আমার "সারপ্রাইজ" - ভাইয়ার গল্প
লিখেছেন লিখেছেন লুকোচুরি ২৮ অক্টোবর, ২০১৪, ০২:১৫:৪৮ দুপুর
ভাইয়া সেনাবাহিনীতে থাকায় সবসময় ছুটি পায় না। তাই ভাইয়ার সাথে তেমন সময় কাটানো হয় না ছোট বেলার মত। মন ভীষণ খারাপ হয় এই জন্য। আবার যখন ভাবি যে দেশের প্রয়োজনেই তো ভাইয়া ছুটি পাচ্ছে না তখন সান্ত্বনা পাই। কিন্তু যখন ঈদের সময় এমন হয় তখন আর কিছুতেই মন মানে না।
এবার কুরবানির ঈদেও ভাইয়া ছুটি পায়নি। আমারতো মন ভীষণ খারাপ। মা, বাবারো একই অবস্থা। আমি না পারি সইতে না পারি মাকে কিছু বলতে। আমার কান্নাকাটি দেখলে মাও কান্না শুরু করে দেয়। কি আর করা আমিও আর মায়ের সামনে কাঁদি না। এবার ভাবির প্রথম ঈদ আমাদের সাথে। ভাবিও নেই সাথে, ভাবির কয়দিন পর পরীক্ষা। আমার অবস্থা হয়েছে মরার উপর খাড়ার ঘা এর মত। ভাই ভাবি কেউ নেই। এইদিকে এবার আমাকেও বুঝি ভাই ভাবি ছাড়া প্রথম ঈদ করতে হবে।
এই যখন অবস্থা, আমার মনে পড়ে যাচ্ছিল এতগুলো বছর ভাইয়ার সাথে কাটানো ঈদগুলোর কথা। একদম ছোট বেলায় পাজামা-পাঞ্জাবী পরে ভাইয়ার হাত ধরে ঈদের নামাজে যেতাম। আর সবাই ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকত, ভাবখানা এমন যেন মেয়েরা ঈদের নামাজে আসতে পারে না।
সবসময় আব্বু আর আমার চাচারা মিলে কুরবানি দেয়। আমি, ভাইয়া, কাজিনরা মিলে সেকি আনন্দ, গরুর জন্য ঘাস তুলতাম, কাঁঠাল পাতা পাড়তাম, কিন্তু যখন গরুকে কুরবানি করা হত তখন মন খারাপ হত অনেক। ভাইয়া বুঝিয়ে বলার পর মন খারাপ চলে যেত। আরো কতশত স্মৃতি, কত আনন্দ, অলিখিত মায়ার বাঁধনের গল্প সব। এইবার সব খুব বেশি মনে পড়ছে কেন যেন।
ঈদের আগের রাতের কথা, কিছুই করতে ভাল লাগছে না। গাল ফুলিয়ে বসে আছি। না মাকে সাহায্য করছি, না নিজে কোন নতুন রেসিপি ট্রাই করছি। ঘরও গোছাই নাই। এর মাঝেই ভাইয়ার ফোন, - কিরে গাধা কি করিস? আমি - কিছু না বসে আছি। ভাইয়া - বসে থাকলে চলবে? আমি ঘরে ঢুকব কিভাবে? গেট খোল। আমি তখনো বিশ্বাস করতে পারছিলাম না, ভাইয়া কি বলছে এসব। আমি দৌড়ে গেটের কাছে গেলাম। এ যে দেখি ডাবল সারপ্রাইজ। ভাইয়া আর ভাবি দুইজন এসেছে। আমার আনন্দ আর দেখে কে, মন খারাপের মেঘগুলো সরে গিয়ে আলোকোজ্জ্বল হয়ে উঠল আর সেই সাথে বিশাল একটা রংধনু দেখা গেল আমার মনের আকাশে। আমার সত্যি বিশ্বাস হচ্ছিল না, মা তো ভাইয়াকে দেখে খুশিতে কেঁদেই দিল আর বাবা এত অবাক হল যে কি বলবে বুঝতেই পারছিল না।
ভাইয়া দিনে বেলা ডিউটি করে রাতে এসেছে, আবার ঈদের দিন রাতে বেলা ডিউটি বিকেলেই যেতে হবে। ভাইয়া ভাবিকে দেখে কি করব খুঁজে পাচ্ছিলাম না, ওদের সাথে গল্প করব,নাকি রান্না করব, না ঘর গোছাব। আমার এমন অবস্থা দেখে ভাবি বলল এখন তুই শান্ত হয়ে বোস, কিছু করতে হবে না তোকে, আমরা মেহমান না যে আপ্যায়ন করতে হবে। আমার জন্য, মায়ের জন্য, বাবার জন্য আনা উপহার গুলো একে একে সব ভাবি দিল আমাদের। আমিও কম যাই না, ওরা কি ভেবেছে ওরাই শুধু সারপ্রাইজ দিতে জানে, আমিও তখন ওদের জন্য কিনে রাখা উপহার গুলো দিলাম।
ঈদের দিনে বিকেলেই ভাইয়া ভাবি চলে গেল। মন টা আবার খারাপ হয়ে গেল তবে এখন খুব বেশি মন খারাপ লাগেনি। অল্প সময়ের জন্য হলেও তো ভাইয়া ভাবিকে কাছে পেয়েছি। এইটুকুই বোনাস আমাদের জন্য। সত্যি অনেক ভাল লাগে যখন আপন মানুষরা সুখ, দুঃখ সবসময় সাথে থাকে। প্রিয় জনদের মুখে হাসি ফোটাতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে মানুষ। মা, বাবা, ভাই, বোনদের ঠোঁটে এক চিলতে হাসি দেখবে বলে আমার ভাইয়ার মত এমন করে ছুটে আসে অনেকেই। আপনজনদের হাসিমাখা মুখ দেখবে বলে সব কষ্ট নিমিষেই ভুলে যায়। আর এখানেই তো পরিবারের সার্থকতা। আল্লাহর দেয়া শ্রেষ্ঠ নেয়ামত এই পারিবারিক বন্ধন। অটুট থাকুক এই বাঁধন।
আল্লাহ্ আমার ভাই এবং সেই সব মানুষ যারা জরুরী কাজে নিয়োজিত তাদের সবাইকে সুস্থ রাখুন, ভাল রাখুন। তাদের অক্লান্ত পরিশ্রম কবুল করুন আর সবসময় সঠিক পথে থাকার তৌফিক দিন। আমীন।
উৎসর্গ - মাহমুদ হাসান ভাইয়া
বিষয়: বিবিধ
২৪৬১ বার পঠিত, ৩৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
তোমার নামে বিচার দিতে হপে
তবে মোবাইলে বাংলা লিখা যায় না আমারটা দিয়ে। যখন মোবাইল ব্যবহার করি, তখন আর কি করবো বলো? @ হ্যারী
চমৎকার ঈদ কাটিয়েছ। একদিন আমার এখানে চলে আস। চমৎকার আড্ডা দেব।
ঈদ ভাল কেটেছিল আলহামদুলিল্লাহ্। তবে এটা গল্প।
আমি তো আসতে চাই, কিন্তু বাসা থেকে পারমিশন দেয় না। আপু আপনি বাবুদের নিয়ে চলে আসেন, সময় কাটানো যাবে এক সাথে, জ্ঞানী মানুষের সাথে সময় কাটানো অনেক বড় ব্যপার। জাযাকিল্লাহু খাইর আপুমনি।
আমি জ্ঞানী মানুষ?
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে এত কষ্ট করে পড়েছেন। আপনার জন্যও রইল অনেক শুভেচ্ছা আর দোয়া। জাযাকিল্লাহু খাইর।
আসসালামুয়ালাইকুম। কেমন আছেন? অনেক অনেক ধন্যবাদ আপু কষ্ট করে আমার অখাদ্য লেখা পড়েছেন বলে। জাযাকিল্লাহু খাইর।
আমার খবর কে রাখে তুমি কেমন আছ সেটাই নাহয় বল!
অখাদ্য আমি খাইনা ভাল লেখা বলেই পড়েছি
লিখতে থাকো আপু, আমরা পড়ে আনন্দ পাই
আপুমনি, আপনি বিজি থাকেন, সময় পান না বলে আমি আপনাকে নক করি না। এখন যেহেতু পারমিশন পেয়েই গেলুম খবর রাখার জন্য সেহেতু ইন শা আল্লাহ্ নিয়মিতই জ্বালাব।
যাজাকিল্লাহু খাইর
তোমার আজ খাবার বন্ধ, আজকে একটা্র ইদুর ধরা নিষেধ
দারাও আজ তোমাকে পিটু দিবো
=============
"ঈদের দিনে বিকেলেই ভাইয়া ভাবি চলে গেল। মন টা আবার খারাপ হয়ে গেল"
এই অংশটা দারুন লগছে......
মা শা আল্লাহ্ অনেক সুন্দর লেখনি।
মন্তব্য করতে লগইন করুন