লিভটুগেদার বিকৃত মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ
লিখেছেন লিখেছেন রাজু আহমেদ ১৩ এপ্রিল, ২০১৪, ০৬:৩৬:১৪ সকাল
সময়ের তালে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশে সর্বক্ষেত্রে উন্নতির ছোঁয়া লাগতে শুরু করেছে । শিক্ষায় বিশেষ করে নারী শিক্ষায় বিশ্বের অনেক উন্নত দেশকে পেছনে ফেলেছে ৫৬ হাজার বর্গমাইলের ছোট্ট বাংলাদেশটি । কয়েক দশক আগে যে দেশটির নারীদেরকে ঘরের বাহিরে বের হতে নানা বাধার সম্মূখীন হতে হত সেই দেশটির নারীরা আজ শুধু উচ্চশিক্ষা অর্জন করে ক্ষান্ত নয় তারা বেশ সম্মানের চাকরিও করছে । কর্মস্থলে বাংলাদেশী নারীদের পদচারণা কেবল দেশের পরিমন্ডলেই সীমাবদ্ধ নেই তারা বিশ্বের বহুদেশে দেশের হয়ে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখছে । নারীর এ উন্নতির পেছনে বেগম রোকেয়া সাখাওয়াতদের মত মহীয়সী নারীদের ভূমিকা অনস্বীকার্য । দেশের মানুষদের পূর্ব সংস্কার ভেঙ্গে সকলেই বুঝতে শিখেছে একজন শিক্ষিত মা একটা শিক্ষিত জাতি দিতে পারে । নারী শিক্ষার হার বৃদ্ধির পাওয়ার কারনে দেশে শিক্ষিতের হার প্রায় শতভাগ নিশ্চিত হওয়ার দ্বারপ্রান্তে । বাংলাদেশের মত একটি তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশে সরকারের আন্তরিকতায় পুরুষদের চেয়ে নারী শিক্ষার হার কয়েক শতাংশ বেশি । নারীদের ডিগ্রি পর্যন্ত শিক্ষা অর্জনে সুযোগ প্রদানের লক্ষ্যে সরকার তাদের শিক্ষাকে অবৈতনিক ঘোষণা করেছে । সরকার প্রদত্ত সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দেশের অশিক্ষিত, অল্পশিক্ষিত অভিভাবকরা তাদের কন্যা সন্তানদেরকে উচ্চশিক্ষা প্রদানের সাহস পাচ্ছে । নারী শিক্ষা উন্নয়নের কারনে দেশের অনেক সমস্যাও বিলুুপ্তির পথে । যার মধ্যে বাল্যবিবাহ বন্ধ, বিবাহে যৌতুক ব্যবস্থার প্রতি ঘৃণা এবং দেশের জনসংখ্যা অতিরিক্ত বৃদ্ধির হার ক্রমশই কমে আসছে ।
কোন বস্তুর সূফলের অন্তরালে তার একটি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকে । অর্জন বা প্রাপ্তির তুলনায় সে পার্শ¦ প্রতিক্রিয়ার মাত্রা কম হয় না। বাংলাদেশে সরকার প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থাকে মানুষের দোড় গোঁড়ায় পৌঁছে দিতে পারলেও উচ্চ শিক্ষা অর্জন করতে হলে শিক্ষার্থীদেরকে ছুটতে হয় শহর পানে । নিজের পরিচিত শহর ছেড়ে একটি অপরিচিত শহরের ভিন্ন পরিবেশে একজন পুরুষ শিক্ষার্থীর জন্য অনুকূলের হলেও নারী শিক্ষার্থীদের পোহাতে হয় অনেক ঝক্কি-ঝামেলা । সকল সমস্যার মোকাবেলা করে একজন শিক্ষার্থী খুব দ্রুতই নতুন পরিবেশের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিয়ে অভ্যস্থ হয়ে পড়ে তার আসল উদ্দেশ্য সাধনে । চলার পথে জীবনের অভিজ্ঞতায় যোগ হয় অনেক কিছু । বন্ধুত্ব হতে থাকে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত শিক্ষার্থী কিংবা অন্যান্য মানুষের সাথে । কেউবা ছেলে বন্ধু আবার কেউবা মেয়ে । বন্ধুত্ব গড়িয়ে আস্তে আস্তে রূপ নেয় প্রেমে । শিক্ষার্থীরা একেবারে অভিভাবক শূন্য অবস্থায় থাকার কারনে কেউ তাদেরকে ভাল মন্দের পার্থক্য বুঝিয়ে দেয়ার থাকে না । যে অভিভাবকদের কঠোর নির্দেশনায় জীবনের দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হয়েছে তাদের অনুশাসনের বাইরে এসে শিক্ষার্থীরা স্বাধীনতার চুড়ান্ত স্বাদ ভোগ করতে গিয়ে মাঝে মাঝে জড়িয়ে পড়ে অনৈতিক সম্পর্কে । আবেগকে প্রশমন করতে না পেরে বয়সের গতি অনেককেই এমন মোহে মোহিত করে যা থেকে ফিরে আসা অনেকটাই অসম্ভব । বন্ধুত্বের উচ্ছ্বাস এবং বিদেশী অপসংস্কৃতির প্রভাবে বাংলাদেশের ছেলেমেয়ার জড়িয়ে পরে বিবাহপূর্ব অনৈতিক শারীরীক সম্পর্কে । এ সম্পর্ককে ধারাবাহিক করার জন্য ছেলে মেয়েরা জড়িয়ে পরে লিভটুগেদারে । যা একদিকে যেমন মানসিক বিকারের বহিঃপ্রকাশ তেমনি পারিবারিক ব্যবস্থায় ভাঙন সৃষ্টির একটি অন্যতম কারন । বাবা-মা সন্তানের প্রতি পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস রেখে, তাদেরকে নিজেদের কাছ থেকে দূরে রেখে, মাথার ঘাম পায়ে ফেলে টাকা রোজগার করে নিজেরা ঠিক মত না খেয়ে সন্তানের লেখা-পড়ার নিশ্চিত করার জন্য টাকা পাঠায়, যাতে সন্তানের কোন কষ্ট না হয় । অভিভাবকের দেয়া সে টাকা আসল উদ্দেশ্যে ব্যয় না করে যখন কোন অনৈতিক সম্পর্ক ধারাবাহিক করার কাজে ব্যয় করা হয় তখন সেটা জাতির ভবিষ্যত কর্ণধারদের জন্য কতটা নীতির এবং বাবা-মায়ের ঋণের দায় শোধ করার জন্য কতটা সহায়ক তা কোন অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের ভাবার অবকাশ থাকে না । বাবা-মা যখন তার সন্তানের উচ্চ শিক্ষা নিয়ে কোন প্রতিবেশীর সাথে গর্ব ভরে গল্প করেন তখন তার সন্তান যৌবনকে উপভোগ করার জন্য কোন এক ফ্লাটে কিংবা পার্কের নির্জনে কাটায় । এর পরিনতি কোন কালেই ভাল হবে না হবার নয় । অতি সম্প্রতি এমনি এক লিভটুগেদারের কারনে বলি হতে হয়েছে একজন মেডিকেল ছাত্রীকে । বাবা-মা স্বপ্ন বুনেছিল তার মেয়ে ডাক্তার হয়ে যেমনি তাদের পরিবারকে স্বচ্ছল করবে তেমনি গরীব দুস্থদের সেবা করে বিনা চিকিৎসায় মরতে দেবে না । অন্যদিকে তাদের মেয়ে তখন তার ছেলে বন্ধুকে নিয়ে স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিয়ে বাড়া বাসায় দৈহিক কামনা নেভানোয় ব্যস্ত । কথিত স্বামীর সাথে ঝগড়া-ঝাটির এক পর্যায় খুন হল মেয়েটি । কিছু কিছু মৃত্যু আছে যা তেমনি দহন করে না কিন্তু মেডিকেল ছাত্রীটির এ মৃত্যু তার বাবা-মায়ের কপালেও কলঙ্কের তিল অঙ্কন করে দিয়ে গেল ।
মানুষের জন্য শ্রেষ্ট ও পূর্ণ জীবনব্যবস্থা ইসলামসহ প্রতিটি ধর্মেই বিবাহের প্রতি গুরুত্বারোপ করেই কেবল ক্ষান্ত হয় নি বরং বিবাহ পূর্ববর্তী শারীরীক সম্পর্কের প্রতি দিয়েছে কঠোর নিষেধ । বিবাহ কেবল একটি মেয়ে আর একটি ছেলের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন নয় । বিবাহের মাধ্যমে দুটি পরিবারের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপিত হয় । বিয়ের উদ্দেশ্য কেবল মানুষের জৈবিক চাহিদা পূরণও নয় বিবাহের মাধ্যমে সন্তান উৎপাদন হয় সর্বোাপরি মায়ার বন্ধন সৃষ্টি হয় । বিবাহ সামাজিক বিশৃঙ্খলা রোধ করে সমাজে শান্তির ফল্গুধারা বর্ষিত করে । ধীরে ধীরে সমাজ ব্যবস্থাকে ঘুনে ধরতে শুরু করছে । বিদেশী পচনশীল সংস্কৃতি আমাদেরকে কুঁড়ে কুঁড়ে খেতে শুরু করেছে । দেশে চালু হয়েছে বিবাহোত্তর শারীরীক সম্পর্ক স্থাপন ক্রিয়া । যা শুধু অনৈতিকই নয় বরং সমাজের জন্য ধ্বংসাত্মক । দেশের কয়েকটি গণমাধ্যম ইতোমধ্যে প্রকাশ করেছে রাজধানী ঢাকাসহ প্রতিটি বিভাগীয় এমনকি মফস্বল শহরেও চালু হয়েছে লিভটুগেদার । হাজার হাজার তরুন তরুনী কোথাও স্বামী-স্ত্রীর পরিচয়ে আবার কোথাও অন্য কোন সম্পর্কের পরিচয় মেতে উঠেছে যৌবনের লীলা-খেলায় । এরকম চলতে থাকলে অচিরেই দেশের সামাজিক বন্ধন ছিন্ন হয়ে পারিবারিক ব্যবস্থা ভেঙ্গে পরবে । পশ্চিমা বিশ্বের মত অশান্তির দাবানলে প্রতিমূহুর্তে ছাড়খাড় হবে ছোট্ট শান্তির দেশটি । বিবাহপূর্ববর্তী লিভটুগেদার এবং শারীরীর সম্পর্ক বন্ধে সকলকে ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলতে হবে । এর কুফল সম্পর্কে সকলকে সচেতন হতে হবে । সরকারকে কঠোর নীতিমালা প্রণয়েন মাধ্যমে এ ধরনের অসামাজিক কার্যকলাপ বন্ধে যথেষ্ট আন্তরিকতার পরিচয় দিতে হবে । কোন অবস্থাতে যদি এ অনৈতিক কর্মকান্ড বিজয়ী হয় তবে দেশের চরম পরিনতি কেউ রুদ্ধ করতে পারবে না । কাজেই শিক্ষিতরা যদি শিক্ষিতের মত কাজ না করে তবে দেশের আগামী জাহেলি যুগের চেয়েও বর্বর হবে । নারীদের অবস্থা আবারও ২০০০ বছরের পূর্বের অবস্থায় ফিরে যাবে । নারীরা ভোগ্য পণ্য ব্যতিরেকে আর কোনভাবেই মূল্যায়িত হবে না । সুতরাং দেশের সকলের স্বার্থে সবাইকে এ কু-কাজ থেকে বিরত রাখার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার এখনই সময় । কোন অপশক্তি যদি মূলে বিনাশ না করা যায় তবে পরে সেটা ধ্বংস করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায় । এটা যত দ্রুত বুঝতে পারা যাবে জাতির জন্য ততোটা মঙ্গলের হবে ।
রাজু আহমেদ । কলাম লেখক ।
বিষয়: বিবিধ
১০২৮ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
নবী মোহাম্মদের "মারিয়া আল কিবতিয়া" নামের এক অপরুপ সুন্দরী দাসি ছিল। খ্রিষ্ট ধর্মালম্বী রুপেররাণী মারিয়া কে তৎকালিন Byzantine সম্রাট ৬২৮ খ্রিষ্টাব্দে সুদুর মিশর থেকে আমদানি করে নবীকে উপহার দেন। পরবর্তিতে মারিয়ার ঘরে ইব্রাহিম নামের নবীর এক পুত্র সন্তানও জন্মগ্রহন করে, যদিও সন্তানটি শিশু বয়সেই মারা যায়। নবীর মৃত্যুর(৬৩২ খ্রষ্টাব্দ) আগ পর্যন্ত মারিয়া সাথেই ছিলেন যদিও তারা কখনো পরস্পরকে কে বিয়ে করেন্নি। বিভিন্ন সুত্র এবং ইবনে কাইউম আল জাওজিয়া মতে মারিয়া ছিল নবীজীর রক্ষিতা(concubine) এবং ইবনে হিসাম নবীজীর স্ত্রীদের যে তালিকা প্রনয়ন করেছেন তাতে মারিয়ার নাম নেই।
বিস্তারিত জানতে এখানে দেখুন : Click this link
—Ibn al-Qayyim , biography
Abu ‘Ubaydah said: He had four (concubines): Mariyah, who was the mother of his son Ibraaheem; Rayhaanah; another beautiful slave woman whom he acquired as a prisoner of war; and a slave woman who was given to him by Zaynab bint Jahsh.
—Zaad al-Ma’aad, 1/114
A PHP Error was encountered
Severity: Notice
Message: Undefined offset: 7238
Filename: views/blogdetailpage.php
Line Number: 764
—Ibn al-Qayyim , biography
মন্তব্য করতে লগইন করুন