প্রসঙ্গ এপ্রিল ফুল: মুসলমান আর কতকাল আত্মবিস্মৃত হয়ে থাকবে ?
লিখেছেন লিখেছেন রাজু আহমেদ ৩০ মার্চ, ২০১৪, ০৭:৩৪:১৭ সকাল
বিদেশী সংস্কৃতি আমাদের দেহের প্রতিটি রক্ত কণিকায় এমনভাবে মিশে গেছে যেন দিনে দিনে আমরা বিচার শক্তিহীন অথর্ব জাতিতে পরিনত হচ্ছি । মুসলমানদেরকে হত্যার দিনে মুসলমারাই উৎসব পালন করে ! এ যেন মায়ের মৃত্যু বার্ষিকিতে সন্তানের জন্মদিন পালন । বছরের ৩৬৫দিনেই কোন না কোন বিশেষ দিবস আছে । আমরা অনাড়ম্বরপূর্ণ আয়োজনের মাধ্যমে সে সকল দিবসকে উদযাপন করি । বছরের এমন কিছু বিশেষ দিবস আছে, যেগুলো পালন করলে আত্মতৃপ্তি আসে, ধর্ম, সমাজ, রাষ্ট্রের প্রতি মানুষের দায়বদ্ধতা বাড়ে আবার এমন কিছু দিবস আছে যেগুলো পালন করলে নিজেদের ইতিহাস, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও সভ্যতার সাথে গাদ্দারী করা হয় । স্পেনের মুসলমানদের এমনি একটি মর্মান্তিক ট্রাজেডী পূর্ণ দিবস ১৪৯২ সালের পয়েলা এপ্রিল । বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেকগুলো মুসলিম অধুষ্যিত দেশের মুসলমানরা এ দিনকে এপ্রিল ফুল বা এপ্রিলের বোকা দিবস হিসেবে পালন করে। অন্ধ অনুকরন ও ইতিহাসে অজ্ঞ থাকার কারনে মুসলমানরা এ দিনটিকেও একটি খুশির দিন, অন্যকে ধোঁকা দেয়ার দিন হিসেবে উদযাপন করে অথচ এ দিনে বিশ্বের সকল মুসলমানগণকে স্পেনের মুসলমানদের প্রতি চালানো নির্মম হত্যা যজ্ঞকে স¥রণ করে বেদনাবিদিত থাকা উচিত । মুসলমানরা তাদের ইতিহাস সম্পর্কে এমনভাবে অজ্ঞ হয়ে পড়েছে যার কারনে, তাদের ভাইদের সাথে ইহুদী-নাসারারা ও খ্রিষ্টনরা যে অমানুষিক, অবর্ণনীয় আচরণ করেছিল তাও ভূলে বসে আছে । এমনকি মানবতার মুক্তির দিশারী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর শ্বাশতবানী বিমূখ হওয়ার কারনে আজ মুসলমারা তাদের আদর্শ থেকে বিচ্যুৎ হয়ে চরম লাঞ্ছনা, বঞ্চনা, শোষণ, নিপীড়ন, নির্যাতনের শিকার । আজ থেকে ৫২১ বছর আগে ইউরোপের স্পেনে মুসলমানদের সাথে ইসলামের শত্রুকৃত আচরণ ভূলে আজ মুসলামনদের মধ্যে প্রবেশ ঘটেছে এমন এক সংস্কৃতি যা প্রকৃত মুসলমানদের সাথে আদৌ মানানসই নয় ।
মানবতা যখন পৃথিবীর দ¦ারে দ্বারে ঘুরে এ ধারা থেকে বিদায়ের দ্বারপ্রান্তে তখন আল্লাহ তা‘য়াল মানবতার রক্ষাকর্তা করে পাঠালেন তার প্রিয় বন্ধু হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কে । তিনি পৃথিবীতে আগমন করেই মানুষের করুন অবস্থা দেখে তাদেরকে সঠিক পথে আসার আহ্বান জানান । শুরু হয় ইসলামের দাওয়াতী কার্যক্রম । এ দাওয়াত কালের আবহে আরবের গন্ডি পেরিয়ে পৃথিবীর প্রান্তে প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে । একের পর এক দেশ ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় নিতে শুরু করে । হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর চেষ্টা এবং তার সাহাবীদের ঐকান্তিক সহযোগীতায় ইসলাম পৃথিবীতে এক সুসংবদ্ধ স্থান দখল করে নেয়। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর তিরোধানের পর ইসলামের সম্প্রসারণ আরও ব্যাপৃত হয় । এতদিন যে ইসলাম শুধু আরব এবং আশেপাশের বিস্তৃন মরুভূমি অঞ্চলে সীমাবদ্ধ ছিল সে ইসলামের সুবাতাস প্রশস্ত ভূমধ্যসাগরের উত্তল তরঙ্গমালা পারি দিয়ে ইউরোপে ঠিকানা করে নেয় । মুসলিম বীর সেনানী তারিক বিন যিয়াদের নেতৃত্বে মুসলামনরা দখল করে নেয় ইউরোপের স্পেনসহ আসে পাশের অনেক এলাকা । শোর্য-বির্যের সোনালী শাসনের অধ্যায় পেরিয়ে মুসলমানদের নৈতিক অধঃপতনের ফলে সৃষ্টি হয় শোকাবহ এপ্রিলের ঘটনা । অথচ বর্তমান সময়ের মুসলমানরা আত্মবিস্মৃত হয়ে সেই শোকাবহ দিনটিকে আনন্দের উপলক্ষ করে পালন করে । কি বেহায়া আমরা ! বিজাতীয়দের অনুষ্ঠান পালন করার জন্য শেষ বিচারের দিনে মুসলমানদেরকে ভয়াবহ পরিনতির মূখোমূখি হতে হবে । গোটা বিশ্বজগৎের মানুষের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে দয়া স্বরুপ প্রেরিত রাসূল হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন,‘যে ব্যক্তি যে জাতির অনুসরণ, অনুরকরণ করবে, তার হাশর হবে সেই জাতির সাথে’ । মুসলমানদের জন্য এপ্রিলের ভয়াবহ ট্রাজেডির ইতিহাস অনেক দীর্ঘ । আসুন এপ্রিল ফুলের উৎপত্তির সংক্ষিপ্ত ইতিহাস সংক্ষেপে জেনে নেই-
বর্তমান ইউরোপের মত ৭০০ শতাব্দীর ইউরোপ বিশ্বের নেতৃত্বে ছিল না । দাসত্ব প্রথা থেকে শুরু করে শাসকদের অমানুষিক নির্যাতনের মধ্যেই কাটত ইউরোপীয়ানদের জীবন । অন্ধকার জগতের সকল অপকর্মে ইউরোপের বিশেষ করে স্পেনের শহর নগর ছিল মাতোয়ারা । ইউরোপীয়ানদের এমনি দুঃসময়ে মুসলমানদের ঝান্ডাবাহী অদম্য সেনাপতি তারিক বিন যিয়াদ মাত্র ১২ হাজার সৈন্য নিয়ে ভূমধ্যসাগরের উত্তাল তড়ঙ্গমালা পাড়ি দিয়ে জিব্রাল্টার প্রণালীতে উপস্থি হন ৭১১ খ্রিষ্টাব্দের মার্চ মাসের শেষ দিকে । তৎকালীন সময়ের আইবেরিয়ান ও পেনিনসুলা (যার বর্তমান নাম স্পেন ও পর্তুগাল) যেটাকে আরবরা বলত আন্দালুস । তারিক বিন যিয়াদের নেতৃত্বে প্রথমে আন্দালুস আক্রমন করেন । তৎকালীন সময়ে এ অঞ্চলের শাসক ছিলেন অত্যাচারী রডারিক । তার আচরনে এ অঞ্চলের প্রজারা তার উপর প্রচন্ড নাখোশ ছিল । এ অঞ্চলের অধিবাসীরা প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করতো, যাতে তারা রডারিকের অত্যাচার থেকে মুক্তি পায়। তারিক বিন যিয়াদের আগমন আন্দালুস অঞ্চলের