ব্রাজিলকে সাপোর্ট প্রশ্নে দেশের ত্রিরত্ন যেমন এক তেমনি যদি রাষ্ট্রের স্বার্থেও হত
লিখেছেন লিখেছেন রাজু আহমেদ ০৫ জুন, ২০১৪, ০৭:২৪:৩৯ সকাল
আর মাত্র সপ্তাহ পেরুলেই বিশ্ব ফুটবলের অন্যতম শ্রেষ্ঠ পরাশক্তি, পাঁচ বারের সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন, সাম্বানৃত্যের দেশে মাঠে গড়াবে বিশ্বকাপ ফুটবল । বিশ্বের সকল স্বাধীন দেশগুলোর মধ্য থেকে ফুটবলের সর্বোচ্চ শক্তিশালী ৩২ টি দল লড়াই করবে বিশ্বকাপ ফুটবলের ২০ তম আসরে তাদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমান করার জন্য । বিশ্বকাপ ফুটবলের প্রতিটি ম্যাচ স্বাভাবিকভাবে মাত্র ৯০ মিনিট স্থায়ী হলেও এর রেশ চলতে থাকে দীর্ঘ সময় ধরে । সে রেশ যেমন থাকে ম্যাচের ফলাফল হওয়ার পরে তেমনি ম্যাচ শুরুর আগেও চলে দীর্ঘ সময়ের প্রস্তুতি, পরিকল্পনা কিংবা প্রত্যাশা । আর তা যদি বিশ্বকাপ ফুটবল হয় তবে তো কোন কথাই নেই । বিশ্বকাপ ফুটবলের প্রতিটি ম্যাচকে ঘিরে থাকে চরম উত্তেজনা, উৎকণ্ঠা । বিশেষ করে ব্রাজিল, আর্জোন্টিনা ইংল্যান্ডসহ কয়েকটি দেশের ম্যাচগুলোকে কেন্দ্র করে থাকে টানটান উত্তেজনা । প্রতিটি দলের মাঠের লড়াকু ১১ জন খেলোয়ার হয়ে এ উত্তেজনা ছড়িয়ে পরে গোটা বিশ্বব্যাপী । বিশ্বকাপ ফুটবল শুরু হওয়ার দীর্ঘ দিন পূর্ব থেকে চলতে থাকে সাজ সাজ রব, আলাপন, আয়োজন । কে কোন দলকে সাপোর্ট দিবে, কার খেলা ভালো লাগে, কোন দল চ্যাম্পিয়ণ হতে পারে, কে পেতে পারে সোনার বুট কিংবা সোনার বল আরও কত কত প্রশ্ন ? বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে একদল তো উম্মত্ততায় ভোগে তবে প্রত্যেকের মধ্যেই ফুটবল উত্তেজনার জ্বর কম বেশি কাঁপন সৃষ্টি করে । দেশ-মহাদেশের সীমানা, সাগর-মহাসগরের গন্ডি পেরিয়ে ফুটবলের সে উত্তেজনা ৫৬ হাজার বর্গমাইলের বাংলাদেশকে বেশ ভালো ভাবেই ধাক্কা দিতে সক্ষম হয় । যে ধাক্কায় সকল বয়সের মানুষ কম-বেশি আনন্দ খুঁজে পায় । পছন্দের দল জিতলে তো কথা নেই হারলেও সে দুঃখ বেশি সময় স্থায়ী হয় না বরং বিশ্বখ্যাত তারকাদের ফুটবল ছন্দের নান্দনিকতা সবাইকে দোলা দিয়ে যায় । বলা হয়, মাঠে বল দখলের লড়াইয়ে দু’ই দলের ২২ জন খেলোয়ারের সাথে গোটা বিশ্বটাও দু’ই ভাগে ভাগ হয়ে যায় । বাংলাদেশের তরুনসহ সকল পুরুষরা যেমন রাত জেগে ফুটবল খেলা উপভোগ করে তেমনি তরুনীরা কিংবা মধ্যবয়স্কা নারীরাও ফুটবল খেলাকে ভালোবেসে উপভোগ করে । সবচেয়ে আকর্ষনের বিষয় হল, বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেত্রী এবং সাবেক প্রধানন্ত্রী রাত জেগে ফুটবল খেলা উপভোগ করেন । শেখ হাসিনা, রওশন এরশাদ এবং খালেদা জিয়া দেশের এ ত্রিরত্নের প্রত্যেকের বয়স ষাটোর্ধ হলেও তারা এখনো নিয়মিত রাত জেগে খেলা দেখেন এবং তাদের পছন্দের দলকে সাপোর্ট করেন সেটা দেশের ক্রিড়ামোদী দর্শকদের জন্য চরম পাওয়া । রাজনৈতিকভাবে বিভিন্ন মতাবলম্বী হওয়ার পরেও ফুটবল দল পছন্দের বেলায় তিন জনের পছন্দ এক এবং অভিন্ন । তারা তিন জনই ব্রাজিলকে পছন্দ করেন । এ খবর দেশের ব্রাজিল ভক্তদের হালে পানি পেতে নিশ্চয়ই সাহায্যকারী হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেত্রী এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী ফুটবলকে যেমন ভালোবাসেন তার চেয়ে নিশ্চয়ই হাজার গুন কিংবা তারও বেশি দেশকে ভালোবাসেন । বিশ্বকাপ ফুটবল প্রতি চারবছর অন্তর কেবল ১ মাস বা তার কিছু বেশি সময়ের জন্য আসে সেজন্য এই ভালোবাসাটুকু ক্ষনিকের জন্য হলেও প্রবল কিংবা তীব্র হতে পারে কিন্তু তারা নিশ্চয় দেশ এবং দেশের মানুষকেও কম ভালোবাসেন না এবং দেশের প্রতি তাদের ভালোবাসা অবশ্যই নিয়ত গতিশীল ।
দেশের ত্রিরত্নের মধ্যে কোনরুপ মতের মিল নেই যা তাদের অতীতের বহু কাজ কিংবা কথায় দেশবাসী বহুবার উপলব্ধি করেছে । শেখ হাসিনা এবং খালেদা জিয়া দেশের জন্য যতটা গুরুত্বপূর্ণ রওশন এরশাদ ঠিক ততোটা গুরুত্বপূর্ণ না হলেও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যেহেতু তিনি ভাগ্যগুনে দেশের বিরোধীদল হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছেন সেহেতু তিনিও রাষ্ট্রের জন্য কম গুরুত্বপূর্ন নন । রাজনৈতিক ভিন্ন মতাদর্শতার কারনে আপনাদের মধ্যে মতের অমিল থাকাটাই স্বাভাবিক কিন্তু দেশের মঙ্গল চিন্তায় রাষ্ট্রের অনেক সিদ্ধান্তে আপনারা বিরোধীতা করতে পারে না । কিছু কিছু ক্ষেত্রে আপনাদের সামান্য বিরোধীতাও রাষ্ট্রের জন্য চরম হুমকি হিসেবে দেখা দিতে পারে । শেখ হাসিনা তথা আওয়ামীলীগ স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধুর আদর্শে রাজনীতি করেন, খালেদা জিয়া তথা বিএপি স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানের আদর্শে রাজনীতি করে যা দেশের জন্য সর্বদা মঙ্গলময় । অবশ্যই কল্যানের । কেননা দেশের এই দুই মহান ব্যক্তি কখনো রাজনৈতিক কিংবা ব্যক্তিজীবনে রাষ্ট্র কিংবা রাষ্ট্রের জনগণের কোন অকল্যান বয়ে এনেছেন এমন কোন প্রমান পাওয়া যায় না । বরং মৃত্যুর আগ মূহুর্ত পর্যন্ত এমনকি তাদের মৃত্যুও হয়েছে দেশের স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে । তবুও তারা দেশের স্বার্থ ভূলে অনৈতিকিভাবে বেঁচে থাকার চেষ্টা করেননি । দেশের মানুষের কাছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যেমনি শ্রদ্ধার পাত্র তেমনি জিয়াউর রহমানও কম শ্রদ্ধার পাত্র ছিলেন না । আপনাদের মনে রাখা উচিত, বিভিন্ন সময়ে আপনারা দু’জন বাংলাদেশের মানুষকে নেতৃত্ব দেয়ার যে সুযোগ পেয়েছেন তা অবশ্যই আপনাদের যোগ্যতায় নয় বরং একজনের পিতা এবং অন্যজনের স্বামীর প্রতি রাষ্ট্রের ঋণ লাগবের জন্য রাষ্ট্রের জনগণ আপনাদেরকে সে সুযোগ দিয়েছে । জনগণ আপনাদেরকে সুযোগ দিয়ে ভূল করেনি কেননা রাষ্ট্রের কল্যানকামীতায় আপনাদের চেষ্টার কোন ত্রুটি ছিল না । আপনারা সুযোগমত আপনাদের সর্বোচ্চ শ্রম, মেধা ও মননশীলতা দিয়ে রাষ্ট্রের যথেষ্ট উন্নতি করেছেন । রাষ্ট্রও আপনাদের কাছে ঋণী হয়ে গেছে । আপনাদের পরবর্তী প্রজন্মকে সুযোগ দানের মাধ্যমে আবারও সে ঋণ জাতি অবশ্যই শোধ দিবে । তবে সেজন্য আপনাদেরকে বহু বিষয়ে এখনই বিবেচনা করতে হবে ।
সাম্প্রতিক সময়ে আপনাদের কিছু সিদ্ধান্ত আপনাদের প্রাপ্য সকল প্রশংসাকে উবিয়ে দিচ্ছে । আপনারা এমন মাত্রায় একে অপরের দিকে কাঁদা ছোড়া-ছুড়ি করছেন যা দেখে সাধারণ মানুষ আপনাদের সম্পর্কে প্রকাশ্যে কিছু বলার সাহস না পেলেও আড়ালে মূখ লুকিয়ে হাসছে । আপনারা আপনাদের কর্মের মাধ্যমে বিতর্কিত হতে পারেন সেটা স্বাভাবিকও কিন্তু আপনাদের দু’ই মহান পূর্বসূরীকে টেনে এনে তাদেরকে বিতর্কিত করার অধিকার আপনাদের আছে কী ? অধিকারের প্রশ্নে আপনারা বলতে পারেন সেটা আপনাদের অবশ্যই আছে কেননা একজনের পিতা আরেকজনের স্বামী । পিতা কিংবা স্বামীর চেয়ে পরমাত্মীয় এ ধরনীতে আর কে হতে পারে ? যদি বঙ্গবন্ধু এবং জিয়াউর রহমানের ব্যাপারে এরকম ভেবে থাকেন তবে ভূল করবেন কেননা পিতা আর স্বামীই পরিচয়ের সবটুকু নয় । এরা যেমন আপনাদের পিতা কিংবা স্বামী তেমনি দেশের জাতীয় বীর, শ্রেষ্ঠ সন্তান । সে কারনে সকলের উপর যেমন এদের অধিকার ছিল তেমনি বাংলাদেশের সকল জনগণও এদের উপর অধিকার রাখে । কাজেই আপনাদের রক্ত কিংবা সম্পর্কের জোড় খাঁটিয়ে সকল মানুষের অধিকার হরণের নৈতিক অধিকার আপনাদের নাই । আপনাদের পারস্পরিক কোন উক্তির কারনে যদি বঙ্গবন্ধু কিংবা জিয়াউর রহমান দেশে কিংবা বিদেশের মানুষের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হন তবে তার দায়ভার আপনাদেরকেই নিতে হবে এবং নিকট ভবিষ্যতে জাতির কাছে সেজন্য কৈফিয়তও দিতে হবে । আপনারা একেকজন যখন ক্ষমতায় বসেন তখন বিরোধী পক্ষের ইতিহাস বিলীন হয়ে যায় । যে কারনে একজন শিক্ষার্থীকে কিংবা জ্ঞান পিপাসুকে বাংলাদেশের কোন ইতিহাস অধ্যয়ণের পূর্বে ভাবতে হয় যা পড়ছি তা সঠিক তো ? আশা নয় বিশ্বাস এ ধারা থেকেও অচিরে বের হয়ে আসার রাস্তা আপনারাই করে দিবেন ।
আপনাদের কোন্দলের কারনে দেশের সর্বক্ষেত্রে অরাজকতা সৃষ্টি হয়েছে । মানুষের জীবনের মূল্য প্রাণীর জীবনের মূল্যের চেয়েও কমে গেছে । প্রতিদিন যত্রতত্র বিভিন্নভাবে মানুষ মারা যাচ্ছে কিংবা মারা হচ্ছে । রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় অপরাধের প্রকৃত হোতারা থেকে যাচ্ছে আড়ালে । হয়রানির মূখে পড়তে হচ্ছে অনেক নির্দোষ ব্যক্তিকে । রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে বাস্তুহারা হয়েছে অগনিত মানুষ । আপনাদের দন্ধের কারনে সুযোগ পেয়েছে অন্যায় করার সুযোগ পাচ্ছে স্থানীয় প্রশাসন থেকে শুরু করে দেশের সর্বোচ্চ ব্যক্তিবর্গ । কেউ কাউকে পরোয়া করছে না । ঘুষ, দুর্ণীতি, মাদকে দেশ সয়লাব হয়ে গেছে । অর্থনৈতিকভাবে দেশ পঙ্গু হয়ে গেছে । এতদিন আমাদের একটি গর্ব ছিল কেননা রেডিমেট পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশ বিশ্বের দুই নম্বর অবস্থানে ছিল । সে গর্বের স্থানটিও আজ ভেঙ্গে গেছে । পত্রিকায় দেখলাম, বাংলাদেশকে টপকিয়ে ভারত সে জায়গাটি দখল করেছে । আপনাদের মধ্যকার এ দন্ধ চলতে থাকে হয়ত কয়েক বছরের মধ্যে বাংলাদেশ রেডিমটে পোশাক আমদানীতে দুই নম্বরে চলে যাবে । জিএসপি সুবিধা বন্ধ অনেক দিন । মোটকথা রাষ্ট্রের যতগুলো সমস্যা আছে তার সমাধানে আপনাদের একতাদ্ধ হওয়ার কোন বিকল্প নেই । যেদিন আপনারা একতাদ্ধ হতে পারবেন সেদিন বাংলাদেশ সতিকারার্থেই সোনার দেশে পরিনত হবে । কারো দয়া নিয়ে আমাদেরকে বেঁচে থাকতে হবে না কিংবা কারো চোখ রাঙানি দেখে ভয় পাওয়ার দিন থাকবে না । বিশ্বকাপ ফুটবলে ব্রাজিলকে সমর্থনের ব্যাপারে আপনার যেমন এক তেমনি রাষ্ট্রের স্বার্থ বিবেচনায়ও আপনারা এক ও অভিন্ন হবেন । এটা আমাদের আশা নয় বরং বিশ্বাস । আপনাদের সে সুমতির অপেক্ষায় ।
রাজু আহমেদ । কলাম লেখক ।
বিষয়: রাজনীতি
৯০১ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন