ভালোবাসার লাল গোলাপ এবং ধর্ষিত নারী।
লিখেছেন লিখেছেন ডাক্তার রিফাত ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ১২:০১:৪৩ রাত
শাহবাগ এর ফুলের দোকানগুলোতে উপচেপড়া ভিড় লেগেই আছে । ফুলের তৈরি মালা, তোড়া অর্ডার দিয়ে বানিয়েও নিয়েছেন অনেকে।মাহি এসেছে ১টা লাল গোলাপ নিতে।রূনু অপেক্ষার প্রহর গুনছে।টিএসসি তে মিলিত হবার কথা ওদের।আজ ওদের ভালোবাসার একবছর পূর্তি।
মাহি গোলাপটি বাড়িয়ে ধরে রূনুর দিকে।সেই সাথে উচ্ছসিত প্রশংসা।ওয়াও রূনু তোমাকে না আমার রাজকন্যার মত লাগছে।খেয়ে ফেলতে ইচ্ছা হচ্ছে ।চল না আজ আমরা হারিয়ে যাই দূর সীমানায়।যেখানে তুমি আমি ছাড়া আর কেও থাকবে না।প্রথম দিকে রূনু আপত্তি করে।কিন্তু মাহির আহবান ছিলো খুবই সাদাসিধে। মোহাবিষ্ট রূনু তাই মাহির হাত ধরে দূরে যাওয়ার বায়ানাকে খুব সরল ভাবেই গ্রহন করে। আর এরই পরিনতি রূনুর জীবনের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা।মাহি অনেকদিন থেকেই তক্কে তক্কে ছিলো কখন ওকে ভোগ করবে। তাই আজকের এই শুভক্ষণটিকে ও মোটেও হারাতে চাচ্ছিলো না।আগে থেকেই সব ঠিক করে রাখা।ওর এক বড়লোক ফ্রেন্ডের বাবার বাংলোবাড়ি।গাজীপুরে।আর সেখানেই প্রথমবারের মত ধর্ষিত হলো রূনু।ভেলেন্টাইন ডেতে এই ছিলো তার জন্য মাহির পক্ষ থেকে প্রাপ্ত উপহার।
এটি আজ আমাদের সমাজের এক স্বাভাবিক চিত্র।প্রেমিক কর্তিক প্রেমিকা ধর্ষণ/গনধর্ষন অথবা ধর্ষনের পর ভিডিও আপলোড ইত্যাদি আজ পেপারের পাতা খুললেই চোখে পরে।আর ভ্যালেন্টাইন ডেতে তা যেন কানায় কানায় ভরে উঠে।এখানে নারী যেন আজ স্বেছায় ধর্ষিত হচ্ছে!
ইতিহাস পরতে আমার বরাবরই বিরক্ত লাগতো।সমাজ-বিজ্ঞানের এই অংশটা ছিলো আমার চক্ষুশূল।কিন্তু ভালোবাসা শব্দটা জড়িয়ে আছে বলেই কিনা জানি না বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের ইতিহাসটা জানার চেষ্টা করছিলাম।আপনারাও কমবেশি সকলেই অবগত আছেন।যার প্রতিটা অংশই নোংরামির ছোঁয়া বিদ্যামান।
দুখঃজনক হল আজ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হওয়া সত্ত্বেও আমাদের দেশে এসব বিজাতিয় সংস্কৃতি চর্চার নামে চলছে ক্রমবর্ধমান নৈতিক অবক্ষয়ের এক লোমহর্ষক চিত্র।অবাধ যৌনতা,লিভ টুগেদার এসবই যেন ফ্যাশনে পরিনত হয়েছে।পবিত্র ভালোবাসাকে করা হচ্ছে অপবিত্র।
এভাবেই পাশ্চাত্য সংস্কৃতির অন্ধ অনুকরনে আজ সমাজ কাঠামো ভেঙ্গে পরার উপক্রম।আজ আমদের পারিবারিক জীবনে নেমে এসেছে অশান্তি,বেড়েছে দুর্যোগ-দুর্ভোগ।নারীর উচ্ছৃংখলতা ও বেহায়াপনার শিকার হচ্ছে যুব সমাজ।নারী আজ জাতি গঠনের মহান দায়িত্ব থেকে সরে গিয়ে নিজেকে পন্যের মর্যাদায় অধিষ্টিত করতেই ব্যাস্ত সময় পার করছে।পুরুষের সামনে রুপনীয় মোহনীয় করে তোলাই যেন তাদের প্রধানতম কাজ।আর এসবই আজ নারীর নির্যাতনের মূল কারন।মহান সুশিলরা যার বিরুদ্ধে সদাই সোচ্চর!কিন্তু তারাই কি আজ এসবকে উষ্কে দিচ্ছে না!একদিকে তারাই তরুন-তরুনীদেরকে গড্ডালিকা প্রবাহের পথ দেখিয়ে দিচ্ছে আপরদিকে এরাই দেখাচ্ছে নারীকে নির্যাতন রোধের নানা কৌশল!!
কিন্তু প্রকৃত সত্য এই যে যতদিন পর্যন্ত এই অশ্লিলতা,অবাধ মেলামেশা,যৌনাচার বৃত্তিকে সমূলে উৎখাত না করছি ততদিন নারীর নির্যাতন রোধ করাও সম্ভব নয়।
মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, ''তোমরা শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। সে নিঃসন্দেহে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। সে তো এ নির্দেশই তোমাদিগকে দেবে যে, তোমরা অন্যায় ও অশ্লীল কাজ করতে থাক এবং আল্লাহর প্রতি এমন সব বিষয়ে মিথ্যারোপ কর যা তোমরা জান না।'' (সূরা বাকারা, আয়াতঃ ১৬৮-১৬৯)
আর এদের শাস্তির কথা এভাবে ঘোষনা করা হয়েছে-
''যারা মু’মিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার কামনা করে তাদের জন্য আছে দুনিয়া ও আখিরাতে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।'' (সূরা আন-নূর, আয়াতঃ ১৯)
আসুন না আমরা ভ্যালেন্টাইন হতে শুরু করে সকল প্রকার অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াই। চেষ্টা করি আমাদের ভালবাসাকে কোন অপবিত্রতায় নয় পবিত্রতার পরশে বিলিয়ে দিতে।চলুন এমনই ভালোবাসা খুঁজি যেখানে থাকবে না প্রেমিক-প্রেমিকার নোংরামি।থাকবে না নগ্নতা,অশ্লিলতা।ভালোবাসার মানুষটি আপনার পাশেই রয়েছে।চলুননা ভালবাসি মা বাবা, ভাই বোন, সমাজের অসহায় নিপীড়িত মানুষকে, ফুটপাতে ধুলোমাখা শিশুটিকে।সে ভালোবাসা যেন হয় প্রতিদিনকার তরে,একটি সুস্থ সুন্দর সমাজ গঠনের লক্ষ্যে।
বিষয়: বিবিধ
৪৫৯৫ বার পঠিত, ১৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
জাহিলিয়াতের যুগে নারীদের পণ্য হিসাবে গণ্য করা হত।
মন্তব্য করতে লগইন করুন