গল্প না, কল্পনা
লিখেছেন লিখেছেন রবিউল করিম বাবু ১১ জানুয়ারি, ২০১৪, ০৪:৩৮:১৩ বিকাল
আমি তার টেবিলের সামনের কালো চেয়ারটায় বসে থাকি অকারনেই। কিছুটা বিরক্তি নিয়েই দায়সারাভাবে তিনি জিজ্ঞেস করেন- কী খবর বাবু সাহেব, কাজ টাজ কেমন চলতেছে আপনার?
= ভালো
এক শব্দের সংক্ষিপ্ত উত্তর শেষ হয়ে যায় নিমিষেই। নতুন কোন প্রশ্নও আসেনা আর। নীরবতা। তিনি অস্বস্তিবোধ করেন। আমি করিনা। কী এক অদ্ভুত উত্তেজনায় মন্ত্রমুগ্ধের মতো তার কালো চোখদুটোর দিকে তাকিয়ে থাকি অনেকক্ষন। তার কল আসে ফোনে। আমি উঠে চলে যাই। দাড়িয়ে থাকি আড়ালে। তিনি মুখটা হাসি হাসি করে মাথা দুলিয়ে দুলিয়ে কার সাথে যে কথা বলেন মোবাইলে, বলতেই থাকেন। দৃশ্যটার দিকে তাকিয়ে বুকের বাম পাশটা সূক্ষ ব্যথায় চিনচিন করে আমার। সেই চিনচিন শব্দটা তিনি শুনতে পাননা। অফিস শেষে বাসায় ফিরি। টিভি দেখি, খাই অতপর: শুয়ে পড়ি বিছানায়। তন্দ্রা আসে একসময় কিংবা আসেনা। আধো ঘুম আধো জাগরণে বন্ধ হয়ে থাকা ক্লান্ত দুচোখের নীল পর্দায় তখনও ভেসে থাকে তার অদ্ভুত সুন্দর চোখদুটো। তিনি টের পান না। পাবেন না কোনওদিন আমি জানি। কিন্তু আমি তাকে বলবো, আজ এক্ষুনি।
ঘুম ভেঙে যায় আমার। রাতের মধ্যে ঘুম আসেনি, রাতটা এসেছিল ঘুমের মধ্যে। আসলে আজ আমার ছুটির দিন ছিল তাই দুপুরে পত্রিকা পড়তে পড়তে একসময় ঘুমিয়ে পড়েছিলাম স্বপ্ন দেখছিলাম এতক্ষন। তার সামনে বসে থাকার সৌভাগ্য কোনওদিনই হয়নি আমার। তার মশ্রিণ চুল, সিগ্ধ চোখ, লাল রঙের প্রলেপবিহীন ঠোঁট- কী যে সুন্দর লাগে তাকে! বলাও হয়নি কোনওদিন। আমি বিছানা ছেড়ে উঠে জানালা খুলি। বাইরে ঠান্ডা বিকেল। তাপহীন মিঠে কড়া রোদ। পিচঢালা সড়কে উদ্দেশ্যহীন হাটতে হাটতেই পার্কে যাই। পার্কের ভেতর কেড্স পায়ে টি শার্ট গায়ে ভদ্রলোক দৌড়ায়, জগিং করে। ঝোপঝাড়ের ফাঁক ফোকড়ে গা ঘেঁসে বসে থাকা অনেকজোড়া তরুণ-তরুণী গল্প করে, হাসে, বাদাম খায়। স্থির মোলায়েম বাতাস ফুঁড়ে শান্ত পায়ে হাটতে হাটতে আমি একটা সানের বেঞ্চে গিয়ে বসি। পাশেই এক স্বাস্থ্যবান গাছের দীর্ঘ কালো ছায়ার শেষাংশ এসে ঢেকে দেয় আমার কোল পর্যন্ত। সেই ছায়ার আশ্রয়ে গাছের গোড়ায় ছড়িয়ে থাকা মোটা চ্যাপটা শেকড়ের উপর পাশাপাশি ঘনিষ্ট হয়ে বসে দুজন যুবক যুবতী খুনসুটি করে-প্রেম করে-ভালোবাসা করে। সাদা শাড়ি, লাল ব্লাউজ, লাল টিপ, দীর্ঘ মশ্রিন চুলের ঝকমকে যুবতীর পাশে কোঁকড়া চুলের চঞ্চল যুবক। দৃশ্যটা সুন্দর, অপূর্ব। কয়েকটা তুলি একটা ইজেল একটা ধূসর ক্যানভাস! আমার হাত নিশপিশ করে একটা ছবি আকার জন্য। ভালোবাসার ছবি। আমি চোখ ফিরিয়ে নেই। নিজের যাবতীয় সীমাবদ্ধতা নিয়েও তাকিয়ে থাকি সীমাহীন আকাশের দিকে। অনেকক্ষন। তারপর দ্রুত আবার হাটি ইট বিছানো রাস্তায়। একা, ধীর পায়ে হাটতে থাকা এক অসম্ভব রুপসী তরুনীকে পেছনে ফেলে আমি সামনে এগিয়ে যাই। মেয়েটা জলতরঙ্গের মতো খিলখিল শব্দে হেসে উঠে। কী যে মিষ্টি হাসি, কেন যে হাসে! হাসি থামিয়ে সে ডাকে আমার নাম ধরে- বাবু! এ্যাই বাবু আমি এখানে..। আমি চমকে উঠে পেছন ফিরে তাকাই। না আমাকে না। সে অন্যদিকে তাকিয়ে অন্য এক বাবুকে হাত উচিয়ে ডাকে। ওই বাবু তখন গাল ফুলিয়ে সেই তরুনীর সামনে এসে দাড়ায়। আমি হাসতে থাকি। আমার মন খারাপ হয়না। একটুও না।।
বিষয়: সাহিত্য
১৪৪০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন