অপসংস্কৃতির অক্টোপাসঃবর্তমান প্রেক্ষাপট
লিখেছেন লিখেছেন ডাক্তার রিফাত ২২ জানুয়ারি, ২০১৪, ১১:৪২:১৫ রাত
সাধারণ অর্থে সংস্কৃতি বলতে আমরা শুধুমাত্র বিনোদনকেই বুঝে থাকি।একে মনে করে থাকি সস্তা এক প্রেমের উপন্যাস বা ঢোল-তবলার টোকা।বাস্তবে কিন্তু তা নয়।সংস্কৃতিকে এককথায় একটি দেহের প্রানস্পন্দন বলা যায়।প্রানস্পন্দন ছাড়া যেমন একটি দেহের কোন মূল্য থাকেনা তেমনি সংস্কৃতি বিহীন কোন জাতিও প্রানহীন।
সংস্কৃতি শব্দটি ‘সংস্কার’ এই বিশেষ্য পদ থেকে গঠিত।যার অর্থ হচ্ছে শোধন,পরিশুদ্ধ করা,সংশোধন,মার্জনা,পরিশীলন,সভ্যতা,ভদ্রতা,শিষ্টতা।আর সংস্কৃতি অর্থ সুসভ্য আচরন,শিষ্টাচার ও উন্নত নৈতিক মূল্যবোধ যার ভিত্তি হবে জ্ঞান প্রজ্ঞা।জীবনের অনভিপ্রেত চিন্তা ও কর্ম পরিত্যাগ করে সুস্থ সুন্দর শুদ্ধজীবন যাপন করার নামই সংস্কৃতি।
এ প্রসঙ্গে প্রফেসর এমাজউদ্দিন বলেছেন,”আমি অথবা আমরা।যে আচার আচরণে,পোষাক-পরিচ্ছদে,খাদ্যাভ্যাসে,বিশ্বাসে আমি যা এই তো আমার সংস্কৃতি।
এর ইংরেজী প্রতিশব্দ culture. সংস্কৃতি বা culture এর সংজ্ঞা দিতে গিয়ে E.B Tylor বলেছেন –culture is that comlex whole which includes Knowledge ,belief,art,moral ,low,custom & after capabilities & habites acquired by man as a member of society.-অর্থাৎ সংস্কৃতি হচ্ছে মানুষের জ্ঞান,বিশ্বাস,শিল্পবধ,নৈতিকতা,আইন,প্রথা এবং অন্যান্য সামর্থ্য ও অভ্যাসসমূহের সেই জটিল সমষ্টি যা সে সমাজের সদস্য হিসেবে আয়ত্ত করে।
এইচ.জে.লাস্কির একটি মন্তব্য খুব অর্থবহঃCulture is that what we are.
তাই আমরা বলতে পারি কোন মানুষের বৈশিষ্ট্যকে যেমন তাঁর পার্সোনালিটি বলা যায়,তেমনি কালচার তথা সংস্কৃতিই হচ্ছে একটি সমাজ বা জাতির বৈশিষ্ট্যকে প্রকাশ করে।
আর এর গুরুত্বের কথা শুরুতেই আমি উল্লেখ করেছি like a heart of a body.এর গুরুত্ব উপলব্ধি করে মরিয়ম জামিলা বলেছিলেন”বিদেশী রাজনৈতিক শাসনের চেয়ে সংস্কৃতিক স্বাধীনতা অনেক বেশী ক্ষতিকর।“এ ব্যাপারে সংস্কৃতি বিশেষজ্ঞদের ভাষায় –A victory without war.অন্যের দেশ দখলের এমনই এক মাধ্যম যার প্রতিরোধে কেউ এগিয়ে আসে না।
আবুল মনসুর আহমাদ বলেছেন-“রাজনৈতিক আগ্রাসনের চাইতে সংস্কৃতিক আগ্রাসন অধিক মারাত্মক।কারন রাজনৈতিক আগ্রাসন সাধারণত চোখে ধরা যায় সংস্কৃতিক আগ্রাসনের বেলায় তা সম্ভব নয়।“
মুসলমান হিসেবে আমাদের একমাত্র সংস্কৃতি হচ্ছে ইসলামী সংস্কৃতি।বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ।এদেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী ধর্মপ্রান মুসলিম।এবং মুসলমান হিসেবে আমাদের একমাত্র সংস্কৃতি হচ্ছে ইসলামী সংস্কৃতি।আলকোরআন ও হাদিসই হচ্ছে মুসলমানদের সংস্কৃতির মূল ভিত্তি।ইসলামী সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে
আল্লাহমুখীতা,পবিত্রতা,নৈতিকতাবোধ,মানবতাবোধ,সৌন্দর্যবোধ।ইসলাম এসেছেই মানুষের চিন্তা ও কর্মকে পরিশুদ্ধ করার জন্য।আর পরিশুদ্ধকরনের এই পক্রিয়াকেই বলে সাংস্কৃতিক বিপ্লব।যার মাধ্যমেই একমাত্র বিশুদ্ধ ও সংস্কৃতিবান হওয়া যায়।কেননা ইসলামই একমাত্র পূর্ণাংগ জীবন বিধান।ইসলাম ছাড়া জীবন পরিচালনা মানেই অপুর্নাঙ্গ বিধান দ্বারা জীবন পরিচালনা যার পরিনতি অসঙ্গতি ও ত্রূটিপূর্ন জীবন যাপন করা।স্বাভাবিকভাবেই যা অপসংস্কৃতির শিকার হতে বাধ্য।
অপসংস্কৃতি হচ্ছে যা ১টি জাতির সাংস্কৃতিক আদর্শের বিপরীত অথবা যা কল্যানকে বিধ্বস্ত করে। মনে রাখতে হবে যে সময়ের অগ্রগতির সাথে ১টি জাতির মধ্যে কল্যানকর যে পরিবর্তন তা অপসংস্কৃতি নয় অর্থাৎ যে পরিবর্তন অকল্যানকর তাই অপসংস্কৃতি।
কিন্তু আমাদের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে আজ যেন অশ্লীলতা ,বেহায়াপনা,নগ্নতা,বিজাতীয় অনুসরন-অনুকরন,অনৈতিকতা স্থায়ী আসন গেরে নিয়েছে।ভারতিয় আর পাশ্চাত্য সভ্যতার বল্গাহীন স্রোতে আজকের তরুন সমাজ অনৈতিকতা ও আদর্শহীনতায় দারুনভাবে হতাশাগ্রস্থ।আজকে অধিকাংশ তরুন-তরুনীদের পোশাক-আশাক,চলনে-বলনে,চিন্তা-চেতনায় মুসলমানিত্বের নুন্যতম ছাপও খুঁজে পাওয়া যায় না।
আমাদের ছেলেমেয়েরা আজ বিশ্ব ভালোবাসা দিবস পালনকে সংস্কৃতির অংশ বানিয়ে নিয়েছে।তরুনরা ফুল দিয়ে বরণ করছে তরুনীদের,বর-বধু সেজে নেচে গেয়ে র্যাগ ডে পালন করছে।হনুমান-শেয়ালের মুখোশ পরে মিছিল করে যেন স্মরন করছে “একদিন হনুমান ছিলামরে...এ...এ... একদিন হনুমান ছিলাম রে।“এ হচ্ছে বাঙ্গালী মুসলিম সংস্কৃতির নমুনা।আজ যারই অংশ হিসেবে থার্টিফাস্ট নাইটে বাঁধনরা হচ্ছে বস্ত্রহরনের শিকার।প্রেমের বলী হিসেবে হাজারো তিন্নিকে বেছে নিতে হচ্ছে আত্মহত্যার পথ।আল্লামা ইকবাল এই সব মুসলিম নামধারী তরুন-তরুনীদের লক্ষ্য করেই বলেছিলেন “তোমার অস্তিত্ব পুরোপুরি ফিরিংগীর প্রকাশ
কেননা তাদের কারিগরের হাতে গড়া তুমি
কিন্তু তোমার এমনটির দেহ পিঞ্জর খুদী শূন্য
তুমি শুধু অস্ত্রশূন্য স্বর্ণাভ খাপ।“পাশ্চাত্যের ভোগবাদী অন্তসার শূন্য জীবনে সে দেশের নারীরা আজ ক্লান্ত।জীবনের মূল্যবান সম্পদকে হারিয়ে আজ তারা হোটেল-বারে মদকেই চির সঙ্গী করে নিয়েছে।আজ আমাদের চলচ্চিত্র সাহিত্যে নিজস্বতা বলে কিছু নেই,নকল পুচ্ছ লাগিয়ে সবাই আজ মইয়ূর সাজার ব্যার্থ চেষ্টায় মগ্ন।বিজাতীয় নক্ল বেশ ধারন করতে যেয়ে আজ আমরা আমাদের নিজস্ব অস্তিত্বকে ভুলতে বসেছি।
অথচ ডঃমুহাম্মদ শহিদুল্লাহ বলেছেন-“আমাদের ঘরও পর,আমাদের সুখ ও দুঃখ,আমাদের আশা ও ভরসা,লক্ষ্য ও আদর্শ নিয়ে যে সাহিত্য তাই আমাদের সাহিত্য।কেবল লেখক মুসলমান হলেই মুসলমান সাহিত্য হয় না।হিন্দুদের সাহিত্য অনুপ্রেরণা পাচ্ছে বেদান্ত ও গীতা,হিন্দু ইতিহাস ও হিন্দু জীবনী থেকে।আমাদের সাহিত্য অনুপ্রেরনা পাবে কুরআন ও হাদিস,মুসলিম ইতিহাস ও মুসলিম জীবনী থেকে,হিন্দুরা সাহিত্য রস সংগ্রহ করে হিন্দু সমাজ থেকে।আমাদের সাহিত্য করবে মুসলিম সমাজ থেকে।“
আজ সময় এসেছে অপসংস্কৃতির এই আগাছাকে মূলোৎপাটন করে ইসলামী সংস্কৃতির চর্চা বাড়ানোর।হিন্দুয়ানী সংস্কৃতির আগ্রাসন প্রতিরোধ করার।চলুন সবাই মিলে বলিঃ
“অপসংস্কৃতির আগল ভেঙ্গে চুরে আজ
নব্য জাহিলিয়াতের প্রহর কেটে
গোলাপের সৌরভে ভরাবো হৃদয়।।“
শেষ করবো জাতীয় কবির বানী দিয়েঃআমি চাই,এই পর্বতের বিবর থেকে বেরিয়ে আসুক তাজা তরুণ মুসলিম,যেমন করে শীতের শেষে বেরিয়ে আসে জরার খোলস ছেড়ে বিষধর ভুজঙ্গের দল।বিশ্বের এই নব অভ্যুদয়-দিনে সকলের সাথে হাতে হাত মিলিয়ে চলুক আমার নিদ্রান্বিত ভাইরা।
বিষয়: বিবিধ
১৭৯০ বার পঠিত, ২৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
কপি পেস্ট দিতাম দেইখা আমারে তো মডুরা খুব কড়া নোটিশ দিছে ।
তাই এখন ছবি কাহিনী করতাছি ।
এই পোস্ট তাহলে আমারদেশ থেকে নেয়া !
তাই তো বলি , একজন ডাক্তার এরকম সাহিত্য - সংষ্কৃতি মার্কা লেখা কেমনে লিখে !
দুই লাইন পইড়াই কমেন্টে চইলা গেছি ।
@ চোথাবাজ - তুছি গ্রেট হো । সারাদিন নেটে বইসা বইসা আপনি যে তপস্যা করতেছেন তা কাজে লাগছে ।
হায়রে ডাক্তার আপা ! আপনি কি জানেন না, ব্লগে যে দুই ব্লগার সবসময়ই প্রথম কমেন্ট করার জন্য ওত পেতে থাকে ব্লগার চোথাবাজ তাদের একজন ।
http://www.amardeshonline.com/pages/details/2014/01/22/233015#.UuAAGM5xXIV
>-
http://www.amardeshonline.com/pages/details/2014/01/22/233015#.UuAAGM5xXIV
>-
http://www.amardeshonline.com/pages/details/2014/01/22/233015#.UuAAGM5xXIV
>-
http://www.amardeshonline.com/pages/details/2014/01/22/233015#.UuAAGM5xXIV
>-
http://www.amardeshonline.com/pages/details/2014/01/22/233015#.UuAAGM5xXIV
>-
http://www.amardeshonline.com/pages/details/2014/01/22/233015#.UuAAGM5xXIV
>-
http://www.amardeshonline.com/pages/details/2014/01/22/233015#.UuAAGM5xXIV
>-
বিচারকরা ভুল বুঝতে পারলো যে - এতো তাদের সিষ্টেমের রেজাল্ট, তাই ভুল শুধরে ক্ষমা চেয়ে নিলো প্রকাশ্যে – দেশটা খুব সম্ভবত ইউ.এস.এ – যেখানে কুকুর-বিড়ালও পথে ঘাটে তার ছানাকে স্তন্যদান করে এবং মানুষ নামক জন্তুগুলোও ধীরে ধীরে সে পথেই যাচ্ছে!
আমাদের হনুগুলোতো তাদের জিনগত দোষের কারণেই এমন আবদার করে বসে! হনুদের আসলে তাদের ইনক্রেডেবল চিড়িয়াখানা ইন্ডিয়ায় সুখে শান্তিতে থাকার জন্য পুনর্বাসন করা উচিৎ।
যাই হোক সংস্কৃতির অপারেশন থিওরিটিক্যালী সাকসেসফুল করেছেন ডাক্তার! ভালো লাগলো - ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন