‘সংখ্যালগঘুদের উপর হামলা অবিলম্বে বন্ধ করুন’

লিখেছেন লিখেছেন রাজু আহমেদ ১০ জানুয়ারি, ২০১৪, ০৬:৪৬:৫১ সন্ধ্যা

বিশ্ব সভ্যতা বিরামহীন গতিতে এগিয়ে চলছে । কেউ আর পূর্বের স্থানে বসে থাকতে চায়না । আদিম যুগের মানুষেরা যেভাবে তাদের কর্তৃত্বকে অটুট রাখার জন্য দূর্বলদের উপর হামলা, নির‌্যাতন চালাত তেমনটা এখন আর ভাবাই যায় না । মানুষ এখনও মানুষের উপর কর্তৃত্ব করে, আদেশ দেয় তবে সেটা বুদ্ধি দিয়ে । বাহুর শক্তির প্রদর্শন করে কেবল বর্বররা । আফ্রিকা মহাদেশের কিছু অঞ্চলে এরকম কিছু বর্বর জাতির দেখা মিললেও এশিয়া মহাদেশে এরকম জাতিকে খুঁজে পাওয়া কষ্টকর । বুদ্ধি, মেধা ও মননশীলতাই বর্তমান মানুষের লড়াই করার সবচেয়ে বড় হাতিয়ার । কাউকে পরাজিত করার জন্য বুদ্ধির চেয়ে ধারালো অস্ত্র আর কিছু ধরাধামে আছে বলে মনে হয় না । অন্তত জ্ঞানীরা এমনটাই মনে করেন । মানুষ যখন বিবেকের চেয়ে আবেগকে বেশি প্রশ্রয় দেয় তখন তার কাছ থেকে পশুসূলভ আচরণ দেখলেও বিস্মিত হওয়ার কিছু থাকে না । বাংলাদেশের মানুষের কাছ থেকে অতীতে যে সকল আচরণ পরিলক্ষিত হত, তার চেয়ে আজ ভিন্ন কিছু দেখতে হচ্ছে । বিশ্বের সূচনালগ্ন থেকেই রাজনৈতিক অস্থিরতা ছিল । অতীতে সে কারনে ইতিহাসও কম রক্তাক্ত হয়নি । বর্বব যুগের কারনে সে সময়ের শাসকদের খুব বেশি দোষারোপ করা যায় না । তখনকার যুগে রাজার অনুরূপেই প্রজা ছিল । কালের আবর্তে রাজা এবং প্রজারা সংশোধন হলেও রাজনীতি তার খোলস থেকে ততোটা বের হয়ে আসতে পারেনি । তাইতো আজো পৃথিবীর প্রান্তে প্রান্তে চলছে রক্তের হলি খেলা । সম্প্রতি মায়ানমারে সংঘঠিত রোহিঙ্গাদের উপর আক্রমন ও হত্যা দেখে দুঃখিত অথবা ব্যথিত হয়নি এমন কোন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ । সেখানে হাজার হাজার জীবন্ত মানুষকে অগ্নিদ্বগ্ধ করে হত্যা করা হয়েছে । তাছাড়াও ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে, বিশেষ করে ভারত শাসিত কাশ্মীরে মুসলমানদের উপর চালানো বর্বর নির‌্যাতন সভ্যতার ইতিহাসের জঘন্যতম ঘটনা । আমরা এ সকল নির‌্যাতন ও হত্যাযজ্ঞের তীব্র নিন্দা জানিয়েছি । সাধ্যের মধ্যে যতটুকু সামর্থ্য ছিল তা প্রয়োগ করে ধিক্কার জানিয়েছি । সময়ের আবর্তে সে ঘৃণা আজ আমাদের দিকে প্রত্যাবর্তন করতে শুরু করেছে । ‘উত্তম ও অধম’ নামক কবিতায় সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত বলেছেন ‘কুকুরের কাজ কুকুর করেছে কামড় দিয়েছে পায়, তাই বলে কি কুকুরকে কামড়ানো মানুষের শোভা পায়’ । ছোট বেলায় পঠিত এ কবিতা থেকে আমরা শিক্ষা গ্রহণ করতে পারিনি । বাংলাদেশে চলমান সমস্যাসমূহের সাথে নতুন করে যোগ হয়েছে ‘সংখ্যালগঘুদের উপর হামলা’র ঘটনা ।

বিশ্বের যে সকল দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতীর বজায়ের জন্য সুনাম আছে, সে সকল দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষে । কতিপয় কুলাঙ্গারের উত্তাল দর্পে আজ সে সম্মান চুলোয় যেতে বসেছে । সংখ্যালঘু বা সংখ্যাগরিষ্ট গণতন্ত্রের সৃষ্ট শব্দ হলেও এতদিন বাংলাদেশের মানুষ পরম ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে বসবাস করত । কিন্তু বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক সংকটের কারনে প্রায়ই সংখ্যালগঘুদের উপর আক্রমন হচ্ছে । কয়েক মাস পূ্র্বে কক্সবাজারের রামু উপজেলায় অজ্ঞাত দুবৃত্ত্ব কর্তৃক বৌদ্ব মন্দিরের উপর হামলা দিয়ে এ কার‌্যকলাপের শুরু হয় । মাঝখানে কয়েকমাস থেমে থাকলেও সম্প্রতি কিছু উপজেলায় শুরু হয়েছে এ ঘৃণ্য কর্মকান্ড । বিশেষ করে সাতক্ষীরা,সাতকানিয়া,যশোরের মনিরামপুর, চিটাগংয়ের বাঁশখালী, সিতাকুন্ডু, বরিশালের চরকাউয়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমন হচ্ছে । এতে সম্পদের সাথে জীবনহানীর ঘটনাও ঘটছে । এসকল হামলার ঘটনায় প্রকৃত দোষীরা রয়ে যাচ্ছে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে । বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামীলীগ এবং বিএনপি একে অপরের ঘাড়ে দোষ চাপানোর চেষ্টা করছে । আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে বিএনপি এবং তাদের অঙ্গসংঘঠন জামাত-শিবিরের কর্মীরা এ সকল জঘন্য কর্মকান্ড চালাচ্ছে । বিএনপি এবং জামাত-শিবিরের পক্ষ থেকে এ সকল অভিযোগ অস্বীকার করে সম্পূর্ণ কর্মকান্ড আওয়ামীলীগের কর্মীরা সংঘটিত করছে বলে দাবি তুলছে । রামুর ঘটনার পর নয়াদিগন্ত পত্রিকায় এসেছিল আওয়ামীলীগের সমর্থকরা সংখ্যালঘুদের উপর হামলা করেছে । যাতে করে ভারতসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশসমূহ বিএনপি এবং জামাত-শিবিরের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহন করে । সংখ্যালঘুদের উপর হামলকারীরা কোন দলের হতে পারে সেটা অন্তত এদেশের সচেতন মানুষ হিসেবে আমি বিশ্বাস করি না । আওয়ামীলীগ বা বিএনপি কোন দলেই সন্ত্রাসের স্থান থাকা উচিত নয় । সন্ত্রাসী, সে কোন দলের নয় ।

সুতরাং আওয়ামীলীগ ও বিএনপি-জামাত জোটকে একতাবদ্ধ হয়ে সংখ্যালঘুদের উপর হামলাকারীদের চিহ্নিত করা উচিত । এবং এদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহন করা আশু-আবশ্যক । বিশ্বের দরবারে কোন দলকে হেয় প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে ষড়যন্ত্রমূলক কর্মকান্ড অথবা অন্যকোন উদ্দেশ্যে সংখ্যালঘুদের উপর হামলার বিকৃত মস্তিষ্কের কাজ । এ সকল হীন কর্মকান্ড যারা পরিচালনা করে তারা শুধু রাজনৈতিক ভাবে পরিচয়হীন নয় বরং তাদের ধর্মীয় পরিচয়ও থাক উচিত নয় । কেননা বিশ্বের বহুল প্রচলিত ধর্ম অথবা কম প্রচলিত ধর্ম কোনটাই মানবতার ক্ষতির কথা বলে না । যিনি মানুষ হয়ে মানুষের ক্ষতি করে সে অমানুষেরও অধম । সকল পরিবেশে তাকে ঘৃণা করা উচিত । মুসলমান, হিন্দু অথবা বৌদ্ধ আমাদের পরিচয়কে যতটা অর্থবহ করে মানুষ হিসেবে পরিচয় তার চেয়ে কম অর্থবহ করে না । ভারত, মায়ানমার অথবা অ্ন্যকোন অসভ্য দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠের মত সংখ্যালঘুদের উপর জুলুম নির‌্যাতন আমরা চালাতে পারি না । বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমনের ফলে ভারতের চরমপন্থি বিজেপিরা আমাদের দিকে চোখ রাঙাচ্ছে । স্পষ্টভাবে জেনে রাখা দরকার, আমরা বাঙালীরা কোন কুলাঙ্গারের চোখ রাঙানীকে ভয় পাই না । আগে নিজেদের ঘর সামলান । বিশ্বের যে সকল দেশে সবচেয়ে বেশি সংখ্যালগুদের উপর নির‌্যাতন চালানো হয় তার মধ্যে ভারতের অবস্থান সবার উপরে । আগে আপন স্ত্রীর ভূষণ ঠিক করুন তার পরে ভাবীর ভূষণ ঠিক করতে যাবেন । দেশের সকল মানুষের প্রতি আকুল আবেদন, বিবেকের কাছে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করুন । কারো প্রলোভনে অথবা সামান্য অর্থের লোভে এমন কোন কাজ করা উচিত নয় যার নেতি-বাচক ফল সারা জীবন ভোগ করতে হয় । বাংলাদেশে পলিটিক্যাল-পর্ণোগ্রাফির মাত্রা এমন পর‌্যায়ে পৌঁছেছে যাতে মানুষ মানুষকে খুন করতেও দ্বিধাবোধ করে না । আসুন সকল প্রকার অন্যায়, অবিচার, জুলুম ও নির‌্যাতন ত্যাগ করি । সংখ্যালঘুদের উপর ভবিষ্যতে যেন আর কোন নির‌্যাতন না হয় তার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করি । কুকুরের স্বভাবের সাথে মানুষের স্বভাব যেন মিলে না যায়, তার জন্য সচেতন থাকা দরকার । আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের মত আমরা সবাই একই সুরে বলি-

“হিন্দু না ওরা মুসলিম জিজ্ঞাসে কোন জন,

কান্ডারী বল ডুবিছে মানুষ,

সন্তান মোর মার” ।

লেখক : রাজু আহমেদ । শিক্ষার্থী,

সরকারি বি এম কলেজ, বরিশাল ।



বিষয়: বিবিধ

৯১৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File