মুজিব নাকি জিয়া-মূসা নাকি মুহিত

লিখেছেন লিখেছেন রাজু আহমেদ ৩১ মার্চ, ২০১৪, ০৯:১১:১০ সকাল

বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি কে ? এ নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে আওয়ামীলীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা এবং বিএনপি চেয়ারম্যান বেগম খালেদা জিয়ার মধ্যে তুমুল বাকযুদ্ধ চলছে । বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা এবং তার দলের নেতা কর্মীরা দাবী করছে বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান । অপরদিকে বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং তার দল দাবী করছে জিয়াউর রহমান দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি । এতদিন দেশের মানুষ জানত বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি । কেননা স্বাধীনতা য্দ্ধু চলাকালীন সময়ে যুদ্ধ পরিচালনার সময়ে যে অস্থায়ী সরকার গঠন করা হয়েছিল সেখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি করা হয়েছিল । তিনি যেহেতু বন্দী হিসেবে পাকিস্তানে ছিলেন সেহেতু সৈয়দ নজরুল ইসলামকে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি করা হয়েছিল । স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশ আজ ৪৩ বছরে পা দিয়েছে । দীর্ঘদিনে যে বিতর্ক দেশের মানুষের মনে উঁকি দিল না এখন কেন সে বিতর্ক ? ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ কাল রাতে শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানী সেনাবাহীনির হাতে বন্দী হওয়ার পূর্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা পত্রে স্বাক্ষর দিয়ে যান বলে যে কথা কথিত আছে ইতিহাসে তার ভিত্তি খুবই দূর্বল । ২৬শে মার্চ চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতা যুদ্ধের ১নং সেক্টরের কমান্ডার জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন । বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ এবং জিয়াউর রহমানের ২৬শে মার্চের স্বাধীনতার ঘোষণায় উজ্জীবিত বাঙালী তাদের সর্বস্ব দিয়ে পাক হানাদার বাহিনীকে বাংলাদেশ থেকে চিরতরে উৎখাত করার জন্য জীবনবাজি রেখে ঝাঁপিয়ে পরে । স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সময়ে বিএনপির জন্ম হয়নি । জিয়াউর রহমানের সাথে বঙ্গবন্ধুর পরিচয় হওয়ার পর থেকে শেখ মুজিবুর রহমান দরাজ কণ্ঠে জিয়াউর রহমানকে নাম ধরে ডাকতেন । জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুকে খুব শ্রদ্ধা করতেন ঠিক বঙ্গবন্ধুও জিয়াউর রহমানকে অত্যন্ত ¯েœহ করতেন । ১৯৭৫ সালের কিছু বিপথগামী সেনাবাহিনীর হাতে শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার পরিবারের প্রায় সকল সদস্য নিহত হয় । শেখ মুজিবুর রহমান নিহত হওয়ার তিন বছর পর ১৯৭৮ সালের ১লা সেপ্টেম্বর জিয়াউর রহমান ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল’ বিএনপি গঠন করেন । এর আগে ১৯৭৮ সালের ৩রা জুন জনগনের সরাসরি ভোটে বাংলাদেশের অষ্টম রাষ্ট্রপতি হন । ইতিহাসে এ সকল কথা স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকার পরেও কেন, কে প্রথম রাষ্ট্রপতি? তা নিয়ে দ্বন্ধ ??

বিশ্বের সর্বোচ্চ পার্বত্য শৃঙ্গ এভারেষ্ট এ প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে পা রেখেছেন মূসা ইব্রাহীম । ২০১০ সালের ২৩শে মে তিনি এভারেষ্ট চুড়ায় ওঠেন । এরপর দ্বিতীয় বাংলাদেশী হিসেবে ২০১২ সালের ২১শে মে এম এ মুহিত এভারেষ্ট জয় করেন । এটাই ছিল আমাদের জানা বাংলাদেশের অর্জন । হঠাৎ করে বিগড়ে বসেন মূসা ইব্রাহীম । একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে একটি নিবন্ধে চোখ আটকে যায় মূসা ইব্রাহীমের । সেখানে লেখা ছিল বাংলাদেশের প্রথম এভারেষ্ট জয়ী এম এ মুহিত । আর কি বসে থাকা যায় । সোজা আদালতে । সত্য প্রকাশ করার, সত্যকে মিথ্যা এবং মিথ্যাকে সত্য বানানোর কারখানা যে বাংলাদেশের আদালত !! মূসা ইব্রাহীম মামলা করেন । তার অর্জন তাকে ফিরিয়ে দেয়ার আরজি জানান । এখনও মামলাটি চলছে । আদালত চুড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসতে পারে নি । হঠাৎ করেই বাংলাদেশীদের চোখ আটকে যায় একটি সংবাদে । মূসা ইব্রাহীম নন এম এ মুহিত বাংলাদেশী হিসেবে প্রথম এভারেষ্ট জয়ী । তাহলে মূসা ইব্রাহীম ? এ প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে নেপালের এভারেষ্ট সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠান । তারা জানায়, মূসা ইব্রাহীম এভারেষ্টের চূড়ায় আরোহন করে নি । তিনি ২৯ হাজার ৩৫ ফুট উঁচু এভারেষ্ট চুড়ায় পৌঁছেন নি । এভারেষ্ট চুড়া থেকে যখন তিনি মাত্র(!) সাত হাজার ফুট দূরে তখন তিনি নিচে নেমে আসেন । পরবর্তীতে ফটো এডিটিং এর মাধ্যমে তার ছবি এভারেষ্টের চুড়ায় দেখিয়ে বাংলাদেশ সরকার, তাকে যে কোম্পনি স্পন্সর করেছে সে কোম্পানিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে কোটি কোটি টাকা জালিয়াতির মাধ্যমে হাতিয়ে নেয় । সবচেয়ে বড় কথা বাংলাদেশের তরুনরা তাকে হিরোর স্থানে বসিয়ে যে স্বপ্ন বাস্তবায়নের ছক একেঁছিল সে ছক তাসের ঘরের মত ভেঙ্গে পড়তে শুরু করেছে । একটি নিবন্ধ ইতিহাস মুছে দিতে পারে না । মূসা ইব্রাহীম যদি সত্যিকারার্থে প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে এভারেষ্ট জয়ী হত তাহলে তার মামলাটি ঠুনকো ছিল না । কিন্তু আর কেউ না হোক মূসা ইব্রাহীম নিজে তো আসল কথাটা জানতো ! তারপরেও তিনি কেন মামলা করতে গেলেন ? এভারেষ্ট জয় না করে মূসা ইব্রাহীম প্রথম বাংলাদেশী এভারেষ্ট জয়ীর খেতাব নিয়ে এতদিন দেশের মানুষের কাছে পরিচয় দিয়ে যে গর্হিত কাজ করেছে তার চেয়ে বেশি গর্হিত কাজ করেছে মামলাটি করে । সরকারের কাছে বিনীত অনুরোধ, প্রথম এভারেষ্ট জয়ী বাংলাদেশী কে-সেটি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বের করে দেশের মানুষের কাছে পরিষ্কার করবেন । প্রথম এভারেষ্ট জয়ী হিসেবে মূসা ইব্রাহীম যদি ঠিক থাকেন তাহলে তো কোন কথা নেই আর যদি মূসা ইব্রাহীম না হয়ে এম মুহিত হয় তাহলে মুহিতকে তার প্রাপ্য সম্মান দিয়ে এবং মূসা ইব্রাহীমকে এমন শাস্তির মূখোমূখি করুন যাবে বাংলাদেশের মানুষের আবেগ, আশা-আকাঙ্খা নিয়ে ভবিষ্যতে আর কেউ হঠকারী এবং ব্যবসা করতে সাহস না পায় ।

মুসা ইব্রাহীম এবং এম এ মুহিত জীবিত আছেন । আজ না হলেও আগামী যে কোন দিন আমরা জানতে পারব বাংলাদেশী হিসেবে প্রথম এভারেষ্ট জয়ী কে মুসা ইব্রাহীম নাকি এম এ মুহিত । স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি কে ? সেটা নিয়ে যাদের কথা উঠছে তাদের একজন ২৯ বছর এবং অন্যজন ২৩ বছর আগে পৃথিবী থেকে চলে গেছেন । কাজেই কে বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি সেটা তাদের মূখ থেকে শুনতে পাওয়ার সৌভাগ্য হবে না । শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে আওয়ামীলীগ এবং মেজর জিয়াউর রহমানকে নিয়ে বিএনপি রাজনৈতিক ব্যবসা করছে ভবিষ্যতেও করবে । বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পিছনে দু’জনের ভূমিকা অনস্বীকার্য । বিএনপি যখন ক্ষমতায় থাকে তখন শেখ মুজিবুর রহমানকে এবং আওয়ামীলীগ যখন ক্ষমতায় থাকে তখন জিয়াউর রহমানকে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয় তাতে মনে হয় যেন, এরা দু’জনই যেন এদেশের জাতীয় শত্রু । আবার বিএনপির আমলে জিয়াউর রহমানকে এবং আওয়ামীলীগের আমলে শেখ মুজিবুর রহমান সাহেবের এমন কিছু গুনের প্রকাশ করা হয় যা দেখে বোকারাও বলে বাড়াবাড়ি । বিএনপির আমলে জিয়া এবং আওয়ামীলীগের আমলে শেখ মুজিবুর রহমান দেশের সংবিধান । তাদের আদর্শকে বিক্রি করা হয় তাদের নাম ভাঙ্গিয়ে ব্যবসা করা হয় । জীবদ্দশায় দু’জন বিতর্ক উর্ধ্ব ব্যক্তি ছিলেন শেখ মুজিব এবং জিয়াউর রহমান । বর্তমানে এ দু’দলের কর্মকান্ডে তাদের বিতর্কিত করে তুলছে । খালেদা জিয়া এবং তার জেষ্ঠ্য পুত্র তারেক রহমান দাবী করছেন মেজর জিয়া যেহেতু বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক সুতরাং জিয়াউর রহমানই বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি । তারেক রহমান বিভিন্ন দেশের উপমা টেনেছেন । বিএনপির এ ব্যক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ করেছেন শেখ হাসিনা এবং তার দলের নেতারা । সুরুঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন, ইতিহাস বিকৃতির জন্য খালেদা জিয়াকে জাতির কাছে ক্ষতা চাইতে হবে । অপরদিকে বিএনপি তাদের দাবীর পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করছে এবং তারা আওয়ামীলীগকেই ইতিহাস বিকৃতির জনক হিসেবে আখ্যা দিয়েছে ।

বিতর্ক পানির মত । পানি যখন যে পাত্রে রাখা হয় তখন যেমন সে পাত্রের রং ধারণ করে তেমনি যিনি যখন বিতর্কের অবতারণা করেন তখন তার কথাই সত্য বলে মনে হয় । কে প্রথম রাষ্ট্রপতি এটার বিচার করার ক্ষমতা বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের নাই । সৌভাগ্যবশত যদি কেউ এর বিচার করতে পারেও তবে সেটা একনেত্রী মানলে অপর নেত্রী রেগে উঠবে । কার কথা কে ফেলতে পারে ? সেটা যদি হয় শেখ হাসিনা কিংবা খালেদা জিয়ার কথা !! কে বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি তার সমাধানে আওয়ামীলীগ বা বিএনপি দলগতভাবে কিছু লাভবান হতে পারে তবে এ বিতর্কে জাতির অমঙ্গল ছাড়া মঙ্গল হবে না । শেখ মুজিবুর রহমান এবং জিয়াউর রহমান যে স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ার চেষ্টা করেছিলেন সে বাংলাদেশ যে নেত্রী গড়তে পারবেন তার দলের নেতাই হবে দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি । আওয়ামীলীগ যদি সোনার বাংলাদেশ গড়তে পারে তবে শেখ মুজিব বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি অপরদিকে যদি বিএনপি সোনার বাংলাদেশ গড়তে পারে তবে জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি । ৯০ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘‘সোনার বাংলা গেয়ে” কিংবা সাধারণ মানুষকে ভোগান্তিতে ফেলে দিনের পর দিন হরতাল করা আর যাই হোক সোনার বাংলাদেশ গড়ার লক্ষন নয় ।

রাজু আহমেদ । কলাম লেখক ।



বিষয়: বিবিধ

৮৫০ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

200638
৩১ মার্চ ২০১৪ সকাল ০৯:৫৯
বাংলার দামাল সন্তান লিখেছেন : হা....হা..........হা সবাই সব কিছু হলে আমি কি?
৩১ মার্চ ২০১৪ দুপুর ০২:১৬
150473
সুমাইয়া হাবীবা লিখেছেন : আপনি দর্শক!
০১ এপ্রিল ২০১৪ দুপুর ০৩:২৯
151013
রাজু আহমেদ লিখেছেন : দামাল সন্তানের জবাব বোন সুমাইয়া হাবীবা দিয়ে দিয়েছেন । আমার আর কি বলার আছে ??

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File