জাহাজ নির্মাণঃ বাংলাদেশ (১ম)
লিখেছেন লিখেছেন মুখবন্ধ ১২ জানুয়ারি, ২০১৪, ০৭:১৫:৩৭ সন্ধ্যা
জাহাজ নির্মাণ বাংলাদেশে এখন বেশ পরিচিত একটি ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিছু তথ্য সবার সাথে শেয়ার করি।
জাহাজ নির্মান এদেশে একটি পুরনো ঐতিহ্য। দেশী জাহাজ দেশেই নির্মাণ হচ্ছে বহু বছর যাবৎ। কিন্তু আলোচিত হচ্ছে মূলত বিদেশী জাহাজ দেশে নির্মাণের কারণে। ১৯৯০ সালের দিকে আনন্দ শিপইয়ার্ড যাত্রা শুরু করে। তাদের অবস্হান নারায়নগন্জের সোনারগাঁও এর অধীনে মেঘনা ঘাট। হাতে খড়ি দেশি বিভিন্ন জাহাজ তৈরির মাধ্যমে। পরবর্তীতে মোজাম্বিক সরকারের ৬টি ফেরীর কাজ পায় যেগুলো ২০০৮ সালের দিকে সরবরাহ করা হয়। ফেরীগুলোর ভেতর স্টীল ও এ্যালুমিনিয়াম, উভয় প্রকারেরই ছিল। পরবর্তীতে ডেনমার্কের কাজ পায় এই শিপইয়ার্ড। কন্টেইনার বাহী জাহাজ এর অর্ডার আসছে এখন বাংলাদেশে। কিছু আছে কন্টেইনার ও বাল্ক উভয় প্রকারের মালামাল বহনে সক্ষম যেগুলোকে বলা হয় -মাল্টিপারপাস কার্গো শিপ। এরা বড় ছোট বিভিন্ন প্রকারের জাহাজ নির্মাণ করেছে এবং বিদেশী জাহাজ নির্মাণে এদেশে পথিকৃৎ হিসেবে স্বীকৃত।
প্রতিষ্ঠিত বড় জাহাজ নির্মাতাদের ভেতর পরে যার নাম বলতে হয়, সেটি ওয়েস্টার্ণ মেরিন শিপইয়ার্ড। চট্টগ্রামের পটিয়ার কোলাগাঁও এর শিকলবাহাতে এর অবস্হান। এটি ২০০০ সালের দিকে যাত্রা শুরু করে এরই ভেতর বিভিন্ন ধরনের জাহাজ দক্ষতার সাথে তৈরি করে, দেশে ও বিদেশে সুনাম কুড়িয়েছে। এদের তৈরি জাহাজেরে প্রকারের ভেতর রয়েছে, ইস্পাতের ছোট বড় যাত্রীবাহী জাহাজ, তেল বাহী জাহাজ, ফিশিং ট্রলার, মাল্টিপারপাস কার্গো জাহাজ, টাগ বোট, পাইলট বোট, দেশী সাধারন মালবাহী জাহাজ, প্রভৃতি।
এছাড়া সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জন্য ড্রেজারও নির্মাণ করছে বড় ইয়ার্ডগুলো। অন্যান্য আরো কিছু বড় নির্মাতা প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা বিদেশী ক্রেতাদের নজরে আসার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। এর মাঝে রয়েছে, খান শিপবিল্ডার্স। এদের কারখানা মুন্সীগন্জের গজারিয়ায়। চট্টগ্রামের আরেকটি বড় ইয়ার্ড কর্ণফুলী শিপইয়ার্ড। এরা দেশী জাহাজ নির্মাণে অনেক দক্ষতার দাবিদার। এরা ড্রেজার নির্মানে বর্তমান সময়ে সবচেয়ে বেশি আলোচিত। ঢাকা ডকইয়ার্ড পুরনোদের ভেতর অন্যতম যারা লোকচক্ষুর আড়ালে তাদের একটি অবস্হান ধরে রেখেছে। মুন্সীগন্জে টিকে শিপইয়ার্ড, রূপগন্জে র্যা ডিয়েন্টে শিপইয়ার্ড তাদের যাত্রা শুরু করেছে বেশিদিন হয়নি, যার ভেতর শেষোক্ত নির্মাতাদের রয়েছে বেশ ভালো মাপের দেশের কাজের অর্ডার। এছাড়া মুন্সীগন্জের নারায়নগন্জ ইন্জিনিয়ারিংও দেশী জাহাজ নির্মাণ করছে বেশ কয়েক বছর যাবৎ। খুলনা শিপইয়ার্ড ১৯৫৬ সালের প্রতিষ্ঠান যা ১৯৯৯ সালে নেভীর হাতে দিয়ে দেয়া হয়। এরাও বিভিন্ন প্রকারের কাজ করছে চুপিসারে। এটি লোকসানী প্রতিষ্ঠান থেকে এখন লাভজনক।
এখন পর্যন্ত বিদেশী ক্রেতারা এসেছেন মোজাম্বিক, জার্মানী, ডেনমার্ক, হল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড থেকে। সরকারী ও বেসরকারী ক্রেতাগন। আর দেশের ভেতর রয়েছে সরকারী বিভিন্ন বন্দর-চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর, অভ্যন্তরীন নৌ চলাচল সংস্হাগুলো, পানি উন্নয়ন বোর্ড, বাংলাদেশ নৌ বাহিনী, কোস্ট গার্ড, প্রভৃতি। আর বেসরকারী বিভিন্ন জন তাদের নিজস্ব প্রয়োজনে তৈরি করছেন অসংখ্য জাহাজ প্রতিনিয়ত যেগুলো বেশির ভাগ বিভিন্ন স্হানীয় নির্মাতারা নির্মান করছেন। স্হানীয় নির্মাতাদের ইয়ার্ড ছড়িয়ে আছে কালীগন্জে, মুন্সীগন্জে, কর্ণফুলীর পাড়ে, ফতুল্লায়, সাভারে, অর্থাৎ সারা দেশজুড়েই। বরিশালের স্হানীয় ইয়ার্ডগুলোতে বড় মাপের দেশী যাত্রীবাহী জাহাজগুলো নির্মান হয়। অন্যান্য প্রকারের জাহাজও হয় দক্ষিণের বিভিন্ন জায়গায়।
জাহাজের নির্মান তদারকি, নকশা অনুমোদন, সার্ভে ও রেজিষ্ট্রেশনের কাজগুলো করে বাংলাদেশ আভ্যন্তরীন নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ -বিআইডব্লিউটিএ। আর ট্রাফিক নিয়ন্ত্রন ও বন্দর পরিচালনার কাজটি করে থাকে বাংলাদেশ আভ্যন্তরীন নৌ পরিবহন সংস্হা - বিআইডব্লিউটিসি। শেষোক্ত সংস্হার অধীনে অনেক প্রকারের জাহাজও দেখা যাবে বিভিন্ন বন্দরে।
বিশাল একটি সেক্টর সম্পর্কে খুবই সংক্ষেপে কিছু লিখলাম। ভবিষ্যতে বিশেষ কোন অংশ নিয়ে লেখার প্রত্যাশায় আজ বিদায়।
বিষয়: বিবিধ
১৪১৪ বার পঠিত, ১১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
চট্টগ্রামের ওয়েস্টার্ন মেরিণও এক্ষেত্রে পিচিয়ে নেই।
এই ক্ষেত্রে সাফল্যের জন্য দাবিদার কেবলমাত্র বেসরকারি সেক্টর এবং বেসরকারি ব্যাংকগুলি। সরকার প্রাথমিক ক্ষেত্রে সহযোগিতা তো করেইনি বরং সরকারি অফিসাররা অনেক ধরনের জটিলতা সৃষ্টি করেছেন। ৮ বছর আগে সরকারি উদ্যোগে একটি সকল কোম্পানির ব্যবহার এর উপযুক্ত ইয়ার্ড নির্মানের প্রস্তাব দেয়া হলেও সেই প্রস্তাব এখনও মন্ত্রিসভা দুরে থাক তথাকথিত বিশেষজ্ঞ! উপ সচিব পর্যায়ের আমলাদের হাতে আটকে আছে। এই ইয়ার্ডটি হলে ১৫০০০ টন ওজনের জাহাজ নির্মান ও সম্ভব হতো। বর্তমান বিশ্বের অর্থনৈতিক মন্দা এই ক্ষেত্রে বরং ভাল প্রভাব ফেলবে কার এর ফলে বিশাল আকৃতির সুপার ট্যাংকার বা সুপার ক্যারিয়ার এর পরিবর্তে মাঝারি আকৃতির জাহাজ তৈরি বেশি হচ্ছে যা বাংলাদেশের জন্য উপযুক্ত। কিন্তু সম্প্রতি চট্টগ্রামের শিপইয়ার্ডগুলিতে ভাংচুর সহ বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। যেমন আনন্দ শিপ ইয়ার্ডে চারটি অর্ধনির্মিত জাহাজ এর অর্ডার বাতিল হয়েছে। সেই জাহাজগুলি পুনঃঅর্থায়ন করায় ইসলামি ব্যাংক এর বিরুদ্ধে লেখা হয় কয়েকটি পত্রিকায় এবং বাংলাদেশ ব্যাংকও হস্তক্ষেপ করে। কিন্তু এই অর্ধ নির্মিত জাহাজগুলি শেষ করা গেলে সহজেই বিক্রি করা যাবে। যতটুক শুেনছি্ইতমধ্যে এই জাহাজগুলি কিনতে অনেকে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। কিন্তু দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের মুখে এই শিল্প কতটুক এগুতে পারবে তাই এখন চিন্তা।
মন্তব্য করতে লগইন করুন