যেন আমাদের পরম আত্মীয়
লিখেছেন লিখেছেন লুকোচুরি ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০৭:৩৫:২১ সন্ধ্যা
বাবার চাকরীর সুবাদে আমাদের বেড়ে ওঠা মূলত সরকারি কোয়ার্টারে। আর এই জন্য স্বাভাবিক ভাবেই আত্মীয়-স্বজন থেকে দূরে থাকা। আর তা ছাড়া আমার আম্মু কিংবা আব্বু কারোই ভাই নাই। তাই কাজিনদের সাথে যে মজা করার কথা তাও হয়ে ওঠেনি। এই জন্য আমার ছোট থেকে আফসোসের অন্ত নাই। আমাদের আশে পাশের সবার বাসায় মামা, চাচারা বেড়াতে আসত। আর আমাদের বাসায় কেউ আসত না, এই নিয়ে যে কত গাল ফুলিয়েছি, আর আম্মুকে কতবার প্রশ্ন করেছি যে আমার কেন কোন মামা বা চাচা নাই? সবার বাসায় ওদের মামারা, চাচারা আসে আমাদের বাসায় আসে না কেন?
আব্বুর কলিগ যারা আমাদের আশে পাশে থাকত তাদের জন্য আমার মামা বা চাচা না থাকার অভাব যেটা ছিল সেটা অবশ্য অনেকটাই কম অনুভব করতাম। আমাদের আপনজনের ভূমিকা তারাই পালন করে আসছে। আমাদের বেড়ে ওঠা এইসব মানুষদের সাথে। বিভিন্ন জেলার মানুষগুলোই যেন আমাদের পরম আত্মীয়। আমাদের সুখে দুঃখে সবসময় পাশে আছে। বিভিন্ন উৎসবে যেমন একসাথে আনন্দ করি আমরা আবার কারও কষ্টে তাদের পাশে দাঁড়াই। কেউ স্পেশাল কিছু রান্না করলে একজন আরেকজনের বাসায় পাঠায়। আমরা যারা বাচ্চা পার্টি ছিলাম তারা এক সাথে পিকনিক করতাম আর অ্যান্টিরা সেই পিকনিকের রাঁধুনি ছিলেন। কিংবা কারও বাসায় যদি অনেক মেহমান আসে তখন সব অ্যান্টিরা দল বেধে যায় তার বাসায়, ঘর গোছানো থেকে শুরু করে রান্না-বান্না সবাই মিলে আনন্দ নিয়ে করে। সত্যি অনেক আনন্দ মুখর হয় এই মুহূর্ত গুলো। আর আমরা বাচ্চারা মিলে কত রকম খেলা খেলতাম, কখনো বা মনোমালিন্য হত, গাল ফুলাতাম আর বড়রা তার সুরাহা করতেন। আরও অনেক স্মৃতি, কত আনন্দ, কত সুখ-দুঃখ আমরা সবাই একসাথে ভাগাভাগি করে আসছি এতগুলো বছর ধরে। হয়ত তা বলে কিংবা কয়েক কলম লিখে বলে শেষ করা যাবে না। এই ভালবাসা, এই বন্ধন সবসময় পরম মমতায় থেকে যাবে হৃদয়ের গভীরে।
কাল সন্ধ্যায় আম্মুর সাথে কথা বলে আমি ক্লাসে চলে গেলাম। তখন পর্যন্তও সব ঠিক ছিল। আমি ক্লাসে থাকতেই আমার এক অ্যান্টি কল করলেন আমার ফোনে, আমি কেটে দিলাম। উনি আবার ফোন করলেন, আমি বললাম যে আমি ক্লাসে। ক্লাস থেকে বের হয়ে অ্যান্টিকে ফোন করে জানতে পারলাম যে আমাদের এক আঙ্কেল মারা গেছেন। আঙ্কেলের হোম ডিসট্রিক্ট পাবনায়। মাত্র পরশুদিন ছুটি শেষে এসেছেন পাবনা থেকে। বিকেল ৫ টায় অফিসের কাজে কোথায় যেন গিয়েছিলেন। সেখানেই হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে যান। হসপিটালে নিয়ে গেলে ডক্টর বললেন যে, আর বেঁচে নেই।
শুনে খুব খারাপ লাগল। গত ঈদেও যখন বাসায় গেলাম তখনও আঙ্কেলের সাথে কথা হয়েছে। সেই ছোট থেকেই আমরা একসাথে ছিলাম। আত্মীয়র বন্ধন নাই, তবুও কত মায়া। মনে হচ্ছে নিজের কোন মানুষকেই বুঝি হারালাম।
মৃত্যুর উপর আমাদের কোন হাত নাই। মৃত্যু তার নির্ধারিত সময়েই আসবে। একটা জিনিস ভাবছিলাম, আঙ্কেল মাত্র পরশুদিন এলেন পাবনা থেকে। আর গতকাল মারা গেলেন। তার মানে হল যার যেখানে মৃত্যু আছে তাকে সেখানেই মরতে হবে। আজকে সকাল দশটায় আঙ্কেলকে পাবনায় দাফন করা হয়েছে। সবাই দুয়া করবেন আমার আঙ্কেলের জন্য। যেন আল্লাহ্ তাকে মাফ করে দেন, আর জান্নাত দান করেন। আমীন।
বিষয়: বিবিধ
১৭৫২ বার পঠিত, ৩৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আল্লাহ উনাকে জান্নাত নসীব করুন! আমীন!
তোমাকে
উনার মাগফিরাতের জন্য দু'য়া করছি
এইতো চলে গেলেন আমার একজন খালামনি যিনি আমাকে খুউব ভালোবাসতেন বিশ্বাস করুন একফোঁটা অশ্রুও চোখ থেকে ঝড়েনি কিন্তু এক বন্ধুর চলে যাওয়াতে আমি এখনও কাঁদি ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদি। আসলে কোথায় কেমন ভালোবাসা আর ভালো লাগা জন্মায় তা আমার রবই জানেন।
আসলেই চোখের পলকে সময় চলে যাচ্ছে।
প্রতিটি মুহুর্তগুলো রেকর্ড হচ্ছে। প্রতিটা সেকেন্ড প্রতিটা মিনিট প্রতিটা ঘন্টা, দিন, মাস, বছরের হিসাব সহ আমার রব যখন আমালনামাটা আমাকে দিবেন তখন আমার কি হবে? ও আমার আল্লাহ লজ্জিত করোনা ও আমার রব লজ্জিত করোনা সেইদিন। এ অধমদিগকে তাকাওয়া দান করো ও আল্লাহ।
সময় চলে যাচ্ছে জীবনের আয়ু তিলে তিলে শেষ হয়ে যাচ্ছে। সবাই দুনিয়া ছেড়ে চলে যাচ্ছে কিন্তু তাদের প্রতিটা সময় মহান রবের ডায়রিতে লিপিবদ্ধ আছে।আল্লাহ ক্ষমা করে দিও লজ্জিত করোনা।
সমস্ত মানুষই চলে যাবে এ দুনিয়া থেকে কেউ দুনিয়ার জন্য থাকতে পারবেনা দুনিয়াও কারো জন্য বাকি থাকবেনা।
সবার জীবনই আমালনামার ফ্রেমে বন্ধি থাকবে।
আর আমাদের গন্তব্যতো সেই একটাই...........
ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্নাইলাইহি রজিউন।
আল্লাহ তিনাকে জান্নাতবাসী করুন।
আমরাও সবক হাসিল করি। আমিন।
তার পর দেশে গেলাম দেখার জন্য গিয়ে দেখি আরো অনেক পরিচিত বয়স্ক মানুষ গুলো চলে গেছে বারযাকে। তাদের মৃত্যুর কথা শুনে তাদেরকে যেনো আমরা পূর্বের স্মৃতির মাঝে দেখতে পেলাম।
আল্লহ সবাইকে জাহান্নাম থেকে বাচান আর জান্নাতুল ফেরদাউস দান করুন।
পরে নিজের পিতা মাতার দিকে দেখে ভাবলাম "কবে যে হঠাৎ খবর পাবো এই মানুষ গুলোও নেই"
"রাব্বির হামহুমা কামা রব্বইয়ানি সগির"
আল্লাহ আপনার সেই নিকট আত্বিওকে ক্ষমা করুন আমিন।
লাভ ইউ কাজিন এক আল্লাহর জন্য
সত্যিই বলছি আমার কাছে যদি কোন যাহ্'রাহ থাকতো তবে তাকে আমি তোমাকে দিয়ে দিতাম।
এই ধরনের মানুষগুলোর ব্যাপারে এটাই সান্তনা যে মৃত্যুর পর আল্লাহ্ তাদের এবং আমাদের একত্রে উত্থিত করবেন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন