মিডিয়ার অপপ্রচারের উপসংহার ও জামায়াত প্রসঙ্গ
লিখেছেন লিখেছেন ডেমন ২০ জানুয়ারি, ২০১৪, ০৯:৪৬:৫৪ রাত
আচ্ছা ধরুন আপনার গৃহে সফি মিয়া চুরি করেছে। আপনি প্রমাণসহ তাকে ধরে ফেললেন। আপনার গৃহ থেকে লাখ খানেক টাকা আর দুই ভরি স্বর্ণালংকার খোয়া গেছে। এখন আপনি কি করবেন? সফি মিয়ার বিরুদ্ধে অবশ্যই মামলা করবেন। আপনার প্রমানাধি কোর্টে উপস্থাপন করবেন, বিচারকের কাছে যথার্থ রায় চাইবেন। তাইতো? এটাই তো উপযুক্ত প্রক্রিয়া চোরকে শাস্তি দেওয়ার অথবা জরিমানা করার। শুধু উপযুক্ত না এটাই হল দেশের সিদ্ধ আইনি প্রক্রিয়া। অপরাধীর বিরুদ্ধে আপনার অ্যাকশন নেয়ার এটাই একমাত্র বৈধ প্রক্রিয়া। তাকে পিটিয়ে মারার বা কোন আইনি প্রক্রিয়া অবলম্বন না করে নিজেই অপরাধীর বিচার করার বৈধতা রাষ্ট্র আপনাকে দেয়নি। তাই আপনাকে অবশ্যই আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই যেতে হবে। এখন সফি মিয়া আপনার গৃহে চুরি করেছে, টাকা নিয়েছে, স্বর্ণালংকার নিয়েছে। আপনি সফি মিয়ার বিরুদ্ধে কোন আইনি ব্যবস্থা না নিয়ে পরের রাতে সফি মিয়ার গৃহে সাঙ্গপাঙ্গসহ ডাকাতি করে তার গৃহের প্রায় সব কিছুই হাতিয়ে নিলেন। আপনি যা পেলেন আর যা হারালেন তার মধ্যে বিস্তর তফাৎ। একবছরে যা আয় করেন তার চেয়ে আপনাকে অনেক বেশি দিল সফি মিয়ার চুরির পরে আপনার ডাকাতি। ভালইতো হল। চুরি হলেও সম্পদ বাড়ল। কিন্তু আপনি যে পন্থাটা অনুসরন করেছেন সেটা কি আপনার রাষ্ট্র আপনাকে অনুমোদন দিয়েছে? আইনি ভাবে কি এটা মোটেও বৈধ? আচ্ছা তা নাহয় বাদই দিলাম। মনুষ্যত্ব কি আপনাকে একটুও ভাবিয়ে তুলবে না? মনুষ্যত্ব, মানবতা বা সততা আপনাকে কি পীড়া দেয় না এই কাজ করাতে? অবশ্যই দেয়। আপনি যদি ‘মানুষ’ হয়ে থাকেন। এই পথ আপনাকে লাভবান করলেও কখনও নৈতিক সমর্থন দিবে না। তাই চুরির মাল ডাকাতি করে আনাটা ভদ্রতা নয়, নয় সততার বহিঃপ্রকাশ।
এবার আসি ইতিহাসের দিকে। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চের বঙ্গবন্ধুর ভাষণের মধ্য দিয়েই আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়ে গিয়েছিল। শেষ হল ১৬ই ডিসেম্বরে বিজয়ের মাধ্যমে। আজ প্রায় তেতাল্লিশ বছর পেরিয়ে গেছে আমরা স্বাধীন হয়েছি। স্বাধীনতার ইতিহাস সর্বজন বিদিত নয় এটা পরম সত্য। স্বাধীনতা যুদ্ধে জামায়াতের ভূমিকা কি ছিল বা কোন পর্যায়ের ছিল এটাও প্রশ্নবিদ্ধ। স্বয়ং শেখ মুজিব এটাকে প্রশ্নবিদ্ধ রেখে গেছেন। শীর্ষ একশো পঁচানব্বই জন যুদ্ধাপরাধীর তালিকায় কেন জামায়াত নেতাদের নাম আসেনি তাও আমার অকর্মণ্য নিউরনে পরিষ্কার না। তাই মুক্তিযুদ্ধে জামায়াতের ভূমিকা এখন মিডিয়া যেভাবে প্রচার করছে তা বিশ্বাস করার কোন উপযুক্ত যুক্তি খুজে পাইনা। অনেকটা ৫ই মে হেফাজত অভিযানের মত মনে হয়। যেখানে মানুষ মারা মারা গেল সর্বসাকুল্যে সত্তর থেকে আশি জন সেখানে রিউমর হল আড়াই থেকে তিন হাজারের মত। জামায়াত স্বাধীনতার বিরুদ্ধে ছিল এটা আমি মনে প্রানে বিশ্বাস করি। আর এও বিশ্বাস করি সেটা হয়ত তাদের দিক থেকে দেশপ্রেম, দেশের প্রতি ভালবাসা। হতে পারে সে ভালবাসা ছিল ভুল।
এখন আসি বর্তমানে। উপরের চুরি আর ডাকাতির সাথে জামায়াত আর জামায়াত বিরোধীদের প্রচণ্ড রকমের মিল রয়েছে। যুক্তির খাতিরে আমি ধরে নিলাম জামায়াত মুক্তিযুদ্ধের সময় নাশকতা করেছে, তাণ্ডব চালিয়েছে, গণহত্যা করেছে, ধর্ষণ করেছে, সংখ্যালঘুর উপর আক্রমণ চালিয়েছে। তাহলে গত চল্লিশ বছরেও আমরা কেন জামায়াতের মত একটা সন্ত্রাসী দলকে বিচারের কাঠগড়ায় দাড় করিনি? এই প্রশ্নের উত্তর সবাই রাজনৈতিক ভাবে এড়িয়ে যায়। যাওয়াটাই স্বাভাবিক। কারণ জামায়াতের ‘সরবত’ পান করেনি এমন কেউ যে নাই। আর বাঙালী ‘রাজনীতি’ ভাল পারে বৈকি। আচ্ছা তারপরেও প্রশ্নটা ভুলে গেলাম। বিচার শুরু হয়েছে। একজনের বিচার কার্যকর হয়েছে। ভাল কথা। কাল ইতিহাস কিছুটা ধূসর হতে শুরু হয়েছে। বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন করার সুযোগ এখানেও রেখে দিলেন। তারপরও বলব যেটাই করছেন, হয়ত ভুল করছেন, অন্যায় করছেন তবুও ‘আইনি’ কথাটার কিছুটা ভ্যালু রেখেছেন।
এবার আসি মূল প্রসঙ্গে। জামায়াত শিবিরের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের প্রসঙ্গ। প্রসঙ্গ প্রাসঙ্গিক। যারা জামায়াত বিরোধী বিশেষ করে আমি দুই শ্রেণীকে উল্লেখ করব। একটা হল মিডিয়া, আরেকটা হল গণজাগরণ মঞ্চ। আ’লীগ আর বামদের এখানে উল্লেখ করলাম না। তাদের বিরোধিতাটা রাজনৈতিক কারনে হতে পারে তাই। কিন্তু মিডিয়া আর গণজাগরণ মঞ্চ নিজেদের রাজনৈতিক সমর্থক বলে কখনও স্বীকার করে না। তাদের বক্তব্য হল আমরা নিরপেক্ষ নই, আমরা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে, সত্যের পক্ষে। আচ্ছা ধরে নিলাম। যেভাবে নিজেদের আইডিনটিফাই করিয়েছেন সেভাবেই গ্রহণ করলাম। আপনারা জামায়াতের স্বঘোষিত বিরোধী। আগেই ধরে নিয়েছিলাম জামায়াত যুদ্ধাপরাধী। আচ্ছা এখন তাদের বিচারটা কোন ভাবে হওয়া উচিত। অবশ্যই যেভাবে আদালতের মাধ্যমে হচ্ছে, সেভাবেই। অবশ্য আরও স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে হবে। কারণ একটা অন্যায়কে বিচারের কাঠগড়ায় দাড় করিয়ে আরেকটা অন্যায় করা অবশ্যই ঘৃণ্য। কিন্তু হচ্ছেটা কি? আপনারা জামায়াত বিরোধী। আপনাদের মতে জামায়াত অপশক্তি। তাদের নিঃশেষ করে দেয়া উচিত। তাহলে করুন। সমস্যা কি? কিন্তু নিঃশেষ করবেন অবৈধ পথে, অনেকটা চুরি করা মালের খেসারত ডাকাতি করে আদায় করবেন তাও আবার লাভসহ সেটাতো জাতি মেনে নিবে না, সত্য সমর্থন করবে না, আইন বৈধতা দিবে না, ইতিহাস সাদা পাতায় স্থান দিবে না। নিঃশেষ করবেন সঠিক পথে করুণ। জামায়াতকে নিষিদ্ধ করুণ, জামায়াতের সকল কার্যক্রম বন্ধ করুণ, অর্থের জোগান বন্ধ করুণ। তা না করে আপনারা বেছে নিয়েছেন অবৈধ পন্থা। নিয়েছেন অপপ্রচারের অসৎ সুযোগ। তাহলে আপনারাতো জামায়াতের চেয়েও খারাপ, অনেক বড় অপশক্তি। একদিন হয়ত জাতি স্লোগান তুলবে আপনাদেরও বিরুদ্ধে। জাতির প্রগতিশীলতার চেয়ার দখল করে যাচ্ছেতাই করবেন এটা হবে না। প্রগতিশীলতার আসল রূপ জাতির কাছ থেকে ছিনতাই করলে জাতি আপনাদের ক্ষমা করবে না।
প্রায় দেড় দুমাস আগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা শিবিরের একটি মিছিল বের হয়। মিছিলটি বের হতেই র্যাহব পুলিশ এসে পরে। প্রায় সবাই ছিল সিভিল পোশাকে। আর হাতে ছিল ভয়ংকর প্রাণঘাতী অস্ত্র। এই অস্ত্র পুলিশ বা র্যাবব যথারীতি ব্যবহার করেনা। ঐ অস্ত্র দিয়েই সিভিল পোশাক পরেই গুলি করার হল মিছিলে। একজন মারা গেল। প্রথম আলো কিছুক্ষনের মধ্যেই সিভিল পোশাক পরা ভয়ংকর অস্ত্র হাতে এক পুলিশ সদস্যের ছবিসহ তাদের অনলাইন পোর্টাল আর ফেসবুক ফ্যান পেজে আপলোড করল। শিরোনাম হল। ‘ভয়ংকর অস্ত্র হাতে শিবির ক্যাডাররা। এদের কাছে এই অস্ত্র আরও কত আছে?’ পরে যখন অনেকেই মূল ভিডিও সহ কমেন্ট করল প্রথম আলো ঐ লিংক রিমুভ করতে বাধ্য হয়েছিল। এখন আমার কথা হল শিবির স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি। তাদের এই বাংলার মাটিতে মিছিল করার অধিকার নেই। ধরে নিলাম আমি অনেক রুক্ষ একজন মানুষ। তাই যুক্তিতে দেখালাম শান্তিপূর্ণ মিছিল হলেও শিবিরের মিছিলে ওরকম সরাসরি গুলি করে একজনকে মেরে ফেলা ঠিকই হয়েছে। কারণ আমি স্বাধীনতার পক্ষে। আমি মানুষের চাইতে রুক্ষতায় দুই ডিগ্রি উপড়ে। কিন্তু এইভাবে মিথ্যা খবর দিয়ে শিরোনাম করে নিউজ ছাপিয়ে আমি আমার নৈতিকতার কোন দিকটি উন্নত করলাম? প্রথম আলো ‘বদলে যাও, বদলে যাও’ এর মানে কি? নৈতিকতার নতুন কোন সংজ্ঞা? নাকি মিথ্যাই চির সুন্দর? জামায়াত শিবিরের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ, পরোক্ষ ও কৌশলে বাংলাদেশের প্রায় সকল মিডিয়া অপপ্রচারে লিপ্ত। এটা অতিমাত্রায় সত্যি। নিজ চোখে দেখেছি, বিবেক দিয়ে বিচার করেছি। এই মিডিয়া গুলোই দাবী করে তারা সত্যের পথে অটল, প্রগতিশীলতার চর্চায় ব্যস্ত, আর মনুষ্যত্ব কায়েমে যুদ্ধরত। কিন্তু শত্রুর বিরুদ্ধে এইভাবে মিথ্যা অভিযোগ এনে, মিথ্যা প্রচার করে কোন সত্যে তারা অটল, কোন প্রগতিশীলতা চর্চায় তারা ব্যস্ত আর কোন মনুষ্যত্ব কায়মে যুদ্ধরত আমার আর বুঝার বাকি নেই। এইসব মিডিয়া ভণ্ড ছাড়া আর কিছুনা সবাই বুঝে এটাও বিশ্বাস করি। হ্যা, জামায়াত অপশক্তি, জামায়াতকে নির্মূল করতে হবে, করুণ। তারা যদি মানুষ মারে সেটা ফলাও করে প্রচার করুণ, তারা যদি বাস ভাঙ্গে সেটা বড় ছবি সহ প্রথম পাতায় প্রকাশ করুণ মানুষকে সচেতন করুণ। জানিনা মিথ্যা দিয়ে কোন সত্যিকে মুক্ত করতে চাচ্ছেন! আমি পত্রিকা পড়ার অভ্যাস ত্যাগ করেছি অনেকদিন হয়েছে, আজকাল টিভি দেখাও বাদ দিয়েছি। শুধু এইসব ভণ্ডামির জন্য। সাধারণ জনগণও আমার পথে হাঁটছে। হয়ত একদিন আমাদের পত্রিকা পড়ার অভ্যাস ফিরে পাবার জন্য, টিভি দেখার মত খবরের জন্য আপনাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামবো আমি এবং অনেকেই।
গণজাগরণ মঞ্চ মঞ্চায়িত হল ফেব্রুয়ারির পাঁচ তারিখ। তার কিছুদিনের মধ্যে দুর্বৃত্তের হাতে মারা যায় রাজিব হায়দার। আচ্ছা রাজিবকে কে মেরেছে আপনি দেখেছেন? আমি? গণজাগরণ মঞ্চের কোন কর্মী? কোন সাধারণ জনতা? না, এমন কেউ নেই যে দেখেছে। তাহলে কিভাবে খুন হওয়ার সাথে সাথেই সরাসরি শিবিরের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুললেন? হ্যা, হতে পারে শিবির মেরেছে। যখন রাজিব মারা যায় তখন তার অনেক বড় একটা আইডিনটিটি ছিল গণজাগরণ মঞ্চ। আর গনজাগরন মঞ্চ গড়েই উঠেছে শিবিরের বিরুদ্ধে। তাই শিবির রাজিবকে হত্যা করতে পারে। এটা অনুমেয়। কখনই ডিরেক্ট নয়। শিবিরকে সন্দেহ করে তদন্ত চলতে পারে, তদন্তের পরে শিবিরের সম্পৃক্ততা পেলে তখনই কেবল বলবেন শিবির হতা করেছে। কিন্তু খুন হওয়ার সাথে সাথেই কিভাবে বললেন আমি বুঝিনা। আর আপনারা যেহেতু প্রগতিশীলের সর্বোচ্চ পর্যায় দখল করে নিয়েছেন তাই আপনাদের এই বক্তব্য প্রগতিশীলতার কোন পাতায় খুজে না পেয়ে ভয় হয়, ভয়ংকর ভয় হয়, ভয় হয় সত্যকে হারাবার। তারপরও ধরে নিলাম আপনারা বলেছেন, বলতেই পারেন। পরে কি শিবিরকে পেয়েছেন এই খুনের সাথে? পাননি। শিবিরের কোন সম্পৃক্ততাই ছিল না। আপনাদের গুরুরা হাজার চেষ্টা করেও শিবিরকে দোষী করতে পারেনি। খুনের দায়ে যাদের গ্রেপ্তার করা হল নাফিস, রুম্মান, অনিক, দ্বীপ ও ইরাদ তারা সবাই তালেবানের বাংলাদেশ শাখার মুফতি জসীম উদ্দিনের অনুসারী। কিন্তু গণজাগরণ মঞ্চ এত বিরাট রকমের প্রগতিশীল হয়েও কিভাবে মানুষকে এরকম নির্লজ্জ ধোকা দিল সেটা আমার বোধগম্য নয়। শিবিরের সম্পৃক্ততা না পাওয়া সত্ত্বেও তারা এখনও ঐ খুনের জন্য শিবিরকে সমান ভাবে দায়ী করে যাচ্ছে। তাদের ওয়েবসাইটে এখনও শিবিরকে দোষারোপ করে বক্তব্য দেয়া আছে। আমি বুঝি না এটা কোন ধরণের মনুষ্যত্বের চেহারা, কোন ধরবনের সত্যের পথে হাটা, কোন মানবতা অর্জনের প্রয়াস।
এই গেল রাজিব হত্যাকাণ্ড। এবার চলুন ত্বকী হত্যাকাণ্ডের ময়নাতদন্ত দেখি। ত্বকী খুনের পর পরই গণজাগরণ মঞ্চের পক্ষ থেকে দাবী করা হল এই খুন করেছে জামায়াত শিবির। আবার ধরে নিলাম। ত্বকীর বাবা নারায়ণগঞ্জ গণজাগরণ মঞ্চের উদ্যোক্তা ছিলেন তাই তার ছেলেকে হত্যা করেছে জামায়াত শিবির। কিন্তু হ্যা জামায়াত শিবির করতে পারে এটা আপনি অনুমান করতে পারেন, সন্দেহের তালিকায় রেখে তদন্ত করতে পারেন। কিন্তু দুর্বৃত্ত শব্দের পরিবর্তে সরাসরি কাউকে জড়িয়ে বলা কতটুকু প্রগতিশীলতার পরিচয় পর্যাপ্ত সন্দেহজনক। আবারও ধরে নিলাম বলেছেন ঠিক করেছেন। কিন্তু ঘোলা পানি স্বচ্ছ হওয়া শুরু করতেই জানতে পারি জামায়াত শিবির নয় নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী সন্ত্রাস গডফাদার ওসমান পরিবার এই খুন করেছে। এখন কি বলবেন? একজনকে সে হোক শত্রুকেই শুধু শুধু হয়রানি ও মিথ্যা অপবাদ দিয়ে কোন সত্যের পথে পা বাড়ালেন আই ডোন্ট নো। কিছুদিন আগেও নারায়ণগঞ্জে ত্বকী মঞ্চের বিচারের দাবীতে প্রতিবাদ সভা পণ্ড করে দিয়েছে ওসমান গ্যাং। কই গণজাগরণ মঞ্চ থেকে তো এখন আর এই হত্যার বিচার চাওয়া হয়না। কোন বিবৃতিও দেখিনা। যতক্ষণ পর্যন্ত খুনি চিহ্নিত হয়নি ততক্ষন পর্যন্ততো আপনাদের স্লোগানে কতো নিরীহ মানুষের মধ্য রাতের ঘুম নষ্ট হয়ে গেছে। খুনের বিচার কি খুনির উপর নির্ভর করবে নাকি খুনের উপর? খুনি যখন জামায়াত শিবির তখন রক্ত চেতনায় টগবগ করে। মধ্য রাতে ঘুমের মদ্ধেও ফাসি চাই ফাসি চাই স্লোগান শোনা যায়। আর যখন খুনি চিহ্নিত নয় তখন কোন এভিডেন্স ছাড়াই আঙ্গুল তুলেন জামায়াত শিবিরের বিরুদ্ধে। যখন খুনি চিহ্নিত হয় নিজেদের মিত্ররা, তখন নিঃশব্দ, চুপ আর ঘুমিয়ে যাওয়া। বাহ কি দারুন প্রগতিশীলতা। এই না হলে হিপক্রেসি। সব বাদ দিলাম। যেহেতু জামায়াত শিবির এই হত্যাকাণ্ডে জরিত নয় সেহেতু তাদের অপবাদ দেয়া অবশ্যই অন্যায় হয়েছে? তাহলে প্রগতিশীলদের কাছ থেকে কি ক্ষমা চাওয়া আশা করা বেমানান? হা হা হা হা.........
এবার আসি সবচেয়ে সেনসেটিভ বিষয়ে। সংখ্যালঘু নির্যাতন। আগেরগুলো বাদ দিলাম। নির্বাচন পরবর্তী সংখ্যালঘু নির্যাতন একটুখানি মাথা খাটিয়ে দেখি। দিনাজপুর, লক্ষ্মীপুর, যশোর সহ জেসব জায়গায় ঘটনাগুলো ঘটেছে ঘটার সাথে সাথেই অ্যাজ ইজুয়াল কোনরকমের নুন্যতম দলিল ছাড়াই সবাই একযোগে বলে উঠল জামায়াত শিবির করেছে। বাহ। যা হয় সবই জামায়াত শিবির করে। কি শক্তি মাইরি জামায়াত শিবিরের। এখানে আমার একটা ব্যক্তিগত মতামত দেই। জামায়াত শিবিরের যদি এতই শক্তি থাকে তো দেশটা তারাই চালাক। দেখি কি হয়। যাক এটা সম্ভব না এই মুহূর্তে। কারা হামলা করেছে এটা নিশ্চিত না হলে অবশ্যই বলতে হবে দুর্বৃত্ত। তানাহলে কোন এক মহলকে দোষী করে প্রচার করলে আসল অপরাধীরা থেকে যাবে ধরা ছোঁয়ার অন্তরালে। ঠিক যেমনটা হচ্ছে। এখন নির্বাচন পরবর্তী হামলায় জামায়াত শিবির জড়িত কিনা সেই প্রশ্নের উত্তর আমি হ্যা অথবা না এর উপর ছেড়ে দিব না। যেহেতু তারাও বিরোধীদল এবং তারাও এই নির্বাচন বানচালের ঘোষণা দিয়েছে সুতরাং তারাও এই হামলা করে থাকতে পারে। তবে হ্যা অথবা না বলব তদন্তে প্রমাণের পরে, আগে নয়। আগে বললে মূল অপরাধীরা অট্টহাসি দিয়ে উপভোগ করবে। পাশাপাশি আমি যদি সংখ্যালঘু নির্যাতনের সত্যিকারের বিরোধী হই তবে জামায়াত শিবির আর বিএনপির পাশাপাশি আ’লীগ কেও সন্দেহের তালিকায় রাখতে হবে। কিন্তু সেটা প্রথমে হয়নি। এখন হয়েছে। এখন হয়েছে প্রমাণের চাপে। সন্দেহ করে তদন্ত করে বের করেনি আ’লীগ এই হামলা করেছে। জামায়াত শিবির এই হামলা করেছে কিনা সে প্রসঙ্গে কিছু প্রশ্ন খাড়া করা যায়। এই প্রশ্নগুলোর মাঝেই জামায়াত শিবিরের সম্পৃক্ত থাকা না থাকা অনেকাংশে লুকিয়ে আছে। আমরা সবাই জানি, যে এলাকাগুলোতে হামলা হয়েছে ঐ এলাকায় যৌথ অভিযান চলছে অনেকদিন আগে থেকেই। আর এটাও জানি ওখানে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী পর্যাপ্তের চেয়ে অনেক বেশি সক্রিয়। ওইসব এলাকায় আমরা দেখেছি জামায়াত শিবির কোন মিছিল বের করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কিছুক্ষনের মধ্যে উপস্থিত হয়ে কোন টিয়ারসেল নয় সরাসরি গুলি করে থাকে। ওইসব এলাকায় জামায়াত শিবিরের নেতাকর্মীরা একধরনের দৌড়ের উপরই রয়েছে। প্রশ্নগুলো হচ্ছে- জামায়াত শিবির কোন মিছিল বের করলে সাথে সাথে পুলিশ এসে যায় অথচ হামলা গুলো হয়েছে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা ব্যাপী। পাঁচ মিনিটের বিপরীতে পাঁচ ঘণ্টায়ও কেন পুলিশ আসে নি? সংখালঘুরা ফোন করে সাহায্য চাওয়ার পরেও কেন সাহায্য করা হয়নি? যেখানে পাঁচ মিনিটের একটা মিছিল হলেও ভিডিও ফুটেজ দেখা যায় সেখানে পাঁচ ঘণ্টা হামলায়ও একটা এক মিনিটের একটা ফুটেজ রইল না? যেখানে জামায়াত শিবিরের নেতা কর্মীরা পুলিশ র্যাজবের দৌড়ের উপড়ে থাকে সেখানে তারা সংগঠিত হয়ে পাঁচ ঘণ্টার হামলা কিভাবে করে? এ থেকেই বুঝা যায় এই হামলায় জামায়াত শিবির জড়িত নয়। কিন্তু মিডিয়ার কি নির্লজ্জতা হাজার হাজার অসহায় হিন্দু নারী, পুরুষ, শিশুদের অসহায়ত্ব নিয়েও মিথ্যাচার করে। এখানে হিন্দু নেতারাও নিজেদের মাকে নিয়ে রাজনীতিতে মত্ত। যখন দুর্বৃত্ত হামলা করে তখন সরাসরি জামায়াত শিবিরের নাম নিয়ে তারা স্লোগান দেয়, মানব বন্ধন করে। অথচ যখন বের হয় এই হামলা নিজেদের রক্ষক আ’লীগ করেছে তখন বলে সরকার দায় এরাতে পারে না। কেন তখন বলা হয়না সন্ত্রাসী সংগঠন আ’লীগ এই হামলা করেছে? আমি ভাই এত কিছু বুঝিনা। তুমি হিন্দু হয়ে নিজের মাকে নিয়ে রাজনীতি করলে আমি কোন ঠ্যাকায় তোমার মায়ের সম্ভ্রম রক্ষা করতে যাব। তাই আগে হিন্দু ভাইয়েরা ভাল হন। হামলা যারা করে তাদেরকেই দোষারোপ করুন, তাদের বিচার দাবী করুণ। আমরা আপনাদের সাথে আছি। আর সন্ত্রাসী মিডিয়াকে কিছু বলার নাই। গণজাগরণ মঞ্চ রোড মার্চ করছে। হিন্দু নেতারা বলতে শুরু করেছে এই হামলায় আ’লীগও জড়িত। অথচ গণজাগরণ মঞ্চ জামায়াত শিবিরের নাম এখনও উচ্চারন করে যাচ্ছে প্রতিবাদ সভায়। ধরে নিলাম জামায়াত শিবিরও এই হামলায় জড়িত থাকতে পারে তাই বলে কোন প্রমান ছাড়াই দোষারোপ করবেন। আবারও ধরে নিলাম দোষারোপ করেছেন ভাল করেছেন কিন্তু যেখানে জামায়াত শিবিরের নামে কোন এভিডেন্স ছাড়াই জামায়াত শিবিরের নাম নিয়ে স্লোগান দিচ্ছেন সেখানে আ’লীগের বিরুদ্ধে এভিডেন্স থাকায়ও কেন স্লোগান দিচ্ছেন না? এ কোন নিরপেক্ষতা। আপনারা বলেন আপনারা নিরপেক্ষ নন, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে। তো সংখ্যালঘুর উপর হামলা করার অধিকার কি মুক্তিযুদ্ধ আ’লীগকে দিয়েছে? হায়রে কপাল মন্দ, চোখ থাকিতে অন্ধ। আর যাই হোক আপনাদের কাছ থেকে প্রগতিশীলতার শিক্ষা আশা করিনা আর নিতেও চাইনা।
উপসংহারে একটা ভবিষ্যৎ বাণী শুনাই। জানিনা হবে কিনা তবে হওয়ার অনেক পসিবিলিটি আছে। জামায়াত মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে ছিল এটা সত্যি। কিন্তু যে হারে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোক আর মিডিয়া জামায়াত শিবিরের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করছে তাতে জামায়াতের প্রচারই হচ্ছে বটে। যেমন ধরুন উপরের ঘটনা গুলোতে প্রথমে জামায়াত শিবিরকে দোষারোপ করে ঢালাউ ভাবে প্রচার করা হয়। কিন্তু পরে দেখা গেল এ অপকর্মে জামায়াত শিবির নয় বরং যারা দোষারোপ করছে তারাই জড়িত। দেখা যায় সব ঘটনায় প্রথমে জামায়াত শিবিরকে জড়ানো হলেও পরে জামায়াত শিবিরের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায় না। এভাবে যখন প্রতিটি ঘটনায়ই জামায়াত শিবিরকে দোষারোপ করে পরে আর পাওয়া যাবে না তখন মানুষের মনে এই বিশ্বাস জন্ম নিবে যে জামায়াত শিবির এগুলো কখনই করে না। তারপরে যখন জামায়াত শিবিরকে জড়িয়ে মিথ্যাপ্রচার করা হবে তখন মানুষ স্বভাবতই ভুয়া বলে উড়িয়ে দিবে। খুব সম্ভবত অনেকেই এখনই এমন করে থাকেন। আর এভাবে হতে হতে কোন এক ভবিষ্যতে দেখা যাবে মুক্তিযুদ্ধে জামায়াতের সত্যিকারের বিরোধীতাও মানুষ বিশ্বাস করবে না। ভাববে এটাও ছিল একটা অপপ্রচার।
বিষয়: বিবিধ
১৩৩২ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন