‘পবিত্র শবে বরাত’ লক্ষ কোটি সওয়াব হাসিলের সুবর্ণ সুযোগ

লিখেছেন লিখেছেন রাজু আহমেদ ১২ জুন, ২০১৪, ০৭:৪০:৪৫ সন্ধ্যা

আজ মুসলমানদের জন্য আল্লাহ ও তার রাসুল (সাঃ) এর পক্ষ থেকে অত্যন্ত মোবারকময় এক মহামান্বিত শবে বরাতের রাত । আল্লাহর পক্ষ থেকে এ রাতে সকল বান্দাহের অতীতের গুনাহরাশি মাফ এবং অগণন সওয়াব লাভের সূবর্ণ সুযোগ । তাইতো মুসলমানদের কাছে শবে বরাতের রাতটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । বছরের মাত্র কয়েকটি মহিমান্বিত রাতের মধ্যে এ রাতটি এতই তাৎপর্যপূর্ণ যে কারনে এ রাতের অন্য নাম ‘লাইলাতুল বারাআত’ । আরবি শব্দ ‘লাইলাতুল বারাআত’ শব্দের শাব্দিক অর্থ ‘সৌভাগ্য রজনী’ । মানবতার মুক্তির দুত আল্লাহ প্রেরিত সর্বশেষ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ রাসুল হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর অসংখ্য মর্যাদাপূর্ণ হাদিসে পাক দ্বারা এ রাতের মহিমা ও গুরুত্ব প্রমানিত । বাঙালি মুসলমানদের জন্য এ রাতটি অন্যতম একটি আনন্দের রাত । শুধু যে ধর্র্মীয় পরহেযগার মুসলমানদের জন্য আনন্দের তাইনা বরং এ রাত সকল শ্রেণীর মুসলমানদের মুসলমানদের কাছেই অত্যন্ত আকাঙ্খিত । আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে মুসলমানদের জন্য এ বরকতময় রাতটি একটি অন্যতম পাওয়া । মুসলমানদের কাছে এ রাতটি যেমন ইবাদতের বিশেষ সুযোগ করে দেয় তেমনি মানুষের মধ্যে পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও ভ্রাতৃত্ব সৃষ্টিরও অন্যতম সুযোগ । এ রাতে ইবাদাতের সাথে চলে উৎকৃষ্ট খাবারের আয়োজন । যে সকল মুসলমানরা সারা বছরে একবারও মসজিদমূখী হয় না তারাও এ মহিমান্বিত রাতে আল্লাহর সন্তুষ্টি হাসিলের আশায় রাতভর জেগে আল্লাহ তায়ালার ইবাদাত বান্দেগী করার ইচ্ছা পোষণ করে । বাংলাদেশের মুসলমান পুরুষদের চেয়ে যেহেতু নারীরা বেশি ধর্মভীরু সেহেতু তারা এ রাতকে শুধু তাদের এবং তাদের রবের মধ্যকার সম্পর্ক স্থাপনের রাত হিসেবে স্থান দেয় ।

শবে বরাতের রাতে যা করণীয় ঃ- শবে বরাতের রাত্রিতে নামায-দুআ, কুরআনে হাকীম তিলাওয়াত, যিকির আযকার, দুরূদ শরীফ পাঠ করা উত্তম । শবে বরাতের রাতের পরের দিন অর্থ্যাৎ ১৫ই শাবান রোযা রাখাও উত্তম । যাদের বাবা-মা, নিকট আত্মীয় স্বজন দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন তারা তাদের আত্মীয় স্বজনের কবর যিয়ারত করার জন্য এ রাতটিকে উত্তমভাবে কাজে লাগাতে পারে । তবে এ যিয়ারত কার্য দলভেদে না করে একাকী করাই উচিত ।

শবে বরাতের রাত সম্পর্কে কিছু ভূল ধারণা ও প্রচলিত কুসংস্কার ঃ- শবে বরাতের রাতকে পালন করতে গিয়ে কিছু মানুষ উৎসাহের আতিশায্যে এমন কতগুলো কাজ করে থাকেন কিংবা করা জরুরী মনে করেন যার সাথে শবে বরাতের বিন্দু মাত্র সম্পর্ক নেই । যেমন, অনেকে বিশ্বাস করেন শবে বরাতের রাতে মহান আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীর সকল প্রাণীর আগামী এক বছরের রিজিক নির্ধারন করে দেন । এটাও অমূলক বিশ্বাস । আগামী এক বছরের যারা মারা যাবে এবং যারা জন্মগ্রহন করবে তাদের তালিকা তৈরি করেন বলে কুসংষ্কার প্রচলিত আছে। এ রাতে কুরআন মাজীদ লাওহে মাহফুজ থেকে প্রথম আসমানে অবতীর্ন হওয়ার যে ধারনা তা ভূল । শবে বরাতের রাতে গোসল করাকে অনেকে সওয়াবের কাজ মনে করেন । প্রকৃত পক্ষে শবে বরাতের সাথে গোসলে কোন সম্পর্ক নেই । অনেকে বিশ্বাস করেন এ রাতে মৃত ব্যক্তিদের রূহ দুনিয়ায় তাদের অতীতের বাসগৃহে আসে । যা মূলত ভ্রান্ত ধারনা । শবে বরাতের রাতে আতশবাজি করা চরম বেয়াদবী এবং আইনের দৃষ্টিতেও অপরাধ । সওয়াব হাসিলের আশায় সরকারী-বেসরকারী ভবনে আলোক সজ্জা করা হয় । এ আলোক সজ্জার কারনে কেবল বিদ্যুতের অপচয় হয় কিন্তু সওয়াব হয় না । শবে বরাতের রাতে আগরবাতি মোমবাতি দিয়ে কবরস্থান আলোকিত করা কুসংস্কার । শবে বরাতের রাতে প্রচলিত আমলগুলোর কিছু কিছু আমল ভাল এবং সওয়াবের কিন্তু ভ্রান্ত বিশ্বাসের কারনে ঐ আমলগুলো বিদ’আতে পরিনত হয় ।

শবে বরাতের সওয়াব থেকে যে শ্রেণীর লোকেরা বঞ্চিত হবে ঃ- শবে বরাতে আল্লাহ তা’য়ালা তার বান্দাহদেরকে অসংখ্য সওয়াব দান করেন । তবে কয়েক শ্রেণীর লোক আছে যারা শবে বরাতের পূর্ণ রাত জেগে আল্লাহর ইবাদাত করলেও তা দিয়ে কোনরুপ উপকৃত হবে না । এ শ্রেণীর লোকেরা হল-মুশরিক ব্যক্তি অর্থ্যাৎ যিনি আল্লাহর সাথে যে কোন প্রকারের শিরক বা অংশীদার স্থাপন করে । যে ব্যক্তি কারো প্রতি বিদ্বেষ পোষনকারী । যে ব্যক্তি অপরের ভালো দেখতে পারে না অর্থ্যাৎ পরশ্রীকাতরতায় ভোগে । যে ব্যক্তি আত্মীতার সম্পর্ক ছিন্ন করে হোক তা নিকটাত্মীয় কিংবা দুরসম্পর্কের আত্মীয় । যে ব্যক্তি ব্যবিচারে লিপ্ত । যে ব্যক্তি মদ্যপ অর্থ্যাৎ নেশাখোর । যে ব্যক্তি মাতা পিতার সাথে সাদাচারন করে না কিংবা মাতা-পিতাকে কষ্ট দেয় । উপরোক্ত শ্রেনীর ব্যক্তিরা যতক্ষন তাদের কৃত অপকর্মের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা না করে ততক্ষন আল্লাহ তাদের কোন দোওয়া কবুল করেন না । এমনকি তাদের কোন সৎ কাজের বিনিময়ে সওয়াবও দান করেন না ।

সবশেষে আমরা আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করি, তিনি যেন আমাদেরকে তার এবং তার রাসুলের পরিপূর্ন পদাঙ্ক অনুসরন করে চলার তৌফিক দান করেন এবং শবে বরাতের পূর্ণ শিক্ষা আমাদের জীবনে কাজে লাগাতে পারি । শবে বরাত উপলক্ষে আমাদের সমাজে যে সকল বিদ’আত প্রচলিত আছে তা থেকে আল্লাহ যেন আমাদেরকে মুক্ত রাখেন । সর্বোপরি এ রাত যেন লক্ষ কোটি সওয়াব হাসিলের উসিলা হয় এবং আমাদের পূর্ব পুরুষদের জন্য দোয়া কামনা করা যার বদৌলতে আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে জান্নাতের মেহমান হিসেবে কবুল করেন । এ রাতে বিশ্ব মুসলিম উম্মাহের প্রতি আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমত কামনা করছি এবং আমাদের কৃত দোষত্রুটি জন্য তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি ।

রাজু আহমেদ । কলাম লেখক ।

বিষয়: বিবিধ

৯৩৭ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

234300
১২ জুন ২০১৪ রাত ০৮:৩২
মোঃমাছুম বিল্লাহ লিখেছেন : শবেবরাতের হাদিস গুলো বলেনতো ভাই । সাহাবা আজমাইন কি পরিমান আমল করতেন এই রাতে তাও একবার বলুন
234347
১২ জুন ২০১৪ রাত ১০:১৫
ছিঁচকে চোর লিখেছেন : অনেক সুন্দর লিখেছেন.... পিলাচ
234366
১২ জুন ২০১৪ রাত ১১:৩০
আনোয়ার আলী লিখেছেন : শবে বরাত সম্পর্কে সবগুলো হাদীসই জঈফ। এটা পালন করা সরাসরি বিদআত বৈ আর কিছুই নয়। এটা কেবল এই উপমহাদেশেই পালন হয়। কতিপয় ভন্ড পীর নামীয় অর্থলোভী এটা তাদের নিজ স্বার্থেই জিয়িয়ে রেখেছে।
আসুন এই বিদআত বর্জন করি।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File