অপার সম্ভাবনার বাংলাদেশে জন্মাতে পেরে আমরা গর্বিত
লিখেছেন লিখেছেন রাজু আহমেদ ২৮ নভেম্বর, ২০১৪, ১২:০৩:১৮ দুপুর
আমরা গর্বিত কারণ আমরা বাঙালি । সুজল-সূফলা, শস্য-শ্যামলা অবারিত সবুজের দিগন্ত বিস্তীর্ণ ভূমিতে আমাদের বেড়ে ওঠা । চোখ যতদূর যায় কেবল সবুজ আর সবুজ সমারোহ । দক্ষিণ এশিয়ায় অবস্থিত ৫৬ হাজার বর্গমাইলের বাংলাদেশে জন্মাতে পেরে সত্যিই আমরা ভাগ্যবান । না চাইতেই প্রকৃতি সবকিছু দিয়েছে । আমাদের জন্মভূমি বিশ্বের একমাত্র দেশ যেখানে বৎসরে ঘুরে ঘুরে ছয়টি ঋতু আসে । পৃতিটি ঋতুতে নানা বৈচিত্র্য আর নতুন কিছু । নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়ার কারণে এ দেশটির চেয়ে উত্তম বাসযোগ্য স্থান আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না । এদেশের প্রকৃতির নির্মল বায়ু মানুষকে শতাব্দীর পর শতাব্দী সুস্থ রেখেছে । শারীরীক, মানসিক, আর্থিকভাবে এদেশের কোথাও কোন কষ্ট কিংবা অভাব নাই । দেশের সর্বত্র শুধু সম্ভাবনা আর সম্ভাবনা ভরপূর । সুখী মানুষের সংজ্ঞায় যা বোঝানো হয় তার সবটাই এ বঙ্গের মানুষের মধ্যে উপস্থিত । এখানে কারো সুখ কিংবা দুঃখ কেউ একাকী ভোগ করে না বরং সবার মধ্যে ভাগ করে নেয়া হয় । একজনের বিপদ যেন সকল মানুষের বিপদ হিসেবে উপস্থিত হয় আবার একজনের সূখের অনুভূতিগুলোও সবার মধ্যে সমভাবে বন্টিত হয় । এখানে স্বার্থপরতা একেবারেই অনুপস্থিত । ১ লাখ ৪৭ হাজার ৫৭০ বর্গমাইলের বাংলাদেশে অসংখ্য নদী-নালা, খাল-বিল রয়েছে । নদীগুলোর এঁকে বেঁকে বয়ে চলা দেখলে মনে হয় যেন জালের দ্বারা গোটা দেশটা আবদ্ধ । পানিতে শত শত প্রজাতির মাছ, ডাঙায় হাজার হাজার প্রজাতির প্রাণী এবং শুণ্যে অসংখ্য পাখিদের উপস্থিতি । এখানে পাখির কলরবে সকাল হয় আবার পাখির ডাকেই সন্ধ্যা নামে । প্রকৃতি প্রতিদিন মানুষের জন্য নতুন নতুন খবর বয়ে আনে । প্রকৃতির অকৃত্রিম দান মানুষকে কেবল উদার হতেই শিখিয়েছে । কার্পণ্যতা যেন বাঙালীদের কাছে অজানা কোন বিষয় । সর্বত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অসংখ্য মূল্যবান সম্পদও মানুষকে লোভী বানাতে পারছে না । বর্ণনা দিয়ে আমার দেশের কথা শেষ করার নয় । এদেশে জন্ম দিয়েছে মাওলানা ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, শেখ মুজিবুর রহমান কিংবা জিয়াউর রহমানের মত প্রজ্ঞাবান রাজনৈতিক দুরদর্শী নেতা । যারা শুধু দেশের পরিমন্ডলেই তাদের দ্যুতি প্রজ্জ্বলিত করেনন নি বরং সারা বিশ্বব্যাপী তাদের জ্যোতি বিলিয়েছেন । এদেশের সম্ভাবনায় মুগ্ধ হয়ে অসংখ্য ওলী-আউলিয়ারা আগমন করেছেন । শাহজালাল (রঃ), খানজাহান আলী (রঃ) কিংবা শাহ মাখদুমদের নাম আজও ভাস্বর হয়ে রয়েছে । বিশ্বের বিখ্যাত অসংখ্য পর্যটক এ বঙ্গের সৌন্দর্য ভোগ করতে হাজার হাজার মাইল পদব্রজে পাড়ি দিয়ে ছুটে এসেছেন । ইবনে বতুতা কিংবা ফা-হিয়েনদের বর্ণনায় তার প্রমান পাওয়া যায় । বাংলাদেশের ভূ-পৃষ্টে যত সম্মদ দৃশ্যমান আছে তার চেয়ে লাখোগুন বেশি মূল্যবান সম্পদ পুঞ্জীবুঁত রয়েছে ভূ-গর্ভে । ভিনদেশী লোভী শয়তানরা আমাদের সম্পদ হরণের দিকে সর্বদা লোলুপ দৃষ্টি রাখলেও আমাদের পারস্পরিক ঐক্য তাদের সে মনোবাসনাকে কেবল প্রতিহত করছে না বরং ক্ষেত্র বিশেষ তাদের উচিত শিক্ষাও দিচ্ছে । বিশ্বের সকল রাষ্ট্রে যখন দূর্লভ মিঠা পানি পানের অভাবে মানুষ ছটফট করছে তখন আমাদের দেশের মানুষ মিঠা পানি শুধু পান করেই ক্ষান্ত হচ্ছে না বরং নিত্য-নৈমিত্তিক অন্য সকল কাজও মিঠা পানি দিয়ে শেষ করছে । শান্তি সূখের নীড় হিসেবে আজ বিশ্বের কাছে আমার বাংলাদেশ অতি পরিচিত এক দেশের নাম । এদেশের রুপে বিমোহিত হয়ে কবি, শিল্পী কিংবা লেখকদের সৃষ্টি আজও অব্যাহত রয়েছে ।
এদেশের সবচেয়ে বড় সম্ভাবনার খাত এদেশের মানুষ । সমালোচকরা বলেন, বাংলাদেশ অতিরিক্ত জন্যসংখ্যার দেশ কিন্তু আমি আমার দেশকে বলি, অতিরিক্ত জনশক্তির দেশ । ষোল কোটি মানুষের মেধা আর বত্রিশ কোটি দক্ষ কর্মীর হাতের পরশে যেকোন ইতিবাচক পরিবর্তন সম্ভব । বিশ্বের কোথাও এদেশের মত এমন উজ্জ্বল সম্ভাবনার জনশক্তি আছে বলে মনে হয় না । আমাদের শক্তি আমাদের তারুণ্য । এদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩০ শতাংশ অর্থ্যাৎ প্রায় ৫ কোটি তরুণ । ভাবা যায় ! তারুণ্যের শক্তি কি না পারে । কোন কাজই এদের কাছে অসাধ্য নয় । ’৫২, ’৬৯, ’৭১, কিংবা ’৯০ এর বিজয়ে তরুণরাই অগ্রপথিক ছিল । তরুণদের কাছে অস্ত্র ছিল না ছিল শুধু সাহস । সে সাহসের হাত ধরেই তারা বিজয় ছিনিয়ে এনেছিল । আজও আমাদের তরুণরা বসে নাই । দেশের অগ্রগতিতে তাদের অবদান দিন দিন স্পষ্ট হচ্ছে । এরা মিথ্যা শক্তিকে যেমন গুড়িয়ে দিতে পারে তেমনি ভূমিকা রাখতে পারে বিপ্লবের মাধ্যমে দেশ গড়তে । জাতির কান্ডারীর ভূমিকায় শক্ত হাতে হাল ধরার ক্ষমতাও এদের আছে । কোন অন্যায় কিংবা মিথ্যার শক্তির কাছে এর কখনো মাথা নত করেনি আর করবেও না কোনদিন । আমাদের তরুণদের মুখের দিকে তাকিয়ে দ্বিধাহীন চিত্তে বলে দেয়া যায় আমাদের দেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কথা । সেদিন খুব বেশি দূরে নয় যেদিন তরুণদের হাত ধরেই আমাদের দেশটা বিশ্বের কাছে স্বমহিমায় মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে । কোন অপশক্তি সে অগ্রযাত্রাকে রুখতে পারবে না । বিশ্বের অনেক দেশ তাদের অনেক সম্পদ নিয়ে গর্ব করে কিন্তু কে আছে আমাদের মত ? বিশ্বের সর্ববৃহৎ সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার আমাদের দেশে । সমুদ্র কন্যা কুয়াকাটার সুনাম আজ জগতখ্যাত । কুয়াকাটায় দাঁড়িয়ে সূর্যদ্বয় ও সূর্যাস্ত দেখা যায় । এছাড়াও মনপূরা, সেন্ট মার্টিন, জাফলং, নীলগিড়ির মত প্রকৃতির নৈসর্গিক দৃশ্য আর কোন দেশে দেখা যায় ? এ সকল স্থানের সৌন্দর্য ভোগ করতে বিশ্বের সকল দেশ থেকে হাজার হাজার পর্যটক দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে ছুটে আসে আমাদের দেশে । তারা এসে যখন এদেশের উচ্ছসিত প্রসংশা করে তখন গর্বে বুকটা ফুলে ওঠে কারণ আমার জন্ম যে এখানেই । বিশ্বের একমাত্র ম্যানগ্রোভ জঙ্গলের বৃহৎ অংশটুকু আমাদের দেশে । বাংলাদেশকে সকল প্রাকৃতিক বিপদ থেকে রক্ষা করার জন্য দেশের দক্ষিনাঞ্চলে পাহাড়ের মত দাঁড়িয়ে আছে সুন্দরবন । কোটি প্রকার সম্পদের ভরপূর সুন্দরবন বিশ্বের অন্যতম দর্শনীয় স্থানের স্বীকৃতি পেয়েছে । বিশ্বের সকল মানুষ রয়েল বেঙ্গলের নাম জানে । সেই রয়েল বেঙ্গলের বড় অংশ রয়েছে আমাদের সুন্দরবনে । ডাঙায় চিতা, হরিন, বানরসহ হাজার প্রাকৃতির পশু-পাখি, পানিতে অজস্র প্রজাতির মাছ এবং কুমির কিংবা মাটির নিচের মূল্যবান ধাতু আমাদের দেশকে সুসজ্জিত করে রেখেছে । গর্ব করে বলতে পারি, কী নেই আমাদের ? বাংলাদেশের মাটির নিচে লুকিয়ে আছে সম্পদের বিশাল ভান্ডার । তেল, গ্যাস, কয়লা, চুনাপাথর, তামা, লোহা, গন্ধক, নুড়িপাথর, শক্ত পাথর কিংবা বালি । এসব অফুরন্ত সম্পদকে কাজে লাগাতে পারলে আমাদের দেশের উন্নতি রুখবে কে ? আমাদের দেশের এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে আমরা কৃষি নির্ভর থেকে শিল্প নির্ভরতার দিকে ধাবিত হচ্ছি ।
প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে ড. ইউনুসের নোবেল শান্তি পুরুস্কার অর্জন আমাদের গর্ব আর অহংকারের বিষয় । নোবেল শান্তি পুরুস্কার বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনুস সর্বকালের সেরা ৩০ জন শিল্প উদ্যোক্তাদের একজন নির্বাচিত হয়েছেন । আর্সেনিক দূরীকরণে বিস্ময়কর প্রযুক্তি ‘সনো ফিল্টার’ উদ্ভাবন করে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল একাডেমি অব ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের (এনএই) মিলিয়ণ ডলার পুরস্কার জিতেছেন দুই সহোদর বাংলাদেশী বিজ্ঞানী অধ্যাপক আবুল হুসাম এবং ডা. একেএম মুনীর । আমেরিকায় চুম্বক চালিত ট্রেন আবিস্কার করেছেন সেও এক বাংলাদেশী । টুইন টাওয়ারের নকঁশাও এঁকেছিল এক বাংলাদেশী । বিশ্বের সর্বচ্চ পর্বত শৃঙ্গ অর্থ্যাৎ নেপালের হিমালয় পর্বতের সর্বোচ্চ শৃঙ্গে এক এক করে চারজন (২জন পুরুষ ২ জন মহিলা) বাংলাদেশী দেশের পতাকা উত্তোলন করেছে । পাটের জীবন রহস্য উদ্ভাবন করে ড. মাকসুদুল আলম আজ বিশ্ব পরিচিত এক নাম । বাঙালীদের মেধা শক্তি বলে শেষ করা যায় না । বাঙালীরা বড়ই কাজের । সুযোগ পেলেই তারাও প্রমান করে দিতে পারে বাঙালিও মেধা আর সৃজনশীলতায় কত পরাঙ্গম । শুধু দেশে নয়, সারা বিশ্বে জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে নিয়োজিত আছেন বাংলাদেশি নাগরিক । নিজ নিজ পেশায় এবং পেশার বাইরেও তারা সৃজনশীল ও কল্যানমুখী । বিভিন্ন কাজের সফলতার মাধ্যমে রাখছে প্রতিভার স্বাক্ষর । ক্রিকেট বিশ্বে বাংলাদেশ এক অতি পরিচিত নাম । ক্রিকেটে বাংলাদেশের যোগ্যতা, সামর্থ্য ও শক্তি আজ বিশ্বব্যাপী প্রমাণিত । বিশ্বের এমন কোন পরাশক্তি নাই যাদেরকে ক্রিকেট মাঠে বাংলাদেশেল দামাল ছেলেরা নাকানি-চুবানি না দিয়েছে । এছাড়াও এদেশের প্রতিটি পরতে পরতে রয়েছে সম্ভাবনার ছোঁয়া । চা, চামড়া, সিরামিক থেকে শুরু করে মাছ, শুঁটকি, সবজি, পেয়ারা, চাল, টুপি, নকশিকাঁথা, বাঁশ-বেত শিল্পের তৈরি পণ্য, মৃৎশিল্প রপ্তানি হচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে । বাংলাদেশের দ্বিতীয় রপ্তানি পণ্য হিসেবে বিশ্বের বাজারে স্থান করে নিয়েছে দেশের ওষুধ শিল্প । জাহাজ নির্মান শিল্পে, গার্মেন্টস সেক্টরে, জনশক্তি রাফতানিত কিংবা অ্যাপস বাজারসহ সকল ক্ষেত্রেই শুধু সম্ভাবনা ।
আমাদের দেশ সম্ভাবনায় পূর্ণ হলেও আমাদের অযোগ্যতা ও সিদ্ধান্তগত অদূরদর্শীতার কারনে আমাদের অবস্থানের খুব বেশি উন্নতি হয়নি । তবুও যখন বিশ্বের ধনবান, ক্ষমতাধর রাষ্ট্রের সাথে আমাদের দরিদ্র এই মানুষ প্রতিভার লড়াইয়ে বিজয় ছিনিয়ে আনে, তখন আনন্দে বুক ভরে যায় । আমরা স্বপ্ন দেখি, মেধা আর যোগ্যতার জোড়েই বিশ্ব মানচিত্রের উচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত হবে বাংলাদেশের নাম । এদেশের সকল সম্পদ ও সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে আমরা এগিয়ে যাবই । সমৃদ্ধ বাংলাদেশের পতাকা, সুনাম এবং সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়বে বিশ্ববাসীর মাঝে । সকল সম্ভাবনার পরেও বলতে হবে, আমাদের সমস্যাও অনেক । কিন্ত সকল সমস্যার মধ্য দিয়েই আমরা অগ্রসর হচ্ছি এবং হব । দেশে অপরাজনীতির প্রভাব দেশের অনেক ক্ষেত্রকে কলূষিত করেছে । যুগ যুগ ধরে যে বাঙালিসমাজ সেবাধর্মী ছিলো সেটাকে দুর্নীতিপরায়ণতার শৃঙ্খল পরানো হয়েছে । মান বাঁচাতে ভালো মানুষগুলো্ এতকাল নিশ্চুপ থেকেছে । এখন সময় বদলে দেয়ার । আমরা আর দেখতে চাইনা কোন মুক্তিযোদ্ধা ভিক্ষা করে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে, শিক্ষক কোচিং ব্যবসা আর প্রাইভটে পদ্ধতিতে হন্যে হয়ে ছুটছেন টাকার পিছনে, সৎ লোক মাথানত করে চলছে অসৎ লোকের দাপটে, পুলিশ টাকাওয়ালাদের টাকা খেয়ে দুর্বলদের হেনস্থা করছে কিংবা ডাক্তার সঠিক সেবা না দিয়ে কমিশন বাণিজ্যে নিয়োজিত রয়েছে । এই সামাজিক অবস্থা থেকে আমরা বের হয়ে আসতে চাই । মেধার মূল্যায়ণ, কাজের বাজার সৃষ্টি, সৎ চিন্তা আর সততার জাগরণে অপরাধমুক্ত সমাজ গড়ি তুলতে হবে । আমরা গর্বিত জাতি । অহঙ্কার করার মত আমাদের অনেক বিষয় আছে । আমাদের মাঝে দেশপ্রেমের জাগরণ ঘটাতে হবে । কথায় জাগরণ, কাজে জাগরণ, লেখায় জাগরণ কিংবা ভাবনায় জাগরণ-সবমিলে জাগ্রত বাংলাদেশ হবে সম্মৃদ্ধ বাংলাদেশ । এদেশকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখি যা বাস্তবায়ণ করার দৃঢ় শপথ করেছি ।
রাজু আহমেদ । কলামিষ্ট ।
বিষয়: বিবিধ
৭১৫ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন