ছাত্ররাজনীতি দোষের নয় তবে আগে লেখাপড়া
লিখেছেন লিখেছেন রাজু আহমেদ ১১ জুন, ২০১৪, ১২:০৯:৪১ রাত
কথিত আছে, ‘লেখাপড়া হত কতইনা আনন্দের যদি না থাকত পরীক্ষা’ । আসলেই পরীক্ষা পদ্ধতি ঝামেলায় ফেলে দেয় । তবে তা সবাইকে নয় । যারা বছরের প্রায় পুরোটা সময় ফাঁকি দিয়ে কাটালেও পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা হওয়ার পর বই-শিট নিয়ে দৌঁড় ঝাপ শুরু করে শুধু তাদরে কাছেই ঝামেলার । তাদের উদ্দেশ্য থাকে একটাই যাতে টেনেটুনে পাশ করে হলেও ক্লাস ডিঙানো যায় । এ শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার পূর্বে দীর্ঘ রজনী নিদ্রাহীন থেকে খেটে-খুটে সিলেবাস সম্মন্ধে আবছা ধারনা নিয়ে পরীক্ষার হলে প্রবেশ করে । পরীক্ষার শুরু থেকেই বেঞ্চের সামনের পিছনের সিটের শিক্ষার্থীদেরকে পরীক্ষার পুরো সময় জুড়ে বিরক্ত করে, পরীক্ষার হলের গার্ডদের তীক্ষ্ণ দৃষ্টিকে পাশ কাটিয়ে কোনমতে উল্টাপাল্টা লিখে পরীক্ষার হল থেকে বের হয় । বুক ফুলিয়ে বন্ধুদের বলে বেড়ায় তার পাশ ঠেকানো যাবে না । অন্তত কোন ক্লাস না পেলেও পাশ সে করবেই । কিন্তু পরীক্ষার পর দীর্ঘ সময় অপেক্ষা শেষে যখন আমলনামা অর্থ্যাৎ পরীক্ষার ফল প্রকাশ পায় তখন তো মাথায় হাত । একটি বিষয়েও পাশ করতে পারে নি । যাদের নৈতিক বিবেক আছে তারা নিজের ভূল বুঝতে পেরে ভবিষ্যতে শুধরিয়ে যাওয়ার প্রতিজ্ঞা করে কিন্তু যারা অবিবেচক তারা পরীক্ষকদের গোষ্ঠী-জ্ঞাতি তুলে বকাঝকা করেও ক্ষান্ত হয় না বরং যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সে দীর্ঘ দিন পড়াশুনা করেছে সেই প্রতিষ্ঠানটিতে ভাঙচুর চালাতেও দ্বিধা বোধ করে না । অধিকন্তু ঐ ফেলটুস ছাত্র যদি সরকারী দলের কোন ছাত্র সংঘঠনের কর্র্মী কিংবা নেতা হয় তবে তো কথাই নাই । তার পক্ষে অনৈতিক আন্দোলন করার সারথীরও অভাব হয় না । অথচ একবারও ভাবে না যে বছরের ৩৬৫ দিনের কয় মিনিট সময় তার বইয়ের সাথে সাক্ষাত হয়েছে । বই তাকে কিছু দেয়ার জন্য টেবিলের উপর অপেক্ষা করলেও তিনি রাজনীতির মশাল নিয়ে আন্দোলন, মিছিল মিটিং আরও কত কর্মসূচী পালন করতে ব্যস্ত ছিলেন । এত ব্যস্ত যিনি তার পড়ার সময় কখন ?
গত ৯ই জুন পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের আহ্বায়ক মিজানুর রহমান সবুজ তার বিবিএ চতুর্থ বর্ষের প্রথম পর্বের পরীক্ষার সব অর্থ্যাৎ ৫টি বিষয়ে অকৃতকার্য হওয়ার সংবাদ পান । আহারে বেচারা ! ক্ষমতাশীন দলের লাগামহীন ছাত্র সংগঠনের কত বড় নেতা ! তিনি ফেল করবেন এটাও কি মেনে নেয়া যায় ? ঘটনা যা হবার তাই । তিনি তার সাঙ্গপাঙ্গদের নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় জুড়ে সামন্য কর্মসূচী পালন করেছেন । যদিও এ কর্মসূচি রাজনৈতিক নয় তাইতো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ অনুষদে ভাঙচুর, কাগজপত্র তছনছ, বিক্ষোভ আরও কত কি ঘটিয়ে দিয়েছেন । সবশেষে দাবি তুলেছেন তাকে পাশ করিয়ে দিতে হবে । অবশ্যই যৌক্তিক দাবী ! স্যাররাও যে কী ! ক্ষমতাশীন দলের ছাত্র রাজনীতির একটি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার বড় নেতা তাকে পাশ না করিয়ে ফেল করানো কি তাদের উচিত হয়েছে ? তিনি রাজনীতি করেন সেটাই তো দেশের জন্য কত মঙ্গলের ! তাকে আবার পড়াশুনা করতে হবে কেন ? স্যাররা বোধহয় আজকাল পরীক্ষার খাতা ঠিকমত মূল্যায়ণ করেন না । একজন রাজনৈতিক অঙ্গনে সংক্রিয় ছাত্রনেতা তার পঠিত ৫টি বিষয়ের সবগুলোতে নম্বর একটু কম পেতেই পারেন তাই বলে কি শিক্ষকদের কৃপণ হলে চলে ! তিনি রাজনীতি করে দেশ উদ্ধার করতেছেন আর শিক্ষকরা এসব কি করছে । এও কি মেনে নেয়ার মত ? কাজেই অচিরেই আমাদের দেশের ভাবী ভবিষ্যত গর্ব সবুজ ভাইকে তার এবং তার সাঙ্গপাঙ্গদের দাবী অনুযায়ী শুধু পাশ নয় বরং রেকর্ড সংখ্যক মার্ক পাইয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করে দেয়া হোক । স্যারদের যদি নম্বর দিতে নৈতিক বিবেকে বাঁধে তবে অফিসের পিয়নদের দিয়ে হলেও নম্বর দেয়া হোক । যদি পিয়নও নম্বর দিতে না চান তবে মালী কিংবা ঝাড়ুদার যে কোন একজনকে ব্যবহার করা যেতে পারে ।
ছাত্ররাজনীতি দোষের নয় বরং দেশের প্রয়োজনেই ছাত্রদের বিশেষ করে স্নাতক পর্যায়ের ছাত্রদের রাজনীতিতে সংক্রিয় হওয়া উচিত । ছাত্ররা যদি আগ্রহভরে রাজনীতিতে আসে তবে দেশ উপকৃত হবে এবং আগামীতে যোগ্য নেতৃত্ব পাবে । তবে শিক্ষার্থীরা তাদের আসল কাজ ছেড়ে দিয়ে রাজনীতিতে আসবে সেটা মোটেই উচিত নয় । বর্তমান সময়ে যারা ছাত্ররাজনীতির সাথে জড়িত তাদের অধিকাংশকে দেখা যায় শিক্ষার সাথে তাদের আদৌ কোন যোগাযোগ নেই । এটা বাংলাদেশের প্রায় সামগ্রিক রুপ । বর্তমান বাংলাদেশে যতগুলো অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটছে তার সিংহভাগের সাথে ছাত্ররাজনীতির নেতা-সমর্থকরা জড়িত । বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায় তার নিঃসন্দেহে মেধাবী, অদম্য মেধাবী । কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে কিংবা দেশের নামকরা কলেজগুলোতে ভর্তি হওয়ার পর রাজনীতির মোহ এমনভাবে তাদেরকে মোহাবিষ্ট করে যার কারনে তার তাদরে আসল তপস্যা থেকে বিচ্যুত হয়ে যায় । রাজনীতি করে খুব অল্প সংখ্যক শিক্ষার্থীরা জীবনে প্রতিষ্ঠা পেলেও বাকীদের ছাত্রজীবন কেটে যায় অপর নেতাদের তল্পিতল্পা বহনের কাজে । যার ফলে দেখা যায়, এসকল শিক্ষার্থীরা মেধাবী হওয়া সত্ত্বেও নিম্নমানের রেজাল্ট নিয়ে কোন মতে ধুঁকতে ধুঁকতে ছাত্রজীবন শেষ করে নিজেদেরকে যেমন অন্ধকারে হারিয়ে ফেলে তেমনি তাদের পরিবারের লালিত স্বপ্নকে মুকুলেই ধ্বংস করে দেয় । যারা ভবিষ্যতে সমাজের, রাষ্ট্রের হাল ধরবে বলে ভাবা হত সেই তারাই তাদের আপন কর্মকান্ডের বদৌলতে সমাজের বোঝা হয়ে যায় ।
বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক সংঘঠন তাদের প্রধান শক্তি হিসেবে ছাত্রদেরকে ব্যবহার করে । এ থেকে ছাত্রদের বোঝা উচিত তাদের মূল্য কত । তারা যদি পড়াশুনার মাধ্যমে নিজেদেরকে গড়ে তুলে তারপর রাজনীতিতে সময় দিত তবে তারাই দেশের আগামীর কান্ডারী হত । কিন্তু ছাত্ররাজনীতির সাথে জড়িত শীক্ষার্থীদেরকে দেখা যায় নেতা-নেত্রীদের সামান্য বাহবা পেয়ে আরও অধিক বাহবা আদায় করতে গিয়ে নিজের সর্বস্ব বিলিয়ে দেয় । মিটিং মিছিলের পিছনে ছুটতে গিয়ে বইয়ের সাথে তৈরি হয় বিশাল দূরত্ব । এ দূরত্বের পরিপ্রেক্ষিতে পরীক্ষার খাতায় প্রশ্নের জিজ্ঞাসানুযায়ী কিছুই লিখতে পারে না । ফলাফল ফেল । যাদের কর্তৃত্বের গভীরতা আছে তারা নিজেদের লজ্জাকে সবার কাছে বিলিয়ে দিয়ে বিক্ষোভ করে আবার নির্লজ্জের মত শিক্ষকদের কাছে তাকে পাশ করিয়ে দেয়ার দাবী করে । সে তো প্রকৃত শিক্ষার্থী হতে পারে না যিনি অন্যের করুনায় পাশ করবে কিংবা সনদ অর্জন করবে । যারা দেশের সর্বোচ্চ মেধাবী অর্থ্যাৎ মাত্র এক দু’ই বার বই দেখলেই যে কোন বিষয়কে আয়ত্ত্ব করে পরীক্ষার খাতায় লিখতে পারে এবং পাশ করার যোগ্যতা অর্জন করতে পারে শুধু তারাই রাজনীতি করতে পারে এবং দেশকে তারাই ভবিষ্যতে দেশকে উত্তম কিছু দিতে পারবে । পাবিপ্রবির সবুজের মত ছাত্রদের নিজের কল্যানার্থেই রাজনীতি ছেড়ে লেখাপড়ায় মনোনিবেশ করা উচিত ।
রাজু আহমেদ । কলাম লেখক ।
http://www.facebook.com/raju69mathbaria/
বিষয়: বিবিধ
৭৫১ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
অজান্তে গড়ে উঠে বন্ধুত্ব
তা হতে পারে অপ্রত্যাসিত কোন ব্যক্তির
সাথে , সময়ের প্রয়োজনে জীবনের
বাস্তবতায় আবার তার বিচ্ছেদ ও ঘটে ,
প্রয়োজনের তাকিদে অনেক
দূরে চলে গেলেও যেনো মুছে না ফেলি সৃতির
পাতা থেকে কেউ কাউকে ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন