নিশীথ

লিখেছেন লিখেছেন মুসফিরা মারিয়াম ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৬, ০৫:০৭:৫১ বিকাল

পাঁচ-ছয় দিন ধরে আমার পেছনে পেছনে ঘুরছে ছেলেটি। বয়স সাত কিংবা আট বছর হতে পারে। ফর্সা নাকি কালো তা ঠিক করে বলতে পারবোনা।কারণ, দগ্ধ মুখটা দেখে বোঝা যাচ্ছেনা সে জীবদ্দশায় কেমন ছিল। তবে চাওনীতে একধরণের অসহায়ত্ব আছে। কথা তেমন একটা বলেনা, শুধু করুণ চোখে চেয়ে থাকে। বই নিয়ে একটু পড়তে বসেছি, আমার পাশে এসে সেও বসলো।বললো:আপু কি করছো?

-বই পড়ছি।

-পড়া, এটা আবার কি জিনিস!

-পড়াশোনা করলে মানুষ অনেক কিছু শিখতে পারে। বিশ্বের কোথায় কি হচ্ছে জানতে পারে। কেন,তুই এতসব জেনে কি করবি। তুই তো এখন আমাদের মতো জীবিত নোস?

-কিভাবে আগুন থেকে বাচাঁ যায় সেটাও কি বইয়ে লিখা আছে?

-কিসব কথা যে বলিস না, বিরক্ত করিস না, একটু পড়তে দে।

চুপচাপ হয়ে গেল। আমি পুরোপুরি মনোযোগ দিতে চেষ্টা করলাম বইটিতে। কিন্তু, এই অসহায় চোখ দু'টোর সামনে নিজেকে কেমন অপরাধী মনে হতে লাগলো। থাক এর'চে বরং ওর সঙ্গে গল্প করি। বইটা বন্ধ করে ওর দিকে তাকালাম। খাটে বসে চুপচাপ পা দোলাচ্ছিল সে। বললাম, কিরে ক্ষিধে পেয়েছে? ছোট করে একটু হাসলো ও। তারপর বললো, নাহ্। আমার এখন কোন ক্ষুধা পায়না। যখন ক্ষুধার জ্বালায় কাতরাচ্ছিলাম, কেউ খাবার দেয়নি তখন। কতো দিন-রাত্রি না খেয়ে কেটেছে আমাদের। তবু আমাদেরকে ওরা বাচঁতে দিলোনা। বাবাকে হাত-পা বেধেঁ গুলি করে মারলো। মাকে কেঁটে টুকরো টুকরো করে ফেললো। আর, আমাকে আগুনে পুড়িয়ে দিল। ওদের কাছে হাতজোড় করে কতো কাদঁলাম। কিন্তু,ওরা বাচঁতে দিলোনা আমাকেও। জানো আপু, কুপিয়ে চাচ্চুর মাথাটা শরীর থেকে আলাদা করে ফেলে ওরা। আমাদের ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছাই করে দেয়। দাদুকে মেরে আগুনে পুড়িয়ে দেয়।

আমার চোখে জল দেখে বললো: আপু, তুমি কাঁদছো! তোমরাও তো আমাদেরকে একটু জায়গা দাওনি। আমাদের মাঝে যারা তোমাদের কাছে আশ্রয় চেয়েছে, তাদেরকে ফিরিয়ে দিয়েছো। কাঁটাতার দিয়ে আঁটকে দিয়েছো আমাদের। যে স্রষ্টা এতোবড় বিশ্ব সৃষ্টি করেছেন, তিনিতো কোন কাঁটাতার দিয়ে দেশগুলোকে ভাগ ভাগ করে দেননি। তোমারকেও জান্নাতে এভাবেই আটঁকে দেয়া হবে। কাঁদতে কাদঁতে হেঁচকি উঠে গেল আমার। বললাম: কাছে আয়, ভাইটি আমার, একটু আদর করে দিই।

-তা যে কখনোই হবার নয়। মানুষ নামের অমানুষদের দেয়া আগুনে পুড়ে, আমি যে আল্লাহর কাছে চলে গেছি। আমার বন্ধুরা যারা বেঁচে আছে তাদেরকে কাছে টেনে নাও, প্লিজ আপু। দয়া করে তাদরকে তোমরা বাঁচাও। ওর অশ্রুভরা কপোল দু'টো মুছে দিতে হাত বাড়ালাম। কিন্তু কোথায় সে? ডাকলাম: নিশীথ, ছোট্ট ভাইটি কোথায় তুই?

অদৃশ্য থেকে আওয়াজ ভেসে এলো: আমায় খুঁজোনা আপু, আমি আর নেই। আমার বন্ধুদের সাহায্য কর প্লিজ। তাহলেই তোমার এই অভিমানী ভাইটির সাথে তোমার দেখা হবে, জান্নাতে।

বুক চিড়ে একটি দীর্ঘনিঃশ্বাস বেরিয়ে এলো। কি করবো আমি, আমিও যে বড় অসহায়। ক্ষমা করে দিস ভাই, তোর এই অপারগ বোনটিকে। নিশীথ, আজ আমি লজ্জিত, আমার জাতির এই অপারগতার জন্য।

বিষয়: বিবিধ

১০৮৯ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

380660
১৩ ডিসেম্বর ২০১৬ সন্ধ্যা ০৬:১০
স্বপন২ লিখেছেন : ভালো লাগলো ভালো / অনেক ধন্যবাদ
380669
১৩ ডিসেম্বর ২০১৬ রাত ০৮:০২
হতভাগা লিখেছেন : সপ্তাহ তিনেক আগে শুনেছিলাম তুরষ্ক নাকি যুদ্ধ জাহাজ পাঠাচ্ছে

দুই তিন দিন আগে শুনলাম মালয়েশিয়াও নাকি যুদ্ধ করতে চায়
380681
১৪ ডিসেম্বর ২০১৬ সকাল ০৬:৪২
দ্য স্লেভ লিখেছেন : আল্লাহর কাছে প্রার্থনা ছাড়া কিছু করার নেই। যাদের কিছু করার আছে তারা চুপ হয়ে আছে,কারন তারা গজব ভালোবাসে
380694
১৪ ডিসেম্বর ২০১৬ দুপুর ০৩:৫৩
সন্ধাতারা লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতাহু আপু।

হৃদয়গ্রাহী লিখাটির জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।


মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File