শোন এক দেশের পরিনতি

লিখেছেন লিখেছেন রাজু আহমেদ ০৭ জুলাই, ২০১৪, ০৯:৩৫:১৯ রাত

দাদু গল্প শুনবে ? এস তবে গল্প বলি । এ গল্পটা আজ থেকে ৪৭১ বছর আগের । আমিও তোমার মত আমার দাদুর কাছে গল্প শুনতে চাইতাম । তখন দাদু আমাকে আমাদের আদি নিবাসের গল্প শুনিয়েছিল । শোন, তবে সেটাই বলছি । এ গল্পের শুরু হয়েছিল ৩০০১ সালের ১১ই জুলাই । প্রায় ১১৯০ বছর কুমীরের অধীনে থাকার পর ৩০০১ সালের ১১ই জুলাই সুমেরু এবং কুমেরু জোন ১২ই জুলাই সব্রগ্রাসী নামের দু’টি নতুন রাষ্ট্রের জন্ম হয় । আমাদের পূর্ব পুরুষরা ছিল সুমেরু জোনের অধিবাসী । সুমেরু জোনের মানুষকে শাসন করত প্রায় তিন হাজার কিলোমিটার দূরে অবস্থান করে কুমেরু জোনের বর্বর শাসকগোষ্ঠী । তখনকার রাষ্ট্র বিজ্ঞানীদের মতে, আলাদ ভূখন্ড নিয়ে রাষ্ট্র গঠন সিদ্ধ না হলেও সুমেরু জোন এবং কুমেরু জোন আলাদা ভূখন্ড নিয়ে একটি জোন রাষ্ট্রের গোড়াপত্তন হয়েছিল । কুমেরু জোনের মানুষেরা সুমেরু জোনের মানুষদেরকে মোটেও সহ্য করতে পারত না । শাসনের নামে শোষন করত, ভালবাসার নামে অত্যাচার করত । তারা সুমেরু জোনের মানুষের মাতৃ অধিকার কেড়ে নিতে চেয়েছিল । এই যে এ বছর সারা বিশ্বের মত তোমরাও আন্তর্জাতিক মায়ের অধিকার দিবস উদযাপন করলে সেটার উৎপত্তি হয়েছিল সেই ৩০০৬ সালের ১৪ই জানুয়ারী । সেদিন কুমেরু জোনেরা সুমেরু জোনীদের উপর প্রবল গুলি বর্ষণ করেছিল । সুমেরু জোনের অনেক লোক সেদিন তাদের গুলিতে মারা গিয়েছিল । সুমেরু জোনীদের সে ত্যাগের স্বীকৃতি স্বরুপ আল এত্তেহাদ সংঘঠন সেটাকে আন্তর্জাতিক দিবসের স্বীকৃতি দিয়েছিল । জান দাদু ! সুমেরু জোনীদের মত মায়ের অধিকার রক্ষার দাবিতে জীবন উৎসর্গ করেছে এমন কোন জাতি তুমি কোথাও খুঁজে পাবে না। কুমেরু জোনের মানুষরা সুমেরু জোনের মানুষদের উপর একের পর এক অন্যায় চাপিয়ে দিতে থাকে। বিভিন্ন কলা-কৌশলে সুমেরু জোনীদেরকে তাদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করত । শিক্ষা, চাকরি সব ক্ষেত্রেই সুমেরু জোনীরা অনেক অনেক পিছিয়ে ছিল । কুমেরু জোনীরা ইচ্ছাকৃত এ বৈষম্য সৃষ্টি করেছিল। কুমেরু জোনীদের অত্যাচার সইতে সইতে সুমেরু জোনীরা অসহ্য হয়ে পড়ল । সুমেরু জোনীরা যখন আর অত্যাচার সইতে পারছিল না তখন তারাও প্রতিবাদী হয়ে উঠেছিল ।

