এরা কারা- মুসুল্লী না জুতা চোর ?
লিখেছেন লিখেছেন রাজু আহমেদ ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০৩:৩৬:১১ দুপুর
এ বিষয়ে হয়ত লেখা হত না যদি আমার জুতা চুরি না হত । এতদিন কেবল বন্ধু এবং আশেপাশের লোক হতে মসজিদ থেকে জুতা চুরি হওয়ার কথা শুনে এসেছি । কিন্তু হঠাৎ করে এ ব্যাপারে আমারও অভিজ্ঞতা হল । ১৮ই সেপ্টেম্বর বরিশাল সরকারী বি এম কলেজের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ থেকে আমিসহ আরও তিন মুসল্লীর জুতা চুরি হয়েছে । মাগরিবের নামাজ শেষে জুতা রাখার জন্য নির্ধারিত বাক্সে আমাদের জুতার উপস্থিতি ছিল না । অনেক খোঁজাখুজির পরেও যখন জুতার হদিস পেলাম না তখন অনেকটা নিশ্চিত হলাম আমরা যারা জুতা হারিয়েছি কিংবা আমাদের জুতা চুরি হয়েছে । আমাদের জুতাগুলো আজ অন্য মানুষের মালিকানায় চলে গেছে । মসজিদের ইমাম সাহেবের সাথে এ ব্যাপারে আলাপ করে জানা গেল, শুধু আজকেই নয় বরং প্রায় প্রতিনিয়ত এখান থেকে জুতা চুরি হয় । এমনকি ইমাম সাহেবের জুতাও চুরি হয়েছিল । তবে আজ পর্যন্ত চোর চিহ্নিত কিংবা পাকড়াও হয়নি । শুধু বি এম কলেজের মসজিদে নয় বরং সারা বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি ছোট-বড় মসজিদ থেকে জুতা চুরির ঘটনা শোনা যায় । দু’একবার চোর চিহ্নিত হলেও এ ব্যাপারটিকে ততোটা কঠোর দৃষ্টিতে দেখা হয়না বলে সামান্য কিছু শাস্তির বিনিময়ে চোরেরা মুক্তি পায় ।
বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তর মুসলিম দেশ । ইসলামের অন্যতম ভিত্তি নামাজ এবং এ নামাজ আদায়ের অন্যতম স্থান হল মসজিদ । মসজিদে গিয়ে জামা’আতের সাথে নামাজ আদায়ের ব্যাপারে ইসলাম অত্যন্ত গুরুত্বারোপ করেছে এবং ইহাতে অধিক সওয়াবের কথাও বর্ণিত হয়েছে । ইসলাম ধর্মাবলম্বী পুরুষেরা সাধারণত মসজিদের গিয়ে জামা’আতের সাথে নামাজ আদায় করতে আগ্রহী । তবে কিছু প্রতিকূলতা মানুষকে জামা’আতে নামাজ আদায়ের বাসনা থেকে বিরত রাখে । সাধারণত যারা ধর্মীয় আদেশের ব্যাপারে কিছুটা উদাসীন তারা মসজিদে নামাজ আদায় করতে গিয়ে যদি কখনো কোন ধরনে সমস্যার মুখোমুখি হয় তখন তাদের নামাজের প্রতি একটি ভিন্ন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় । মুসলিম বিশ্বে ইন্দোনেশিয়ার পরে বাংলাদেশের অবস্থান হলেও এদেশের অধিকাংশ মানুষ শুধু নামকাওয়াস্তে মুসলিম । ইসলামী স্কলারদের মতে, এদেশের সকল মুসলমান যদি নামাজ আদায় করত তবে বর্তমানে যে পরিমান মসজিদ আছে তার চেয়ে আরও কয়েকগুন বেশি মসজিদের প্রয়োজন হত । এরপরেও যারা মসজিদে গিয়ে অনিয়মিত দু’চার ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে তারা মসজিদ সংশ্লিষ্ট কোন খুঁত পেলেই সেটা ধর্মের সাথে জুড়ে দেয় । এ ধরনের মুসল্লীরা এমনকি নিয়মিত মুসল্লীরাও যখন মসজিদে গিয়ে কোন প্রকার আর্থিক ক্ষতিতে পতিত হয় তখন তাদের মধ্যে বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় ।
চুরি কোন অবস্থাতেই গ্রহনযোগ্য কোন কাজ নয় অধিকন্তু সেটা যদি হয় মসজিদ থেকে জুতা চুরি তবে তো কথাই নেই । প্রশ্ন জাগে, মসজিদ থেকে কারা জুতা চুরি করে ? এক্ষেত্রে প্রথমত দু’টি উত্তর আসতে পারে । প্রথমতঃ যারা বিভিন্ন নেশায় আক্রান্ত । লোক দেখানো নামাজের উদ্দেশ্যে মসজিদে প্রবেশ করে এরা নেশার টাকা ঝোগাড় করার জন্য মুসুল্লীদের জুতা টার্গেট করে । এরপর সবাই যখন আল্লাহর হুকুম পালনে ব্যস্ত থাকে তখন এরা অতি গোপনে ও সাবধানতার সাথে দামী জুতা নিয়ে বেরিয়ে পরে । দামী জুতাগুলো যে তারা ভালো দামে বিক্রি করতে পারে তাও নয় । হাজার টাকা কিংবা তারও চেয়ে বেশি দামের জুতাগুলো তারা মাত্রা কয়েক টাকার