যারা হিজাব পরে তারা ক্ষেত !
লিখেছেন লিখেছেন রাজু আহমেদ ০৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০৮:১৫:০২ রাত
হিজাব মুসলমান মেয়েদের অন্যতম অলংকার । আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে সূরা নুরের ৩১ নং আয়াতে ঘোষণা করেছেন, “হে নবী ! ঈমানদার নারীদের বলুন তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে । তারা যেন যা সাধারণত: প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুড়, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুষ্পুত্র, ভগ্নিপূত্র, স্ত্রীলোকদের অধিকারভূক্ত বাঁদী, যৌনকামনামূক্ত পুরুষ ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো কাছে সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোড়ে পদচারনা না করে” । আল্লাহ তায়ালা নারীর পর্দার ব্যাপারে যে গুরুত্বারোপ করেছেন তা ক্ষতিয়ে দেখার আগে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের অন্যতম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষাকা তার হিজাব পরিহিতা ছাত্রীদের সাথে যে আচরন করেছেন তা জেনে নেই ।
জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সরকার ও রাজনীত’ বিভাগে হিজাব পড়ায় কয়েকজন ছাত্রীকে গালমন্দ করে ক্লাস থেকে বের করে দিয়েছেন অধ্যাপিকা খুরশিদা বেগম । এদিকে এ ঘটনায় তোলপাড় হলে উল্টো ছাত্রীদেরকেই ক্ষমা চাইতে হয়েছে ওই অধ্যাপিকার কাছে । গত ০৫/০২/১৪ ঈসায়ী তারিখ রোজ সোমবার ক্লাস প্রেজেন্টেশন (উপস্থাপনা) করতে গেলে, হিজাব পরা ছাত্রীদের নিয়ে তিনি কটুক্তি করেন এবং তাদেরকে ক্লাস থেকে বের করে দেন । এরপর গতকাল আবার শিক্ষার্থীদেরকে তার কাছে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করেন । সংশ্লিষ্ট বিভাগ সূত্রে জানা যায়, অধ্যাপিকা খুরশিদা বেগমের ক্লাসে ছাত্রীরা ওড়না দিয়ে মাথা ঢেকে রাখলেও তিনি তাদের নিয়ে কটু্ক্তি করেন । তাদেরকে তিনি কোটরের মুরগি, অসামাজিক বলে গালাগালি করেন । সোমবার মাস্টার্সে (৩৮তম ব্যাচ) ৫০৫ নং কোর্স ‘রেস অ্যান্ড এখনিক পলিটিক্স’ এর ক্লাস নেয়ার সময় তিনি আবারও হিজাব পরা ছাত্রীদের কটুক্তি করেন । সোমবার হিজাব পরা ছাত্রীদের উদ্দেশ্যে অধ্যাপিকা খুরশিদা বেগম বলেন, যারা হিজাব পরে তাদের মস্তিষ্ক অবরুদ্ধ, তারা অন্ত:সারশূন্য । যারা ক্লাসে হিজাব পড়ে আসবে তাদের প্রেজেন্টশন (উপস্থাপনা) আমি নেব না । যাদেরকে আমার ভালো লাগে না তাদেরকে আমি ক্লাসে কথা বলতে দিবো না । তিনি আরে বলেন, যে মেযেরা হিজাব পরে তার ক্ষেত, প্যাকেটের মত মোড়ানো, তাদের মধ্যে কোন আধুনিকতা নেই । এসব মেয়েদের ক্লাস নেবে তেঁতুল হুজুররা । আমি যাদের পড়াব তাদেরকে সালোয়ার কামিজ অথবা শাড়ি পরে আসতে হবে । এটা আমার ক্লাস, এখানে শুধু আমার কর্তৃত্ব । ওই শিক্ষিকা এ ধরনের মন্তব্য করলে হিজাব পরা ছাত্রীরা প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, আমাদের পর্দা করার স্বাধীনতা আছে । তাই বলে আপনি আমাদেরকে অন্য পোশাক পরে আসতে বাধ্য করতে পারেন না । তাদের কথায় খুরশিদা বেগম আরও রাগন্বিত হয়ে সন্ধ্যায় তাদেরকে রুমে ডেকে নিয়ে আবারও হিজাবের সমালোচনা করেন এবং সালোয়ার কামিজ অথবা শাড়ী পরে আসতে পরামর্শ দেন । অধ্যাপিকা খুরশিদা বেগমের এমন আচরনের প্রতিবাদ জানিয়ে এক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা ধর্ম পালন না করলেও তার যেমন কিছু করার নাই তেমনি ধর্ম পালন করলেও তার কিছু করার কথা নয় । কারন ধর্ম যার যার ব্যক্তিগত স্বাধীনতার বিষয় ।
সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনার শেষ দিক থেকে শুরু করব । ধর্ম যার যার ব্যক্তিগত ব্যাপার । এখানে ব্যক্তি স্বাধীনতার সুযোগ আছে । তবে গোঁড়া মুসলমানরা এর বিরোধীতা করবে । জাহেলিয়্যাতের যুগে নারীদের সম্পূর্ন অধিকার হরন করা হয়েছিল । তখন নারীদেরকে গৃহে আবদ্ধ করে রাখা হত । নারীদেরকে কেবল যৌনদাসী হিসেবে ব্যবহার করা হত । নারীদেরকে ভোগ বিলাসের সম্পত্তি ছাড়া আর কিছুই মনে করা হত না । মানবতার মুক্তির দুত হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) আগমনের মাধ্যমে এ ধরনের কু-প্রথা বিলোপ করা সম্ভব হয়েছে । তিনি নারীদেরকে দিলেন সমান অধিকার, সমান মর্যাদা । যুগ বদলেছে । হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ইন্তেকাল করেছেন প্রায় সাড়ে চৌদ্দশ বছরের কিছু বেশি সময় হয়েছে । এক শ্রেনীর স্বার্থাবাদী মহল নারীদেরকে অবাধে ভোগ করার জন্য নারীদেরকে কূট বুদ্ধি দিয়ে রাস্তায় নামিয়ে দিয়েছে, সমান অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে । অথচ কোরআন মাজীদে নারীদেরকে যে অধিকার দিয়ে রাখা হয়েছে সেটার খোঁজ না নিয়ে আমাদের নারীরাও পাগলের মত দৌড়াচ্ছে । জাহেলিয়্যাতের সে ভূলকে সংশোধন করতে যাচ্ছি আরো একটি মারাত্মক ভূল দিয়ে । জাহেলিয়্যাতেরে যুগে যেথানে নারীদেরকে এক প্রকার বন্দী করে রাখা হয়েছিল সেখানে আজ আমরা নারীদেরকে দিতে যাচ্ছি সীমাহীন স্বাধীনতা । যে স্বাধীনতা নারীদেরকে তথা মানবজাতীকে কখনো কোন কল্যানের মুখোমুখি দাঁড় করাতে পারবে না । পারবে কেবল ধ্বংসের বেলাভূমিতে দাঁড় করাতে । অধ্যাপিকা খুরশিদা বেগম ধর্মের যে মাত্রায় অবমাননা করেছেন তাতে তার শাস্তি হওয়া আবশ্যক । তবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যারা এরকম মানসিক বিকৃতদের বিচার দাবী করবে তাদেরকেই বিচারেরর মুখোমুখি হতে হবে । অধ্যাপিকা খুরশিদা বেগমের সাথে আমি একটা বিষয়ে অবশ্যই একমত না হয়ে পারব না । সেটা হল, হিজাবধারী মেয়েরা আধুনিকা নয় । আমাদের দুর্ভাগ্য যদি এসকল মেয়েরা আধুনিকা হত তবে ক্লাসে বসেই এরকম জঘন্য অধ্যাপিকাদের গাল লাল করে দিত । পুরাতনরা যেমন করে শিক্ষকের সম্মান করত একালের অন-আধুনিকারাও শিক্ষকদের তেমনটাই সম্মান করে । ভূলেও এদেরকে আধুনিকা বানাতে যাবেন না, তাহলে আপনাদেরকেই তার জন্য অনুশোচনা করতে হবে ।
এবার আসুন পর্দা সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বক্তব্যগুলো থেকে কয়েকটি দেখি-
মহান আল্লাহ তায়ালা সূরা আল আহযাবের ৫৯ নং আয়াতে বলেছেন “ হে নবী ! আপনি আপনার পত্নীগণকে ও কন্যাগণকে এবং মুমিনদের স্ত্রীগণকে বলুন, তারা যেন চাদরের কিংয়দাংশ নিজেদের উপর টেনে নেয় । এতে তাদের চেনা সহজ হবে, ফলে তাদের উত্যক্ত করা হবে না । আল্লাহ ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু” । আপনাদেরকে একটা চ্যালেঞ্জ দিলাম, পৃথিবীতে যত মেয়ে ধর্ষন, এসিড সন্ত্রাসের শিকার অথবা ইভটিজিংয়ের শিকার হয় তাদের কত শতাংশ হিজাব পরা মেয়ে হবে ? নিশ্চয়ই এক শতাংশও পাওয়া যাবে না ।
সূরা আন নুরের ২৬ নং আয়াতে মহান আল্লাহ তা’আলা ঘোষণা করেছেন, ‘ দুশ্চরিত্রা নারীকূল দুশ্চরিত্রা পুরুষকূলের জন্য এবং দুশ্চরিত্র পুরুষকূল দু্শ্চরিত্রা নারীকূলের জন্য । সচ্চরিত্রা নারীকূল সচ্চরিত্রা পুরুষকূলের জন্য এবং সচ্চরিত্র পুরুষকূল সচ্চরিত্রা নারীকূলের জন্য । তাদের সম্পর্কে লোকে যা বলে তার সাথে তারা সম্পর্কহীন । তাদের জন্য আছে সম্মান জনক জীবিকা’ ।
মহান আল্লাহ তা’আলা সূরা আন নুরের ৩০ নং আয়াতে বলেন, ‘মু’মিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাযত করে, এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে । নিশ্চয়ই তারা যা করেন সে সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা অবগত আছেন ।
অধ্যাপিকা খুরশিদা বেগমের কথার জবাব দিয়ে আল্লাহ তায়ালা সূরা আন নুরের ২৩ নং আয়াতে ঘোষণা করেন, যারা সতী-সাধ্বী, নিরীহ ঈমানদার নারীদের প্রতি অপবাদ আরোপ করে তারা ইহকাল ও পরকালে ধিকৃত হবে এবং তাদের জন্য রয়েছে গুরুতর শাস্তি ।
এবার আসুন পর্দা সম্পর্কে আল্লাহর রাসূলের কিছু বক্তব্য দেখি-
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত । তিনি বলেন, নবী করীম (সাঃ) বলেছেন, মহিলার হলো পর্দায় থাকার বস্তু । সুতরাং তারা যখন (পর্দা উপেক্ষা করে ) বাহিরে আসে তখন শয়তান তাদেরকে (অন্য পুরুষের চোখে) সুসজ্জিত করে দেখায় । (জামে তিরমীযী)
জারির ইবনে আব্দূল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত । তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে এ মর্মে প্রশ্ন করেছিলাম যে, হঠাৎ যদি কোন মহিলার উপর দৃষ্টি পতিত হয়, তাহলে কি করতে হবে ? রাসূল (সাঃ) আমাকে নির্দেশ দিলেন যে, তুমি তোমার দৃষ্টিকে কালবিলম্ব না করে ফিরিয়ে নিবে । (সহীহ মুসলিম)
বোনেরা আমার ! জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা বাংলাদেশে যে সকল নারীরা ইসলামের হুকুম পালন করতে গিয়ে অপদস্ত হচ্ছেন, তারা আল্লাহর নামে একটু ধৈরর্য্য ধারণ করুন । নিশ্চয়ই আল্লাহ আপনাদেরকে নিরাশ করবেন না । ইসলামের প্রথম শাহাদাতকারীনী হযরত সুমাইয়া (রাঃ) এর জীবনী থেকে শিক্ষা গ্রহন করুন । জেনে রাখবেন, ধরনীর বুকে আপনারা সর্বশ্রেষ্ঠ । যুগে যুগে কিছু কুলাঙ্গার আপনাদেরে চলার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে । সে বাঁধা আপনাদেরকে যেন দমিয়ে না রেখে বরং ঈমানী বলে বলীয়ান হয়ে চলার তাওফীক দেন । আল্লাহর কাছে কেবল এ প্রার্থনাই করবেন । খুরশিদা বেগম বলেছেন, ক্লাসে কর্তৃত্ব শুধু তার । তিনি যা বলবেন আপনাদেরকে সেটাই মানতে হবে । তিনি ভূলে গেছেন, গোটা বিশ্ব জগতের কর্তৃত্ব এক মহান সত্ত্বার হাতে । পৃথিবীর সকল সৃষ্টিকে কেবল তার কাছেই জবাবদীহি করতে হবে । সে সময় হয়ত বেশী দূরে নয় । আল্লাহ আমাদেরকে হেফাজত করুন । পূর্নাঙ্গ ইসলাম বুঝিবারমত এবং মানিবারমত মেধা এবং ধৈরর্য্য আমাদেরকে দান করুন । হিজাবধারী নারীকূল ক্ষেত নয় তার সকল নারীকূলের আদর্শ । তারা শুধু আধুনিক নয় বরং আধুনিকাদের পথনির্দেশক ।
রাজু আহমেদ । কলাম লেখক ।
বিষয়: বিবিধ
১৩৮৪ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আর যারা হিযাব করে না – ওরা আবর্জনা! – কুকুর-বিড়াল-পশুও দৃষ্টিনা শুধু ময়লার (পারফিউম) গন্ধও শুকে – এবং অনেক কুকুর-বিড়ালই ভীড় জমিয়ে সে আবর্জনা দেখে ঘেউ-ঘেউও করে আর কামড়া-কামড়ি (ধর্ষন) তো আবর্জনা নিয়ে কুকুর-রা করে – তা তো সংবাদে রেগুলার দেখছি।
আমি কিছু বুঝতেছিনা,হিজাব নিয়া বামপন্থিদের এত মাথা ব্যাথা কেন??
ছেলেদের কি ঠ্যাকা পড়েছে মেয়েদের ব্যাপারে এত খবরদারি করতে যেখানে মেয়েরাই চায় আধুনিক ভাবে চলতে ?
এত বলার পরও যখন একই কাজের পুনরাবৃত্তি হতে থাকে তাহলে বাণী প্রচার করা হবে '' উলু বনে মুক্তো ছড়ানোর মত ''
মন্তব্য করতে লগইন করুন