্টারনেটকে আশ্রয় করে যেহেতু অপরাধী অপরাধ করছে সেহেতু উপায় কি ।

ব্যক্তিগতভাবে গুগলকে আমার জন্য শ্রেষ্ট সাহায্যকারী মনে করি । যে কোন বিষয় তথ্য সংগ্রহ করতে সর্বপ্রথম গুগলের আশ্রয় লই । গুগল থেকে তথ্য সংগ্রহ করা যেমন সহজ তেমনি অল্প সময় অধিক তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব । অন্যদিকে গুগলের কাছ থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন তথ্যের মধ্যে সমন্বয় করে নির্ভূল তথ্য পাওয়া যায় । গুগলের চেয়ে অন্য কেউ দ্রুত সমসাময়িক তথ্য দিতে পারে না । অবশ্য গুগলের নিজস্ব কোন ক্ষমতা নাই । বিভিন্ন ব্যক্তি তথ্য দিয়েই গুগলকে সম্মৃদ্ধ করে তবে সকল তথ্য ধারণ করে গুগল পৃথিবীর বৃহৎ তথ্যশালায় রূপ লাভ করেছে । এসকল কারণেই গুগলকে আমি মাষ্টার মনে করি । লেখালেখির জন্য যে ধরণের অধ্যয়ণ করা দরকার তার ৮০ ভাগ গুগলেই করা হয় । বিভিন্ন শব্দের উৎপত্তি কিংবা গভীর কোন তথ্য এ সার্চ ইঞ্জিন থেকে সংকলন করা হয় । পৃথিবীতে আপন যদি কোন সম্পর্ক থাকে সেটা মা-ছেলের কিংবা বাবা-মেয়ের সম্পর্ক । যে সম্পর্কের সাথে অন্য কোন সম্পর্কের তুলনা করা বস্তুত বোকামী । গুগলের কাছে জানতে চেয়েছিলাম, পৃথিবীতে মা শব্দের উৎপত্তি কিভাবে হল ? ল্যাপটপের পর্দায় এ বিষয়ক যতগুলো টপিক্স দৃশ্যমান হয়েছে তার কয়েকটি আমাকে মাটির নিচে দাবিয়ে দেয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল । ভাবতেই পারছি না মানুষের বিবেকের মরণ এভাবে হতে পারে । ভাবছিলাম আমরা কি মানুষ আছি নাকি কোন জানোয়ারে পরিবর্তিত হয়েছি । ভাই-বোন থেকে শুরু করে রক্তের সম্পর্ক নিয়ে এমন সব জঘন্য-হীন কথাবার্তা লেখা যা অসভ্য মানুষদেরও মূখে উচ্চারণ করতে ঘৃণা হবে । মানুষের যে এমন অধঃপতন হতে পারে তা এ জনমে বিশ্বাস করা কষ্টকর তবুও অস্বীকার করলে তো নিজের অস্তিত্বকেই অস্বীকার করতে হয় । [পাঠকের কাছে অনুরোধ, আমার কথাগুলোতেই বিশ্বাস রাখুন । নিজেরা সার্চ দিতে গিয়ে মানুষ সম্পর্কে জঘন্য ধারণা জন্মানোর সুযোগ দিয়েন না ]

মাননীয় সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ের কাছে আবেদন, আপনারা একটু উদ্যোগী হোন । এই ধরণের কুৎসিত অপরাধে যারা অপরাধী তাদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির ব্যবস্থা করুণ । ইন্টারনেটের ওপর চরমভাবে ‍দৃষ্টিপাত করুণ । মানুষ মেরে ফেলা যদি অপরাধ হয় তাহলে মানবতা ও মনুষত্ব্য ধ্বংস করা কেন অপরাধ হবে না ? এই সকল অপরাধ যারা করে তাদের দমনে কিছু কঠোর নীতিমালা প্রণয়ণ করার জন্য সবিনয় আবেদন রাখছি । কিছু সম্পর্ককে সম্মানের স্থানে রাখার সুযোগ করে দিন । মা-বাবা, ভাই-বোন কিংবা রক্তসম্পর্কীয় আত্মীয়দের মধ্যে যাদের সাথে সকল ধর্ম বিবাহ নিষিদ্ধ করেছে সেই তাদের নিয়ে এমন অরুচিকর বক্তব্য যারা ইন্টারনেটে ছড়ায় তাদের শাস্তি না হলে বিশ্বের অন্য কোন অপরাধীর শাস্তি হওয়ার কোন বৈধতা থাকে না । এ নিয়ে কেউ যদি ব্যক্তি স্বাধীনতার দোহাই তোলে তবে তাকে স্বাধীনতা ঘুলিয়ে খাইয়ে দেওয়া উচিত ।

ইন্টারনেট ও গুগল যে উপকার করেছে তা মানুষের কাছে চিরদিন অম্লান হয়ে থাকবে । তবুও ক্ষোভের যে কথাগুলো বলেছি তার জন্যও গুগল কিংবা ইন্টারনেট দায়ী নয় । ইন্টারনেট আবিস্কারের পূর্বেও যে কোন মানুষরূপী জ্ঞানপাপী এ ধরণের চরম অশালীন কাজ করত না তা নয় তবে তখন সেগুলো এমনভাবে প্রকাশ পাওয়ার সুযোগ ছিল না । বর্তমানে লিখতে যতটুকু দেরী কিন্তু বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছড়িয়ে দিতে কয়েক মূহুর্তের বেশি সময় লাগে না । যারা নিজেকে মানুষ দাবী করে তাদের কাছে প্রশ্ন, মানুষ ও জানোয়ারের মধ্যে মূল পার্থক্য কি ? কোন শ্রেণীর মানুষরূপী জানোয়ার যদি কোন পার্থক্য খুঁজে না পায় তবে তার নিজেকে মানুষের মধ্যে না রাখাই উত্তম । তাতে যেমন সভ্য মানুষ শান্তিতে থাকবে তেমনি জানোয়ারেরাও সেগুলোর দলে আরও অসভ্য পাবে এবং ক্রিয়ায় সুবিধা হবে । যারা নিজেদেরকে সত্যিকারের মানুষ বলে দাবী করে তাদের উচিত, এহেন গর্হিত কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া এবং আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সাহায্য চাওয়া । মানুষ যদি তার শ্রেষ্ঠত্বের বেশিষ্ট্য এভাবে হারিয়ে ফেলে তবে আর কতদিন নিজেদেরকে আশরাফুল মাখলুকতা হিসেবে পরিচয় দেয়া যাবে । যে অপরাধের কথা বলতে পারিনি তবে বুঝাতে চেয়েছি তার জন্য মুষ্ঠিমেয় কয়েকটা খবিশ শ্রেণীর মানুষ দায়ী । ওরা সংখ্যায় অল্প হলেও সমাজে পচন ধরানোর জন্য এর বেশি প্রয়োজন নাই । সুতরাং সমাজকে সুষ্ঠু-স্বাভাবিক রাখার জন্য এদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতেই হবে এবং ব্যবস্থাও নিতে হবে । সরকারের দায়িত্বশীলসহ গুগল কিংবা অন্যান্য যোগাযোগ মাধ্যম ও সার্চ ইঞ্জিনগুলোর কর্তাদের কাছে এর প্রতিকার চেয়ে আবেদন জানাতে হবে । স্বাভাবিক সমাজে বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা চাই । যাদের ইতোমধ্যে মনোবিকৃতি ঘটেছে তাদেরকে যদি এ বিবেকপচনশীল রোগ থেকে রক্ষা করা না যায় তবে নির্মূল করা উচিত । সবার স্বার্থে সভ্য সমাজ নিশ্চিত করা চাই ।

রাজু আহমেদ । কলামিষ্ট ।



বিষয়: বিবিধ

১১০০ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

302189
৩০ জানুয়ারি ২০১৫ দুপুর ০২:০৩

A PHP Error was encountered

Severity: Notice

Message: Undefined offset: 10348

Filename: views/blogdetailpage.php

Line Number: 764

"> মুক্তিযুদ্ধের কন্যা লিখেছেন : মা-বাবা, ভাই-বোন কিংবা রক্তসম্পর্কীয় আত্মীয়দের মধ্যে যাদের সাথে সকল ধর্ম বিবাহ নিষিদ্ধ করেছে সেই তাদের নিয়ে এমন অরুচিকর বক্তব্য যারা ইন্টারনেটে ছড়ায় তাদের শাস্তি না হলে বিশ্বের অন্য কোন অপরাধীর শাস্তি হওয়ার কোন বৈধতা থাকে না ।

চমৎকার উপস্থাপনা। কিছু বিকার গ্রস্থ মানুষের জন্য অনেক মহান সৃষ্টি বিচিলিত হয়। আমিও দেখেছি 'মা' লেখাটায় সার্চ চাওয়া হলে অনেক অবান্ত বাজে জিনিস চলে আসে। আসলে কিছু বাজে মানুষকে দোষ দিয়ে কি হবে! আমাদের সমাজ গুরুরাও সাধু নন। নবী মোহাম্মদ পিতৃ স্নেহে লালন পালন করা পালক পুত্রের বধুর সাথে কি অপকান্ডই না ঘটালেন। এই লজ্জা কোথায় রাখি বলেন?
৩০ জানুয়ারি ২০১৫ দুপুর ০২:৩০
244426
এমরুল কায়েস ভুট্টো লিখেছেন : মুক্তিযুদ্ধের কন্যা@ তোগু কথিত বিদ্যা দেবী স্বরসতী পিতা ব্রম্মা সাথে সে শত বছর ধরে যৌন নীলা খেলা খেলে তৃপ্তি নিয়েছিল সেটা কিন্তু আমি কইলাম না। Winking
৩১ জানুয়ারি ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:০৭
244520
রাজু আহমেদ লিখেছেন : ভালো মানুষের মুখ দিয়ে সব সময় ভালো কথাই বের হয় আর আপনার মুখ দিয়ে !!“!!!!!!!
৩১ জানুয়ারি ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:০৭
244521
রাজু আহমেদ লিখেছেন : ভালো মানুষের মুখ দিয়ে সব সময় ভালো কথাই বের হয় আর আপনার মুখ দিয়ে !!“!!!!!!!
302193
৩০ জানুয়ারি ২০১৫ দুপুর ০২:৩১
এমরুল কায়েস ভুট্টো লিখেছেন : এইসব চটি ওয়েব এবং র্পনসাইট গুলোর মালিক বেশির ভাগই ইন্ডিয়া। লাভের আশা এসব বিকৃত কাজ করে থাকে।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File