বিনিমিয়ে বিক্রি করে দিয়ে তাদের নেশার টাকা জোগাড় করে । দ্বিতীয়তঃ মসজিদ থেকে যারা জুতা চুরি করে তারা বিভিন্ন ইসলাম বিদ্বেষী সংস্থার কর্মীও হতে পারে । বিভিন্ন আন্তর্জাতিক এবং দেশীয় ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষী কিছু সংস্থা বেতনের বিনিময়ে এমন কিছু লোক নিযুক্ত করতে পারে যাদের কাজ মসজিদে মসজিদে জুতা চুরি করা । এরা জুতা বিক্রি করে অর্থ লাভ করবে এমন কোন চিন্তা তাদের নাও থাকতে পারে বরং মুসুল্লীদের জুতা তারা ফেলেও দিতে পারে । তাদের উদ্দেশ্য কেবল মুসলিমদের মনে ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে বিরুপ ধারণা সৃষ্টি করে দেয়া । গত কয়েক বছর পূর্বে একটি পত্রিকায় এসেছিল, একটি মসজিদ থেকে জুতা চোর পাকড়াও হওয়ার পর তার জবানবন্দী । তিনি ছিলেন একটি আন্তর্জাতিক ইসলাম বিদ্বেষী সংস্থার কর্মী । তার কাজ ছিল বিভিন্ন মসজিদ থেকে এক জোড়া কিংবা জোড়ার একখানা জুতা নিয়ে দূরে কোথা কিংবা ড্রেনে ফেলে দেওয়া । যাতে মানুষ ইসলামের প্রতি আস্থা হারিয়ে নামাজ ছেড়ে দেয় । কেননা ইসলাম বিরোধী পক্ষ বিশ্বাস করে, যে মুসলিম নামাজ আদায় করে না তার সাথে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের কোন পার্থক্য থাকে না । মসজিদ থেকে যারা জুতা চুরি করে তারা পেশাদার চোরও হতে পারে । যারা জুতা চুরি করে বিভিন্ন মুচি কিংবা পথব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে । যদি তাই না হয় তবে ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরের মুচি কিংবা ফুটপাতে বসে যারা পুরানো জুতা বিক্রি করে তাদের জুতার উৎস কোথা থেকে ?
মসজিদ থেকে যারা জুতা চুরি করার সাহস রাখে তাদের ব্যাপারে কোন নৈতিকতা বোধ কাজ করবে তা অন্তত আমার জানা নাই । সরকারেরও এখানে তেমন কোন পদক্ষেপ নেয়ার আছে কিনা তাও বোধগম্য নয় । তবে যারা মসজিদে নামাজ আদায়ের উদ্দেশ্যে গিয়ে জুতার মত প্রয়োজনীয় জিনিস হারিয়ে ফেলেন তাদের কষ্টের মাত্রাটা অনেক গভীর । যারা প্রকৃত খোদাভীরু তাদের হাজার জোড়া জুতা মসজিদ থেকে চুরি হলেও তারা বিন্দুমাত্র বিচলিত না হয়ে বরং আল্লাহর উপর দৃঢ় আস্থা ও বিশ্বাস রেখে ধৈরর্য্য ধারণ করবে কিন্তু যারা নামের মুসলাম কিংবা লোকের দেখাদেখি দু’এক ওয়াক্ত নামাজ মসজিদে আদায় করে তারা মসজিদে জুতা খুইয়ে তাদের মনোভাব কোন পর্যায়ে পৌঁছে তা সহজেই অনুমেয় । সুতরাং মসজিদ থেকে যারা জুতা চুরি করে তাদের ধরার জন্য মসজিদ কমিটি কিংবা স্থানীয় জনসাধারণকে ফাঁদ পাততে হবে এবং চোর ধৃত হলে তাকে দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দিতে হবে । দু’একজন মানুষের জন্য ইসলামের মৌলিক ইবাদতের ব্যাপারে মানুষের ভিন্ন ধারনা সৃষ্টি কোন অবস্থাতেই মেনে নেয়া যায় না । ১৫কোটি মুসলমানের শাসক হিসেবে সরকারকেও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে হবে । প্রশাসন যদি দেশের বড় বড় মসজিদগুলোতে প্রহরীর ব্যবস্থা করে দেয় তবে একদিকে যেমন বেকারের কর্মসংস্থান হবে তেমনি মসজিদে এসেও মানুষের মালের নিরাপত্তা থাকবে । জুতার মূল্য খুব বেশি না হলেও হাপিত্যেষের বাজারে নিত্য জুতা ক্রয় করা আসলেই অসম্ভব । কাজেই যারা মসজিদে কেবল জুতা চুরির উদ্দেশ্যে যায় তাদেরকে চিহ্নিত করে জনসমক্ষে পরিচয় করিয়ে দেয়া দরকার ।
রাজু আহমেদ । কলামিষ্ট ও সাংবাদিক ।
বিষয়: বিবিধ
১১৮১ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আপনার জন্য সমবেদনা আপাতত। তবে এই অবস্থার অবসানে মসজিদে প্রতি কাতারে জুতা রাখার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এতে বেশি ব্যায় হবেনা।
মন্তব্য করতে লগইন করুন