সোনালী ব্যাংক, অর্থমন্ত্রী এবং জাতির শিক্ষা

লিখেছেন লিখেছেন রাজু আহমেদ ১৬ মার্চ, ২০১৪, ০৯:২৯:৪৯ সকাল

সোনালী ব্যাংক, অর্থমন্ত্রী এবং জাতির শিক্ষা

বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়াত্ব ব্যাংকগুলোর মধ্যে সোনালী ব্যাংক অন্যতম । এ ব্যাংকটি গত কয়েকবছর ধরে বিভিন্ন কারনে আলোচনার শীর্ষে আছে । দেশের অন্য সকল ব্যাংক নিয়ে যে আলোচনা হয়েছে তার কয়েকগুন বেশি আলোচনা হয়েছে সোনালী ব্যাঙ্কের তিনটি শাখা ও একটি বুথ নিয়ে । বিভিন্ন মেয়াদে ২০১২ সালের ৩১শে মে পর‌্যন্ত জালিয়াতির মাধ্যমে হলমার্কগ্রুপ ২ হাজার ৯৬৪ কোটি টাকা এবং পরবর্তীতে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়, সুড়ঙ্গ কেটে কিশোরগঞ্জ শহরের সোনালী ব্যাংক থেকে ১৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা চুরি, এটিএম বুথের পাসওয়ার্ড হ্যাক করে প্রায় ২ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া এবং সর্বশেষ বগুড়ার আদমদিঘিতে সুড়ঙ্গ খুঁড়ে সোনালী ব্যাঙ্কের ভল্ট থেকে ৩২ লাখ ৫২ হাজার টাকা চুরি হয়েছে । টাকা চুরি যাওয়ার পর অর্থমন্ত্রী ঘটা করে ঘোষণা দিয়েছেন চুরি যাওয়া টাকার পরিমান তেমন কিছু না । টাকা চুরি গিয়ে বরং উপকার হয়েছে এ থেকে আমরা শিক্ষা গ্রহন করতে পারব । বাংলাদেশের স্বনামধন্য অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের কাছে টাকার পরিমান খুবই নগন্য হলেও দেশের গরীব প্রজাদের সঞ্চয়ের ক্ষুদ্র সংখ্যায় সেটা বিশাল । চুরি করে চোরেরা একেবারে ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকতে পারে নি । দরগাহে চাল মানত করেও শেষে রক্ষা হয়নি । চুরি যাওয়া টাকা থেকে যে পরিমান এখন পর‌্যন্ত উদ্ধার হয়েছে তবে সেটা খোয়া যাওয়া অঙ্কের তুলনায় একেবারে যৎকিঞ্চিত । সোনালী ব্যাংক থেকে চার কিস্তিতে যে পরিমান টাকা চুরি হয়েছে তার সিংহভাগ টাকাই কিছু অসৎ কর্মকর্তাদের প্রত্যক্ষ সহোযোগিতায় হলমার্ক গ্রুপের কর্মকর্তারা হাতিয়ে নিয়েছে । হলমার্কগ্রুপের চেয়ারম্যান আটক থাকলেও জামিন পেয়েছে কেলেঙ্কারির অন্যতম হোতা হলমার্ক গ্রুপের চেয়ারম্যানের স্ত্রী জেসমিন ।

নিজের কাছে টাকা জমিয়ে রাখা অনিরাপদ এবং অ-লাভজনক ভেবে গ্রাহকরা ব্যাংকে টাকা আমানত রাখে । এতে ব্যাংক এবং গ্রাহকরা উভয়েই লাভবান হয় । যখন রক্ষক ভক্ষক হয়ে যায় তখন কিংবা বলার থাকে । কথায় বলে সন্তান হারানোর চেয়ে সম্পদ হারানোর ব্যথা বেশি পোড়ায় । গ্রাহকরা যখন টাকা হারিয়ে হায়-হুতাশে ব্যস্ত তখন আমাদের সফল অর্থমন্ত্রী হাসি-ঠাট্টায় ব্যস্ত । এক একবার টাকা জালিয়াতি বা লুট হওয়ার পর তিনি স্বাভাবিকভাবে বলেছেন, এঘটনায় আমাদের অনেক শিক্ষা আছে, জালিয়াতি হওয়া টাকার পরিমান কিছুই না । অর্থমন্ত্রীর মত বিত্তশালীদের কাছে এ টাকার অংকটা একেবারে নগন্য হতে পারে কিন্তু দিনমজুর, রিকশাচালক, গার্মেন্টসকর্মীদের, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পুঁজির সমন্বয়ে জমাকৃত টাকার পরিমানটা তাদের কাছে বিশাল কিছু । এটাই তাদের সারা জীবনের সঞ্চয় । মানুষ ভবিষ্যতের জন্য টাকা জমা করে কারন তার প্রয়োজনের সময় টাকাটা তুলে প্রয়োজন মিটাতে পারবে । যাদের জমানো টাকা থেকে চুরি হয়েছে তারা যে টাকা ফেরত পাবেনা তা কিন্তু নয় । তবে প্রয়োজনের সময় টাকা না পেলে ভোগান্তির সীমা থাকেনা ।

রিটায়ার্ডপ্রাপ্ত প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক তার পেনশানের টাকা তুলতে গিয়ে শুনতে পাচ্ছে ব্যাংকে টাকা নাই । রিকশাওয়ালা মেয়ের বিবাহে জমানো টাকা খরচ করবেন বলে ব্যাংকে গিয়ে জানতে পারছে টাকা পেতে কিছুদিন দেরী হবে । দিনমজুর তার ছেলের চাকরির জন্য ঘুষের টাকা দিবেন বলে ব্যাংকে চেক দিয়ে চেক ফিরিয়ে নিচ্ছেন । দিনমজুরের বেকার ছেলেটা বেকারই রয়ে গেল । অর্থমন্ত্রী শেষ বয়সেও শিখেছেন আরও শিখবেন । দেশবাসীও তাকে অনুসরণ করবে । শেখার কোন বয়স নাই । তবে মুখস্ত জিনিস পুনরায় পড়া যায় কিন্তু মুখস্ত জিনিসকে ইচ্ছা করে ভূলে পূনরায় মুখস্ত করার প্রবনতাকে শিক্ষা বলা যাবে কিনা সেটাও ভেবে দেখতে হবে ।

সুশানই কেবল দেশেকে সামনে এগিয়ে নিতে পারে । যথেষ্ট শিক্ষা হয়েছে এখন থেকেই শিক্ষা নিতে হবে । পরবর্তী কোন ঘটনা ঘটার পরেও আমরা সেটাকে যেন শিক্ষা হিসেবে না নেই । ব্যাংকের সাথে সংশ্লিষ্ট অসৎ অফিসারদের চাকরি থেকে অব্যহতি দিয়ে বাংলাদেশে ব্যাংকিং সেক্টরকে দেউলিয়া হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করার এখনই উপযুক্ত সময় । শুধু অর্থমন্ত্রী নয় চলমান সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসতে হবে সবাইকে । দেশের ব্যাংক ব্যবস্থার সকল শাখাগুলোর উপর জরিপ চালিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ শাখাগুলোকে চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে । এটিএমবুথ পরিচালনার জন্য যে সফটওয়্যারটি ব্যবহার করা হয় সেটিকে আরও শক্তিশালী করতে হবে । ভবিষ্যতের সঞ্চয় যেন বৃথা না যায়, সে দিকে সজাগ ‍দৃষ্টিরাখা সবার নৈতিক দায়িত্ব ।

রাজু আহমেদ । কলাম লেখক ।



বিষয়: বিবিধ

১০৪২ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

193147
১৬ মার্চ ২০১৪ রাত ০৮:২৫
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকগুলির মধ্যে সবচেয়ে অভদ্র ও খারাপ সার্ভিস দেয় সোনালি ব্যংক। কিন্তু সরকার বিভিন্ন ভাবে সরকারি কর্মচারিদের এই ব্যাংক এ একাউন্ট খুলতে বাধ্য করে। এছাড়া বিভিন্ন চাকরির আবেদন বা পাসপোর্টের মত জিনিস এর জন্যও এই ব্যাংক এর উপর নির্ভর করতে হয়। এই ধরনের লাই পাবার পর এই ব্যাংক এর কর্মকর্তা-কর্মচারিরা নিজেদেরকে অতিমানব মনে করতেই পারে।
১৭ মার্চ ২০১৪ সকাল ০৯:৫৯
144063
রাজু আহমেদ লিখেছেন : ঠিক বলেছেন । তাইতো দুর্নিতীও এই ব্যাংকে বেশি হয়।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File