সামাজিক অস্থিরতার মূলে রাজনৈতিক অসহিষ্ণুতা
লিখেছেন লিখেছেন রাজু আহমেদ ০৪ নভেম্বর, ২০১৪, ১১:৩২:৪৪ রাত
বিশ্ব সভ্যতার উন্নতির সাথে সাথে মানুষ যান্ত্রিক মানবে পরিনত হচ্ছে । গতির পিছনে ছুটতে গিয়ে মানুষের আবেগের বিলুপ্তি ঘটেছে । তাইতো মানুষের প্রতি মানুষের ভালোবাসা, বিশ্বাস, আস্থা এবং শ্রদ্ধাবোধ সেই পূর্বের স্থানে নাই । সভ্যতার পরিবর্তনে মানুষের যেমন ইতিবাচক অর্জন হয়েছে তেমনি নেতিবাচক অর্জনও কম নয় । বিশ্ব সভ্যতার অগ্রগতিতে বিশ্বের উন্নত দেশগুলো ব্যাপক লাভবান হলেও বাংলাদেশের মত তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলো খুইয়েছে বেশি । তবুও বিশ্বের অন্যান্য জাতির সাথে তাল মিলিয়ে চলার যথাসাধ্য চেষ্টা এ জাতি করে যাচ্ছে । সেই চেষ্টার পার্শ্ব গড়িয়ে কখন যে কতগুলো ক্ষতিকর প্রভাব জাতিকে আচ্ছন্ন করেছে তার খবর এরা রাখে নি । যে কারনে শান্তিপূর্ণ একটি দেশে অশান্তির চরম বন্যা বইছে । যাদের হাত ধরে ক্ষতিকর ছোঁয়া জাতি পেল সে তারা কাঁচে আবৃত প্রাসাদের মধ্যে বাস করার সুযোগ পেলেও মাশুল দিতে হচ্ছে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষগুলোকে । অন্যদিকে গতির সাথে তাল মিলিয়ে যদি জাতি উপকৃত হতে পারত তবে কোন অভিযোগ ছিল না কিন্তু দূর্ভাগ্য এ জাতির, তারা সেটাও পারে নি । যখন কোন কূলই রক্ষা হল না তখন হতাশা ছাড়া আর কী অবশিষ্ট রইল ? লাখো মানুষের জীবন এবং অগনিত মানুষের ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন ও স্বতন্ত্র পতাকার মালিক হয়েও গোটা জাতি বিশেষ গোষ্ঠীর কাছে শৃঙ্খলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে । নিজ স্বাধীনতা কিংবা সৃষ্টি ক্ষমতার মাধ্যমে এরা সমাজ কিংবা রাষ্ট্রের জন্য কিছুই করার সুযোগ পাচ্ছে না । বরং কেবল অপরের ফরমায়েশ খাঁটতেই জাতির দিবানিশি ব্যয় হচ্ছে । এভাবে কতদিন চলতে পারে ? যখন মানুষের পিট দেয়ালে ঠেকে যায় তখন মানুষ রক্তের সম্পর্কের আত্মীয়ের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতেও দ্বিধা করে না আর তারা তো অনেক দূরের ! তবে জাতি আজও পূর্ণভাবে জাগে নি । কেবল আড়ামোড়া ভাঙছে । যখন জাগবে তখন হয় পরিবর্তন আনবে নয়ত ধ্বংস করবে । সমাজের সর্বত্র চরম অস্থিরতা বিরাজমান । এ যেন কোন প্রলয়ের ঘনঘটা । ব্যক্তি, পরিবার থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আসনগুলিতে অধিষ্ঠিত ব্যক্তিবর্গের মধ্যে প্রতিযোগিতা চলছে । এদের কেউ ন্যায্য অধিকার চাচ্ছে আবার কেউ সকল ক্ষমতা নিজ করায়ত্বে রাখার অবৈধ প্রচেষ্টা চালাচ্ছে । এ অশনি সংকেতের জন্য কে দায়ী ? নিশ্চয়ই এ ব্যাপারে রাষ্ট্রের ক্ষমতাশীনরা দায় এড়াতে পারে না । লক্ষণ দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, রাজনৈতিক নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গের মধ্যে গণতান্ত্রিক সমন্বয়তার অভাব এবং সিদ্ধান্ত মান্যতার ক্ষেত্রে অসহিষ্ণুতা এর জন্য প্রধানত দায়ী । একটি পরিবারের কর্তা যখন পরিবারের সকল সদস্যদেরকে সমানভাবে ভালোবাসা, শাসন, ভরণ-পোষণ এবং সুবিধা-অসুবিধার দেখভাল করতে না পারে তখন সে পরিবারটিতে যেমন ভাঙ্গন দেখা দেয় এবং পরিবারের সদস্যরা নানাবিধ কুকর্মে জড়িয়ে পড়ে তেমনিভাবেই চলছে বর্তমান বাংলাদেশের চাকা । দেশের অধিকাংশ মানুষ বর্তমান শাসনক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ক্ষমতাশীন দলের মূল শক্তি আওয়ামীলীগকে ভালোবাসলেও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তারা যে প্রক্রিয়ায় ক্ষমতা অর্জন করেছে তা দেশের সিংহভাগ মানুষ ভালোভাবে নেয়নি এবং পছন্দও করেনি । যে কারনে ক্ষমতাশীনদের বিরোধীপক্ষের প্রচেষ্টায় শাসক দলের অতীতের শুভাকাঙ্খী মানুষগুলোও আজ সরকারকে প্রকৃত অভিভাবক হিসেবে গ্রহন করতে ইতঃস্ততা করছে । যারা রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে দেশকে সু-শৃঙ্খলভাবে পরিচালনা করবে সেই তাদেরকে যখন মানুষ অটো কিংবা সেমি-অটো সাংসদ বলে সম্বোধণ করে এবং সাধারণ জনতার একাংশ বুক ফুলিয়ে সরকারকে পূর্ণ অগণতান্ত্রিক সরকার বলে কটুক্তি করে তখন ক্ষমতাশীনদের কানে সে বানী না পৌঁছলেও সরকারকে ভালোবাসে অথচ দূরে অবস্থান করা বাইরের মানুষগুলোর কাছে এ কথাগুলো ভাল ঠেকে না । তখন ধীরে ধীরে ভালোবাসার স্থান দখলে করে নেয় সন্দেহ এবং সংশয় জাগে তাহলে কি এরা আসলেই অগণতান্ত্রিক ? অগণতান্ত্রিক কোন শক্তিকে অন্ধভাবে ভালবাসা যায় কিন্তু তাদের দ্বারা রাষ্ট্রের কোন উন্নতি হয় কি ? অগণতান্ত্রিক ক্ষমতা সর্বদা ব্যস্ত থাকে তাদের বিরুদ্ধ মতকে দমন-পোষণে । যে কারনে সরকারের মূল যে কাজ অর্থ্যাৎ রাষ্ট্রের উন্নতি এবং কল্যানকামীতায় তারা খুব বেশি মনোযোগী হতে পারে না । ফলশ্রুতিতে বাঙালির মূল শক্তি আবেগকে বিসর্জন দিয়ে যে গতির পিছনে অন্ধের মত ছুটে নিজেদের কল্যানের স্বপ্ন বিভোর থাকা হয় সে স্বপ্ন পূরণ হয় না কিংবা হবেও না । কাজেই বেশি কিছু পেতে গিয়ে শেষ সম্বলটুকু হারিয়ে আজ জাতি সত্যিই দিশেহারা । জাতির বেহাল দশার বহিঃপ্রকাশ যেমন শাসকদলের কথায় প্রকাশ পাচ্ছে তেমনি তাদের বিরুদ্ধে গোটা জনগোষ্ঠীর বৃহৎ অংশের আচরণেও দিনে দিনে তা স্পষ্ট হচ্ছে । এখন জাতির লালিত স্বপ্ন এবং বাস্তবতা ‘শ্যাম রাখি না কূল রাখি’ অবস্থার মধ্য দিয়ে অতিক্রান্ত হচ্ছে ।
শাসকগোষ্ঠী চাচ্ছে তাদের অক্ষমতাকে যে কোনভাবে গোপন রাখতে অন্যদিকে জনগণ নতুন কোন স্বপ্নে বুক বাঁধার আশা করছে । এ ক্ষেত্রে শাসকরাই তাদের পরিকল্পনায় জয়ী হচ্ছে কারণ তাদের কাছে শক্তির সাথে কৌশল আছে । যে ফরমূলা প্রয়োগের কারণে শাসকগোষ্ঠী বিরোধী লাঘব-বোয়ালরা যেমন গর্তে লুকিয়েছে তেমনি খেটে খাওয়া মানুষগুলোর আশা-আকাঙ্খা প্রত্যহ খর-কুটোর মত ভেসে যাচ্ছে । তারপরেও মাঝে মাঝে লোকালয় বিচ্ছিন্ন মানুষগুলো উঁকি দেয়ায় এবং দু’একটি স্বপ্নের বাণী প্রচার করায় আবারও মানুষ নতুন করে স্বপ্ন লালন করতে থাকে । তবে তারা জনে না স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে নাকি কেবল স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে যাবে । শাসকরাও তাদের লেলিয়ে বেড়ায় । ইতিহাস বলে, পরাজিতরা সব সময়ে পরাজিত থাকে না কিংবা জয়ীরাও সব সময় মসনদে থাকতে পারে না । যেভাবে সামাজিক অস্থিরতা শুরু হয়েছে তা অস্ত্রের মূখে সমাধান করা সম্ভব নয় । আজ অথবা কাল সমঝোতায় আসতেই হবে । কারন রাজনৈতিক দলের পরস্পর বিরোধীমূখী অবস্থানের মাধ্যমে দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা করা সম্ভব নয় । জাতি আজ ঘোর অমানিষায় নিমজ্জিত । দিনে দিনে দেশের শিক্ষিত-অশিক্ষিত, দক্ষ-অদক্ষ বেকারের সংখ্যা বেড়েই চলছে । আইএলও এর মতে, ২০১৫ সাল নাগাদ দেশের বেকারের সংখ্যা দাঁড়াবে ৬ কোটির কাছাকাছি । যা দেশের মোট জনসংখ্যার ৩৯.৪০ শতাংশ । কর্মহীন এত বিপুল সংখ্যক মানুষের ব্যয়ভার বহন করা এ রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক সাধ্যের বাইরে । এভাবে চলতে থাকলে দেশে সকল প্রকার অপরাধ বাড়তেই থাকবে । কথায় বলে, ‘অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখান’ । দেশের ৬ কোটি মানুষ না হোক অন্তত ১ কোটি বেকার মানুষও যদি বিপথগামী হয়ে যায় তবে রাষ্ট্রের সবক্ষেত্রে অরাজকতা সৃষ্টি হবে । কোন শক্তিই তা রুখতে পারবে বলে বিশ্বাস নয় । দেশের বর্তমান বেকার জনগোষ্ঠীর মাত্র ৫ শতাংশের কর্মসংস্থান করার ক্ষমতা সরকারের আছে । কিন্তু বাকী ৯৫ শতাংশের কর্মসংস্থান বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে করা সম্ভব । কিন্তু বেসরকারি সংস্থা অপরের কর্মসংস্থান করবে কখন ? এখনতো তাদের অস্তিত্ব রক্ষা করাই দায় । রাজনৈতিক অস্থিরতাসহ বিভিন্ন পারিপার্শ্বিক কারনে দিনে দিনে বিদেশী বিনিয়োগকারীরা এদেশে বিনিয়োগে আস্থা হারাচ্ছে এবং ভয় পাচ্ছে । অন্যদিকে দেশের আভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারনে সর্বদা ভীতিকর পরিবেশ বিরাজ করছে । যে কারনে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের মত দেশীয় বিনিয়োগকারীরাও ব্যবসা ঘুটিয়ে নিচ্ছে । অর্থনৈতিক ব্যবস্থা পূঁজিবাদী হওয়ার কারনে দেশে বেকারের সংখ্যার সাথে বাড়ছে কোটি পতির সংখ্যাও । অর্থনৈতিক এ বৈষম্যের কারনে যে কোন সময় গণ-বিস্ফোরণ হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে কি ?
দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে দুর্নীতি । দুর্নীতি কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে সততাও । সৎভাবে কোথাও কিছু করার সুযোগ নেই । গ্রামের চকিদার থেকে শুরু করে সচিবালয় কিংবা তারও উর্ধ্বের ব্যক্তিবর্গের সিংহভাগ অবৈধ পন্থায় সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলছে । হাতে গোনা যে সংখ্যাক মানুষ এ অনৈতিকতা থেকে বাঁচতে চাচ্ছে সমাজ তাদেরকেও বাঁচতে দিচ্ছে না । দুর্নীতির কাছে সবাই যেন আত্মসম্পর্ণ করতে এক প্রকার বাধ্য হচ্ছে । অনৈতিকতা ক্ষনিকের স্বাচ্ছন্দ বহন করতে পারে কিন্তু এটা স্থায়ী কোন উপায় হতে পারে না । রাষ্ট্রীয় ফরমান এবং কঠোরতার মাধ্যমে যদি দুর্নীতির লাগাম টানার ব্যবস্থা করা না হয় তবে সমাজের শৃঙ্খলার ধ্বংস ঠেকাবার সাধ্য আছে কার ? কিন্তু কথা হল, শাসকগোষ্ঠীর নীতি নির্ধারকার কতটুকু স্বচ্ছতা বজায় রাখতে পারছেন । ক্ষমতার মসনদ থেকে নামার পরেই একেক জনের দুর্নীতি দমন কমিশন কিংবা আদালতের বারান্দায় লাইন দিতে দিতে কোমড় ব্যাথা হয়ে যায় । কারো জায়গা শ্রীঘরের কোন বদ্ধ কুঠুরীতেও হয় । আবার কারো কারো সম্পত্তি তো মাত্র পাঁচ বছরে কয়েক হাজার গুনও বৃদ্ধি পায় । শাসকগোষ্ঠীর দূর্বলতার সুযোগ এবং বিরোধীপক্ষের সাথে শাসকাগোষ্ঠীর টানাপোড়েন সম্পর্কের সুযোগ নিয়ে সন্ত্রাসীরা সমাজকে অস্থির করে তুলেছে । সমাজের সকল মানুষকে জিম্মি করে সন্ত্রাসীরা বীরবেশে তাদের কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে । প্রশাসন কিছু ক্ষেত্রে সন্ত্রাসীদের দমনে কাজ করলেও অনেকেক্ষেত্রে সহায়তা করে যাচ্ছে । যদি তাই না হয়, তবে কোন সন্ত্রাসীরই কোন প্রকার অপরাধ সংগঠিত করার সুযোগ পাওয়ার কথা নয় । কিছু কিছু সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ছত্র-ছায়ায় নির্বিগ্নে সমাজরোধী, রাষ্ট্রবিরোধী কাজ করার সুযোগ পাচ্ছে । সময়ের তালে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে খুন-গুম ও হত্যাকান্ড । সমাজের কোন স্তরের মানুষই আজ নিরাপত্তা অনুভব করছে না । কিছু কিছু খুনের ঘটনা এমনভাবে ঘটানো হচ্ছে যা সিনেমার দৃশ্যকেও হার মানায় তবুও তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহন করা যাচ্ছে না কিংবা হচ্ছে না । কখনও প্রমানের অভাব আবার কখনও অধিক ক্ষমতাশীল কারো সুপারিশ কিংবা আইনের ফাঁক গলে তারা বেরিয়ে যাচ্ছে এবং আবারও অতীতের পেশায় ফিরে যাচ্ছে । কাজেই সমাজের স্থিরতা ও শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার সবগুলো প্রতিবন্ধকতা মূলসহ থেকে যাচ্ছে । এমনকি আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও খুন কিংবা গুমের মত গর্হিত কাজের সাথে জড়িয়ে পড়ছে ।
দেশের সবচেয়ে বড় ধ্বস নেমেছে শিক্ষা ব্যস্থায় । শতভাগ পাসের স্বপ্নে বিভোর সরকার শিক্ষা ব্যবস্থার ধ্বংসের পদধ্বনি শুনতে পাচ্ছে না । পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস, নকল, দুর্নীতি, শিক্ষাব্যবস্থায় দলীয় করণ কিংবা টাকার বিনিময়ে অযোগ্য, অদক্ষদের নিয়োগ দিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংসের খাদে ফেলে দেয়া হয়েছে । বর্তমান অবস্থা থেকে খুব দ্রুত উত্তরণ করা সম্ভব নয় তবে যে পরিকল্পনায় শিক্ষার মান পূনঃরায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব সে পথে সরকার মোটেও হাটছে না । স্বাধীনতা পরবর্তী দীর্ঘ সময় পাড় হলেও সরকার এখনও শিক্ষা ব্যবস্থার উপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছে । এ পর্যবেক্ষন যদি সর্বজনীন হত তবুও কথা ছিল । কাজেই বর্তমান মানহীন শিক্ষা ব্যবস্থা অনুসরণ করে যারা নামধারী শিক্ষিতের সনদ নিয়ে বের হবে তাদের দ্বারা সমাজের বোঝা বাড়ানো বহি আর কোন উপকার হবে বলে মনে হয় না । কাজেই কেবল সনদ সর্বস্ব শিক্ষিত প্রজন্ম দ্বারা নিকট ভবিষ্যতেই সমাজ ব্যবস্থা আরও অস্থির ও অস্থিতিশীল হয়ে উঠবে । আমরা প্রযুক্তি পেয়েছি কিন্তু তা পরিকল্পনার অভাবে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারছি না । দেশ ডিজিটাল হবে বলে স্বপ্ন দেখছি কিন্তু দেশের ৫৫ শতাংশ এলাকায় এখনও বিদ্যুতের সংযোগ পায়নি । যারা প্রযুক্তির সুবিধা পেয়েছে তারাও এটাকে ব্যবহারের চেয়ে অপব্যবহার করছে বেশি । গোটা জগতে এমন কোন অপরাধ কিংবা অন্যায় নেই যা প্রযুক্তির মাধ্যমে করা না যায় । সুতরাং প্রযুক্তি ব্যবহারে যতদিন সুষ্ঠু এবং গ্রহনযোগ্য নীতিমালা না আসবে ততদিন প্রযুক্তির ক্ষতিটাই আমাদের উপর বেশি প্রভাব ফেলবে । গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের প্রশাসনের দলীয়করণ একটি জঘণ্য প্রথা । অথচ এ প্রথাই ভূতের মত জাতির ঘাড়ে চেপে বসেছে । স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে যে দল যখন সরকার গঠন করেছে তারা প্রশাসনকে দলীয়করণ করার মাধ্যমে প্রশাসনকে তাদের স্বার্থে ব্যবহার করেছে । যে কারণে সাধারণ মানুষ সকল সরকারের আমলেই হয়রানির শিকার হয়েছে কিংবা ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছে । প্রশাসন সরকারে আজ্ঞাবাহী হবে একথার অর্থ প্রশাসন ক্ষমতাশীনদের অন্যায় কিংবা বিধি বহিভূর্ত কর্মকান্ডের সাফাই গাইবে তা কিন্তু নয় । তবে এমনটাই চলছে । এছাড়াও অর্থনৈতিক নিরাপত্তহীনতা, রাজনৈতিক কর্তাব্যক্তিদের দায়িত্ববোধহীন বক্তব্য, প্রত্যহ দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, জাতিকে ধর্মহীন করার প্রচেষ্টা, সড়ক