কো-এডুকেশন : ইসলাম কি বলে.........
লিখেছেন লিখেছেন সিরাজুম মুনিরা রুমি ২২ জুলাই, ২০১৪, ০৯:৫০:১৬ রাত
কো-এডুকেশন হচ্ছে সমন্বিত শিক্ষা ব্যবস্থা যেখানে নারী পুরুষ একই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত। আঠারো শতকের আগের দিকে স্কুল গুলো সিঙ্গেল সেক্স ছিল। আমেরিকাতে ১৮৯০ এর দিকে স্কুল গুলোকে কো-এডুকেশন সিস্টেম চালু করা হয় এবং ১৯০০ সালের দিকে ৭০% হায়ার এডুকেশনে ছেলে মেয়ে এক সাথেই ভর্তি নেয়া শুরু হয়। সর্বপ্রথম ১৮৯৩ সালে ইংল্যান্ডে একটি পাবলিক বোর্ডিং স্কুলগুলো কে কো-এডুকেশন এর আওতায় আনা হয়। ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ও একই সময়ে কো-এডুকেশন চালু করে। এদিক থেকে কিছুটা দেরীতে শুরু হয়েছিল পাক- ভারত উপমহাদেশে। বৃটিশ শাসনামলে কো-এডুকেশন চালু হলেও এর প্রসার হয়েছে মুলত বিংশ শতকে এসে।
এবার আসল কথায় আসা যাক। ইসলাম নারী পুরুষ উভয়কেই জ্ঞান আহরণের বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছে। ইসলামের শুরু থেকেই জ্ঞানার্জনের উপর বিশেষকরে সমাজে মহিলাদের শিক্ষার উপরে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়া হয়েছিল।
আমি জোর দিয়ে বলতে চাই ইসলাম আমাদের নৈতিকতা, মোরালিটি, মডেস্টি এবং চারিত্রিক দৃঢ়তার বিষয়ে জোরালো অবস্থান নিয়েছে। এই বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে আমাদেরকে খুব বেশী সতর্ক হতে বলা হয়েছে অপজিট সেক্সের কারো সাথে কথা বার্তা ও মেলামেশার ক্ষেত্রে।
কো-এডুকেশন এমন একটা বিষয় যেটা নিয়ে ইসলামিক শরীয়াতে সুস্পষ্ট ভাবে কিছু বলা হয় নি। এমন কথা কোথাও বলা হয়নি কো-এডুকেশন হারাম। তবে নারী পুরুষ অবাধ মেলামেশার ক্ষেত্রে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে। একথা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই যে কো-এডুকেশন কে ইসলামের দৃষ্টিতে এভয়েড করা হয়েছে।
যারা কো-এডুকেশন এর পক্ষে কথা বলেন তারা অনেকেই বলে থাকেন ইসলামের শুরুতে মসজিদ ছিল শিক্ষার কেন্দ্র। সেখানে ছেলে মেয়ে উভয়েই যাওয়ার অনুমতি ছিল। রাসুল (সাঃ) মসজিদের বিষয়ে মেয়েদেরকে নিরুৎসাহিত করেন নি। কিন্তু আমরা একটা বিষয় খেয়াল করি, মসজিদ হচ্ছে আল্লাহ্র ঘর। সেখানে নারী- পুরুষ ইসলামের বিধান মেনে চলেন। সেখানে মেয়েরা পুরোপুরি পর্দা মেনে চলেন। আর ফ্রি মিক্সিং এর কোন সুযোগ সেখানে থাকে না। সুতরাং মসজিদের বিষয়টা ভিন্ন।
তবে আমরা যদি স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে ছেলে মেয়েদের জন্য আলাদা ক্লাসরুম বা আলাদা ক্যাম্পাস ব্যাবস্থা, মেয়েদের পর্দা এবং ফ্রি মিক্সিং যাতে না হয় এটা নিশ্চিত করতে পারি তাহলে কোন সমস্যা নেই। এছাড়া বাচ্চাদের কিন্ডারগার্ডেন মিক্সড হলেও সমস্যা নেই। আবার একটা নির্দিষ্ট বয়সের পরে যেমন পিএইচডি বা গবেষণার ক্ষেত্রে কো-এডুকেশন এ সমস্যা নেই যদি মেয়েরা পুরোপুরি পর্দা মেনে চলে এবং ছেলেরাও তাদের দৃষ্টিকে অবনমিত করে রাখে।
আমরা বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার দিকে যদি দেখি তাহলে আমরা দেখতে পাই স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে ছেলে মেয়ে অবাধ মেলামেশার কারণে নৈতিকতার কি করুন অধঃপতন। বাংলাদেশ একটি মুসলিম প্রধান দেশ হবার পরও আমরা খেয়াল করি বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছেলে মেয়েদের লিভ টুগেদার যেন ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। আর উন্নত বিশ্বের কথা তো বলার অপেক্ষাই রাখে না। ছেলে মেয়েদের এই বয়সটাতে তারা নিজেদেরকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হিমশিম খায়।
২০০৫ সালের ইউএস এডুকেশন ডিপার্টমেন্টের এক গবেষণায় বলা হয়েছে সিঙ্গেল সেক্স স্কুল গুলোতে শিক্ষার মান ভাল মিক্সড স্কুলের তুলনায় । কারণ ছেলে মেয়েরা সিঙ্গেল সেক্স স্কুল গুলোতে পড়ালেখার দিকে বেশী মনোনিবেশ করে অন্যদিকে মিক্সড স্কুলে অধিকাংশ ছেলে মেয়েরা একে অপরকে কিভাবে আকর্ষণ করানো যায় এই দিকে বেশী মনোযোগী হয়। যার প্রমাণ আমরা বাংলাদেশেও দেখতে পাই। দেশের নাম করা স্কুল কলেজ গুলো অধিকাংশই সিংগেল সেক্স স্কুল কলেজ।
এমতাবস্থায় যেখানে কো এডুকেশন ছাড়া কোন পথ খোলা নেই সেক্ষেত্রে করনীয় কি? আমরা কি তাহলে শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত থাকব? যেখানে সমগ্র বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে। আর আমরা মুসলিমরা শুধু পিছাতেই থাকব!! সারা বিশ্বে আজ মুসলিমরা নির্যাতিত এর অন্যতম প্রধান কারণ আমরা জ্ঞান বিজ্ঞান প্রযুক্তি কোনটার কদর বুঝি না। এগিয়ে যাওয়া দূরে থাক পিছিয়ে যাচ্ছি বারবার।
১। মুসলিম প্রধান দেশ হলে সে দেশের সরকারের একটা বিরাট দায়িত্ব সিঙ্গেল সেক্স এডুকেশন সিস্টেম চালু করা। সেক্ষেত্রে তারা আলাদা ক্যাম্পাস, আলাদা ক্লাস রুম বা দুই শিফটে ল্যাব চালু করতে পারে। তবে বাস্তবতা হচ্ছে দেশে ইসলাম কায়েম না হলে এবং অর্থনৈতিক ভাবে স্বনির্ভর না হলে সিঙ্গেল সিস্টেম চালু করা হয়ত স্বপ্নই থেকে যাবে।
২। বাবা মায়েরা সর্ব প্রথম চেষ্টা করবেন কিভাবে তাদের ছেলে মেয়েদের কে সিঙ্গেল সেক্স স্কুল, কলেজ এ পড়ানো যায়। বিশ্ববিদ্যালয় হয়ত সিঙ্গেল সেক্স পাওয়া কঠিন হয়ে যাবে। বাংলাদেশে মনে হয় হাত গোনা দুইটি তিনটি জায়গা আছে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে ছেলে মেয়েদেরকে পরিবার থেকেই নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে হবে।
৩। কো-এডুকেশন ছাড়া যেখানে আর কোনই উপায় নেই সেখানে মেয়েদের পুরোপুরি পর্দা মেনে চলতে হবে। ফ্রি মিক্সিং একেবারেই এভয়েড করতে হবে। হয়ত অনেকে বলে থাকেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা ব্যবস্থায় এটা একেবারেই অসম্ভব। কিন্তু আমি এটার সাথে একমত নই। কারণ নিজের ভিতরের ইচ্ছা শক্তি থাকলে আল্লাহ্ এই বিষয়টা সহজ করে দিবেন। আমি যখন বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেছি তখন দেখেছি ফ্রি মিক্সিং এড়ানো সম্ভব। হয়ত পর্দা করা মেয়েদেরকে একটু বেশী কষ্ট করতে হয়। এর জন্য প্রয়োজন মানসিক দৃড়তা। অন্যদিকে ছেলেদের জন্য বিষয়টা মেয়েদের মত এতটা কঠিন হয়ত না। তারা চাইলেই ফ্রি মিক্সিং এড়াতে পারে।
আমি নিজে বিশ্বাস করি মেয়েদের উচ্চশিক্ষার কোন বিকল্প নেই। সন্তানকে সুশিক্ষা দেয়ার ক্ষেত্রে, আদর্শ পরিবার গঠনে তথা সুন্দর সমাজ তৈরিতে মায়ের ভুমিকা অপরিসীম। সেই সাথে আমরা যদি সিঙ্গেল সেক্স এডুকেশনের স্বপ্ন দেখি, নারী বান্ধব কাজের পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাই। তাহলে আমাদের অবশ্যই নারী শিক্ষক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, বিজ্ঞানী, গবেষক এবং সমাজকর্মী দরকার। সুতরাং আপনার আমার যতটুকু সুযোগ আছে আমাদেরকে সেটা কাজে লাগাতে হবে। এগিয়ে যেতে হবে। মনের খবর আল্লাহ্ রব্বুল আলামীন ভালো করেই জানেন।
https://www.youtube.com/watch?v=Cq24YkFqrxY
http://www.renaissance.com.pk/Julq42y3.html
www2.ed.gov/rschstat/eval/other/single-sex/single-sex.pdf
বিষয়: বিবিধ
২৭৫২ বার পঠিত, ২৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
দোয়া করবেন। অগ্রীম ঈদ মোবারাক
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। দ্বিমত পোষণ করায় আমি আমার মন্তব্যটা এখন আশা করি বুঝাতে পারলাম
আপনার উপস্থাপিত (২) এবং (৩) নং পয়েন্টের জন্য বলি যে – আমাদের দেশের প্রত্যেকটা জেলায় এবং আমার মনে হয় অধিকাংশ থানা শহরেও মহিলা কলেজ রয়েছে এবং এর বেশীরভাগ-ই সরকারী; যেগুলো এখনও বাকী রয়েছে উনীতকরণে সেগুলোকে বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত করতে একটা সিদ্ধান্তের ব্যাপার মাত্র! আর শিক্ষকের অভাব নাই দেশে, শুধুমাত্র বেতন-ভাতা, সুযোগ-সুবিধা কম বিধায় বেশীরভাগ-ই এই পেশায় গমনে ইচ্ছুক না। প্রত্যেকটা জায়গায় শিক্ষকও দেয়া যাবে তাদের একটু সুবিধা দিয়ে। আর সঠিকভাবে শিক্ষার প্রসারে – এটা করাই উচিৎ।
ান্তরিক ধন্যবাদ জনগুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় অবতারনার জন্য।
সৌদি আরবে শতভাগ ইসলাম কায়েম আছে। সিঙ্গেল সেক্স এডুকেশনও চালু আছে। কিন্তু নেই শুধু মেধা। অথচ পৃথিবী শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়- হার্বাড, অক্সফোর্ড, ক্যামব্রীজ, সাংহাই, ম্যাকগিল, মাদ্রাজ........ সবই তো কো-এডুকেশন। তো??????
মন্তব্য করতে লগইন করুন