মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রিয় পরিবারের সদস্যের একি কান্ড !
লিখেছেন লিখেছেন রাজু আহমেদ ২৬ জুন, ২০১৪, ১১:৪৮:০৮ রাত
২৬শে জুন অনুষ্ঠিত হল নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের উপনির্বাচন । বেসরকারীভাবে নির্বাচিত হয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (জেপি) মনোনীত প্রার্থী নারায়ণগঞ্জের বিখ্যাত ওসমান পরিবারের সন্তান, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের আওয়ামীলীগ সাংসদ শামীম ওসমানের বড় ভাই সেলিম ওসমান । এমন একটি স্বচ্ছ ও গ্রহনযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে পারার জন্য বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনকে ধন্যবাদ । অতীতের মত নির্বাচন কমিশনের কোন দুর্নাম সৃষ্টি না হলেও দায়িত্ব পালনরত সহকারী পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) বশিরুদ্দীনকে টেলিফোনে দেয়া শামীম ওসমানের হুমকি ওসমান পরিবারের অন্যমত সদস্যের উপর আবারও প্রশ্নবোধক চিহ্ন এঁকে দিল । এএসপি বশিরুদ্দীনের ভাষ্যানুযায়ী, ‘বন্দর উপজেলার মদনপুর ইউনিয়নের কেওডালা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোট গ্রহনের সময় তাকে টেলিফোন করে হুমকি দেন শামীম ওসমান’ । হুমকি দেয়ার কারন হিসেবে বশীরুদ্দীন জানান, ‘ওই কেন্দ্রে ভোট গ্রহনকালে সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম তার সমর্থকদের দিয়ে সেলিম ওসমানের পক্ষে জাল ভোট দেয়ার চেষ্টা করছিলেন । পুলিশ এতে বাধা দিলে আব্দুস সালামের সঙ্গে পুলিশের কথা কাটাকাটি হয় এবং আব্দুস সালাম তা ফোনে সাংসদ শামীম ওসমানকে জানান । শামীম ওসমান ঘটনা শুনে বশিরুদ্দীনকে ফোন করে প্রথমে নমনীয় ভঙ্গিতে বশিরুদ্দীনকে আব্দুস সালামের কথানুযায়ী কাজ করতে বলেন । কিন্তু বশিরুদ্দীন যখন বলেন আমি নির্বাচন কমিশনের চাকরিতে আছি তারা যা আদেশ করবে তা আমি পালন করব । তখন শামীম ওসমান রাগন্বিত হয়ে যান এবং তাকে হুমকি দেন’ । এমনকি বশিরুদ্দীনকে লাইনে রেখে শামীম ওসমান প্রধানমন্ত্রীর এপিএসের সাথেও যোগাযোগ করেন বলে বশীরুদ্দীন জানায় । এ বিষয়ে বশীরুদ্দীন একটি জিডিও করেছেন । সহকারী পুলিশ সুপার বশিরুদ্দীনের দাবী সত্য কি মিথ্যা তা প্রমাণ করতে প্রশাসনকে খুব একটা বেগ পেতে হবে না । প্রশাসনের ইচ্ছা হলেই তারা এদের মধ্যকার কথোপোকথনের অডিও ক্লিপ উদ্ধার করতে পারবে । যদি বশিরুদ্দীনের দাবী মিথ্যা হয় তবে কোন কথা নাই তবে যদি সত্য হয় তবে দু’টো কথা আছে ।
এক. গত কয়েকদিন আগে নারায়ণগঞ্জের প্যানেল মেয়র নজরুলসহ ৭জনকে গুম করে খুন করা হয়েছে । ভাগ্যবলে প্রত্যক্ষ খুনীরা গ্রেফতার হয়েছে । পরোক্ষ খুনীদের মধ্যে বহুল আলোচিত নারায়ণগঞ্জের ত্রাস নূর হোসেন ভারতে পালিয়ে গিয়েছিল । পরবর্তীতে ভারতের পুলিশ গ্রেফতার করেছে এবং হেফাজেতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে । ধীরে ধীরে খুনের রহস্য উম্মোচিত হতে শুরু হয়েছে । তবে খুনীদের কেউ গ্রেফতার হওয়ার পূর্বে নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী দু’ই পরিবার অর্থ্যাৎ ওসমান পরিবার এবং মেয়র সেলিনা হায়াৎ আয়ভীর পরিবার একে অপরের দিকে আঙুল তুলেছিল । খুনের ঘটনার কিছুদিন পর খুনের মূল হোতা নূর হোসেন এবং শামীম ওসমানের একটি অডিও কথোপকথন মিডিয়ায় প্রকাশ পায়। সেখানের কথাগুলো দ্বারা শামীম ওসমানের কোন দোষ পাওয়া না গেলেও একজন খুনীর সাথে শামীম ওসমানের সখ্যতা দেশবাসীর কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে আছে । অডিও ক্লিপটি যে নূর হোসেন এবং শামীম ওসমানের মধ্যকার কথোপোকথনের তা শামীম ওসমান নিজ মুখেই শিকার করেছে । এ অডিও ক্লিপটি প্রকাশ হওয়ার পর বহুল আলোচিত শামীম ওসমানকে নিয়ে যখন দেশময় সরব আলোচনা তখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে দাঁড়িয়ে ঘোষণা করলেন ওসমান পরিবারকে দেখাশুনা করার দায়িত্ব স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর । কেননা ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্ট যখন কিছু বিপথগামী সেনা বঙ্গবন্ধুর পরিবারকে হত্যা করেছিল তখন বঙ্গবন্ধু তনয়া শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা ভারতে ছিলেন । যখন তাদের স্বান্তনা দেয়ার মত লোকও ছিল না ঠিক সেই বেহাল অবস্থায় শামীম ওসমানের পিতা নিয়মিত শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানার খবর নিতেন । মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ কেননা তিনি অকৃতজ্ঞ নন । ২৮ বছর পূর্বে যারা বঙ্গবন্ধুর কন্যাকে সাহায্য করেছে সেই তাদের পরিবারের অসহায় অবস্থার সময় প্রধানমন্ত্রী তাদের পাশে দাঁড়াবেন না তা কি করে হয় । প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে কাজটি করেছেন সেটা দেশের সকল বিবেকবান মানুষেরও দায়িত্ব । বিভিন্ন কারনে নারায়ণগঞ্জের ওসমান পরিবার বিশেষ করে শামীম ওসমান বহুল আলোচিত ব্যক্তিত্ব । বিভিন্ন সময়ে তার বিখ্যাত কিছু উক্তি এবং কার্যক্রম তাকে আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে নিয়ে এসেছে । সে সব আলোচনার কতকটা ওসমান পরিবারের অনুকূলে থাকলেও প্রতিকূলেই বেশি । কথায় আছে, ‘যা রটে তার কিছু তো অবশ্যই ঘটে’ । গণমাধ্যমের মতে, শামীম ওসমান একেবারে নির্দোষ ব্যক্তি নন । দোষ-গুনেই মানুষ । শামীম ওসমানও এ বৈশিষ্ট্যের বাইরের কেউ নন । তবে কিছু দোষ আছে যা এড়ানো সম্ভব । শামীম ওসমান নিজের ক্ষমতা প্রদর্শন করতে গিয়ে সে দোষগুলো এড়িয়ে চলেন নি । যার কারনে তাকে বারবার সমালোচিত হতে হয়েছে । সে কারনে প্রধানমন্ত্রী সংসদে দাঁড়িয়ে ওসমান পরিবারকে দেখভালের কথা বলার পরেই দেশব্যাপী নানা প্রকার প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে । বিশেষ করে ‘দ্যা ডেইলি স্টার’ সম্পাদক মাহফুজ আনামের একটি লেখা ছিল চমকপ্রদ । তিনি যা লিখেছিলেন তার সারমর্ম ছিল, প্রধানমন্ত্রী ওসমান পরিবারকে দেখবেন আর বাকী দেশবাসী ? আবার কেউ লিখেছিল, ওসমান পরিবারের যারা সমালোচনা করে তাদেরকে কি ওসমান পরিবারের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে ? জননেত্রী শেখ হাসিনা বলুক কিংবা না বলুক গোটা দেশের সকল পরিবারকে দেখাশুনা করার দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রীর । আমরা বিশ্বাস করি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গোটা দেশবাসীকেই সমান চোখে দেখেন তবে কারো প্রতি টানের মাত্রা গাঢ় হতে পারে । যাদের প্রতি টানের মাত্রা বেশি তাদেরকে যদি প্রধানমন্ত্রী একটু শাসনও করতেন তবে সেটা কতইনা উত্তম হত ।
দুই. বাংলাদেশ বহুদলীয় রাজনৈতিক চিন্তাধারার দেশ । এখানো সবার ব্যক্তি স্বাধীনতা আছে । যে যার ইচ্ছামত দলকে সমর্থন দেয়ার নৈতিক গণতান্ত্রিক অধিকার রাখে । আওয়ামীলীগ, জাতীয় পার্টি, বিএনপি কিংবা জামা’আতে ইসলামসহ যে কোন বৈধ রাজনৈতিক দলকে পছন্দ করার স্বাধীনতা সবার আছে । শুধু কি তাই ? বিশ্বের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রসমূহই শুধু নয় বরং সকল ধরনের সরকার ব্যবস্থার মধ্যে বাংলাদেশ রাজনৈতিক অঙ্গনে উদারপন্থী দৃষ্টি স্থাপন করেছে । দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সংসদের বিরোধীদলকে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রনালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে । এমনকি সংসদের বিরোধীদলের প্রধানকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দুত করা হয়েছে । বিশ্বের বাঘা বাঘা গণতান্ত্রিক দেশগুলোকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়া হয়েছে গণতন্ত্র কাহাকে বলে ! পরে যদিও সাংসদদের বৈধতা জনগনের ভোটে নয় বরং আদালতের রায়ে নির্ধারিত হয়েছে সেটা ভিন্ন প্রসঙ্গ । রাজনৈতিক সন্ধির কারনে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামীলীগ প্রার্থী দেয় নি । এখানে লড়াই হয়েছে জাতীয় পার্টির হয়ে শামীম ওসমানের বড় ভাই সেলিম ওসমান এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে এসএম আকরাম । বাংলাদেশের সব মানুষও যদি আওয়ামীলীগের বিরোধিতা করে তবুও কি ওসমান পরিবারের কেউ আওয়ামীলীগ ছাড়া অন্যকোন দলকে সমর্থন করতে পারে ? কেননা আওয়ামীলীগ তথা শেখ হাসিনার সাথে ওসমান পরিবারের প্রতিটি সদস্য ওৎপ্রতোভাবে জড়িত । ওসমান পরিবারের সুখ-দুঃখের অংশীদার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী । তবে কি সেই ওসমান পরিবার লিয়াজোর রাজনীতি করছে ? নারায়ণগঞ্জে তাদের প্রভূত্ব ধরে রাখার জন্য একেক জন একেক দলের ঝান্ডা বহন করছে । বিরোধীদলের প্রধান কাজ সরকারী দলের সমালোচনা করে তাদেরকে সঠিক পথে পরিচালিত হতে সাহায্য করা । সেই বিরোধীদল যদি সরকারী দলের পোষ্য হয় তবে রাষ্ট্রের ভবিষ্যত কী ? ভাইয়ে ভাইয়ে সম্পর্ক চিরন্তন । তবে রাজনীতির মাঠে এ সম্পর্কচ্ছেদের বহু দৃষ্টান্ত বাংলাদেশের রাজনীতিতেও আছে । দলের আদর্শগত কারনে শামীম ওসমান ও সেলিম ওসমানের মধ্যেও ‘সাপে-নেউলে’ না হোক অন্তত একটু হলেও ভঙ্গুর সম্পর্ক থাকা উচিত ছিল । অথচ শামীম ওসমান নিজেই সেলিম ওসমানকে অবৈধভাবে নৈতিকতা বিরোধী কাজের মাধ্যমে জিতিয়ে আনার জন্য আদর্শ পুলিশকে আদেশ করে । এভাবে আর কতদিন পারিবারিক সাম্রাজ্য চলবে ?
রাজু আহমেদ । কলাম লেখক ।
বিষয়: রাজনীতি
১০২৪ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
বাংলাদেশের মানুষ এটা স্বাভাবিক বলে মেনে নিয়েছে । এরকম তো সারা দেশের উপজেলা নির্বাচনের সময় থেকেই হয়ে আসছে ।
একটা জিনিস যখন সাধারণ মানুষ একসেপ্ট করেই নেয় সেটা নিয়ে আবার কাহিনী করার কোন মানে আছে ?
মন্তব্য করতে লগইন করুন