হেরে গেলাম আমরা; জিতে গেল নাস্তিক !
লিখেছেন লিখেছেন রাজু আহমেদ ২৪ নভেম্বর, ২০১৪, ০৭:১৩:০৬ সন্ধ্যা
ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ পবিত্র হজ্জ্ব এবং তাবলীগ জামাআত নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্যকারী সাবেক মন্ত্রী ও বর্তমান সংসদ সদস্য লতিফ সিদ্দিকী দীর্ঘ দিন বিদেশে আত্মগোপন করে থাকার পর গত ২৩ নভেম্বর ভারত থেকে গোপনে দেশের মাটিতে পা রেখেছে । ভারতের একটি এয়ারলাইন্সে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পদার্পন করার পরে তিনি আন্ডার গ্রাউন্ডে চলে গেছেন । ডজন খানেক মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি থাকার পরেও আইনি বিধি-নিষেধের কারণে তাকে গ্রেফতার করা যাচ্ছে না বলে প্রশাসন জানিয়েছে । গ্রেফতার হওয়ার পরেও তার বিরুদ্ধে কি পরিমান শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে তা নিয়েও রয়েছে সন্দেহ । ইসলামের মৌলিক ভিত্তির উপর আঘাত করার পরেও তাকে পালানো কিংবা আত্মগোপন করার সুযোগ দেয়া হচ্ছে, এটা ভাবতেই মুসলমান হিসেবে নিজেদের প্রতি ঘৃণা জন্মাচ্ছে । ইসলাম এবং ইসলামের প্রাণ পুরুষ হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)সহ বিভিন্ন বিষয়ে কটুক্তি করার পর এবং পরবর্তী সাক্ষাৎকার সমূহে তার পূর্ব অবস্থানে অটল থাকার পরেও তিনি ৯৫ শতাংশ মুসলিম অধ্যুষিত দেশে প্রবেশের সাহস পান কি করে ? উল্লেখ্য যে, জাতিসংঘের ৬৯তম অধিবেশনে যোগদান উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর আমেরিকা সফরের সফর সঙ্গী হয়ে সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে লতিফ সিদ্দিকীও আমেরিকা গিয়েছিলেন । সেখানে প্রবাসী বাংলাদেশীদের আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তৎকালীন ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী লতিফ সিদ্দীকি পবিত্র হজ্জ্ব, হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ও তার বংশধর সম্পর্কে মিথ্যাচার এবং তাবলীগ জামাআত নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেন । যেখানে স্বয়ং আল্লাহ তা’য়ালা তার আর্থিক স্বচ্ছল বান্দা-বান্দীদেরকে জীবনে অন্তত একবার পবিত্র কাবা ঘর জিয়ারতের জন্য নির্দেশ দিয়েছে সেখানে লতিফ সিদ্দীকি আল্লাহ তায়ালার আদেশের বিরুদ্ধাচারণ করে ইসলাম ধর্মের মৌলিক ভিত্তির বিপরীত কথা বলেছেন । তিনি মনগড়াভাবে পবিত্র হজ্জ্বের প্রারম্ভিক ইতিহাস টেনে বলেন, আব্দুল্লাহর পুত্র মুহাম্মদ ভেবে দেখলেন তারা গরীব সুতরাং তারা খাবে কী ? কুরাইশ বংশকে তিনি ডাকাতের বংশ বলে পরিচয় দেন । তাদের আহার-রোজগারের জন্য মুহাম্মদ সারা পৃথিবীতে তার অনুসরীদেরকে বছরে একবার করে মক্কা ও মদিনায় আসার জন্য আহ্বান করলেন । যাতে স্থানীয় মানুষ আগন্তুকদের কাছ থেকে কিছু ব্যবসা করে জীবিকা অর্জন করতে পারে । মন্ত্রী তার ভাষণে আরও বলেন, বাংলাদেশ থেকে এ বছর প্রায় এক লাখ লোক হজ্জ্ব পালনের উদ্দেশ্যে মক্কায় গিয়েছে । তাদের প্রত্যেকের যদি গড়ে ৫ লাখ টাকা খরচ হয় তবে সর্বমোট ৫০০ কোটি টাকা খরচ হয় । লতিফ সিদ্দীকির মতে, হাজীরা কোন প্রডাকশন না করে কেবল রাষ্ট্রের টাকা রিডাকশন করেন । ঐ অনুষ্ঠানে লতিফ সিদ্দীকি তাবলীগ জামাআতেরও সমালোচনা করেন । লতিফ সিদ্দীকি বলেন, তিনি জামাআতে ইসলামীর চেয়েও তাবলীগ জামাআতকে বেশি অপছন্দ এবং ঘৃণা করেন । তিনি এ ঘৃণার কারণ হিসেবে বলেন, প্রতিবছর তাবলীগের ২২ লাখ লোক তুরাগ তীরে একত্রিত হয় এবং গাড়ি ঘোড়া থামিয়ে দেয় । দেশের অগ্রযাত্রাকে স্থবির করে দেয় ।
ইসলামের অন্যতম ভিত্তি পবিত্র হজ্জ্ব ও মুসলামানদের অন্যতম ধর্মীয় দায়িত্ব তাবলীগ জামাআত সম্পর্কে লতিফ সিদ্দীকি কর্তৃক ধর্মের অবমাননা ও জঘন্য অপব্যাখ্যার পরে দেশব্যাপী যখন তার বিরুদ্ধে উত্তাল স্লোগান তুলেছিল তখন বিবিসি বাংলা কর্তৃক তাকে তার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল । তিনি সে টেলিফোন সাক্ষাৎকারে তার পূর্বাবস্থায় বহাল থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছিল । একজন নাম সর্বস্ব মুসলমান হিসেবে তিনি অন্য যাই করে বেড়ান না কেন কিন্তু পবিত্র ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটুক্তি করার পরেও তিনি অক্ষত থেকে যাবেন আর দেশের ধর্মভীরু মুসলিম সমাজ চুপ থাকবে এটা ভাবা অমূলক । দাউদ ইব্রাহীম কিংবা তসলিমা নাসরিনদের যে অবস্থা এদেশের মানুষ করেছিল তার চেয়েও ভয়াবহ অবস্থার মূখোমূখি লতিফ সিদ্দিকীকে অবশ্যই হতে হবে । আপাতত কোন শক্তিবলে তিনি নিজেকে নিরাপদ মনে করে গোপনে কিংবা কারও সহায়তায় দেশে আসতে পারেন কিংবা অক্ষত অবস্থায় অবস্থানও করতে পারেন কিন্তু সেটা নিশ্চয়ই স্থায়ী হবে না । গণতন্ত্র কিংবা কারো অধিকার নিয়ে ছিনিমিনি খেলার অপরাধ এদেশের ধর্মভীরু মুসলিম সমাজ ক্ষমার চোখে দেখতে পারে কিন্তু ইসলামের বিরুদ্ধে কোন অপপ্রচার কিংবা মুসলমানদের প্রাণের পুরুষ, মানবতার মুক্তির দিশারী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর বিরুদ্ধে কোন মিথ্যাচার কিংবা তার গুনাবলীর সাথে সাংঘর্ষিক কোন আচরণই মেনে নেয়া হবে না । লতিফ সিদ্দীকিকে যারা পরামর্শ কিংবা সহায়তার আশ্বাস দিচ্ছে কিংবা দেয়ার পরিকল্পনা করছে তাদেরও জেনে রাখা উচিত, এ বাংলায় তাদেরও ঠাঁই হবে না । লতিফ সিদ্দিকীর সাথে তাদেরকেও ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে ঠাঁই নিতে হবে । সভ্যতা কিংবা মানবতার আলো তাদের জন্য নিষিদ্ধ হবেই ।
লতিফ সিদ্দীকির স্পর্ধা দেখে মনে হচ্ছে, একজন নাস্তিকের কাছে দেশের গোটা মুসলিম সমাজ হেরে গেছে । বেশ্যাদের যায়গা এ বঙ্গে হবে কিন্তু নাস্তিক কিংবা মুরতাদকে এ বঙ্গে কোন অবস্থাতেই ঠাঁই দেয়া হবে না । লতিফ সিদ্দীকির বিরুদ্ধে যখন আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্র হবে কিংবা আন্দোলনের ঘোষণার শুরুতেই তাকে তাড়াহুড়া করে গ্রেফতার করা হতে পারে কিন্তু তাকে কেবল গ্রেফতার করার মাধ্যমেই মুসলমান খুশি হবে না । সংসদের সদস্যপদ এবং দেশের নাগরিকত্ব বাতিল করে তাকে সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদানের মাধ্যমে মুসলমানদের কাছে তা প্রকাশ করতে হবে । লতিফ সিদ্দীকির বিরুদ্ধে যে আন্দোলন হবে তাতে কোন রাজনৈতিক গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের ব্যানার থাকবে না । লতিফ সিদ্দীকিসহ এই মতাদর্শীয় সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা দল-মত নির্বিশেষে সকল মুসলিম জাতির অত্যাবশ্যকীয় কর্তব্য । অতীতের ইতিহাস বলে, কোন রক্তচক্ষু কিংবা অন্যকোন ভয়ে মুসলামান জাতি ইসলামের বিজয়ের জন্য পিছু হটবে না বরং ইসলামের বিজয় নিশ্চিত করার জন্য সকল প্রকার ত্যাগ স্বীকার করতে এরা সদা প্রস্তুত । নিশ্চয়ই তারিক বিন যিয়াদের উত্তরসূরীরা ইসলামকে তার যথাযথ মর্যাদা ফিরিয়ে দিতে সকল প্রকার চেষ্টা আমরণ অব্যাহত রাখবে ।
রাজশক্তি যতদ্রুত মুসলমানদের হৃদয়ের আকুতি অনুধাবন করতে পারবে সেটা তাদের জন্য যেমন কল্যানের হবে তেমনি রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলা রক্ষারও সহায়ক হবে । ইসলামকে নিয়ে কটুক্তি করে তিনি এই বঙ্গে বুক ফুঁলিয়ে চলবেন সেটা শরীরে এক ফোঁটা রক্ত অবশিষ্ট থাকা পর্যন্ত হতে দেয়া হবে না । অতিসত্ত্বর লতিফ সিদ্দীকিকে গ্রেফতার করে মুসলমানদেরকে শান্ত করার ব্যবস্থা গ্রহন করা হোক । মুসলমানদের ক্ষোভ থেকে যদি কোন গণবিস্ফোরণের সৃষ্টি হয় তবে তাতে শুধু অপরাধী নয় বরং বহু কিছু ভেসে যাবে । শুধু ইসলাম নয় বরং দেশের অন্য সকল ধর্মের ব্যাপারে একই কথা প্রযোজ্য । ধর্ম সঠিক কি বেঠিক সেটা পরের কথা কিন্তু প্রতিষ্ঠিত কোন ধর্ম ব্যবস্থার বিরুদ্ধেই কোন প্রকার অপপ্রচার চালানো যাবে না । কোন ধর্মের বিরুদ্ধে কোন প্রকার মিথ্যাচার করা যাবে না; ইসলামের বিরুদ্ধে তো নয়-ই । বর্তমানে লতিফ সিদ্দীকিকে গ্রেফতার না করার যুক্তি হিসেবে প্রশাসন স্পিকারের অনুমতির অপেক্ষার কথা জানিয়েছেন । অবশ্যই স্পিকারের অনুমতি দরকার তবে সাবেক সাংসদ গোলাম মাওলা রণিকে গ্রেফতারের সময় কতটা আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছিল ?
রাজু আহমেদ । কলামিষ্ট ।
বিষয়: বিবিধ
১০৬১ বার পঠিত, ১৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
A PHP Error was encountered
Severity: Notice
Message: Undefined offset: 10348
Filename: views/blogdetailpage.php
Line Number: 764
বাক স্বাধীনতার মানে এই নয় যে আপনি অন্যের ধর্মীয় বিশ্বাসে আঘাত করবেন ।
আপনি হয়ত কথায় পারেন , আমি কিন্তু কথায় ভাল না - তবে মাইরটা ভাল দিতে পারি। সেটাই আমার স্বাধীনতা যেমনটা আপনার বাক-স্বাধীনতা।
মন্তব্য করতে লগইন করুন