রেল ও নৌ দূর্ঘটনা, ছাত্র শিক্ষক কিংবা ডাক্তার রোগীর সম্পর্কের অবনতি, ছাত্রদেরকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার, অপসংস্কৃতির অনুসরণ ও অনুকরণ, প্রতিবেশি রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক রাখার নামে সর্বস্ব উজাড় করে দেওয়া, সম্মানীয়দের সম্মান প্রদান না করা এবং অযোগ্যদের দায়িত্বশীল করে মর্যাদার চেয়ারে বসানো, পারিবারিক বন্ধনের ভিত্তিমূলে আঘাত দেওয়ার চেষ্টা, রাজনৈতিক দলেরে নেতাদের মধ্যে পারিস্পরিক বিশ্বাসের অভাব, দলীয় স্বার্থান্ধের কারনে জাতীয় স্বার্থ অবজ্ঞা করা এবং শাসক ও প্রজাদের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টিসহ বিভিন্ন কারনে আজ সামাজিক অস্থিরতা চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে ।
এভাবে দূরাচার-অনাচার চলতে থাকলে জন বিষ্ফোরণ অবিশ্বম্ভাবী । যার কেবল প্রস্তুতি পর্ব চলার কারণেই সমাজের অস্থিরতা চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে । সমাজের বর্তমান অবস্থার জন্য কে দায়ী সে ব্যাপারে একক সিদ্ধান্ত দেয়ার যোগ্যতা রাখি না তবে বিশ্বাস করি পাঠক আমার মত নির্বোধ নয় । তারা সমাজ তথা রাষ্ট্রের সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে মূহুর্তেই কারণ চিহ্নিত করতে পারবেন এবং এর সমাধানের পথও বলে দিবেন । যে ভাবে চলছে তাতে জাতির অস্তিত্ব হুমকীর মূখে । নিজস্ব প্রয়োজনেই এভাবে আর চলতে দেয়া যায় না । কিন্তু যাদের বোঝার কথা সেই রাজনৈতিক কর্তারা এত সহজে বুঝবেন কি ? জাতীয় স্বার্থে তারা ঐক্যমত্য পোষণ করে সমাজকে নিশ্চিত ধ্বংসের খাঁদ থেকে টেনে তুলবার দায়িত্ব নিবেন কি ? আলোচনার মাধ্যমে যদি পারস্পরিক কলহ ভূলে সম্বিলিতভাবে রাষ্ট্রের হাল না ধরেন তবে সাধারণ মানুষ মরার আগে আপনাদেরকেও চুবিয়ে যাবে । সুতরাং আপনাদের প্রতি মানুষের যে ভালোবাসা তা আঁকড়ে ধরার যোগ্যতা অর্জন করুন এবং সকল অন্যায় কার্যকলাপ বন্ধে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান রইল । সর্বোপরি গণতন্ত্রের চর্চা ছাড়া আপাতত মুক্তি নাই এবং সে গণতন্ত্র অবশ্যই সংলাপ এবং পারস্পরিক সমঝোতামূলক মনোভাবের হাত ধরে আসবে । আশা নয় বিশ্বাস, বর্তমান শাসকগোষ্ঠী এবং ভবিষ্যতেও যারা জাতিকে শাসন করার স্বপ্ন দেখেন তারা জনগণের ক্ষোভের গোপন ও প্রকাশ্য ভাষার বোঝার চেষ্টা করবেন এবং জনতার ভালোবাসা আঁকড়ে ধরে তবেই তাদেরকে পরিচালিত করতে আসবেন । ইচ্ছা করে কেউ ঘৃণার পাত্র হয়ে চিরকালের জন্যে ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ হওয়র মত বোকামী করবেন না ।
রাজু আহমেদ । কলামিষ্ট ।
বিষয়: রাজনীতি
৮৮২ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন