ন্যানো সেকেন্ডের যুগে দীর্ঘ একমাস !
লিখেছেন লিখেছেন রাজু আহমেদ ০৮ এপ্রিল, ২০১৪, ০৭:০১:১২ সকাল
বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ভাষায়, “বিশ্ব জগৎ দেখব আমি আপন হাতের মুঠোয় নিয়ে............. আকাশ ফুঁড়ে উঠব আমি, নামব আমি পাতাল ফেঁড়ে” । কবিরা আবেগী হলেও তারা সকল সময় বাস্তব কথা বলার চেষ্টা করেন । ছন্দের যাদুতে নির্ধারণ করেন ভবিষ্যত । কবিদের ভবিষ্যতবানীর সাথে তাল মিলিয়ে দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছে আজকের বিজ্ঞান । বিজ্ঞানের গবেষণা পৃথিবীর সকল বস্তুকে ছাড়িয়ে এখন বিভিন্ন গ্রহ-উপগ্রহ পাণে ছুটছে । মঙ্গলে কিভাবে মানুষের বসবাস নিশ্চিত করা যায় তা নিয়ে চলছে গবেষণা । ঘন্টা মিনিট এমনকি সেকেন্ডকে এখন অনেক লম্বা সময় মনে হয় । কম্পিউটারের মত মানুষও আলাদা করতে শিখেছে ন্যানো সেকেন্ড, পিকো সেকেন্ডকে । সেখানে ৩০ দিন তথা একমাস বিশাল লম্বা সময় । বিশ্বের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্ত চষে বেড়াতেও এত সময় লাগে না । বিজ্ঞানের ক্রমাগত উন্নতি বিশ্বকে ঠিকই আমাদের হাতের মুঠোয় নিয়ে এসেছে । হাজার মাইল দুরত্বের কোন দেশের খবর আমরা মূহুর্তেই পেয়ে যাচ্ছি । চন্দ্র বিজয়ের শতাব্দীতে বিজ্ঞান পারে না এমন কোন বিষয় নেই বলে বদ্ধমূল বিশ্বাস নিয়ে যখন বিশ্ববাসী সামনে এগুচ্ছে ঠিক তখনই ধাক্কা দিল মালয়েশিয়ার নিঁখোজ বিমান এমএইচ-৩৭০ । গত ৮ই মার্চ মালয়েশিয়া থেকে উড্ডীত বিমানটি ২৩৯ জন আরোহী নিয়ে নিঁখোজ হওয়া পর আজ একমাস পর্যন্ত কোন হদিস পাওয়া যায়নি । বিশ্বের শক্তিধর সকল দেশগুলো তাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা দিয়ে খুঁজেও কোন কূল কিনারা পাওয়া করতে পারে নি । বিমান অনুসন্ধানের দীর্ঘ এ সময়ে যোগ হয়েছে নানা নাটকীয়তা । বিভিন্ন দেশের স্যাটেলাইট এবং নিঁখোজ বিমান অনুসন্ধানী জাহাজগুলো এমএইচ-৩৭০ এর ধ্বংসাবশেষের যে ছবির কথা প্রকাশ করেছে তার সাথে বাস্তবতার কোন যোগসূত্র প্রমানিত হয় নি ।
মার্চ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের প্রথম দিন যখন বিমানটি নিঁখোজ হয় তখন বিমানটি নিঁখোজের সাথে যোগসূত্র থাকতে পারে এমন বিভিন্ন সম্ভাবনা উল্লেখ করা হয় । কেউ দাবী করে বিমানটি ছিনতাই হয়েছে আবার কেউবা বলে যান্ত্রিক ত্রুটির কারনে বিমানটি পানিতে তলিয়ে গিয়েছে । মানুষ যখন নিরুপায় থাকে তখন সম্ভাবনার ক্ষেত্রে কোনটিকেই উপেক্ষা করার উপায় থাকে না । বিমানের খোঁজ পেতে একের পর এক চেষ্টা অব্যাহত রাখা হয় । বিশেষ করে মালয়েশিয়া, চিন, জাপান, আমেরিকা, রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়া এমনকি বাংলাদেশও বিমানটির হদিস পাওয়ার জন্য বিভিন্ন উপায় ব্যবাহার করে । বিমানটি নিঁখোজ হওয়ার অর্ধ মাস অতিক্রান্ত হওয়ার পর বিমানটি ছিনতাই হওয়ার সম্ভাবনাকে একেবারেই উড়িয়ে দেয়া হয় । এরপর থেকে সবাই বদ্ধমূল ধারনা করে বিমানটি কোন এক মহাসগরে বিধ্বস্ত হয়ে তলিয়ে গেছে এবং বিমানে থাকা যাত্রীদের কারও বেঁচে থাকার কোন সম্ভাবনা নাই । কিছু কিছু অতি উৎসাহী মানুষ বিমানটি এলিয়েনদের খপ্পরে পড়েছে বলে প্রচার চালায় । মালয়েশিয়ার একজন সন্নাসী তার সাঙ্গপাঙ্গদের নিয়ে ঝাড়-ফুঁক দিয়েও বিমানটির অবস্থান জানার চেষ্টা চালায় । কোন ব্যবস্থাই বর্তমান সময়ের দীর্ঘ একমাসেও কোন কাজে আসে নি । বিমানটির কোন হদিস ভবিষ্যতে পাওয়া যাবে নাকি প্রকৃত রহস্য একেবারেই অ-উম্মোচিত থেকে যাবে তা নিয়েও শুরু হয়েছে জল্পনা কল্পনা । এমএইচ-৩৭০ নিঁখোজ হওযয়া বিমানের তালিকায় প্রথম বিমান নয় । এর আগেও ১৯৪৭ সালে আর্জেন্টিনা থেকে চিলিতে যাওয়ার পথেও একটি বিমান নিঁখোজ হয়েছিল । দীর্ঘ কয়েকমাস পর একটি পাহাড়েরর শীর্ষদেশে তুষার আবৃত অবস্থায় সে বিমানটিকে বিধ্বস্ত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল । তবে নিঁখোজ বিমান এমএইচ-৩৭০ এবং এর ২৩৯ জন আরোহীর কোন সন্ধান কোন কালেই পাওয়া যাবে কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে ।
বিশ্বের যে সকল দেশ বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রায় নেতৃত্ব দিচ্ছে সে দেশগুলোর অবিরাম প্রচেষ্টাও নিঁখোজ বিমানের সন্ধান পেতে কোন কূল-কিনারা করতে পারছে না । পৃথিবীর মোট আয়তনের দুই-তৃতীয়াংশ জলভাগের কোন অংশের ক্ষুদ্র স্থান নিয়ে বিমানটি লুকিয়ে আছে তার সন্ধান পৃথিবীর বিজ্ঞানীরা এবং তাদের আবিষ্কার দিতে অক্ষম হলেও সকল বিজ্ঞানীর যিনি স্রষ্টা তার কাছে অজ্ঞাত নয় । মাত্র কয়েক হাজার কিলোমিটার বিস্তৃত একটি জলপ্রান্তের মধ্যে বেশ লম্বা চওড়া একটি বস্তুকে বিজ্ঞানের যে আবিষ্কার খুঁজে বের করতে অক্ষম সে বিজ্ঞান কেমন করে স্রষ্টার অস্তিত্বকে অস্বীকার করে । বর্তমান বিশ্বের সকল বিজ্ঞানীর মুরুব্বী হিসেবে যাকে বিবেচনা করা হয় সেই স্টিফেন হকিং আল্লাহ সৃষ্ট জান্নাত-জাহান্নামকে কল্পকাহীনি এবং এদের অস্তিত্বকে পাগলের প্রলাপ হিসেবে ব্যাখ্যা করেছে । যারা ক্ষুদ্র ভূমন্ডলের মধ্য থেকে বৃহৎ আকৃতি সম্পন্ন একটি অস্তিত্বশীল বস্তুকে খুঁজে বের করতে পারে না তাদের মহান স্রষ্টার ক্ষমতা নিয়ে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করা বোকামী ছাড়া আর কি হতে পারে ?
নিকট ভবিষ্যতে নিঁখোজ বিমানের খোঁজ না পেলেও একটি বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দ্বার করাবেন বিশ্বের মাথাওয়ালাদের নেতৃত্বধারীরা । আমরাও বিনা প্রশ্নে তাদের ব্যাখ্যাকে যুক্তিযুক্ত মেনে তাদের কথায় বিশ্বাস করব । অথচ যে বিজ্ঞানীরা তাদের সৃষ্টি কর্ম নিয়ে সীমাহীন গর্বে মেতে থাকে মালয়েশিয়ার নিঁখোজ বিমানটির সন্ধান দিতে তাদের দীর্ঘ একমাসের ব্যর্থতাও যদি স্রষ্টার প্রতি বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে তাদের বিবেককে জাগ্রত না করে তবে এর চেয়ে দূর্ভাগ্যের আর কিইবা হতে পারে । পৃথিবীর মস্ত মস্ত বৈজ্ঞানিক সূত্রগুলো মহান শক্তিধর স্রষ্টার শক্তির কাছে কিছুই না । বিজ্ঞানের আবিষ্কার সর্বশেষ আবিষ্কার নয় । এরপরেও একজন সীমাহীন শক্তিমানের হাত আছে । তার ইশারা ছাড়া পৃথিবীর কিছুই সংগঠিত হয় না ।
মালয়েশিয়ার নিঁখোজ বিমানটি দৃষ্টি সম্পন্ন ব্যক্তিদের কাছে স্রষ্টার পক্ষ থেকে একটি দৃষ্টান্ত । পৃথিবীর উত্তর মেরু থেকে দক্ষিন মেরু পর্যন্ত যার কোথাও মানুষের পদচিহ্ন পড়তে বাদ নেই সে পরিচিত স্থানে বিশাল একটি বিমানের অবকাঠামো কিভাবে মানুষের দৃষ্টির বাইরে থাকে । বুদ্ধিমানদের শিক্ষা নিতে অসংখ্য উপমার দরকার হয় না । সৃষ্টিকর্তা এমএইচ-৩৭০ বিমানটিকে লোকচক্ষুর অন্তরালে রেখেও লোকদিগকে শিক্ষা দিতে পারেন । সর্বোপরি ন্যানো সেকেন্ডের যুগে দীর্ঘ একমাস কম সময় নয় । বিমানটির অবস্থান শনাক্ত করতে আরো কতমাস লাগে তা কেইবা জানে ?
রাজু আহমেদ । কলাম লেখক ।
বিষয়: বিবিধ
১০২৬ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
A PHP Error was encountered
Severity: Notice
Message: Undefined offset: 7238
Filename: views/blogdetailpage.php
Line Number: 764
সেই তিনিই নাকি নিখোঁজ বিমানের সন্ধান জানেন! হাস্তে হাস্তে মরে গেলাম।
খুবই সুন্দর লেখাটির জন্য মোবারকবাদ!!
বিশেষভাবে নিচের কথাগুলো-
. . . .
মাত্র কয়েক হাজার কিলোমিটার বিস্তৃত একটি জলপ্রান্তের মধ্যে বেশ লম্বা চওড়া একটি বস্তুকে বিজ্ঞানের যে আবিষ্কার খুঁজে বের করতে অক্ষম সে বিজ্ঞান কেমন করে স্রষ্টার অস্তিত্বকে অস্বীকার করে।
(আসলে বিজ্ঞান তো স্রষ্টার অস্তিত্বকে অস্বীকার করেনা, বিজ্ঞানের নামে কিছুসংখ্যক পন্ডিতমূর্খ এটা করে থাকে)
বর্তমান বিশ্বের সকল বিজ্ঞানীর মুরুব্বী হিসেবে যাকে বিবেচনা করা হয় সেই স্টিফেন হকিং আল্লাহ সৃষ্ট জান্নাত-জাহান্নামকে কল্পকাহিনী এবং এদের অস্তিত্বকে পাগলের প্রলাপ হিসেবে ব্যাখ্যা করেছে । যারা ক্ষুদ্র ভূমন্ডলের মধ্য থেকে বৃহত আকৃতি সম্পন্ন একটি অস্তিত্বশীল বস্তুকে খুঁজে বের করতে পারে না তাদের মহান স্রষ্টার ক্ষমতা নিয়ে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করা বোকামী ছাড়া আর কি হতে পারে ?
. . . .
যে বিজ্ঞানীরা তাদের সৃষ্টি কর্ম নিয়ে সীমাহীন গর্বে মেতে থাকে, মালয়েশিয়ার নিঁখোজ বিমানটির সন্ধান দিতে তাদের দীর্ঘ একমাসের ব্যর্থতাও যদি স্রষ্টার প্রতি বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে তাদের বিবেককে জাগ্রত না করে তবে এর চেয়ে দূর্ভাগ্যের আর কিইবা হতে পারে ।
. . . .
বুদ্ধিমানদের শিক্ষা নিতে অসংখ্য উপমার দরকার হয় না। সৃষ্টিকর্তা এমএইচ-৩৭০ বিমানটিকে লোকচক্ষুর অন্তরালে রেখেও লোকদিগকে শিক্ষা দিতে পারেন ।
. . . .
আপনার জন্য অন্তরে এক বিশেষ রকমের ভালবাসা অনুভব করছি!
আল্লাহতায়ালা আপনার সবকিছুকে বরকতময় করুন ও কবুলকৃত নেকবান্দাদের অন্তর্ভূক্ত করুন(আমীন)
মন্তব্য করতে লগইন করুন