লোকেরা তারা তাদের জন্য আশীর্বাদ হিসেবে মনে করত । তাইতো ঐতিহাসিক রবার্ট ব্রিফল্ট তার বিখ্যাত গ্রন্থ ‘দ্যা ম্যাকিং অব হিউম্যানিটি’তে মুসলমানদের এ প্রবেশকে অন্ধকার কক্ষের দরজা দিয়ে সূর্যের আলোর প্রবেশ বলে অভিহিত করেন’ । আরবদের সামরিক শক্তি এবং সমর কৌশলের খ্যাতি ছিল বিশ্বব্যাপী সমাদৃত । সম্মূখ যুদ্ধে আরবের বীর মুজাহিদরা ছিল বিশ্বের অদ্বিতীয় । মুসলাম শাসক তারিক বিন যিয়াদ এবং তার সৈন্যবাহিনী ছিল ঈমানী শক্তিবলে বলীয়ান । কথিত আছে হযরত তারিক বিন যিয়াদ এবং তার সঙ্গীরা যে জাহাজগুলোতে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপের প্রবেশদ্বারে পৌঁছেছিল সে জাহাজগুলোকে তারা ইউরোপে পৌঁছেই পুড়িয়ে ফেলে । মুসলিম বাহিনীর এ ঘটনাই তাদের অদম্য স্পৃহা এবং কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছার দৃঢ়তার জানান দেয় । ৭১১ খ্রিষ্টাব্দের ৩০শে এপ্রিল বৃহস্পতিবার মুসলিম বাহীনির সাথে রাজা রডারিকের বাহিনীর ব্যাপক যুদ্ধ হয় এবং রডারিকের বাহিনী মুসলিম সৈন্যদের কাছে মারাত্মকভাবে পর্যূদস্ত হয় । খ্রিষ্টানদের শাসক রডারিক পালিয়ে যাওয়ার সময় গুলডেল কুইভারের পানিতে ডুবে মারা যায় । রডারিকের মৃত্যুর মাধ্যমে মুসলমানদের বিজয় নিশ্চিত হয় । মুসলমানরা ইউরোপের কেন্দ্রভূমি মালাগা, গ্রানাডা, আল হামারা, সেভিজা, তালেদো ও কার্ডোভাসহ অনেক অঞ্চলের জিম্মাদারী পায় । এরপর দীর্ঘদিন মুসলমানদের বিজয় ত্বরান্বিত হতে থাকে । একের পর এক অঞ্চল মুসলমানদের অধিকারভূক্ত হয় । সুদীর্ঘ ৮০০ বছর মুসলমানরা ইউরোপের স্পেনসহ বিভিন্ন অঞ্চল শাসন করেন । মুসলমানদের শাসনামলে জ্ঞান-বিজ্ঞান, অর্থনীতি, সমরনীতিতে স্পেন বিশ্বের নেতৃত্বে চলে আসে ।
ইতিহাস বড়ই নির্মম । ইতিহাসে একটি মজার ব্যাপার লক্ষ করা যায় । ইতিহাসে কোন সভ্যতাই তিনশ বছরের বেশি স্থায়ী হয়নি । তবে এ সময়ের ব্যাপ্তি কিছুটা কম বেশি হতে পারে । চিনের মিং বংশ থেকে শুরু করে গ্রিক, রোমান, মেসেপটেমিয়ান এমনকি মোঘল স¤্রাজ্যের একই অবস্থা । সাফল্যের শিখরে থাকতে থাকতে তার মধ্যে বোধ হয় এক ধরনের স্থুলতার জন্ম নেয় । শুরু হয় পতনের পালা । ইউরোপে মুসলমানদের অবস্থাও তার ব্যতিক্রম হয়নি । ইউরোপে মুসলমানদের শাসন দীর্ঘ আটশবছর স্থায়ী হলেও মুসলমানদের সোনালী শাসন হিসেবে মাত্র ৩২২ বছরকে উল্লেখ করা যায় । এরপর শুরু হয় অধঃপতন । মুসলমান শাসকদের দুনিয়াপ্রীতি, বিলাসবহুলতা, অনৈতিকতা, নারী লিপ্সা তাদেরকে ইসলামের গন্ডি থেকে বহুদুরে আছড়ে ফেলে । দশম শতাব্দীর মাঝামাঝিতে ইহুদী, নাসার এবং খ্রিষ্টনরা এতদিন মুসলমানদের বিরুদ্ধে আক্রমনের যে সুযোগ তালাশ করতেছিল সে সুযোগের নাগাল পায় । খ্রিষ্টানরা মুসলমানদের বেশ-ভূষা ধারন করে, ইসলাম ধর্মের শিক্ষা গ্রহন করে মসজিদের ইমাম হয় এবং সমাজে বিভ্রান্তি ছড়াতে থাকে । খ্রিষ্টনরা মুসলিম শাসকদেরকে নারী এবং ধণের মাধ্যমে বশীভূত করতে থাকে । চৌদ্দ শতাব্দীতে এসে প্রচন্ড মুসলিম বিদ্বেষী পঞ্চম ফার্দিনান্দ অব এরগান এবং পর্তুগীজ রানী ইসাবেল অব ক্যাষ্টেল বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় । ইসলামের এ দুই শত্রু মিলে মুসলমানদেরকে ধ্বংস করার চরম ছক রচনা করেন । রানী ইসাবেলা এবং ফার্দিনান্দের বাহীনিকে একত্র করে তাদেরকে আদেশ দেয়া হয়, মুসলমান অধ্যুষিত অঞ্চলের শষ্যক্ষেত জ্বালিয়ে দেয়ার, নগর ধ্বংস করার । শাসকের হুকুম পেয়ে খ্রিষ্টান সৈন্যবাহীনি বীর দর্পে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে সামনে অগ্রসর হতে থাকে । তারা ১৪৬৯ সালে বিযাহ এবং ১৪৮৩ সালে মালাগা দখল করে নেয় । এমনকি শহরের প্রধান খাদ্য সরবরাহকেন্দ্র ভেগা উপত্যকাকেও ধ্বংস করে দেয় । তৎকালীন সময়ে গ্রানাডা এবং কার্ডোভার শাসনভার ছিল আবুল হাসানের উপর । ইসলামের ঝান্ডা রক্ষায় তিনি নির্ভীক ছিলেন তবে তার কু-পুত্র আবু আব্দুল্লাহর ষড়যন্ত্রে তিনি সিংহাসন ছাড়া হন । আবু আব্দুল্লাহর সিংহাসনও বেশিদিন স্থায়ী হয় নি । ফার্দিনান্দ এবং ইসাবেলা বাহিনী তার স¤্রাজ্যের দিকে আক্রমন চালালে আব্দুল্লাহ প্রাণ বাাঁচাতে খ্রিষ্টানদের সাথে সন্ধি করেন । তবে আব্দুল্লাহর সেনাপতি ইসলামের বীর সেনানি মুসা ইসলামের শত্রুদের সাথে সন্ধি করার চেয়ে তলোয়াড়ের মাধ্যমে মৃত্যুকে বেশি সম¥ানের মনে করেন এবং আমরণ ইসলামের রাস্তায় জেহাদ করে যান । সময়ের আবর্তে ইসলামের পরাজয় ঘনিয়ে আসে । স্পেনের সর্বত্র খাঁদ্য ঘাঁটতি দেখা দেয় । স্পেনের শিশু-কিশোর-মহিলাদের জীবন ওষ্ঠাগত হয়ে পড়ে । এই সুযোগে ভূখা স্পেনের মুসলমানদের শক্তিহীনতাকে কাজে লাগিয়ে ফার্দিনান্দ এবং ইসাবেলা ও তাদের বাহীনি স্পেনকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে । মুসলমানরা নিরুপায় হয়ে পড়ে । ইতোঃমধ্যে ফার্দিনান্দ ঘোষণা করে,‘ যে সব মুসলমানরা নিরস্ত্র হয়ে গ্রানাডার মসজিদগুলোতে আশ্রয় নেবে তাদের পূর্ণ নিরাপত্তা দেওয়া হবে আর যারা খ্রিষ্টানদের জাহাজগুলোতে আশ্রয় নেবে তাদের অন্যান্য মুসলিম রাষ্ট্রে পাঠিয়ে দেয়া হবে । অন্যথায় আমাদের হাতে তোমাদের প্রাণ হারাতে হবে’।
মুসলমানরা একদিকে যেমন নিরুপায় ছিল অন্যদিকে সরলমনে খ্রিষ্টানদের প্রতিশ্রুতিকে বিশ্বাস করেছিল । কেননা স্পেনে এতদিন মুসলমানদের শাসন চললেও খ্রিষ্টানদের কোন অধিকারকে খর্ব করা হয়নি এমনকি অনেক ক্ষেত্রে মুসলমানদের চেয়ে খ্রিষ্টনরা বেশি অধিকার ভোগ করেছে । অথচ খ্রিষ্টনরা মুসলমানদের দুঃসময়ে ঠিক উল্টা আচরণ শুরু করেছে । এখানেই মুসলমানদের সাথে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের মৌলিক পার্থক্য । মুসলমানরা গ্রানাডার মসজিদ এবং খ্রিষ্টানদের জাহাজগুলোতে আশ্রয় নিল । ফার্দিনান্দ এবং ইসাবেলার নির্দেশে মসজিদগুলোকে বাহির থেকে তালাবদ্ধ করা হল এবং জাহাজগুলোকে গভীর সমুদ্রে নিয়ে যাওয়া হল । এরপর শুরু হল খ্রিষ্টানদের বিভৎস আনন্দ উৎসব । মুসলমানরা যে সকল মসজিদে আশ্রয় নিয়েছিল সে সকল মসজিদে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হল এবং আশ্রয় নেওয়া জাহাজগুলোকে পানিতে ডুবিয়ে দেয়া হল । সেদিন মুসলিম শিশু, কিশোর, তরুন-তরুনী, যুবক-যুবতী , নারী এবং পুরুষের মৃত্যুযন্ত্রনার চিৎকারে গোটা ইউরোপের আকাশ বাতাস প্রকম্পিত হয়ে উঠেছিল আর তখন দাঁত বের করে বিভৎস হাসি দিয়ে ইসাবেলা বলেছিল, ‘হায় , এপ্রিলের বোকা ! শত্রুর আশ্বাস কেউ বিশ্বাস করে’? ইতিহাসের এ মর্মান্তিক দিনটি ছিল ১৪৯২ খ্রিষ্টাব্দের ১লা এপ্রিল মোতাবেক ৮৯৭ হিজরীর ১২ই রবিউল আউয়াল । এ দিনের ঘটনায় ৭ লাখের অধিক মুসলিমকে খ্রিষ্টনরা হত্যা করেছিল । ইতিহাসের এ ঘটনাকে উপলক্ষ্য করেই বিশ্বব্যাপী খ্রিষ্টনরা প্রতিবছর এপ্রিলের প্রথমদিন ‘এপ্রিল ফুলস ডে’ বা অষষ ভড়ড়ষং ফধু (বিশ্ব বোকা দিবস) পালন করে । এ দিনটির উৎপত্তি নিয়ে ইতিহাসে আরেকটি ঘটনা উল্লেখ আছে । সেটি হল-
উনবিংশ শতাব্দীর ইহুদী ও খ্রিষ্টানদের বর্ণনায় পাওয়া যায়, পয়েলা এপ্রিল হল সেই তারিখ যেদিন পারস্যবাসী ও ইহুদিদের পক্ষ থেকে হযরত ঈসা (আঃ) কে ঠাট্টা-বিদ্রুপের টার্গেট বানানো হয়েছিল । ইঞ্জিলের মধ্যে ( বর্তমানে যা বাইবেল) ঘটনাটি বর্ণিত আছে, ‘আর সে ব্যক্তি ঈসা (আঃ) কে বন্দী করে তার সাথে ঠাট্টা পরিহাস করত এবং তাকে আঘাত করত, তার চোখ বেঁধে তার গালে চড় থাপ্পর মারত এবং তাকে এই বলে জিজ্ঞাসা করতো, নবুয়তের মাধ্যমে বলো, কে তোমাকে মারছে ? এভাবে ভৎসনা করে আরো অনেক কথা তার বিরুদ্ধে বলা হয় (লুক ২২ঃ ৬৩-৬৫) । তবে এ ঘটনা উদ্ধৃতির সূত্র দূর্বল ।
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বিভিন্ন অপসংস্কৃতি এবং মুসলমানদের সাথে ধোঁকাবাজির পরিনাম উল্লেখ করেছেন । হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) তার পবিত্র জবানে বলেছেন,‘যে ব্যক্তি অন্যকে ধোঁকা দেয়, সে আমার উম্মতের অন্তর্ভূক্ত নয়’ ( মুসলিম, মিশকাত ঃ ২৪৮) অন্য আরেক হাদিসে তিনি বলেন,‘ অভিশপ্ত ঐ ব্যক্তি যে কোন মু’মিন ব্যক্তির ক্ষতি সাধন করে কিংবা তাকে ধোঁকা দেয়’( তিরমিজি, মিশকাত ঃ ৪২৮) । পহেলা এপ্রিলের ঘটনা এবং হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর বাণীর মধ্যে আমাদের চরম শিক্ষা আছে । ১৪৯২ খ্রিষ্টাব্দের পহেলা এপ্রিলে খ্রিষ্টানরা যে অমানুষিক ঘটনা ঘটিয়েছিল সে ঘটনার পুনরাবৃত্তি আবারও ঘটাতে চায় । তাইতো ১৯৯৩ সালের পহেলা এপ্রিল গ্রানাডা ট্রাজেডীর ৫০০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে স্পেনে এক অনাড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ‘হলি মেরি ফান্ড’ গঠন করে । খ্রিষ্টানরা আবারো ষড়যন্ত্রে মেতেছে । তারা বিশ্বের যে সকল দেশে মুসলিমদের আধিপত্য আছে সে সকল দেশকে ধ্বংস করতে চায় এবং যে সকল দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে কিছু সংখ্যক মুসলমান আছে তাদেরকে নির্যাতন এবং হত্যা করছে । খ্রিষ্টানদের মিশনের সে ধারাবাহিকতায় খ্রিষ্টনা-নাসারা ও ইহুদীরা এক হয়ে ঠুনকো অজুহাতে আফগানিস্তান, ইরাক, ফিলিস্তিন, মিশর, লিবিয়া , বসনিয়া, সিরিয়া, পাকিস্তানসহ অনেকগুলো রাষ্ট্রকে ধ্বংস করে দিয়েছে এবং মুসলমানদেরকে তাদের তাঁবেদারীর গোলামে পরিনত করেছে ।
জর্জ বার্নাডশ বলেছিলেন, ‘ইতিহাসের সবচেয়ে বড় শিক্ষা ইতিহাস থেকে মানুষ শিক্ষা গ্রহন করে না’ । আমরা কি দার্শনিক বার্নাাডশ’ এর কথার সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে সামনে এগুচ্ছি ? যে মুসলমানদের হত্যা করে খ্রিষ্টানরা এপ্রিল ফুলের জন্ম দিল, নিহত সেই মুসলমানদের উত্তরসূরী হয়ে আমরা এপ্রিল ফুল অনুষ্ঠান পালন করছি, একজন আরেকজনকে বোঁকা বানাচ্ছি, শুভেচ্ছা বিনিময় করছি । ধিক্কার আমাদের উপর ! ধিক্কার আমাদের এহেন হীন চিন্তা-চেতনার উপর !! যেদিনটিকে গভীর ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে ১৪৯৩ সালের গ্রানাডা ট্রাজেডীসহ গোটা বিশ্বের নির্যাতিত নিপীড়িত মুসলমানদের কল্যান কামনা করে উদযাপন করা উচিত সেই দিনটিকে আমরা হাসি ঠাট্টার মধ্যে কাটাই । সেদিনের স্পেনের মুসলমানদের করুন আর্তনাদ কি আমাদের কানে বাজে না ? আমাদের বোধশক্তি কি চিরতরের জন্য ঘুমিয়ে পড়েছে ? আমাদের আবেগ, অনুভূতি কি ভোঁতা হয়ে পড়েছে ? আসুন, পহেলা এপ্রিলসহ অন্যান্য বিজাতীয় সংস্কৃতিকে ত্যাগ করে ইসলামের সংস্কৃতি এবং দেশীয় সংস্কৃতির চর্চা করি । এ চর্চা আমাদেরকে বিশ্বের বুকে তারিক বিন যিয়াদের উত্তরসূরী হিসেবে উপস্থাপন করবে । আর এ পরিচয় সর্ব যুগেই সম্মানের হবে । আজ থেকে যেন আমাদের বৌদ্ধিক চেতনা জাগ্রত হয় ।
রাজু আহমেদ । কলাম লেখক ।
বিষয়: বিবিধ
৯০২ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সত্যি বলেছে বার্নাড শো
মন্তব্য করতে লগইন করুন