যুব সমাজকে তথ্য-প্রযুক্তি নির্ভর হতে হবে
লিখেছেন লিখেছেন রাজু আহমেদ ৩০ মে, ২০১৪, ১১:৩০:১৮ সকাল
বছর দশেক পূর্বে বলা হত, ‘জ্ঞানই শক্তি’ কিন্তু বর্তমান সময়ে বলা হচ্ছে, ‘তথ্যই শক্তি’ । বর্তমান ধারনাটির কারনে পূর্বের ধারনাটিকে ভূল বলার কোন উপায় নেই । সময়ের চাহিদায় তখনকার দিনে জ্ঞানকে শক্তি বলা হলেও বর্তমান জ্ঞান-বিজ্ঞানের চরম অগ্রসরতার যুগে মূলত তথ্যই শক্তি । এক যুগ পূর্বে যে ব্যক্তি যতবেশি পুস্তকের জ্ঞানে সমৃদ্ধ ছিল সে ব্যক্তি ততবেশি জ্ঞানী বলে বিবেচিত ছিল । সময় পাল্টানোর সাথে মানুষের বিশ্বাসও বদলেছে । তথ্য-প্রযুক্তির যুগে যে ব্যক্তি যতবেশি তথ্য সমৃদ্ধ অর্থ্যাৎ যার কাছে যতবেশি তথ্য সংগ্রহের মাধ্যম বা উপায় থাকবে সে ব্যক্তি বর্তমান যুগের সাথে ততবেশি তাল মিলিয়ে চলতে পারবে । অতীতে বিশাল ভলিয়মের বইতে মানুষকে মূখ লুকিয়ে, দৃষ্টিকে নিবদ্ধ করে রাখতে হত জ্ঞান সংগ্রহ কিংবা অর্জন করার জন্য কিন্তু বর্তমান সময়ে কম্পিউটার এবং ই-মেইলে যে দক্ষ সে ব্যক্তিই বিশ্বের সকল বিষয়ের সম্মন্ধে নিমিষেই তথ্য সংগ্রহ করতে পারে । অতীতে যেমন মানুষকে কোন বিষয় জ্ঞান অর্জন করার জন্য দুর-দূরান্তের লাইব্রেরিতে ছুটতে হত এখন তা দরকার হয় না । প্রত্যেকের পাঠ্য রুমে কম্পিউটার কিংবা ল্যাপটপে ইন্টারনেট সংযোগ দিয়ে যে কোন দূর্লভ বিষয়ের তথ্য নিমিষেই সংগ্রহ করা যায় । একসময়ের দূর্লভ বইগুলো ইন্টারনেটের কল্যানে ঘরে বসেই কম্পিউটারে সহজভাবে পাঠ করা যায় । সময়ের এ অগ্রযাত্রায় মানুষ যেমনিভাবে তার সময়কে কাজে লাগাতে পারছে তেমনি অর্থকেও সাশ্রয় করতে পারছে ।
বর্তমান সরকার দেশকে ডিজিটালভাবে রুপায়ণ করার কাজ করছে । যদিও দেশের এক-তৃতীয়াংশ জনপদের মানুষ এখনও বিদ্যুত বিচ্ছিন্ন আছে । বর্তমান গৃহীত পদক্ষেপের মাধ্যমে সরকার গোটা দেশকে ডিজিটাল করতে পারবে না বরং দেশের কিছু অংশকে ডিজিটাল করতে পারবে । কেননা সম্পূর্ণ দেশকে ডিজিটাল করতে চাইলে দেশের সর্বব্যাপী বিদ্যুত সংযোগ আবশ্যক । দেশকে ডিজিটাল করার পূর্ব শর্ত হল কম্পিউটার কিংবা ল্যাপটপ চালানোর ক্ষমতা । কম্পিউটার কিংবা এ জাতীয় ডিভাইস চালানোর জন্য বিদ্যুত শক্তি পূর্ব শর্ত অথচ সরকার সে শক্তিকে সকল মানুষের কাছে এখনো পৌঁছে দিতে পারে নি । তবুও সরকারকে সাধুবাদ তারা অন্তত উদ্যোগ নিয়েছে । তাদের উদ্যোগকে ভিত্তি করে বর্তমান সরকার কিংবা আগামীতে যারা বাংলাদেশকে পরিচালনা করবে তাদের কেউ দেশকে ডিজিটাল হিসেবে রুপ দিতে পারবে । ইতোমধ্যে বর্তমান সরকার গৃহীত নানমূখী পদক্ষেপের সুফল দেশের বহু মানুষ পেতে শুরু করলেও যে স্বপ্ন জনগণের হৃদয়ে অঙ্কিত করে সরকার ডিজিটাল দেশের পরিকল্পনা করেছিল তার অনেকটাই সরকার এখনো পূর্ণ করতে পারে নি । তবে সরকারে প্রতিশ্রুতির সাথে দেশের মানুষও আশাবাদী অচিরেই সরকার তার কাঙ্খিত লক্ষ্যে উপনীত হতে পারবে । অতীতের বাংলাদেশের তুলনায় বর্তমান বাংলাদেশের যে পরিবর্তন হয়েছে তা অবশ্যই বিস্ময়কর কিন্তু দেশের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশ এখনো অনেক পিছিয়ে আছে যা ভারত, পাকিস্তানসহ কয়েকটি দেশের সাথে বাংলাদেশের তুলনা করলে স্পষ্ট হয়ে ওঠে ।
অনেক নিরাশার বানীর মধ্যে আশার বানীও কম নয় । দেশের এমন কতগুলো জনপদ আছে যেখানে জাতির আয়না খ্যাত সংবাদপত্র পৌঁছে না । এমনকি দেশ বিদেশে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনা-দূর্ঘটনা সম্পর্কে তারা একেবারেই অজ্ঞতায় থাকে । নাগরিক অধিকারের সীমা, জাতীয় সেবার অধিকার সম্পর্কে তারা পূর্ণভাবেই অন্ধকারে ছিল । তবে আশার কথা হল সময় বদলেছে । মোবাইল ফোন এবং ইন্টারনেটের কল্যানে বিভিন্ন অনলাইন পোর্টালেরর মাধ্যমে তারা মূহুর্তেই দেশ-বিদেশে ঘটে যাওয়া খবরগুলো জানতে পারছে । প্রিন্ট মিডিয়া যেখানে তাদের সংবাদ পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়েছে তথ্য প্রযুক্তি সেই অসাধ্য কাজটিকে একেবারে সহজ করে দিয়েছে । একজন শহরের মানুষ বিশ্ব সম্পর্কে যতটুকু জানে তার চেয়ে বর্তমানে একজন প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ কোন বিষয়ে কম ধারনা রাখে না । অথচ অতীতে গ্রামের মানুষদেরকে গন্ড-মূর্খ বলে অপবাদ দেয়া হত । তথ্য প্রযুক্তির কল্যানে জ্ঞানের সমতা বিধান সম্ভব হয়েছে । শহরের একটি শিশু তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে যেমন নিজেকে গড়ে তুলছে ঠিক একইভাবে একটি অনুন্নত গ্রামের শিশুও তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে ভবিষ্যত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে । যদিও আনুপাতিক হারে শহরের শিশুদের চেয়ে গ্রামের শিশুরা এখনো অনেক পিছিয়ে তবুও সরকার এবং বিভিন্ন টেলিকম কোম্পানীর সদিচ্ছা থাকলে অচিরেই এ পার্থক্য হৃাস পেয়ে একটি সমতার সমাজ গঠিত হবে ।
কোন জিনিসের যেমন ক্রিয়া আছে তেমনি প্রতিক্রিয়াও আছে । তথ্য প্রযুক্তি কেবল দেশকে সামনে এগিয়ে নিচ্ছে না বরং কিছু কিছু ক্ষেত্রে পিছিয়েও দিচ্ছে । এক্ষেত্রে ‘আকাশ সংস্কৃতি’ সব থেকে বেশি ভূমিকা পালন করছে । কিছু দেশে যা সংস্কৃতি আমাদের দেশে তা অপসংস্কৃতি । আমাদের দেশের জন্য ক্ষতিকর সে সকল অপসংস্কৃতি কোন রুপ বাধা না পেয়ে আমাদের দেশে প্রবেশ করছে এবং দেশকে বিশেষ করে দেশের যুব সমাজকে নৈতিকভাবে ধ্বংস করে দিচ্ছে । এ অপসংস্কৃতির প্রভাবে দেশের যুব সমাজ যৌন সুড়সুড়ি মূলক উপাদান পেয়ে তাদের নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয় হচ্ছে । এ ধারা চলতে থাকলে তথ্য প্রযুক্তির কল্যানের চেয়ে অকল্যান বেশি প্রভাব বিস্তার করবে । সুতরাং সরকারকে ‘আকাশ সংস্কৃতির’ উম্মূক্ততা বিষয়ে ভাবতে হবে । তথ্য প্রযুক্তির নেতিবাচক দিক বর্জন করে কিভাবে এর ইতিবাচক দিককে ব্যবহার করে রাষ্ট্রের কল্যান সাধন করা যায় সে ব্যাপারে উদ্যোগী হতে হবে ।
সরকার দেশকে এবং দেশের শিক্ষার্থীদেরকে তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর করে গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন স্কুলে কম্পিউটার ল্যাব প্রতিষ্ঠা করে শিক্ষার্থীদেরকে এ সম্পর্কীত শিক্ষায় শিক্ষিত করছে । সরকারের দেখানো স্বপ্নকে দেশের মানুষের কাছে সম্পূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করার জন্য সরকারকে ব্যাপক পরিসরে এ পদক্ষেপ গ্রহন করতে হবে । দেশের সকল শিক্ষার্থীর কাছে সম-বন্টন নীতিতে তথ্য প্রযুক্তি পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ সরকারকেই নিতে হবে । কেবল সরকার গৃহীত পদক্ষেপের মাধ্যমেই দেশের মানুষকে তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর করে গড়ে তুলে যুগের চাহিদার সাথে তাদেরকে উপযোগী করা সম্ভব । কাজেই দেশকে তথ্য প্রযুক্তি সম্পন্ন করার জন্য যতগুলো অন্তরায় আছে সেগুলোকে সরকারের গঠন মূলক পদক্ষেপের মাধ্যমে দূর করে অচিরেই এ সেক্টরে সফলতা অর্জন করতে পারবে বলে দৃঢ় আশাবাদ রাখি । বর্তমান প্রজন্ম যেন বুক ফুলিয়ে গর্ভভরে বলতে পারে, তারা যেমনি জ্ঞান নির্ভর তেমনি তথ্য নির্ভর । যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলার ক্ষমতা তাদের সকলের আছে । কাজেই যুব সমাজকে তথ্য-প্রযুক্তি নির্ভর করে গড়ে তোলা সময়ের দাবী ।
রাজু আহমেদ । কলাম লেখক ।
বিষয়: বিবিধ
৮৮৭ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন