‘রক্ষক যদি ভক্ষক’ হয় জাতির তখন কি উপায় হয়

লিখেছেন লিখেছেন রাজু আহমেদ ০৫ এপ্রিল, ২০১৪, ০৯:৩২:৩২ সকাল

বেশ কয়েক মাস যাবত স্বর্ণ চোরাচালানের ট্রানজিট হিসেবে বাংলাদেশের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরকে ব্যবহার করছে আন্তর্জাতিক স্বর্ণ চোরাচালান কারবারীরা । গত কয়েক মাসে প্রায় কয়েক হাজার কোটি টাকা মূল্যমানের সোনার বার উদ্ধার করেছে বিমানবন্দর পুলিশ । বিমানের বাথরুম থেকে শুরু করে ইঞ্জিনরুম এমনকি পরিত্যক্ত অবস্থায়ও পাওয়া গেছে এ সকল মহা মূল্যবান স্বর্ণের বারগুলি । কে বা কারা এ চোরাচালান কারবারীরর সাথে জড়িত তার কোন হদিস এখনও পাওয়া যায় নি বা প্রকাশ্যে এ সকল সোনার বারের মালিক কারা তা কেউ দাবীও করে নি । বিভিন্ন গণমাধ্যমের মাধ্যমে পুরো দেশবাসী স্বর্ণের বার উদ্ধারের খবর জানতে পারলেও তার শেষ পরিণতি কি হচ্ছে তা রয়ে যাচ্ছে ধু¤্রজাল হয়ে । সঠিকভাবে এ সকল সোনার বার সম্মন্ধে কেউ কথা বলে নি । উদ্ধার হওয়া এ সকল স্বর্ণের বার সরকারের রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হচ্ছে নাকি যে সকল আন্তর্জাতিক চোরকারবারীরা শাহ আমানত বিমান বন্দরকে ব্যবহার করছে তাদের সাথে গোপনে আঁতাত করে কোন মাধ্যমে তাদের কাছে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে কিনা তা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলতে আরম্ভ করেছে । কোন কোন পত্রিকা দাবী করেছে উদ্ধার হওয়া স্বর্ণের বারগুলো গহনা হয়ে মধ্য প্রাচ্যের রাষ্ট্রগুলিতে যাচ্ছে । তাদের এ উপস্থাপনা যদি সত্য হয় তাহলে লোক দেখানো হাজার কোটি টাকা মূল্যমানের স্বর্ণের বার উদ্ধার করার নাটক করে দেশের সহজ সরল জনসাধারণকে বিভ্রান্ত করার কোন অর্থ আছে কি ?

স্বর্ণ উদ্ধার কিংবা এগুলোর পরিণতি কোনটাই আলোচ্য বিষয় নয় । বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ শান্তি শৃঙ্খলা বাহিনী পুলিশের সুনাম সারা দেশব্যাপী । বাংলাদেশের পুলিশ সদস্যরা দেশের আভ্যন্তরীণ শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে রাষ্ট্রের জন্মলগ্ন থেকে । কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা বাদ দিলে রাষ্ট্রের পুলিশের কার্যক্রম ছবির ফ্রেমে বাঁধিয়ে তুলে রাখার মত । দেশে বিভিন্ন সময়ে সৃষ্ট সংকটে পুলিশ যেভাবে ভূমিকা রেখেছে তা অকৃতঘ্নরাও স্বীকার না করে পারে না । দেশ ও জাতির কল্যানে সর্বদা নিয়োজিত সল্প বেতনভূক্ত বাংলাদেশ পুলিশ বাহীনি তাদের বিভিন্ন সময়ের প্রশংসনীয় কাজের কারনে সকল মানুষের প্রাণের বন্ধুতে পরিনত হয়েছে । বর্তমানে পুলিশের অতীত সুনামের পথ বেয়ে চলার রেকর্ড থেকে খন্ড খন্ড বিচ্যুতি পরিলক্ষিত হয়েছে । এজন্য পুলিশ প্রশাসনকে সরাসরি দায়ী করা চলে না । পুলিশবাহীনির মধ্যে প্রচন্ড দলীয়করনতাই এ বিচ্যুতির জন্য দায়ী বলে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী এবং সমাজবিজ্ঞানীদের একাংশে মনে করছেন । তবে আশার কথা হচ্ছে, রাষ্ট্র যন্ত্রের পরিচালকরা যদি দেশ দরদী হন তবে এ রাহুর দশা অচিরেই কাটবে বলে তারা মত দিয়েছেন । অতি সম্প্রতি শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উদ্ধার হওয়া প্রায় হাজার খন্ড স্বর্ণের বার থেকে তিনজন পুলিশ সদস্য এবং একজন সোর্স মাত্র ১৪২ খন্ড স্বর্ণের বার লোভের বশবর্তী হয়ে চুরি করে পালিয়েছিল । তবে পুলিশের চৌকষ ব্রাঞ্চ ডিবি পুলিশ তাদেরকে চুরি করা স্বর্ণের বারসহ গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে । পুলিশ বাহীনির একজন সেপাই থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ কর্মকর্তার সবাই দেশের সকল জনগণের জান-মালের পাহারাদার । সেই তাদের কিছু সংখ্যক যদি সে মালের লুটেরা হয় তাহলে দেশের সাধারণ মানুষের যাওয়ার আর কোথাও অবশিষ্ট থাকবে না । পুলিশ প্রশাসন যদি স¦র্ণের বার চুরিতে জড়িতসহ দেশের পুলিশবাহীনির মধ্যে যে সংখ্যক লোভী আছে তাদেরকে পুলিশের এতিহ্যবাহী সম্মান রক্ষাকল্পে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান না করে তবে অচিরেই পুলিশের দীর্ঘদিনে পুঁঞ্জিভূঁত সুনাম ভূলন্ঠিত হবে । দেশের সকল সচেতন নাগরিক এবং বাংলাদেশ পুলিশবাহীনির অৃকত্রিম বন্ধুদের সবাই এ সকল দোষী পুলিশদের কঠোর শাস্তি প্রদান করার জন্য পুলিশ প্রশাসনকে অনুরোধ বা পরামর্শ দিবেন । পুশিবাহীনির নিজ স¦ার্থে এবং দেশের মানুষের বন্ধুত্বের পূর্ণ পরিচয় দেয়ার জন্য পুলিশবাহীনিকে আভ্যন্তরীনভাবে বিপথগামী উগ্র পুলিশদেরকে চিহ্নিত করে তাদেরকে সংশোধনের জন্য হুঁশিয়ারী দেয়া উচিত । তাতে যদি কাজ নয় হয় তবে তাদের প্রতি কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করা উচিত । বাংলাদেশের কোন মানুষ যেন পুলিশ নামের প-ল-শ বর্ণগুলোর উৎপত্তি নিয়ে কোন প্রশ্ন তুলতে না পারে ।

বাংলাদেশের সকল মানুষের গর্ব দেশের অলঙ্কার বাংলাদেশ সেনাবাহিনী । সেনাবাহিনীর সদস্যরা যেমনিভাবে দেশের আভ্যন্তরে সুনাম অর্জন করেছে তেমনি বিশ্ববাসীর কাছেও তাদের শৃঙ্খলা প্রদর্শন করে খ্যাতি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে । দেশের মানুষের জন্য ¯্রষ্টার রহমত স্বরুপ বিবেচনা করা হয় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে । সেনাবাহিনীর কোন দূর্ণাম অতীতে ছিল না, আজও নাই, দেশের মানুষ আশা ভবিষ্যতেও থাকবে না । সেনাবাহিনীর প্রধান থেকে শুরু করে একজন সাধারন সৈন্য পর্যন্ত সবাই দেশের জন্য তাদের জীবনকে বাজি রাখেন । শুধু দেশের মধ্যেই সেনাবাহীনির কার্যক্রম সীমাবদ্ধ নেই । বাংলাদেশ সেনাবাহীনি বিশ্বের যে সকল দেশগুলো থেকে শান্তির পাখি বিদায় নিয়েছে বিশেষ করে আফ্রিকার অনেকগুলো দেশে জাতিসংঘের শান্তি মিশনের মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করে চলছে । সে সকল দেশে বুদ্ধিজীবিরা এবং সাধারণ মানুষেরা বাংলাদেশের সেনাবাহীনির কাজের প্রতি খুশি হয়ে সেনাবাহিনীকে হৃদয়ের মনিকোঠায় জায়গা দিয়েছে । তারই ধারাবাহিকতায় দিনের পর দিন শান্তি মিশনে বাংলাদেশ সেনাবাহীনির সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে । দেশের যে কোন প্রাকৃতিক বিপর্যয় নির্বাচনকালীন সময়ে কিংবা রাজনৈতিক দলগুলো মধ্যে সৃষ্ট সমস্যার কারনে দেশের সার্বভৌমত্ব যখন চরম হুমকীর দিকে ধাবিত হতে শুরু করে তখন সেনাবাহিনীর ভূমিকায় দেশের সকল সাধারণ মানুষ তাদের হৃদয়ের গভীরে পরম মমতায় সেনাবাহিনীকে স্থান দিয়ে রেখেছে । যদিও সেনাশাসন দেশের জন্য ততোটা মঙ্গলজনক নয় কেননা এ সময় সকল বৈদেশিক সাহায্য বন্ধ হয়ে যায় তবুও দেশের চরম ক্রান্তিকালে সেনাবাহিনী দেশের কল্যানে অনবদ্য ভূমিকা পালন করেছে । বাঙালি জাতি হিসেবে অদ্ভূত । এদের কাছে সকল প্রাপ্তি নিমিষেই মিলিয়ে যায় একটি মাত্র অপ্রাপ্তির কারনে । একজন মানুষ যতই ভাল কাজ করুক তার কোন হিসাব রাখে না যদি একটি মাত্র খারাপ কাজ করে । কোন দল বা সংগঠনের ব্যাপারেও তাদের একই দৃষ্টিভঙ্গি । গত ৩রা এপ্রিল সেনাবাহীনির একজন মেজর এবং দুইজন সেনাসদস্যের গাড়ীতে ৮২ বোতল ফেনসিডিল পেয়েছে পুলিশ । এজন্য তাদেরকে গ্রেফতারও করা হয়েছে । পুলিশ তাদেরকে ফেনসিডিলসহ হাতে নাতে গ্রেফতার করার কারনে তারা অবশ্যই দোষী । তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত সত্যতা যেনে তাদেরকে সে অনুযায়ী বিচারের সম্মূখীন করা উচিত । এটা সেনাবাহীনির ভাবমূর্তি রক্ষার ব্যাপার । একজন বা মুষ্ঠিমেয় কয়েকজন দোষীর কারনে দেশের একটি বৃহৎ সামরিক সংগঠনের দূর্ণাম হোক এটা অবশ্যই সেনা কর্তারা চাইবেন না । নিজেদের ঐতিহ্যবাহী সুনাম রক্ষার্থেই যে কোন অনৈতিক কর্মকান্ডের এবং এর হোতাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহন করা উচিত ।

একটি প্রবাদ আছে, ‘অমূলক কিছু উপমা নয়’ । বাঙালীর অনেকেই আবেগের উপর প্রধান্য দিয়ে কাজ করে থাকে । তারা বদ্ধমূল বিশ্বাস করে কেবল অভিজ্ঞতার মাধ্যমেই জ্ঞান লাভ সম্ভব । এ সূত্রের মধ্যেও আবার বিচ্ছিন্নতার আশ্রয় নেয় । যখন যে অভিজ্ঞতা হয় তখন সে অভিজ্ঞতার জ্ঞান অর্জন করে । এখানে যাচাই বাছাই প্রক্রিয়া গৌন ভূমিকা পালন করে । কাউকে ভালবাসা বা ঘৃণা করার জন্য সারা জীবনের উপলব্ধির ধার ধারে না । এজন্য একটি কথা বা কাজ যথেষ্ট । বাবার দোষে সন্তানকে দোষী করে আবার সন্তানের দোষে বাবাকে । এটা বাঙালীর চিরাচরিত প্রথা । রাজনীতির ময়দান থেকে শুরু করে পারিবারিক, সমাজিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও । বাঙালীর দুঃখ দুর্দশার সঙ্গী খুব বেশি নেই । দেশের আভ্যন্তরীন শান্তি শৃঙ্খলাবাহিনী পুলিশ যাদের কাছে জনগণ তাদের জান এবং মালের নিরাপত্তা অর্পন করে চিন্তাহীন সময় কাটাতে চায় এবং দেশের স্বনামধন্য সামরিক প্রতিষ্ঠান যাদের কাছে মানুষ দেশের বর্হিবিভাগীয় নিরাপত্তা চায় তারা যদি দেশের মানুষের সম্পদের রক্ষক না হয়ে ভক্ষক হয় এবং দেশের যুব সমাজসহ সকল মানুষকে মাদকাসক্তের প্রতি উৎসাহী করতে কাজ করে যায় তবে জাতি কাকে বিশ্বাস করবে, কার কাছে যাবে আর তাদের কিইবা উপায় থাকবে ?

রাজু আহমেদ । কলাম লেখক ।



বিষয়: বিবিধ

১০৬৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File