কাকে ভোট দেব, কাকে নয়

লিখেছেন লিখেছেন রাজু আহমেদ ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ১১:০৩:০৬ সকাল

মানবতার মুক্তির দিশারী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) আজ থেকে দীর্ঘ ১৪০০ বছর আগে ইসলামী শরীয়তের দ্বিতীয় উৎস হাদিসে নববীতে ঘোষণা করেছেন, ‘‘তোমরা প্রত্যেকেই (নিজেদের ব্যাপারে) দায়িত্বশীল । (শেষবিচারের দিনে) তোমরা দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে”। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর তিরোধানের পর খিলাফত গত হয়ে চালু হয়েছে মুলকিয়াত । রাসূলের যুগে যে গণতন্ত্রের চর্চা হত সে গণতন্ত্র আজ পৃথিবীর জাদুঘরে আশ্রয় নিয়েছে । প্রকৃত গণতন্ত্রের স্থান দখল করেছে পুঁজিবাদী গণতন্ত্র । এ গণতন্ত্রে জনগণকে সকল ক্ষমতার উৎস হিসেবে বিবেচনা করা হয় অথচ মু’মিন মাত্রই সর্ব শক্তিমান আল্লাহকে শক্তির আঁধার হিসেবে বিশ্বাস করা উচিত । মুসলামানদের মধ্যে অনেকের মনের কোনে সে ধারণা থাকলেও প্রচলিত রাষ্ট্র ব্যবস্থার শাসক গোষ্ঠী সেটা বিশ্বাস করে না । তারা মনে করে কেবলমাত্র এবং একমাত্র জনগনই সকল ক্ষমতার উৎস । সে জনগনকেই ক্ষমতার উৎস হিসেবে বিবেচনা করে জনগনের শাসক হিসেবে কাকে মনোনীত করা যাবে এবং কাকে নয় সে ব্যাপারে ওয়াকবিহাল থাকা আবশ্যক ।

সংসদ নির্বাচন থেকে শুরু করে স্থানীয় নির্বাচনের সকল পর‌্যায়ে প্রতিনিধি নির্বাচন করতে জনগণের ভূমিকা অনস্বীকার‌্য । জনগনের একটি ভোট একজন প্রার্থীকে ক্ষমতার মসনদে তুলতে পারে আবার সেখান থেকে মাটিতে নামিয়ে আনতে পারে । তাইতো নৈতিক দৃষ্টিকোন থেকে ‘ভোটকে পবিত্র আমানত’ হিসেবে মূল্যায়ণ করা হয় । দেশের সুনাগরিক হিসেবে দেশের মঙ্গল-অমঙ্গল বিবেচনা করে সচেতন জনতাকে তাদের শাসক নির্বাচন করা উচিত । আমাদের সমাজের অনেকেই মনে করেন, আমি আমার একটিমাত্র ভোট না দিলে কি হবে ? আমার একটি ভোটে কি কারো জয়-পরাজয় নির্ভর করে ? কথায় বলে, “ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বালু কণা বিন্দু বিন্দু জল, গড়ে তোলে মহাদেশ সাগর অতল” । বাংলাদেশের নির্বাচনে এমন অনেক দৃষ্টান্ত আছে যেখানে দুই প্রার্থীর ভোটের পরিমান সমান ছিল অথবা একটি ভোটের ব্যবধানে একজন প্রার্থীর জয় অথবা পরাজয় হয়েছে । দৃষ্টান্ত হিসেবে মঠবাড়ীয়া উপজেলার মাছুয়া ইউনিয়নকে উল্ল্যেখ করা যায় । সাম্প্রতিক সময়ে যে ইউনিয়ন পরিষয় নির্বাচন হল তার আগের নির্বাচনে দু’ই চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীর ভোটের সংখ্যা ছিল সমান । পরবর্তীতে টস করে তাদের মধ্যে জয়ী-বিজেতা নির্ধারণ করা হয়েছে । ভোটের জয় পরাজয়ে ভাগ্যের অবদান অবশ্যই অনস্বীকার‌্য নয় তবে ভোটারের ক্ষমতাও নেহাত কম নয় ।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কয়েককটি দিক বিবেচনা করে একজন প্রার্থীকে ভোটের মাধ্যমে জয়ী করানো যায় । একজন শাসকের প্রয়োজন কেবল উন্নয়ন তদারকি করার জন্য নয় তার সাথে আরও অনেক বিষয় জড়িত থাকে । স্থানীয় শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা, সমাজিক কু-প্রথা উচ্ছেদ, সামাজিক সমস্যার সমাধান, ধর্মীয় স্বাধীনতা লাভ সর্বপোরি সাংবিধানিক ভাবে প্রদত্ত জনগনের মৌলিক অধিকার (অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা) নিশ্চিত করা । প্রায় প্রতিটি নির্বাচনে দেখা যায় একটি আসনে জন্য একাধিক প্রার্থী অংশগ্রহন করেন । দুইয়ের অধিক প্রার্থী থাকলে প্রথমেই মনস্তাত্ত্বিক জরিপের মাধ্যমে যাদের বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই ক্ষীণ তাদেরকে ভোট দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে । যোগ্য হিসেবে দুইজন প্রার্থী বাছাই করে তাদের পারিবারিক জীবন থেকে শুরু করে সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় পর‌্যায়ের সকল অবদান বিবেচনা করে একজন প্রার্থীকে ভোট দেয়ার জন্য মনোনীত করতে হবে । বাংলাদেশের ৮০শতাংশের বেশি মুসলাম বিবেচনায় এমন প্রার্থীকে শাসক হিসেবে বিবেচনা করতে হবে যিনি ইসলামের শত্রু নন । এটাই ভোট প্রদানের ব্যাপারে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় এবং প্রধান মানদন্ড হওয়া উচিত । দু’জন প্রার্থীর কোন একজনকে যদি খোদাভীরুদের অন্তর্ভূক্ত পাওয়া যায় তাহলে তো ঝামেলা মিটেই গেল । এরকম যদি না পাওয়া যায তবে খেয়াল রাখতে হবে তাদের মধ্যে তুলনামূলক কে খোদার সাথে কম শত্রুতা পোষন করে । দু’ই প্রার্থীর মধ্যে দেখা গেল একজনও ইসলামের বিধি-নিষেধ পালন করে না এমনকি ইসলামের পক্ষের নন । সেসময় বিবেচনা করতে হবে ক্ষমতায় গেলে নামাজ না পড়ুক অন্তত মসজিদে বা ধর্মীয় উপসনালয়ে উপসনায় কে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে না । তাকেই মনোনীত করতে হবে ।

অনেক সময় প্রার্থীদের ব্যক্তি চরিত্র জানা সম্ভব হয়ে ওঠে না তখন প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং আচার-ব্যবহারের প্রতি লক্ষ্য করে ভোট প্রদানের বিবেচনা করতে হবে । ভোট প্রদানের ক্ষেত্রে পূর্ববর্তী ক্ষমতাকালীন সময়ের অভিজ্ঞতা কাজে লাগানো যেতে পারে । বাংলাদেশের মানুষ পরিবর্তন নীতি অবলম্বন করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ বোধ করে । পরিবর্তন প্রিয়তা খারাপ কিছু নয় । তবে এমন পরিবর্তন আনা অনুচিত যাতে হিতে-বীপরীত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি । অনেকেই কথায় কথায় বলেন, ইনি নতুন প্রার্থী, একবার সুযোগ দিযে দেখি আমাদের জন্য কি করেন । এ নীতি মন্দ নয় যদি পূর্ববর্তী শাসক জাতির অমঙ্গলের পথে চলেন । তবে পূর্বীবর্তী শাসক যদি রাষ্ট্র এবং ব্যক্তিগত প্রচেষ্টার সবটুকু উজাড় করে দেশ ও দেশের মানুষের মঙ্গলের চেষ্টা করেন তবে তাকেই পূনরায় নির্বাচিত করা উচিত । আর যদি মনে করা হয় দেশের উন্নয়নে জাতির উন্নয়নে নতুন প্রজন্মের কেউ ইসলামী মূল্যবোধের ভাবধারায় বেশি অবদান রাখতে পারবে তবে তার পানেই ছোটা উচিত ।

আমরা সকলেই জানি মানবতার ইতিহাসের প্রথম হত্যা করা হয়েছে হযরত আদম (আঃ) এর পুত্র হাবিলকে । খুনী ছিল হযরত আদম (আঃ) এরই আরেক পুত্র কাবিল । কথিত আছে পৃথিবীতে হাবিলের পর যতগুলো খুন হবে সে খুনগুলোতে যত পাপ হবে তার একটি অংশ কাবিলের জন্য বরাদ্ধ থাকবে । সে দৃষ্টিকোন থেকে বলা চলে, আপনার-আমার ভোট পেয়ে যারা নির্বাচিত হবে তাদের কৃতকর্মের জন্য আমরা সৌভাগ্যবান অথবা দূর্ভাগ্যবান হব । এটা দুনিয়ায় এবং পরকালে উভয় স্থানেই । মহান বিধাতাকে ফাঁকি দিয়ে কোন শক্তিই রক্ষা পাবে না তবে সেটা হতে সময় লাগতে পারে । আল্লাহর রাসুলের ভাষ্যানুযায়ী সেটা শেষ বিচারের দিনে হওয়ার সম্ভাবনাই অধিক । একজন অদক্ষ শাসকের কারনে দেশ ও জাতির জন্য মহা ধ্বংসের প্রলয় ঘটতে পারে । সেটা হতে পারে উন্নয়নে অথবা মানবতায় । সুতরাং মুসলিম হিসেবে ইসলামকে মানদন্ড রেখে সেসকল প্রার্থীকেই আমাদের শাসক হিসেবে নির্বাচিত করা উচিত যাদের দিয়ে জনগনের ধর্মীয় অধিকারসহ সকল জনতার মৌলিক অধিকার যেন রক্ষা পায় । বিবেকের জিজ্ঞাসায় ভোট দিতে হবে, কারো বা কোন বস্তুর প্রলোভনে নয় । আপনার বিবেক যদি আওয়ামীলীগ, বিএনপি বা অন্যকোন দলকে ভোটদিতে বলে তবে তাদেরকে । মনে রাখতে হবে ক্ষনিকের জীবন আসল নয় । পরকালের অনন্তকালে ক্ষনিকসময়ের দুনিয়ার সকল কৃতকর্মের হিসাব দিতে হবে এমন এক শক্তির কাছে যিনি হিসাবের ব্যাপারে খুবই কঠোর এবং তাকে ফাঁকি দেয়ার মত কোন শক্তি আকাশে কিংবা ভূমিতে এখনো সৃষ্টি হয়নি আর হবেও না কোনদিন ।

রাজু আহমেদ । কলাম লেখক ।



বিষয়: রাজনীতি

১৪৫১ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

184392
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সকাল ১১:২৭
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো। আমাদের দেশের সমস্যা হচ্ছে অধিকাংশ লোক ভোটের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হলেও দায়িত্ব সম্পর্কে নয়।
০২ মার্চ ২০১৪ সকাল ১১:১০
137291
রাজু আহমেদ লিখেছেন : ঠিক বলেছেন ভাই । এখন সময় এসছে সচেতন হওয়ার বা সচেতন করার ।
184499
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৪৭
প্রবাসী আব্দুল্লাহ শাহীন লিখেছেন : ভাইয়া আমাদের দেশে ভোট দেয় প্রতিক দেখে বিবেক ও ইমান দিয়ে নয় ,আপনার লিখার জন্য অনেক ধন্যবাদ
০২ মার্চ ২০১৪ সকাল ১১:১২
137293
রাজু আহমেদ লিখেছেন : এটাই আমাদের দেশের সবার সমস্যা । আশা করি এ সমস্যা অচিরেই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে । কেমন কাটছে বিদেশে ?
184644
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ০৯:৫৫
বাংলার দামাল সন্তান লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম, জাজাকাল্লাহুল খাইরান, অনেক সুন্দর পোস্ট
০২ মার্চ ২০১৪ সকাল ১১:১২
137294
রাজু আহমেদ লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ ।
184674
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ১০:১৫
সজল আহমেদ লিখেছেন : ভাইজান বঙ্গদেশে ভোট টাকায় বেচাকেনা হয়।
০২ মার্চ ২০১৪ সকাল ১১:১৪
137296
রাজু আহমেদ লিখেছেন : তাইতো দেখছি । এ থেকে উত্তরণের পথ কি ?
০২ মার্চ ২০১৪ সকাল ১১:৪৬
137306
সজল আহমেদ লিখেছেন : জাতীকে বুঝাইতে হবে যে আপনি যদি কোন প্রার্থী হইতে টাকা নেন তবে ভবিষ্যতে কোন উন্নয়ন পাবেন না।কারন প্রার্থী তখন তার খরচ হওয়া টাকা উঠানোর চেষ্টায় থাকবে।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File