অদ্ভুত এক নির্বাচন। গায়েবি ভোটে বোঝাই বাক্স

লিখেছেন লিখেছেন টুটুল বিশ্বাস ১৬ মার্চ, ২০১৪, ১০:০৫:১৪ সকাল

অদ্ভুত এক নির্বাচন। গায়েবি ভোটে বোঝাই বাক্স। কোথাও আবার ভোট বোঝাই বাক্স নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের কর্মীদের ভোঁ-দৌড়। ব্যাপক জাল ভোট, কেন্দ্র দখল আর ব্যালট ছিনতাইয়ে কলঙ্কিত হয়েছে উপজেলা নির্বাচনের তৃতীয় ধাপ। সংঘাত, সহিংসতা ও ক্ষমতাসীনদের শক্তির মহড়ায় কেন্দ্রে যেতে পারেননি অনেক এলাকার ভোটাররা। কেন্দ্রে গেলেও ভোট দিতে পারেননি কেউ কেউ। অভাবনীয় জালিয়াতিতে সরকারসমর্থিত প্রার্থীদের পক্ষে বাক্স ভরা হয়েছে গায়েবি ভোটে। মিনিটে ৬ ভোট কাস্ট হয়েছে একটি কেন্দ্রে। বরিশালে একাই ৪০০ ভোট দিয়েছেন এক ছাত্রলীগ নেতা। নজিরবিহীন এ ভোটকাণ্ডে শরিয়তপুর ও বাগেরহাটে সহিংসতায় মারা গেছেন দু’জন। অন্তত সাতটি উপজেলায় কেন্দ্র দখল ও জাল ভোটের অভিযোগ এনে নির্বাচন বর্জন করেন বিএনপি ও ১৯ দল সমর্থিত প্রার্থীরা। রাত নয়টা পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন গোলযোগের কারণে ২১টি কেন্দ্রে নির্বাচন স্থগিতের কথা জানিয়েছেন। নির্বাচন কমিশন দাবি করেছে বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হয়েছে। বিরোধী জোট বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে কেন্দ্র দখল ও জাল ভোট দিয়ে নির্বাচনের ফল পক্ষে নেয়ার চেষ্টা করেছে ক্ষমতাসীন দল। তবে আওয়ামী লীগ দাবি করেছে নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হয়েছে। কুমিল্লার নাঙ্গলকোট ও চৌদ্দগ্রামে আজ আধাবেলা হরতাল আহ্বান করা হয়েছে। এ দু’টি উপজেলায় পুনরায় ভোট করার দাবি করেছেন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা। চৌদ্দগ্রামে রেলমন্ত্রী মুজিবুল হকের পিএ মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে কেন্দ্রে মহড়া ও জাল ভোট দেয়ার খবর সংগ্রহের সময় লাঞ্ছিত হয়েছেন কয়েকটি জাতীয় দৈনিকের সাংবাদিক। সাংবাদিকরা আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর কর্মীদের হামলার শিকার হয়েছেন ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা ও চাঁপাই নবাবগঞ্জে। বরিশালের মুলাদী, বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ ও শরণখোলা, শরীয়তপুর সদর, কুমিল্লার লাঙ্গলকোট ও ফেনীর দাগনভূঞায় ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি ও জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীরা। যশোরের মনিরামপুরে কেন্দ্র দখল করাকে কেন্দ্র করে বোমাবাজি ঘটে। গোলযোগের কারণে একটি কেন্দ্রের ভোট স্থগিত করা হয়। গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকরা কেন্দ্র দখল ও ব্যালট বাক্স ছিনতাই করে। তারা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের গাড়িতেও হামলা করে। বরিশালের বাবুগঞ্জে দিনভর জাল ভোট দিয়েছে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কর্মীরা। কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে ব্যালট বাক্স ছিনতাইকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ ও গুলির ঘটনা ঘটেছে। চাঁদপুরের কচুয়া ও হাজীগঞ্জে সহিংসতার কারণে পাঁচটি কেন্দ্রে নির্বাচন স্থগিত করা হয়। সেখানে স্থানীয় সংসদ সদস্য মহীউদ্দীন খান আলমগীরের কেন্দ্রে অস্বাভাবিক ভোট পড়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভোটকেন্দ্রে হামলার ঘটনা ঘটেছে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলায়। ব্যালট বাক্স ছিনতাই হয়েছে মুন্সীগঞ্জের কমলনগরে। ফেনীর দাগনভূঞায় সংঘর্ষে আহত হয়েছেন ১৫ জন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও অংশ নিয়েছে জাল ভোটের মহোৎসবে। বরিশালের হিজলায় সহকারী রিটার্নিং অফিসার জাহিদুল ইসলাম ওসিকে জাল ভোট দিতে বাধা দেয়ায় মারধরের শিকার হন। সহকারী রিটার্নিং অফিসার এর প্রতিকার চেয়ে নির্বাচন কমিশনে চিঠি দেন। দিনভর নির্বাচন কমিশনে কেন্দ্র দখলের অভিযোগ করে নির্বাচন স্থগিত করার ভূরি ভূরি চিঠি আসে। এরপরও ইসি’র দাবি দু্থ-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া সারা দেশে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হয়েছে। চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মোহাম্মদ আকবর হোসেন কেন্দ্র দখলের অভিযোগ করে দাগনভূঞার ২৫টি কেন্দ্র স্থগিত করতে ইসিকে আবেদন জানান। এছাড়াও ভোলা সদরের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মোহাম্মদ ফারুক মিয়া ভোলার সদরের ভোটগ্রহণ বন্ধ করার আবেদন জানান। এদিকে, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে দিনভর একের পর এক নানা অনিয়মের অভিযোগ এলেও কার্যকর তেমন কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি কর্তৃপক্ষকে। শনিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ বলেন, বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া সারা দেশে সুষ্ঠুু ও শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছে। মাঠ পর্যায় থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে মাত্র কয়েকটি স্থানে। নিয়ন্ত্রণবহির্ভূত ঘটনা ঘটায় দেশের কয়েকটি কেন্দ্র ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। এর বাইরে সার্বিক পরিস্থিতি ছিল সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ। বিএনপিসহ প্রার্থীদের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে শাহনেওয়াজ বলেন, অভিযোগ আসতেই পারে। আমাদের দেখতে হবে অভিযোগের সত্যতা আছে কিনা। রিটার্নিং কর্মকর্তারা সার্বিক বিষয়টি দেখছেন এবং আমাদের জানাচ্ছেন। এছাড়া, আমরা সারাদিনই গণমাধ্যমে প্রচারিত সংবাদ দেখেছি। কেন্দ্র দখল ও সহিংসতার ঘটনায় ২১টি কেন্দ্র স্থগিত করা হয়েছে। এগুলো হলো- চাঁদপুরের কচুয়ায় ৪টি, হাজীগঞ্জে ২টি, রাজশাহীর চারঘাটে ১টি, ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায় ৩টি, কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে ১টি, যশোরের মনিরামপুরে ১টি, লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে ১টি, ফেনীর দাগনভূঞায় ২টি, কুমিল্লার লাঙ্গলকোটে ২টি কেন্দ্র।

বাগেরহাটে ৫টি উপজেলায় আওয়ামী লীগের কর্মীরা কেন্দ্র দখল, এজেন্টদের বের করে দেয়া, ভোটারদের কেন্দ্রে আসতে বাধাসহ হামলায় এক শিবির নেতা নিহত ও অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। ৫ উপজেলার বিভিন্ন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ কর্মীরা চেকপোস্ট বসিয়ে প্রতিপক্ষ কোন প্রার্থীর ও সাধারণ ভোটারদের কেন্দ্রে ঢুকতে দেয়নি। কেন্দ্রের আশপাশে কোন প্রার্থীর কর্মী-সমর্থককে দেখামাত্র হামলা চালিয়ে মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা। এ ঘটনার প্রতিবাদ ও পুনরায় ভোটগ্রহণের দাবিতে আজ ৫ উপজেলায় সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে জেলা বিএনপি। অন্যদিকে, শিবির নেতা নিহতের প্রতিবাদে জেলা শিবির সভাপতি হাফেজ আজমল হোসেন রোববার জেলাব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছেন। শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে শহরতলীর কাড়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ ভোট কেন্দ্রের কাছে সরকারি পিসি কলেজ শিবির নেতা মো. মানজারুল ইসলামকে (২৪) আওয়ামী লীগের ক্যাডাররা ধরে মেগনীতলা এলাকার প্রকাশ্য রাস্তায় ইট দিয়ে মাথা থেঁতলে ও কুপিয়ে হত্যা করে। পরে এলাকাবাসী তার মরদেহ উদ্ধার করে বাগেরহাট সদর হাসপাতালে পাঠায়। নিহত মানজারুল সরকারী পিসি কলেজের অর্থনীতি (সম্মান) ২য় বর্ষের ছাত্র ও কচুয়া উপজেলার চরটেংরাখালী গ্রামের দিনমজুর শেখ আবজাল হোসেনের ছেলে। সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আলী আজম খান জানান, সকালে মেগনীতলা এলাকায় প্রথমে শিবিরের লোকজন আওয়ামী লীগ কর্মী রফিকুল ইসলামকে (৫৫) কুপিয়ে আহত করলে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত ও শিবির নেতা মানজারুল মারা যান। তবে সংঘর্ষে আহত রফিকুল ইসলাম সকালে বাগেরহাট সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নিজেকে ১৯ দলের সমর্থক বলে দাবি করেন। তার অবস্থা অবনতি হওয়ায় তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার বাড়ি শহরতলির শিংড়াই এলাকায়। এদিকে ভোট চলাকালে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ তুলে দুপুর পর্যন্ত শরণখোলা, মোড়েলগঞ্জ ও বাগেরহাট সদর ও রামপালে ৭ চেয়ারম্যান প্রার্থী পৃথক সংবাদ সম্মেলন করে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন। তারা হলেন- সদর উপজেলায় বিএনপি সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী সৈয়দ নাসির আহম্মেদ মালেক, বিকল্প ধারার চেয়ারম্যান প্রার্থী বেগ মাহতাব উদ্দিন, শরণখোলায়া বিএনপি সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী খান মতিয়ার রহমান, একই উপজেলার ইশা আন্দোলনের চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. সেকেন্দার আলী তালুকদার, মোরেলগঞ্জে বিএনপি সমর্থক চেয়ারম্যান প্রার্থী, মো. আব্দুল মজিদ হাওলাদার ওরফে মজিদ জব্বার, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান প্রার্থী সোমনাথ দে ও রামপাল উপজেলায় বিএনপির প্রার্থী শেখ হাফিজুর রহমান তুহিন। এ ৫টি উপজেলার আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থীরা এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, বিএনপিসহ অন্য দলের প্রার্থীরা নিশ্চিত পরাজয় জেনে কাল্পনিক অভিযোগ তুলে ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে।

শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সহিংসতায় রিপন মাঝি (২৬) গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। শনিবার উপজেলার ভূমখাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ব্যালট বাক্স ছিনতাইকালে পুলিশ ১৮ রাউন্ড গুলি ছোড়ে। বিকাল ৩টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয় সূত্র ও পুলিশ জানায়, বিকাল ৩টার দিকে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে একদল দুর্বৃত্ত ৬৭নং ভূমখাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে প্রবেশ করে। তারা ব্যালট বাক্স ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালায়। এ সময় প্রিজাইডিং কর্মকর্তা নরেন্দ্র নাথ মৈত্র পরিস্থিতি শান্ত করতে পুলিশকে গুলি ছোড়ার নির্দেশ দেন। পুলিশ এ সময় ১৮ রাউন্ড গুলি ছোড়ে। এ সময় ভূমখাড়া গ্রামের মনছুর মাঝির পুত্র রিপন মাঝি (২৬) গুলিবিদ্ধ হলে তার স্বজনরা তাকে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে আসে। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত রিপন মাঝি পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী জাকির হোসেন বেপারীর পোলিং এজেন্ট ছিলেন। সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন শরীয়তপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এহসান শাহ। ওই ভোট কেন্দ্রে সেনা, বিজিবি ও র‌্যাব মোতায়েন করা হয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এহসান শাহ বলেন, একদল দুর্বৃত্ত ভোট বাক্স ছিনতাইয়ের চেষ্টা চালায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রিজাইডিং অফিসারের নির্দেশে পুলিশ ১৮ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুুড়ে। পরবর্তীতে উভয় পক্ষের সংঘর্ষ নির্বাচন কেন্দ্রের বাইরে ছড়িয়ে পরলে প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

দীর্ঘ প্রায় ৭ বছর পর জনগণের অংশগ্রহণে উপজেলা নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। তবে ক্ষমতাসীন ক্যাডাররা অস্ত্র নিয়ে কেন্দ্র দখল, ভোটারদের বাধা, মারধর, বাড়িঘর ভাঙচুর, কারখানায় আগুন দিয়ে ভোট কেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য ব্যাপক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়া ভোটের শুরুতেই বিভিন্ন কেন্দ্রে আওয়ামীগ সন্ত্রাসীরা বিরোধীরে ওপর হামলা চালিয়ে শিবির নেতাসহ ১০ জনকে পিটিয়ে আহত করে। ভোট গ্রহণের শুরুতেই বড় দারোগার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উজির আলী প্রাথমিক বিদ্যালয়, নুনাছড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়, পন্থিছিলা হাই স্কুল, কেদারখিল প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাস্টারপাড়া ও মহানগর কেন্দ্রে অবস্থান নিয়ে ভোটারদের প্রবেশ করতে বাধা প্রদান করে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর কর্মীরা। বিভিন্ন অভিযোগ করার পর বিজিবি ও র‌্যাব সদস্যরা ঘটনাস্থলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সন্ত্রাসীরা কেন্দ্র থেকে সরে গেলেও কেন্দ্রে প্রবেশে গ্রাম্য রাস্তাগুলোর মধ্যে অবস্থান নেয়। ভোটাররা আরও জানায়, সন্ত্রাসীরা অস্ত্র নিয়ে তাদের বুকে অস্ত্র ধরে ভোট কেন্দ্রে যেতে বাধা দিলে ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে না গিয়ে বাড়িতে চলে যেতে বাধ্য হয়। সকাল ১১টার পর সন্ত্রাসীরা ফেদায়নগর গ্রামে প্রবেশ করে বিএনপির সমর্থক মো. হাসানের মোমবাতি কারখানা ও পোল্ট্রি ফার্মে আগুন ধরিয়ে দিলে এবং এলাকাবাসী আগুন নিভানোর চেষ্টা করলে সন্ত্রাসীরা তাদের বাধা প্রদান করায় উক্ত কারখানা ও ফার্মটি পুড়ে ছাই হয়ে যায়। সন্ত্রাসীরা উক্ত এলাকার ইউপি স্বেচ্ছাসেবক দলের নাজিমের বাড়ি, গোলাম মাওলার বাড়ি ও মোজাম্মেলের বাড়িসহ বেশ কয়েকটি বাড়ি ভাঙচুর করে। বরৈয়াঢালা উজির আলী কেন্দ্রে প্রবাসী দিদারুল আলম চৌধুরী ভোট দিতে গেলে সন্ত্রাসীরা তাকে দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে এলোপাতাড়ি মারধর করে আহত করে। এসময় সে অজ্ঞান হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে পুলিশ তাকে সীতাকুণ্ড হাসপাতালে ভর্তি করলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে চমেক হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। তাছাড়া সীতাকুণ্ডের প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের প্রার্থী কাপ-পিরিচের লোকজন অন্যান্য প্রার্থীদের এজেন্টদের মারধর, ভোটারদের বাধা প্রদান এবং হুমকি দিয়েছে বলে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মোস্তফা কামাল, বিএনপি সমর্থিত কাজী সালাউদ্দিন অভিযোগ করেন। এদিকে পৌরসভাস্থ দত্তবাড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সোহাগ নামের এক ব্যবসায়ী তার স্ত্রীসহ ভোট দিতে গেলে পুলিশ তাকে আটক করে। এদিকে কুমিরা হাই স্কুল কেন্দ্রে সকাল ৯টায় শিবির নেতা রবিউল হোসেনকে আওয়ামী লীগের কর্মীরা মারধর করে। বিএনপি সমর্র্থিত টেলিফোন, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হেলিকাপ্টার, জামায়াত সমর্থক ঘোড়ার পক্ষ থেকে ২২টি কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ সমর্থক কাচ-পিরিচের লোকজন ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে প্রবেশ করতে বাধা প্রদান, এজেন্টদের বের করে দেয়ার অভিযোগে ভোটগ্রহণ বন্ধ করার দাবি জানালেও প্রশাসন কেন্দ্রগুলো বন্ধ করেনি। এছাড়া ছলিমপুর, ফকিরহাট ভোট কেন্দ্রে টেলিফোন প্রতীকের এক এজেন্টকে সকাল আটটায় কেন্দ্র থেকে অপহরণ করে অজ্ঞাত স্থানে আটক রাখে এবং হেলিকপ্টার এজেন্টকে বের করে দেয়। এ ব্যাপারে টেলিফোন প্রতীকের সমন্বয়কারী কাজী মহিউদ্দিন ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মোস্তফা কামাল কেন্দ্রের ভোট বন্ধ রাখার লিখিত অভিযোগ করেছেন। অপর দিকে বিকাল ৩টায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা কমিশনার মামুনের নেতৃত্বে পন্থিছিলা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে জাল ভোট দেয়ার সময় মাছরাঙ্গা টিভি চ্যানেলের ক্যামরাম্যান ছবি তুলতে চাইলে তাকে মারধর করে ও ক্যামরা ভাঙচুর করে। এতে ২ জন সাংবাদিক আহত হয়। এদিকে সোনাইছড়ি ইউনিয়ন কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার আশরাফুজ্জামান কেন্দ্রে জাল ভোট ও অনিয়ম করার সময় সাংবাদিকরা কথা বলতে চাইলে তিনি কয়েকজন পরিদর্শককে নাজেহাল করার চেষ্টা করে।

রাজশাহীর তিনটি উপজেলার মধ্যে দুর্গাপুর ও চারঘাটে কয়েকটি কেন্দ্রে বিচ্ছিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। এ সময় ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নিয়ে সিল মারার ঘটনায় চারঘাট উপজেলার একটি কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়। এ ছাড়া জেলার দুর্গাপুরে ছয়টি ভোটকেন্দ্রে যেতে বিএনপি সমর্থকদের বাধা দেয়া ও মারপিটের অভিযোগ উঠেছে। তবে রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ীতে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ হয়েছে। এ উপজেলার কোন কেন্দ্রে অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বেলা সাড়ে ৩টার দিকে একরামুল হকের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ফখরুল ইসলামের সমর্থকরা ভোটকেন্দ্র দখলের চেষ্টা করছিল। এ সময় বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আবু সাঈদ চাঁদের সমর্থকরা বাধা দিতে গেলে সংঘর্ষ বাধে। এ সময় বিএনপি সমর্থকরা একরামুল হককে কুপিয়ে জখম করে। পরে তাকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ছাড়া দুর্গাপুরে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের বাধা ও মারপিটে অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। তাদের দুর্গাপুর হাসপাতাল ভর্তি ও স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধা দেয়ায় দুর্গাপুরে দু’জনকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বিএনপি মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী গোলাম সাকলায়েন বলেন, উপজেলার ধর্মপুর, বেলঘরিয়া, কয়ামাজমপুর, পাচুবাড়ী, শিবপুর, নান্দিগ্রাম ভোটকেন্দ্রের বাইরে তার সমর্থকদের ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধা ও মারপিট করা হয়েছে। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নজরুল ইসলাম। এদিকে জেলার চারঘাটে বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর এজেন্টকে মারপিট করে বের করে দেয়া হয়েছে, ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নেয়া ও পিজাইডিং অফিসারকে লাঞ্ছিত করায় গোপালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। বিকাল পৌনে চারটায় পিজাইডিং অফিসার এ কে এম ফজলুল বারি ভোট গ্রহণ স্থগিত করেন।

নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর এজেন্টদের বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া, ব্যাপক জাল ভোট প্রদান ও বোমা বিস্ফোরণ করে আতঙ্ক সৃষ্টিসহ বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনার মধ্য দিয়ে গতকাল সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত জেলার লোহাগড়া উপজেলাা ৮১টি কেন্দ্রে এ ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ৮টায় ভোট গ্রহণ শুরু হলে কাশিপুর, ইতনা, নোয়াগ্রাম, নলদী, শালনগর, লক্ষ্মীপাশা, লোহাগড়া, কোটাকোল, মলিকপুর ও জয়পুর ইউনিয়ন এবং লোহাগড়া পৌরসভার অধিকাংশ কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী সৈয়দ ফয়জুল আমীর লিটুর সমর্থকরা প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী জি এম নজরুল ইসলামের এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দিয়ে ব্যাপক জাল ভোট দেয় বলে অভিযোগ করেন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী। আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী সৈয়দ ফয়জুল আমীর লিটুর ইউনিয়নের নোয়াগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে বেলা সাড়ে ১১টায় পরপর ৫টি বোমার বিস্ফোরণ ঘটালে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিলে প্রায় ৩০ মিনিট ভোট গ্রহণ বন্ধ থাকে। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করলে পুনরায় ভোট গ্রহণ শুরু হয়।

দৈনিক লোক সমাজ থেকে

বিষয়: বিবিধ

১৩৩৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File