রমজানের পবিত্রতা রক্ষার্থে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আরেকটি নির্দেশের অপেক্ষায় দেশবাসী
লিখেছেন লিখেছেন রাজু আহমেদ ২১ জুন, ২০১৪, ০২:৪৩:৪৩ দুপুর
গত ১৬ই জুন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা পবিত্র রমজান মাসে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন । মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী চেয়েছিলেন রমজানের প্রথম দশদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রেখে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ঘাটতি কিছুটা পূরণ করবেন । কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী রমজান মাসের সার্বিক দিক বিবেচনা করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা এবং সে অনুযায়ী দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নির্দেশনা পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন । রমজান মাসে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার পিছনে সবচেয়ে বড় যুক্তি হিসেবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেছেন মায়েদের কষ্টের কথা । মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রমজান মাসে রান্না নিয়ে মায়েদের অনেক সমস্যা হয় । তাই রমজানের প্রথম দিন থেকে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে হবে’ । শুধু এ একটি কারনেই নয় বরং ধর্মীয়সহ অনেক কারনেই রমজান মাসে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার বিধান রাখা জরুরী । দেশবাসীর পক্ষ থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ এবং অভিনন্দন কেননা তিনি রমজান শুরুর প্রারম্ভে একটি সময়োপোযোগী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন । এ জন্য দেশের সকল ছাত্র-শিক্ষক-অভিভাবক প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবেন এবং আগামী রমজানগুলোতেও যেন এ ব্যবস্থা বহাল থাকে সে জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে একটি আইন করে যাওয়ার আহ্বান জানাই । বাংলাদেশের মানুষ গোটা রমজান মাস জুড়েই মহান আল্লাহর ইবাদাত-বান্দেগীতে ব্যস্ত থাকে । দিনে পানাহার ত্যাগ করে আল্লাহর হুকুম পালন এবং রাতে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) এর নির্দেশে তারাবীর নামাজ আদায় করে । স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা এ মাসের শ্রেষ্ঠত্ব ও মহত্ত্ব ঘোষণা করেছেন এবং এ মাসে আল্লাহর হুকুম পালনকারীদেরকে তিনি নিজেই পুরষ্কার প্রদান করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন । সুতরাং মুসলমানদেরকে নির্বিঘ্নে ইবাদত করে দেয়ার সুযোগ প্রদান করায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবশ্যই সওয়াবের অধিকারিনী হবেন । তবে রমজানের পবিত্রতা রক্ষায় যে সকল নির্দেশনা প্রয়োজন তার সবগুলো যদি তিনি প্রদান করেন এবং তা বাস্তবায়ন করার জন্য নিজেই পর্যবেক্ষন করেন তবে তিনি অসংখ্য সওয়াবের অধিকারিনী হবেন তাতে কোন সন্দেহ থাকার কথা নয় । কাজেই ৯৭% মুসলিম অধ্যুষিত দেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা রমজানের পবিত্রতা রক্ষায় আরেকটি নির্দেশ এবং সে নির্দেশের বাস্তবায়ন করে দেখাবেন তেমনটাই প্রধানমন্ত্রীর কাছে দেশবাসী প্রত্যাশা করে ।
বছরের অন্যান্য সময় জুড়ে দেশের কিছু স্থানে অন্যায়-অপরাধ ঘটলেও সেটা তেমনভাবে চোখে পড়ে না । কিন্তু রমজান মাসে সকল মানুষের মন পবিত্র থাকায় ছোট-বড় সকল অপরাধ দৃষ্টিগোচর হয় । তখন মানুষের খারাপ লাগে এবং এর প্রতিবাদ জানায় । সাধারন মানুষের এ প্রতিবাদ অনেক সময় সংঘর্ষে রুপ নেয় এবং তা সমাজের জন্য বিশৃঙ্খলার কারন হয়ে দাঁড়ায় । কিন্তু এ সকল অপরাধ রোধকল্পে মান্যবর প্রধানমন্ত্রী যদি নির্দেশ দেন তবে সে নির্দেশের মাধ্যমে যেমনিভাবে রমজানের পবিত্রতা রক্ষা পাবে তেমনি সমাজেও শান্তি শৃঙ্খলা বজায় থাকবে । কাজেই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের মাধ্যমে দেশে প্রকাশ্যে হারাম গান বাজনা নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে বিশেষত রমজান মাসে এর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহন করতে হবে । মানুষদেরকে প্রকাশ্যে খাবার গ্রহনে নিরুৎসাহী করতঃ শাস্তি ঘোষণা করতে হবে । বিভিন্ন স্যাটেলাই চ্যানেলে প্রদর্শিত অশালীন অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার বন্ধ করতে হবে বিশেষভাবে ভারতীয় চ্যানেলে প্রদর্শিত কুরুচিসম্পন্ন ধারবাহিক নাটকগুলোর সম্প্রচার বন্ধ রাখতে হবে । দেশীয় ইলেকট্রনিক্স মিডিয়াগুলোতে ধর্মীয় অনুষ্ঠানমালা প্রচার করতে হবে এবং প্রিন্ট মিডিয়ায় রমজানের তাৎপর্য, গুরুত্ব সম্পর্কীয় প্রবন্ধ/নিবন্ধ প্রকাশ করে মানুষকে ধর্মীয় নিয়ম-নীতি সম্পর্কে সচেতন করতে হবে । নারী-পুরুষদের প্রকাশ্যে বেপর্দা, বেহায়পনা কিংবা অশালীন অঙ্গভঙ্গীতে চলাফেরা নিষিদ্ধ করতে হবে । রমজানে দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতি রোধে সর্বত্র মোবাইল কোর্ট বসাতে হবে এবং যারা সরকারের নির্দেশ অমান্য করে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করে জনগণের ভোগান্তি সৃষ্টি করবে তাদেরকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করতে হবে । যে শাস্তি প্রত্যক্ষ করে অন্য মানুষ সতর্ক ও সাবধানতা অবলম্বন করতে বাধ্য হবে । রমজানের পবিত্রতা রক্ষায় প্রয়োজন হলে সারাদেশে সেনা মোতায়েন করতে হবে । সুতরাং উপরোক্ত কারনসহ অন্যান্য যে কারনগুলোতে রমজানের পবিত্রতা নষ্ট হয় সেগুলো চিহ্নিত করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তরফ থেকে রমজানের পবিত্রতা রক্ষায় অচিরেই দিক-নির্দেশনা জাতি আশা করে ।
আল্লাহর পক্ষ থেকে তার সৃষ্টি কূলের শ্রেষ্ঠ জীব মানুষকে প্রদানকৃত অসংখ্য নেয়ামতরাজির মধ্যে পবিত্র মাহে রমজান অন্যতম । এ মাসেই মানবতার মুক্তির দিশারী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর উপর হযরত জিব্রাঈল (আঃ) এর মাধ্যমে আল্লাহ তা‘য়ালা পবিত্র কুরআন মাজীদের নাযিল কার্য শুরু করেন । এমনকি পৃথিবীর সূচনালগ্ন থেকে সকল নবী-রাসূলের উপর আল্লাহর পক্ষ থেকে যতগুলো সহীফা অবতীর্ন হয়েছে তার সবগুলোই রমজান মাসে অবতীর্ন হয়েছে বলে ইসলামের ইতিহাস স্বাক্ষী দেয় । রমজানের তাৎপর্য ও গুরুত্ব বুঝানোর জন্য পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষ, মুসলমানদের হৃদয়ের স্পন্দন হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) তার পবিত্র কণ্ঠে অসংখ্য অমীয় বাণী তথা পবিত্র হাদিস বর্ণনা করেছেন । রমজানের মহিমা বর্ণনা করে পবিত্র মেশকাত শরীফের ১৮৬০নং হাদিসে বলা হয়েছে, ‘যখন রমজান মাস আসে তখন আকাশের দরজাসমূহ খূলে দেওয়া হয়’ । অপর এক বর্ণনায় আছে, ‘জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং শয়তানদেরকে বন্দী করা হয়’ । অন্য এক বর্ণনায় বলা হয়েছে, ‘রহমতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়’ (বুখারী ও মুসলিম) । রমজান মাসে সওয়াব বৃদ্ধি সম্পর্কে হাদিস শরিফে এসেছে, ‘আদম সন্তানের প্রতিটি নেক আমল দশগুন থেকে সাতশতগুণ পর্যন্ত বাড়ানো হয়ে থাকে । আল্লাহ তা‘য়ালা বলেন, কিন্তু রোজা এর ব্যতিক্রম । কেননা রোজা একমাত্র আমার জন্য আর আমি এর প্রতিদান করব ( আমার যত ইচ্ছা) । পবিত্র রমজান মাসের শেষ দশকের বিজোড় রাত্রিতে এমন একটি সৌভাগ্যমন্ডিত মর্যদাপূর্ণ রাত আছে যে রাতের ইবাদাতের মূল্য ১০০০ মাস তথা ৮৩ বছর ৪ মাস ইবাদাত করার সমান । মহান আল্লাহ তা‘য়ালা এ রাতের মর্যাদা বর্ণনা করে পবিত্র কুরআন মাজীদে একটি সম্পূর্ণ সূরা অবতীর্ন করেছেন সূরা আল-ক্বদর নামে । সুতরাং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজে রমজান মাস ইবাদাত-বান্দেগীতে কাটিয়ে নিজে যেমন সওয়াবের অধিকারিনী হবেন তেমনি তার প্রজা সাধারনকেও নির্বিঘ্নে রমজানের পবিত্রতা রক্ষাসহ ইবাদাত-বান্দেগী করে অসীম সওয়াব অর্জনের সুযোগ করে দিবেন বলে দেশবাসী আশা করে । দেশবাসী প্রধানমন্ত্রীর একটি নির্দেশের অপেক্ষায় আছে যে নির্দেশের মাধ্যমে সকল প্রকার অশ্লীলতা, বেহায়াপনার প্রভাব মুক্ত থেকে সকল মু’মিন মুসলমান আল্লাহর আদেশ পালনের মাধ্যমে সীমাহীন সওয়াবের মালিক হতে পারে সে ব্যবস্থাটুকু মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমেই নিশ্চিত হওয়ার অভিপ্রায় রাখি ।
রাজু আহমেদ । কলাম লেখক ।
বিষয়: বিবিধ
৯৮৮ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সহমত।
মন্তব্য করতে লগইন করুন