ঐক্য নয়, চাই বিবেকের জবাবদিহিতা
লিখেছেন লিখেছেন রাজু আহমেদ ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০৮:৪৯:২০ রাত
রাজনৈতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ চরম অস্থির ও সংকটময় অবস্থার মধ্য দিয়ে পাড় হচ্ছে । এ বিশৃঙ্খল অবস্থার সাথে যোগ হয়েছে দুনিয়া কাঁপানো জঙ্গি ইস্যু । স্বার্থের কারনেই বৈদেশিক য়ড়যন্ত্র ধীরে ধীরে ধ্বংস করছে আমাদের সমাজনীতি, ধর্মনীতি, রাজনীতি এবং অর্থনীতি । সুজলা-সুফলা বাংলাদেশের দিকে বিশ্বের প্রায় প্রতিটি শক্তিধর রাষ্ট্র রাক্ষসের মত দৃষ্টি দিয়ে আছে । কখন গলধঃকরণ করবে ৫৬ হাজার বর্গমাইলের ছোট্ট একটি ভূ-খন্ড অথচ অপার সম্ভাবনা । এ ভূ-খন্ডের ভূ-পৃষ্ঠে যা আছে তার চেয়ে কয়েক হাজার গুন ভূতলে । তাইতো আমেরিকার মত বিশ্বের সুপার পাওয়ার থেকে শুরু করে বন্ধু প্রতীম ভারত সবাই সুযোগের অপেক্ষায় । বাংলাদেশকে নিয়ে বিশ্ববাসী অন্তরে বিষ মূখে মধুনীতি অবধারণ করেছে । বাংলাদেশে যখনই কোন রাজনৈতিক অথবা অন্যকোন আভ্যন্তরীণ সংকট দেখা দেয় তখনই তারা ছুটে আসে । সেটা স্বার্থহীন না সার্থে সেটা বুঝতে আমাদের একটু সময় লাগে ।
স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ যতগুলো ক্রান্তিকাল পার করেছে তার মধ্যে সবচেয়ে বৃহৎ ক্রান্তিকাল চলছে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্ব থেকে । যথারীতি বিশ্বসংস্থা এবং দেশের আভ্যন্তরীন বিজ্ঞ ব্যক্তিরা ছুটে এসেছে সংকট সমাধানকল্পে । তাদের সকলের একটিই পরামর্শ ছিল ‘জাতীয় ঐক্যের’ । তাদের পরামর্শ কোন কাজে আসে নি । ঐক্য তো দূরের কথা যাদের মধ্যে ঐক্য করার আহ্বান ছিল, তারা কেউ কারও মূখও দর্শন করেনি । বিশ্ববাসী এবং গুনীজনরা যে ঐক্যের আশা করেছিল দূর্ভাগ্য হলেও সত্য বলতে সে ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হওয়া আমাদের মানসিকতায় কতটুকু সম্ভব ? বাংলাদেশ জন্মের ইতিহাস বা তার পূর্ব থেকেও যদি আমরা দেখতে চাই তবে সবক্ষেত্রে দেখব অনৈক্যের গান । ভাষা আন্দোলন কিংবা স্বাধীনতার যুদ্ধে এ দেশের আপামর জনসাধারণের ঐক্য নিশ্চিত হওয়া উচিত ছিল । কিন্তু ইতিহাস বড়ই নিষ্ঠুরতার স্বাক্ষ্য দেয় । বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিপক্ষেও শতকরা ২৫ শতাংশ মানুষের অবস্থান ছিল । অথচ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের একজন মানুষেরও স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান করা উচিত ছিল না । তৎকালীন সময়ে যারা পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী থেকে সুযোগ-সুবিধা বা উপঢৌকন পেত বাংলাদেশ ভূ-খন্ড জন্মের প্রশ্নে তাদের মৌন থাকা উচিত ছিল । বাস্তবে সেটা হয় নি । স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন বিষয়ে জাতীয় ঐক্য একান্ত কাম্য ছিল । বরং সে ঐক্য না হয়ে সেসকল ঘটনা নিয়ে হয়েছে রাজনীতির জঘন্য খেলা । ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্ট বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থাপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা পরবর্তী সময়ে স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানকে হত্যা সর্বশেষ ২০০৫ সালের ২৫শে ফেব্রুয়ারী ঢাকাস্থ পিলখানায় ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাকে গুলি করে হত্যার বিচার বিষয়ে জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজন ছিল । এছাড়াও সংখ্যালগুদের নির্যপাতন, দূর্নীতি, ইভটিজিং, গুম, খুন, ধর্ষণ, রাহাজানি, ডাকাতি, লুটতরাজ, জঙ্গি, প্রাকৃতিক বিপরর্যয় বিশেষ করে বহিঃশত্রুর ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় একান্তভাবে জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজন ছিল । সে ঐক্য তো হলই না বরং এসকল সমস্যা নিয়ে চলল রাজনীতির জঘন্য মহড়া । অবস্থাভেদে বিশেষ ব্যক্তিরা চুপ থাকলেও অনেক ক্ষতির হাত থেকে দেশ ও জাতি রক্ষা পেত তবে সেটা বাংলাদেশের রাজনৈতিক কর্তাব্যক্তিরা বুঝতে চেষ্টা করেনি । বাংলাদেশের প্রধান দু’টি রাজনৈতিক দলের একটি যদি সত্যের পক্ষে অবস্থান করে তবে দ্বিতীয়টি ঠিক তার উল্টো । দেশ ও জাতির স্বার্থ তাদের কাছে তুচ্ছ, আসল হল তাদের বাকপটুতা প্রমান করা ।
বিশ্বের কর্তা ব্যক্তিরা যখন একদলেকে গনতন্ত্রের পথে হাটতে পরামর্শ দিয়েছে তখন অন্য কর্তারা বুঝিয়েছে ঠিক তার উল্টো । যারা উল্টো বুঝাতে এসেছে তাদের বেশি শ্রম দিতে হয় নি । তারা যখনি মুখ খুলেছে তখনই আমরা বুঝতে পেরেছি তারা কি বলতে চায় । তাদের ঘাড়ে দোষ না চাপিয়ে গাধার যেমন বোঝা বহন করার শখ তেমনি আমরাও দোষের বোঝা বহন করে চলেছি । ক্ষমতার মসনদে যারা বসতে চেয়েছে তারা আগেই সূত্র ঘেঁটে দেখেছে শুধুমাত্র এদেশের ১০ কোটি ভোটার ক্ষমতায় বসাতে পারে না । বিদেশী প্রভূরা ক্ষমতায় বসাতে সিদ্ধহস্ত । ১০ কোটি ভোটারের ভোটের মূল্যের চেয়ে প্রভূদের আঙুলের ইশারার ক্ষমতা বেশি । তাইতো স্বাধীনতার পর থেকে যারাই ক্ষমতার মসনদে বসতে চেয়েছে তারাই জনগণের আশা-আকাঙ্খার পিঠে কষে লাথি এঁকে দাদাদের কথায় উঠাবসা করেছে । তবে অতি আশ্চে র্যের বিষয় হল, বাংলাদেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দলগুলোর দাদা ঘুরে ফিরে এক মোড়ল । তিনিই সর্বেসর্বা ।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে যারা ঐক্যের ছায়াতলে আসতে বলেছিল তারা রাজনৈতিক নেতাদের কর্মকান্ড বা দর্শন দেখে এ আহ্বান জানায় নি । ঐক্যের জন্য আয়োজন করা হয়েছে অনেক সভা, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম । ঐক্য শব্দটা শুনলেই একটা সুখানুভূতি হয় । কর্ণকুহরে আরাম লাগে কিন্তু রাজনৈতিক নক্ষত্রদের হৃদয়পটে আরাম লাগাতে এ শব্দটা একেবারেই ব্যর্থ । যে দু’ই দল একটি বস্তুকে অর্জনের মানসে ভিন্ন পথ অবলম্বন করে লক্ষ্য বস্তুর দিকে ধাবিত হয় তাদের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠা সম্ভব কিন্তু যখন কোন দল একেবারে উল্টোপথে হাটে তাদের মধ্যে এক্য কোন উপায়ে সম্ভব সেটা ততোটা বোধগম্য নয় । দেশকে ভালবাসার, জাতিকে ভাল কিছু উপহার দেওয়ার মানসিকতা থাকলে ঐক্য সম্ভব কিন্তু সকল কাজের পিছনে যদি স্বার্থ থাকে তবে সেখানে ভাল কিছু আশা করা আর বড়শীতে টোপ না দিয়ে পুকুরে ফেলে মাছ শিকারের আশা করা সমান । বাংলাদেশে যারা রাজনীতি করে তাদেরকে ঢালাও ভাবে খারাপ বলার সৎসাহস আমার নাই এমনকি খারাপের তুলনায় ভালোর সংখ্যাই বেশি হবে । তবে একজন খারাপ ব্যক্তি একটি সমাজকে নষ্ট করতে যথেষ্ট । কাজেই ঐক্য ঐক্য বলে দিনরাত চিল্লায়ে গলাফাটালেও কাজের কাজ কিছুই হবে বলে বিশ্বাস হয় না । যে ঐক্য পূর্বে হয় নি সে ঐক্য আজ হবে এরকম বিশ্বাসে বুক না বাধাই উত্তম ।
ঐক্য না হোক তবুও তো জাতিকে ধ্বংস হতে দেয়া যায় না । মনে প্রাণে বিশ্বাস না থাকলেও এদেশ আমাদের সবার । এদেশের অমঙ্গল জাত-অজাত ভেদে সকলের অমঙ্গল । ঐক্য হতে হলে একজনের কাছে আরেকজনকে ছোট হতে হয় । এটা কিরুপে সম্ভব ! আমরা সাধারণেরাই তো এক-একজন সম্মানের ভেঁপু । সেখানে রাজনৈতিক ব্যক্তিরা তো আরও কত উর্ধ্বের ! ঐক্য না হতে পারে তবে নৈতিকতা তো সকলের মধ্যেই জম্মানো যায় । যার মধ্যে যতটুকু নৈতিকতাবোধ থাকবে, সমাজে, রাষ্ট্রের মধ্যে সে ততটুকু সম্মানিত হবে । নৈতিকতা অর্জনের সূখ স্বর্গীয় সূখের থেকে কোন অংশে ছোট নয় । প্রত্যেক ব্যক্তির মধ্যে যদি নৈতিকতা জন্ম হয় তবে তাদের দ্বারা দেশ ও জাতির অমঙ্গল কোন প্রকারেই সম্ভব নয় । প্রতিটি মানুষের বিবেক একটি মানদন্ড । এ মানদন্ডের কাছে যদি জবাবদিহীতা নিশ্চিত করতে পারি তবে ঐক্য তৈরির জন্য স্লোগান দিতে হবে না । কারো কাছে কাউকে ছোটও হতে হবে না । সুতরাং যা হবার নয় তার পিছনে অযথা না ছুটে ব্যক্তির মধ্যে নৈতিকতা, বিবেকের জিজ্ঞাসা সৃষ্টি করি । তাহলে সকল প্রকার সমস্যা মুহূর্তের মধ্যে আলাদিনের দৈত্যের মত কোন এক দৈব শক্তি সমাধান করে দিবে ।
রাজু আহমেদ । কলাম লেখক ।
বিষয়: রাজনীতি
১০৯২ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন