ছাত্রদলের নবগঠিত কমিটিকে শুভেচ্ছা এবং তাদের কাছে প্রত্যাশা
লিখেছেন লিখেছেন রাজু আহমেদ ১৫ অক্টোবর, ২০১৪, ১১:০৫:৫২ রাত
দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে ঘোষিত হল বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তর রাজনৈতিক দল (বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল) বিএনপির অঙ্গ সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি । ১৪ই অক্টোবর মঙ্গলবার রাতে বিএনপির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে একথা জানানো হয় । রাজিব আহসানকে সভাপতি এবং মোঃ আকরামুল হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করে ২০১ সদস্য বিশিষ্ট ছাত্রদলের আশিংক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে । ছাত্রদলের এবারের কেন্দ্রীয় কমিটির নাম ঘোষণা করার পূর্বে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া একাধিকবার ছাত্রদলের নেতা কর্মীদের সাথে মত বিনিময় করেছেন এবং তাদের মনোভাব বোঝার চেষ্টা করেছেন । বেগম খালেদা জিয়া ছাড়াও বিএনপির শীর্ষ নেতাদের অনেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়ণরত বিএনপির সমর্থক ছাত্র সংগঠনের নেতা কর্মীদের পরামর্শ এবং ছাত্রনেতাদের জনপ্রিয়তা বাছাই করে তবেই এবারের ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করেছে । দলের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগী ছাত্রদেরকে প্রধান্য দিয়েই এবারের ছাত্রদলের কমিটি সাজানো হয়েছে । বিশেষ করে সরকারের সাথে বিরোধ এবং আসন্ন আন্দোলনে সফল হওয়ার প্রক্রিয়া স্বরূপ এই কমিটি ঘোষণা করার চেষ্টা করেছে হয়েছে বলে অনেক অভিমত প্রকাশ করেছেন । নবগঠিত ছাত্রদলের কমিটিতে যারা স্থান পেয়েছে তাদেরকে প্রাণবন্ত শুভেচ্ছা । ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় আংশিক কমিটি ঘোষণা করার পূর্ব মূহুর্ত পর্যন্ত বিএনপির নেতারা বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে কমিটির সদস্যদের নাম ঘোষণা করলেও দলের কিছু ছাত্র তাদের আকাঙ্খিত পদ পাননি কিংবা একেবারেই পদবঞ্চিত হয়েছে । কাজেই তাদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ অনেক ক্ষেত্রেই চাপা না থেকে বরং সেটা প্রকাশ্য প্রতিবাদে রুপ নিয়েছে এবং তারা রাস্তায় মিছিল করে এর বিরুদ্ধে তাদের দাবী জানিয়েছে । পদবঞ্চিতদের ক্ষোভ অস্বাভাবিক নয় কিন্তু ছাত্রদলের কমিটিতে যারা স্থান পেয়েছে তারা তাদের যো্গ্যতা বলেই স্থান পেয়েছে বলে বিশ্বাস । উপরন্তু ছাত্রদলের নবগঠিত কমিটিতে বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান এবং বিএনপির অন্যান্য শীর্ষ স্থানীয় নেতাদের পূর্ণ সম্মতি রয়েছে । সুতরাং দলের নেতৃত্বস্থানীয়দের প্রতি যাদের আস্থা নেই তারা সে অর্থে দলের কি উপকার করতে পারবে সেটা প্রশ্নবিদ্ধ । অতএব যারা নবগঠিত ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে তাদের যোগ্যতাবলে স্থান করতে পেরেছে এবং যারা দূর্ভাগ্যের কারনে হোক কিংবা অন্যকোন কারনেই হোক তাদের আকাঙ্খিত গন্তব্যে পৌঁছতে পারে নি, তাদের উভয়পক্ষের উচিত দলের সিদ্ধান্ত মেনে ভবিষ্যতেও স্থান ধরে রাখা কিংবা স্থান করে নেয়ার চেষ্টায় পরিকল্পনা করা এবং সে অনুযায়ী সক্রিয় ভূমিকা পালন করা ।
ছাত্র শব্দটি শুনলেই হৃদয়ের গভীরে নাড়া দেয় । এক ধরণের শ্রদ্ধা বোধ জন্ম হয় । ছাত্র জীবনই সকল গুন অর্জন করার অন্যতম ক্ষেত্র । সেই ছাত্ররা যদি ছাত্রাবস্থায় জাতিকে নেতৃত্বদানের গুনাবলী অর্জন করতে পারে তবে তাদের জন্য গর্ভে বুকটা ফেঁপে ওঠাই স্বাভাবিক । ব্রিটিশদেরকে ভারতীয় উপমহাদেশ হতে তাড়ানো থেকে শুরু করে ভারত পাকিস্থান বিভিক্তিসহ সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ছাত্রদের অনস্বীকার্য ভূমিকা ছিল । বিশেষ করে পশ্চিম পাকিস্থানী শাসক গোষ্ঠীর স্বৈরতান্ত্রিক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রাজপথে আন্দোলন করে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়ে ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারী মাতৃভাষা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে পূর্ববাংলার ছাত্রসমাজের ভূমিকা ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ রয়েছে । পশ্চিম পাকিস্থানী শাসকগোষ্ঠী কর্তৃক পূর্ব পাকিস্তানী জনগণকে নির্যাতন নিপীড়নের বিরুদ্ধে ১৯৪৭ সালের ১৪ই আগষ্ট থেকে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতিটি সফল আন্দোলনে ছাত্রদের ভূমিকা ছিল অনবদ্য । দেশে স্বাধীন হওয়ার পরেও ছাত্রদের ভূমিকা স্তিমিত হয়ে যায়নি । ১৯৯০ সালে স্বৈরচার বিরোধী আন্দোলনে শহীদ নূর হোসেনদের আত্মাহুতি আজও ইতিহাসের পাতায় ছাত্রদের পক্ষে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে রয়েছে । এছাড়াও দেশের যখনি কোন গভীর সংকট দেখা দিয়েছে তখনই ছাত্ররা সে সকল সংকট কাটিয়ে উঠতে রাজপথে নেমেছে । সমাজ গঠন থেকে শুরু করে রাষ্ট্রকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার প্রতিটি পরর্য্যায়ে ছাত্রদের উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে । সকল অর্জনের পরেও কিছু বিপথগামী ছাত্রদের অনৈতিক কার্যকলাপে ছাত্রদের মহৎ কাজগুলোকে ম্লান করে দিতে চেয়েছে । তবে একদল নির্ভীক ও দেশপ্রেশী ছাত্রদের প্রাণান্তর প্রচেষ্টায় অশুভ শক্তির সে অপতৎপরতা সফল হতে পারে নি কিংবা কোনদিন পারবেও না । ছাত্র বলতেই এক ধরনের আদর্শের প্রতিমূর্তি মানসপটে ভেসে উঠে । ছাত্ররা সমাজকে উন্নত করার জন্য যেমন বই-খাতা-কলম নিয়ে সংগ্রাম করে তেমনি কোন অশুভ শক্তি রাষ্ট্রীয় শান্তি-শৃঙ্খলা ব্যাহত করলে তাদেরকে বিভিন্ন পারিপার্শ্বিক চাপ প্রয়োগে দমন করতেও স্বিদ্ধ হস্ত । জাতীয়তাবাদের চেতনায় উদ্ধুব্ধ নবগঠিত ছাত্রদলের কমিটিও এ দেশ এবং এদেশের মানুষের মঙ্গলের চিন্তায় সর্বদা কাজ করার অঙ্গীকারাবদ্ধ বলেই বিশ্বাস ।
নবগঠিত ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে প্রত্যাশ অনেক, তবে তার কোনটাই সম্পন্ন করা তাদের জন্য অসম্ভব নয় । ছাত্রজীবনের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব জ্ঞানার্জনের সাথে যুক্ত থাকা । আশা নয় বিশ্বাস, ছাত্রদলের নেতা কিংবা কর্মীর কেউ এ পথ থেকে বিচ্যূত হবে না । কেন্দ্রীয় কমিটি গঠিত হওয়ার পর তাদের সর্বপ্রথম এবং সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব গোটা দেশের ছাত্রদলের স্থানীয় এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কমিটি গঠন করা । এক্ষেত্রে যতটা স্বচ্ছ থাকা যাবে ততটাই দল এবং জাতির মঙ্গল হবে । দেশের সর্বাঙ্গ ঘুনে ধরতে পারে কিন্তু ছাত্রদেরকে কোন ব্যাধি কর্তৃক আক্রমন করার সুযোগ দিতে নাই । একটি রাষ্ট্রের ছাত্র সমাজ যদি বিপথগামী হয়ে যায় তবে সে দেশের চেয়ে দুর্দশাগ্রস্থ দেশ আর হতে পারে কী ? কখনও কখনও বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশিত হয় ছাত্র সংগঠনের অনৈতিক কার্যকলাপের কথা । অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার, অন্যায়ভাবে কর্তৃত্ব খাটানো, টেন্ডারবাজী, দখলবাজীসহ বিভিন্ন অপরাধ ও অপকর্মে ছাত্ররা জড়িয়ে গেছে বলে বিভিন্ন মহল থেকে দাবী উঠছে । ছাত্ররা এ জাতির ভবিষ্যত । তাদের যদি এরকম অনৈতিক পদস্খলন হয় তবে জাতির ভবিষ্যত, রাষ্ট্রের আগামী কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে সেটা ভেবে দেখা আবশ্যক ?
দেশের ছাত্র সংগঠনগুলোর বিভিন্ন দলের পোশাকী নাম থাকতে পারে কিন্তু তারা অনৈতিক কাজে লিপ্ত হয়ে রাষ্ট্রের হুমকি হতে পারে না । দেশের একেকটি ছাত্র সংগঠন অন্য ছাত্র সংগঠনগুলিকে তাদের প্রতিপক্ষ মনে করে । রাজনৈতিক মতাদর্শের কারনে সেটা মনে করা অস্বাভাবিক নয় তবে নীতি-নৈতিকতাকে জলাঞ্জলি দিয়ে একটি ছাত্র সংগঠন অন্য ছাত্রসংগঠনের উপর চড়াও হওয়া মূলত ছাত্রত্বের মূল ভীতে আঘাত করার নামান্তর । রাষ্ট্রের উন্নয়ণে ছাত্ররা কাজ করবে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এবং এটাই হওয়ার কথা । কিন্তু আমাদের দেশের ছাত্র সংগঠন গুলির অবস্থা কি ? একই শ্রেণী কক্ষে একই বেঞ্চে কিংবা পাশাপাশি বেঞ্চে বসে একই শিকক্ষের কাছ থেকে শিক্ষা অর্জন করে সেই ছাত্ররা একজন আরেকজনের জীবনের শত্রু হয় কিভাবে সেটাকে বো্ধগম্য নয় । যে ছাত্ররা দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করবে সেই ছাত্ররাই যদি পারস্পরিক কামড়া-কামড়ি(!) কিংবা টানা হেঁচড়ায় মনোযোগী হয় তবে দেশের উন্নতি হবে কোন পথে ? সদ্য গঠিত ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটিসহ সকল ছাত্র সংগঠনের নেতা কর্মীদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান সবার আগে দেশের মঙ্গলের কথা ভাবতে হবে । ছাত্ররা জ্ঞানী হলে দেশ উন্নতি করবেই । সুতরাং দেশের প্রত্যাশা পূরণের পথ থেকে কখনো যেন কোন ছাত্রই বিচ্যুত না হয় সেটাই হোক ছাত্র সমাজের দৃঢ় শপথ ।
রাজু আহমেদ । কলাম লেখক ।
বিষয়: বিবিধ
৮৪৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন