বুয়েটের তানজীল কে নিয়ে কিছু কথা
লিখেছেন লিখেছেন সিরাজুম মুনিরা রুমি ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ১২:৪৫:৩৪ দুপুর
তানজীল বা লাবীব যাই বলি না কেন, নামটা অনলাইনে অনেকের কাছেই চেনা হয়ে গেছে গত দুদিনে। আমি ব্যক্তিগত ভাবে ছেলেটাকে চিনি আমার জামাই এর জুনিয়র হিসেবে। জানতাম বুয়েটে পড়ে। তবে আমার জামাইয়ের ফেসবুকে কোন ছবি বা পোষ্ট দিলে ও খুব মজা করে কমেন্ট করত। খুবই হাসি খুসি একটা মানুষ বলেই মনে হয়েছে। ইদানিং আমার ফেসবুক একাউন্ট ডিএক্টিভেট থাকায় আমার জামাইএর আইডিতে মাঝে মাঝে ঢু মারা হয় আরকি। এজন্য ওর সিনিয়র জুনিয়রদের অনেককেই চিনি আজকাল। সেই হিসেবে তানজীল কেও চিনি।
কাল আমার জামাই বলল ওদের এক জুনিয়রকে এরেস্ট করা হয়েছে। আমি কারন জানতে চাইলাম ওর কাছে। ও আমাকে বলল সালাম দেয়া নিয়ে একটা স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে এবং শিবির সন্দেহে। আমি বললাম কই দেখি স্ট্যাটাসটা দেখাও তো দেখি ও কি লিখছে। আমি দেখে খুবই অবাক হলাম। কোন রাজনৈতিক স্ট্যাটাস না। ও শুধু বলতে চেয়েছে সালামের মূল অর্থটা কি। আর আমরা বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে দেখি সিনিয়র জুনিয়র দের মধ্যে এটাই যেন ট্রেন্ড হয়ে গেছে সালাম শুধু সিনিয়রদের প্রাপ্য। র্যাগিং এর প্রথম ধাপটা সালাম দেয়া থেকেই শুরু হয়। ও হয়ত প্রচলিত এই ট্রেন্ড এর বাইরেই কথা বলতে চেয়েছিল। কিন্তু আমি খুব অবাক হলাম শুধুমাত্র সালাম দেয়া কে কেন্দ্র করে একটা দেশের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠে একজন মেধাবী ছাত্রের এই ধরনের পরিণতি হতে পারে!!
আরো শুনলাম ভিসি নিজে হাতে করে তার সন্তান তুল্য ছাত্রকে পুলিশের হাতে দিয়েছেন। ওর চেহারাটা দেখলেই বোঝা যায় কত নিরীহ শান্ত স্বভাবের একটা ছেলে। উনি ভিসি হয়ে কিভাবে একটা নিরপরাধ ছেলেকে পুলিশের হাতে তুলে দিতে পারলেন!!! আমার আপনার কাছে খুব জানতে ইচ্ছে হচ্ছে একটা বিষয়। আপনি তো আপনার সকল ছাত্রের জন্য সমান, সকলের অভিভাবক। আপনি একটু চোখ বন্ধ করে ভেবে দেখবেন প্লিজ!! ধরুন আপনার ছোট ছেলে কে পাড়ার বখাটে ছেলেরা বিনা কারণে মারপিট করে আহত করল, আর আপনার ছেলে আপনার কাছে দৌড়াতে দৌড়াতে কাঁদতে কাঁদতে ছুটে আসল বলল মা আমাকে বাঁচাও। তখন আপনি কি করতেন?? আপনার ছেলে কে আপনি পুলিশ ডেকে পুলিশের হাতে তুলে দিতেন?? যদি দিতে পারেন তাহলে বলব আপনি যা করেছেন ঠিক কাজ করেছেন।
আর একটা বিষয় না বলে পারছি না। বুয়েটের অনেক গুলো গ্রুপ আছে জানি। একটা গ্রুপ আছে জামায়াত শিবির মুক্ত গ্রুপ। ঐ গ্রুপ কি আসলেই জামায়াত শিবির মুক্ত গ্রুপ না কি ইসলামী ভাব ধারা মানুষ মুক্ত গ্রুপ সেটা বুয়েটের সকলেই জানে। গ্রুপটা তে আমার জামাই এক সময় মেম্বার ছিল এই কারণে কিছুটা ধারণা আছে ওখানে কি হয় না হয়। সবার সামনে মুখোশ পরে থাকা ভাল মানুষ রূপী ভবিষ্যৎ জাফর ইকবাল দের চেহারা যে কতটা কুৎসিত হতে পারে তা আমার কখনই জানা হতো না ঐ গ্রুপটা না দেখলে। তারা আবার বাইরের বিরাট বিরাট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আবার কেউ কেউ বিরাট চাকরী করছেন বা কেউ হয়ত পড়াশুনা করছেন। তাদেরকে দেশের অনেক মানুষ মাথায় করে রাখে। কারন তাদের এইরূপ সাধারণ মানুষের কাছে খুব কম প্রকাশ পায়। তারা শুনলাম মহা খুশি। যাক একটা শিবির ধরা পড়ছে। খুব ভাল হইছে। ওরে আচ্ছামত ধোলাই দেয়া উচিত। শুধু তানজিলকে কেন, সাথে ওর চ্যালা গুলোকেও ধরা উচিত। তবে ভিসি কেন ওকে তার রুমে আশ্রয় দিল। সেটা নিয়েও তাদের খুব গোস্যা। কেন সোনার ছেলেদের হাতে ছেড়ে দিল না। তাইলে তো একেবারেই হাত পা গুড়িয়ে দেয়া যেত। আহারে কি আফসোস ওনাদের!!! আপনাদের বলতে ইচ্ছা হয় বিরাট ডিগ্রি নিয়েছেন, লোক দেখানো দেশের মানুষের জন্য বিরাট কিছু করে যাচ্ছেন বলে মনে করেন কিন্তু ন্যূনতম মনুষ্যত্ব জ্ঞান আছে বলে মনে হয় না। আজকে যাদেরকে আপনারা প্রশ্রয় দিচ্ছেন একদিন এদের হাতেই লাঞ্চিত হবেন ফর শিওর।
আমি জানি আমার কথায় কারো কিছু এসে যাবে না। তানজীল এর মায়ের চোখের জল মুছে দেয়ার সামর্থ্য আমার নেই শুধু হয়ত দোয়া করতে পারি আর বলতে পারি আপনি একজন রত্নগর্ভা মা। আপনার মত এমন সুসন্তান এর মা কয়জন হতে পারে!!
বিষয়: বিবিধ
১৭৩৯ বার পঠিত, ১৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সোনার বাংলার সোনার দেশ,
বাকশালীরা করল শেষ।
তানজীল/লাবিব এর স্টাটাস-
একটি সামান্য ব্যাপারকে কত বড় করে কি নিকৃষ্ট কাজটিই না করা হল। সালাম আগে দেবার শিক্ষা তো আমাদের মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকেই আমরা শিক্ষা পেয়েছি। এই ছেলেটির স্ট্যাটাস এর সরব শেষ লাইনেও তো একই কথা লিখা আছে (যে আগে সালাম দেবে সে-ই বেশী মর্যাদার অধিকারী)। হয়তো ওর সাথে ব্যক্তিগত কোনো শত্রুতার রেশ মেটানো হয়েছে- আমি ঠিক জানি না, তাই এ ব্যাপারে কমেন্ট করাটাও আমার ঠিক হবে না। তবে ওর সাথে যা করা হয়েছে, ঠিক হয়নাই।
ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর পোষ্টটির জন্য।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
সবার সামনে মুখোশ পরে থাকা ভাল মানুষ রূপী ভবিষ্যৎ জাফর ইকবাল দের চেহারা যে কতটা কুৎসিত হতে পারে তা আমার কখনই জানা হতো না ঐ গ্রুপটা না দেখলে
পিলাচ
সত্যিই লেখাটা পড়ে চোখের পানি ধরে রাখতে পারলাম না।
আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে সিনিয়র-জুনিয়র জাতিয় বিরোধ সৃষ্টি হয় প্রায়ই। জোড় করে শ্রদ্ধা আদায় করা যায়না।
এই ভাইটির ঘটনা সেইদিনই শুনেছি। কি অভিযোগে তাকে পুলিশ আটক করল সেটা জানিনা। কিন্তু জুনিয়র কাউকে সালাম দেওয়া যাবেনা এর মত শিক্ষা যে প্রতিষ্ঠানে দেওয়া হয় সেখান থেকে কোন মানুষ বের হতে পারেনা। বের হতে পারে কেবল লোভি দানব।
মন্তব্য করতে লগইন করুন