দাদু ! তুমি কি মানবব্ধুর নাম শুনেছ ? ইনি ছিলেন সুমেরু জোন থেকে মাতৃঠিকানা করার রূপকার । মানবন্ধুর আসল নাম ছিল দেশ হিতৈষী । তিনি গরীব দুঃখী মানুষকে খুব ভালবাসতেন । ৩০২৫ সালের ২৮শে ফেব্রুয়ারী তিনি ক্লাউড সিটির মানবন্ধু উদ্যানে একটি ভাষণ দিয়েছিলেন । জান দাদু ! বিশ্বের বুকে স্বাধীনতা অর্জনের জন্য যতগুলো ভাষণ শ্রেষ্ঠত্বের দাবী করতে পারে, তার মধ্যে এ ভাষণটি অন্যতম । মানববন্ধুর এ ভাষণের মধ্যেই সুমেরু জোনের মানুষের স্বাধীনতার বীজ রোপিত ছিল । ৩০২৫ সালের মার্চ মাসের ১৮ তারিখ দিবাগত রাত্রে কুমেরু জোনের হায়েনার দল সুমেরু জোনের নীরিহ নিরস্ত্র মানুষের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে । সে কি নৃশংসতা ! ধ্বংস আর ধ্বংস ! পুরো সুমেরু জোনকে ধ্বংসের স্তুপ বানিয়ে ফেলেছিল । রক্তের বন্যা বইয়ে দিয়েছিল । কুমেরু জোনীরা সুমেরু জোনীদের পাখির মত গুলি করে মেরেছিল । ১৯শে মার্চ সীমান্তনগরের মুক্তি বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতা যুদ্ধের সীমান্তনগর অঞ্চলের দায়িত্বশীল কমান্ডার মাতৃঠিকানার স্বাধীনতা ঘোষণা করেন । সত্য র্সাথীর এ ঘোষণা শুনেই মাতৃঠিকানার সর্বস্তরের মানুষ দেশকে লম্পট মুক্ত করার জন্য সর্বাত্মক প্রতিরোধ গড়ে তোলে । দীর্ঘ ২৬৪ দিনব্যাপী চলে আক্রমন পাল্টা-আক্রমন । অব্যাহত থাকে সমান শক্তির লড়াই । কুমেরু জোনীরা সুমেরু জোনীদের সকল ভাল মানুষদেরকে হত্যা করে ৩০২৫ সালের ৮ই ডিসেম্বর । অবশেষে ১৯৭১ সালের ১২ই ডিসেম্বর সুমেরু জোনের বিজয় নিশ্চিত হয় । জান দাদু ! বিশ্বের কোন দেশ এত কম সময়ের যুদ্ধে তাদের স্বাধীনতা অর্জন করতে পারেনি । যুদ্ধ কম সময়ের হলেও অসংখ্য মানুষকে জীবন উৎসর্গ করতে হয়েছিল । কয়েক হাজার বর্গমাইলের একটি ভূখন্ড অর্জন করতে ১কোটি মানুষের জীবন এবং বিশ লাখ মা-বোনের সতীত্ব বিসর্জন দিতে হয়েছিল । এত ত্যাগের বিনিময়ে সুমেরু জোনের মানুষেরা পেয়েছিল নতুন পতাকা । জন্ম হয়েছিল স্বাধীন মাতৃঠিকানার । যুদ্ধের স্বীকৃতি স্বরূপ কয়েকজন যোদ্ধাকে দেয়া হয়েছিল দেশের সর্বোচ্চ সম্মান মানবশ্রেষ্ঠ উপাধি।

মাতৃঠিকানা স্বাধীন হওয়ার পর বিভিন্ন দেশ থেকে সৌন্দর্য পিপাসুরা মাতৃঠিকানার সৌন্দর্য দেখতে ছুটে আসত । কেননা মাতৃঠিকানাকে বলা হত সুজল সুফলা শস্য শ্যামলা স্নেহের মাতৃঠিকানা । এদেশে ছিল অপার সম্ভাবনা । মাতৃঠিকানার ভূ-তলে ছিল অনেক মূল্যবান সম্পদ । মাতৃঠিকানার পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রটি ছিল খুবই লোভী । তারা মাতৃঠিকানার কোন মঙ্গলই সহ্য করতে পারত না । মাতৃঠিকানাকে নানা ভাবে তাদের পদতলে দাবিয়ে রাখত চাইত । মাতৃঠিকানাকে ঘিরে তাদের ছিল গভীর ষড়যন্ত্র । তারা মাতৃঠিকানাকে তাদের তাদের অঙ্গরাজ্য না বানিয়েও অঙ্গরাজ্য মনে করত । চুক্তির নামে মাতৃঠিকানা থেকে মহামূল্যবান অনেক সম্পদই তারা নিয়ে যেত অথচ মাতৃঠিকানাকে তারা কিছুই দিত না । যতদিন আমাদের পূর্ব পুরুষরা মাতৃঠিকানার নাগরিক ছিল ততদিন তারা মহা সূখে বাস করত । তাদের মাঠ ভরা ফসল ছিল, গোয়াল ভরা গরু ছিল, পুকুর ভরা মাছ ছিল । এজন্য তাদেরকে মাছে ভাতে সস্মৃদ্ধ সম্পদশালী সূখী মানুষ বলা হত । আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশের মানুষেরা দুই বেলা ভাত খেতে পারত না । তারা ছিল অনেক কৃপন । বড়লোকরা গরীবদের মোটেও সাহায্য করত না, তাদের বিপদে পাশে এসে দাঁড়াতো না । অথচ মাতৃঠিকানা ছিল একেবারে ব্যতিক্রম । এখানে একজনের বিপদ হলে সেটা সবার বিপদ মনে করা হত । একজন ব্যথা পেলে সবাই সে ব্যথা অনুভব করত । কেউ না খেয়ে থাকলে তাকে সবাই মিলে খাওয়াতে আসত ।

শান্তি সূখে দিনাতিপাত করতেছিল মাতৃঠিকানার মানুষ । হঠাৎ একদিন দেশের রাজনৈতিক কয়েকটি দলের মধ্যে হাঙ্গাম বেঁধে যায় । সে কি কান্ড ! মনে হয় আবারও যুদ্ধ বেধেছে । শুধু লাশ আর লাশ । কারো মধ্যে কোন নমনীয়তা নেই । যে যাকে পারছে হত্যা করছে । কোন বিচার নাই । দেশব্যাপী শুরু হল চরম অরাজকতা । এতদিন ওৎপেতে থাকা বন্ধুর মুখশে শত্রুরা হঠাৎ করেই আক্রমন করে বসল মাতৃঠিকানাকে । শত্রুর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সুযোগ পায় নি মাতৃঠিকানার মানুষ । রাজনীতির জন্য যে দ্বন্ধ বেধেছিল তা সমাধানের জন্য সব দলই দেশের স্বার্থে নমনীয় হতে শুরু করেছিল কিন্তু ওঁৎপেতে থাকা হায়েনারা সে সুযোগ দেয় নাই । বিভিন্ন কূট-পরামর্শ দিয়ে সব রাজনৈতিক দলকেই পরস্পর থেকে দূরে রেখেছিল । একদিন ঘুম থেকে ওঠে বাংলাদেশের মানুষ জানতে পারল তাদের পরিচয় মাতৃঠিকানার নাই তারা এখন থেকে সর্বগ্রাসী দেশের বাসিন্দা । কিছু মানুষ এ অন্যায় আচরনের প্রতিবাদ করেছিল । সর্বগ্রাসীরা তাদেরকে প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি করে মেরে ফেলেছিল । আর কেউ প্রতিবাদ জানাতে সাহস পায়নি । সেই থেকে আমরা গোলামী করে চলছি । হাজারো নির্যাতন আমাদের উপর প্রতিদিন চালানো হচ্ছে অথচ আমরা কোন প্রতিবাদ জানাতে পারছি না । নিজেদের ভূলেই আমরা আজ অন্যের গোলামি করছি । দাদু ! আমরা পারিনি, তোমরা স্বপ্ন বোনো । আমাদের হারিয়ে ফেলা দেশকে তোমাদেরকে খুঁজে পেতেই হবে । আবারও মাতৃঠিকানাকে তার প্রকৃত মর্যাদা তোমাদেরকেই ফিরিয়ে দিতে হবে ।

রাজু আহমেদ । কলাম লেখক ।



বিষয়: বিবিধ

৯৩২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File