এদেশ কি অচিরেই হারিয়ে যাবে? মুক্তি কোন পথে?
লিখেছেন লিখেছেন বিবেকের কষ্ঠিপাথর ০৫ জানুয়ারি, ২০১৪, ১২:০৯:৫৬ রাত
দেশের ভবিষ্যত মুক্তি কোন পথে? এ ব্যাপারে সবাই চিন্তিত। আশা করি আমি আপনাদের চিন্তায় কিছুটা সাহায্য করতে পারি।
সরকার-বিরোধী নেতা কর্মীদের পাইকারী হারে গ্রেপ্তার, অমানুষিক নির্যাতন, মাসের পর মাস বিনাবিচারে আটক, রিমান্ড, লগি-বৈঠা দিয়ে হত্যা, অফিস ভাঙচুর, বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়া ইত্যাদি আজ প্রতিদিনের রুটিনে পরিনত হয়েছে। ‘একটা একটা শিবির ধর, সকাল বিকাল নাস্তা কর, সারা বাংলা ঘেরাও করে জামাত-শিবির খতম কর’ ইত্যাকার শ্লোগানে সারাদেশ মুখরিত করে রেখেছে এদেশের একটি পরিচিত রাজনৈতিক দল যার সম্পর্কে অন্যরা কি বলে তা বর্ণনা না করে অর্থাৎ তাকে খুঁতহীন দল ধরে নিয়েই আমার কথা বলছি।
চাল ডালের দাম আকাশচুম্বী। শেয়ার বাজারে ৫০ লাখ মানুষ নিঃস্ব-রিক্তহস্ত। শেয়ার বাজারে বিক্ষোভকারী বা আড়িয়াল বিলে এয়ারপোর্ট নির্মাণের বিরূদ্ধে রুখে দাঁড়ানো মানুষ গুলিকে বলা হচ্ছে যুদ্ধাপরাধীদের দোসর। এদেশের ৯০% লোক মুসলমান যাদের আল্লাহর উপর আস্থা ও বিশ্বাস হচ্ছে জীবন চলার চালিকা শক্তি। সংবিধান হচ্ছে গনআকাঙ্ক্ষার প্রতিশ্রুতি। সে সংবিধান থেকে যখন তা উঠিয়ে ফেলা হয় আর মানুষ তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে তখন তাদের সে আন্দোলনকে ও বিশেষিত করা হয় যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর আন্দোলন নামে। ভারতকে করিডোর দেয়া আর তেল, গ্যাস, জ্বালানির দাম বৃদ্ধির বিরূদ্ধে হরতালকে আখ্যা দেয়া হয় যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার হরতাল নামে। তাহলে কি ৩০ বছর পর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা হচ্ছে সকল অপকর্মকে শুদ্ধ করার জন্যে? শতগুন জঘন্য শত শত অপরাধের প্রতিরক্ষা হিসেবে যদি একটি ভাল কাজকে (সেটি যদি আসলেই ভাল কাজ হয়) ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়, তবে আমরা যতক্ষন পর্যন্ত সে ভাল কাজকে খারাপ না বলছি ততক্ষন পর্যন্ত সে শতগুন জঘন্য শত শত অপরাধকে আমরা অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করতে পারছিনা আর সে অপরাধের বলি হওয়া থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারবো না। সে ব্যাপারটিই আজ এদেশে ঘটে চলেছে। শত শত, হাজার হাজার কোটি টাকার দূর্নীতি হচ্ছে। এর বিরূদ্ধে বললেই যুদ্ধাপরাধীদের দোসর বলা হচ্ছে। রাস্তায় দিবালোকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে জীবন্ত মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে, সিরিয়াল কিলার খুনীকে ক্ষমা করে দেয়া হচ্ছে, বিনা পরীক্ষায় সরকারী পদে নিয়োগ দিয়ে দেয়া হচ্ছে, নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলকে কোথাও সভা-সমাবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না, আদালতে রায় দেয়ার আগেই সংবিধানে সে রায় লেখা হয়ে যাচ্ছে, সাবেক এটর্নী জেনারেলকে পুলিশ পিটিয়ে হত্যা করছে চোখের সামনে, অপছন্দনীয় যেকোন পত্রিকার সম্পাদককে ধরে বিনা বিচারে মাসের পর মাস জেলে ঢুকিয়ে রাখা হচ্ছে আর ঠুকে দেয়া হচ্ছে ডজন ডজন মামলা। কেউ টু শব্দ করতে পারছে না। করলেই সাথে সাথে কপালে চৌদ্দ শিকের বেড়ী। সুতরাং আমাদেরকে আজ যুদ্ধাপরাধের বিচার নামক এ রক্ষা কবচকে তীব্র ধিক্কারে ভেঙ্গে চুরমার করে দিতে হবে। বন্দীশালা থেকে জাতিকে মুক্ত করতে হবে। এটা করতে হবে যদি সে বিচার নিরপেক্ষ ও হয়। কারণ তাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেই দেশকে বন্দীদশায় নিক্ষেপ করা হয়েছে। সকল অপকর্মের রক্ষাকবচ হিসেবে এ বিচারকে ব্যবহার না করে নিরপেক্ষভাবে এ বিচার করলে আমার কোন আপত্তি নেই। একটি কাজ যখন ভালোর ছদ্দবেশে শতগুন জঘন্য শত খারাপ কাজের নিরাপত্তা দেয় তখন সে ভাল কাজ আর ভাল থাকেনা। আমাকেও এখন তারা যুদ্ধাপরাধীদের দোসরের কাতারে ফেলে দেবে। এই একই সমস্যায় আজ পড়েছে এদেশের প্রত্যেকটি মানুষ। তাছাড়া এ বিচার দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সকল মানবাধিকার সংগঠন কর্তৃক পক্ষপাতদুষ্ট বলে আখ্যায়িত হয়েছে। বিচারক করা হয়েছে গন আদালতের সেক্রেটারীকে। স্বাক্ষ্য ধরা হচ্ছে পত্রিকার সংবাদকে। আওয়ামীলীগের কাউকে বিচারের কাঠগড়ায় আনা হচ্ছে না। সব আসামীই বিরোধী দলের। আওয়ামী লীগের বুদ্ধিটা ভালো, তবে এটা মনে রাখা উচিত কিছু মানুষকে কিছুদিনের জন্য ধোঁকা দিয়ে বোকা বানানো যায়, কিন্তু সব মানুষকে চিরদিনের জন্য বোকা বানানো যায় না। ইকোনমিস্ট গত দুই দিন আগে (০১/০১/২০১৪ ইং-ইন্টারনেট) লিখেছে বিরোধীদল আরো বেশী সহিংসতা করতে পারলে তবেই হাসিনা ক্ষমতা ছাড়বে। জয় আজ (০৪/০১/২০১৪) বলছে কয়েকটি নির্বাচনি কেন্দ্র পুড়ালেও নির্বাচন বন্ধ করা যাবে না। তাহলে সরকার চাচ্ছে নির্বাচন বন্ধ করতে সব কটি নির্বাচন কেন্দ্র পুড়িয়ে দেয়া হোক?
আসলে একটি দর্শন মানুষ কেন অনুসরন করে? সে কেন একটি দর্শনের খোঁজ করে? দুটি কারনেঃ ১) রক্ত, বর্ণ, গোত্র আর ব্যাক্তি স্বার্থপরতার ঊর্ধ্বে মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করার আর কোন সূত্র নেই। ২) শান্তি, সুখ আর জীবনের নিরাপত্তা খুঁজবার জন্যে অর্থাৎ সুন্দরভাবে বাঁচার জন্যে। এ জন্যেই আমরা দেখি যতসকল দর্শন মানুষকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে পারে নাই বা তার সুখ, শান্তি, নিরাপত্তা দিতে পারে নাই সেসব দর্শন স্থায়ী থাকে নাই। মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহিয়ান। যে দর্শন মানুষের চেয়ে দর্শনকে বড় করে দেখে সে দর্শন টিকতে পারে নাই বেশীদিন; তবে যাবার আগে কিছু দিনের জন্য তা সে সময়ের মানুষের জীবনে নিয়ে আসে সীমাহীন দূর্ভোগ। আর যে দর্শন মানুষকে বড় করে দেখে মানুষের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করে তাই টেকসই দর্শন। ৭১ সালে যুদ্ধের পর সারা দেশে দেখা দিয়েছিল যুদ্ধের মতই গৃহযুদ্ধ, ঘরে ঘরে লড়াই। আর এ যুদ্ধ থামিয়ে সবাই মিলেমিশে একটি শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যেই শেখ মুজিবুর রহমান সাধারন ক্ষমা ঘোষনা করেন। এখনকার হাসিনা নেতৃত্বাধীন সরকার wanted to become more pious than pope! যেটা হাসিনার পিতা ছেড়ে দিয়েছেন সেটা হাসিনা ৪০ বছর পর করতে গেছেন। কারন তারা একটু over-confident হয়ে গেছেন। বুঝা উচিত সব কিছু court দিয়ে হয় না। আছে doctrine of political question যা বাংলাদেশের আদালত কম (সরি, বোধগম্য কারনে পড়তে হবে বেশী) বুঝে বলে আজ আদালতের প্রতি মানুষের সবচেয়ে কম আস্থা। এ চিত্র টিআইবি’ র রিপোর্টে উঠে এসেছে যৎসামান্য। সকল সুপ্রশাসনের মূল লক্ষ্য থাকবে যত কম ক্ষয় করে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা যায়। যে যুদ্ধাপরাধীর বিচার আরেকটি যুদ্ধের জন্ম দেয় সেটি নিশ্চয়ই বুদ্ধিমানের কাজ নয়। সে যুদ্ধে কৃত অপরাধের ও আবার বিচার হবে। তাহলে এভাবে যুদ্ধ চলতে থাকবে অবিরাম। দর্শনের পুঁটলিতে পঁচে মরবে মানুষ। তাহলে এ দর্শন দিয়ে মানুষ কি পেল? এ দর্শন কার জন্য? কার দর্শন ভালো বা মন্দ সে বিচারে না গিয়েই কথাগুলো বলছি আমি। “মোরা সারা বিশ্বের শান্তি বাঁচাতে আজকে লড়ি, মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি। যে নারীর মধু প্রেমেতে আমার রক্ত দোলে, যে শিশুর মায়া হাসিতে আমার বিশ্ব ভোলে, যে গৃহ তপতি সুখ স্বর্গের দুয়ার খোলে, সে শান্তির শিবির বাঁচাতে যুদ্ধ করি, মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি”। আমি মনে করি এর জন্যই মানুষ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। এটিই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের পাইকারী হারে নিধন আর মানুষের সুখ-দুঃখ কে না দেখে তাদের বিক্ষুব্ধ হৃদয়কে যদি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী মনে করা হয় তবে সে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা দিয়ে মানুষকে বেশীদিন ধোঁকা দেয়া যাবে না। কারন মানুষই মুক্তিযুদ্ধ করেছে তাদের ভাত ও ভোটের স্বাধীনতার জন্যে। প্রয়োজনে তারা আবার ও সে ধরনের যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়বে একটি ফুলকে বাঁচানোর জন্য। অনেকে বলবে, সে মুজিব পাবে কই? যে মুজিব সময়ের প্রয়োজনে সৃষ্টি হয়েছিল, সে মুজিব সময়ের প্রয়োজনে আবার সৃষ্টি হয়ে যাবে যেমনি ভাবে মধ্যপ্রাচ্যে কোন বিশেষ নেতা ছাড়াই দিনকয়েক পূর্বে মানুষ শতাব্দী ধরে চলে আসা শৃংখল ভেঙ্গে ফেলেছে। কারন সেখানে মানুষের চাইতে (রাজ) তন্ত্র (ism) বড় হয়ে উঠেছিল। আজ বাংলাদেশে ও মানুষের চাইতে তন্ত্র বড় হয়ে গিয়েছে। যখন কোন মতবাদবা চেতনার জন্য কোন আদর্শবাদী গোষ্ঠীকে নিশ্চিহ্ন করার কথা বলা হয় তখন সেটা করতে গিয়ে দেশটাই হারিয়ে বসতে হয় কারন মানুষকে নিয়েই দেশ। বিভেদ পরাধীনতা ডেকে নিয়ে আসে।
অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হলেই হবে, বাঁচা লাগবেনা। এসব করা হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের নামে। এগুলো এমন নয় যে বিচ্ছিন্ন ঘটনা। এগুলো এখন রুটিনে পরিনত হয়েছে। আমি লিখছি; আমাকেও হয়তো কাল থেকে জেলে থাকতে হবে। এরপর আর কি লাগবে মানুষের চাইতে তন্ত্র বড় হতে। আমি একটি ভাল পরামর্শ দিতে চাই, ‘প্লিজ, ম্যাডাম হাসিনা নেতৃত্বাধীন সরকার! এগুলো করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন করতে পারবেন না, বরং তাতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস হবে, এসব করলে একসময় মানুষ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নাম শুনলে ছি! ছি! করবে’। প্রথমেতো সবাই বলল যুদ্ধাপরাধের বিচার গনদাবী, কই, তাহলে এখন যখন হাসিনা যুদ্ধাপরাধের বিচার করলো এখন ৮০% জনগন হাসিনা বিরোধী কেন? সকল স্থানীয় নির্বাচনে হাসিনার দলের ভরাডুবি কেন? হাসিনাকে কেন অলি, রব, বঙ্গবীর, কামাল সহ সকল প্রধান দল বর্জন করলো? সুতরাং, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ইসলামের বিরুদ্ধে দাঁর করিয়ে এদেশের মানুষকে সামলাতে পারবেন না।
কোটি কোটি লোকের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠনকে ধ্বংস করে দিতে পারবেন না। হয়তো বলবেন আমেরিকা তালেবানদের তো বোমা মেরে ধ্বংস করে দিয়েছে। না, সে কথা সত্য নয়। একজন মানুষ নিজের জীবনের চাইতে অন্য কিছুকে বেশী ভালবাসেনা। অপর পিঠ থেকে একটু দেখি। একজন মানুষ সবচেয়ে প্রিয় নিজের জীবনকে ও উপায়োন্তর না দেখে বোমা দিয়ে উড়িয়ে দিচ্ছে। তার কাজটা ভুল বা শুদ্ধ সেটা পরে, কিন্তু যে জিনিসটার জন্য জীবন দিয়ে দিচ্ছে সেটিকে যে সে প্রাণের চেয়ে ভালবাসে তা নিশ্চিত। জীবন চলে যাচ্ছে কিন্তু যার ভালবাসায় জীবন দিচ্ছে তা মানুষের জন্য থেকে যাচ্ছে। তাহলে আমেরিকা মুসলমানদের নিধন করছে কিন্তু ইসলাম কি নিধন করতে পারছে? একজন মানুষ জীবন দিয়ে একটি জিনিসকে ঘৃণা করছে; সে জিনিসের প্রতি এর চেয়ে বড় উপহাস কি হতে পারে যদি সে জিনিসটি মানুষের কাছে প্রচারিত হতে চায়? ইসলাম ছাড়া আর কোন কিছুর জন্য কি মানুষ এভাবে নিজের জীবন বিলিয়ে দিচ্ছে? [আমি আগেই বলেছি নিজের জীবন দিয়ে দেয়া (কোন উপায়োন্ত না দেখে হলেও) কেমন কাজ সে প্রশ্নে আমি না গিয়েই বলছি]। যে ইসলাম অন্তত ১০০০ বছর অর্ধ পৃথিবী শাসন করেছে, যার সিকিও আজ পর্যন্ত অ-ইসলাম শাসন করতে পারে নি সে ইসলামকে মুছে দিতে পারবেন না। তাহলে কি যুদ্ধাপরাধের বিচার করে জামায়াতকে কোনঠাসা করা মানে ইসলামকে মুছে দেয়ার চেষ্টা করা? হ্যাঁ, অন্তত ইসলামের ইতিহাস বাংলাদেশে যদি কেউ লিখে তাই লিখবে কারন আওয়ামী লীগ তো ইসলাম প্রতিষ্ঠার কথা বলছে না। ‘যষ্ঠি মধু মধু নয়, জামায়াতে ইসলাম ও ইসলাম নয়’ - এটা যারা বলে তাদেরটাকে কতজন ইসলাম বলে? অন্তত সংখ্যার বিচারে জামায়াত কেই অধিকাংশ লোক ইসলাম বলে। তবে হ্যাঁ, অনেকে জামায়াতকে যুদ্ধাপরাধ ইস্যু তে দুর্বল করে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার চিন্তা করছেন যা উইলিকস এ প্রকাশিত হয়েছে। সেটা করা যেত যদি বিচারটি নিরপেক্ষভাবে করা হত, সকল দলের সব কথিত যুদ্ধাপরাধীকে বিচারের কাঠগড়ায় আনা যেত এবং পাকিস্তানের ছেড়ে দেয়া জীবিত মূল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা যেত। তাই এখন এটি বিচার না হয়ে চিহ্নিত হয়েছে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা হিসেবে। সুতরাং যদি বিচার করা হয় ও, তবু জামায়াতকে দুর্বল করা যাবে না অন্তত দেশের স্বাধীনতা ভারতের কাছে বিক্রি না হয়ে গেলে। যুদ্ধাপরাধ ইস্যুর সাথে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব একাকার হয়ে গেছে। এ কথা কেন? কারণ শুধু আওয়ামী লীগের পক্ষে এ বিচারের সবকিছু সামাল দেয়া সম্ভব নয়। এ বিচার ও যে ভারতীয় এজেন্ডা তা প্রমানিত নানান ভাবে। উইকিলিকস, হিলারীলিকস, সুজাতা সিং, সলমন খুরশিদ আর মনমোহন সিং এর বক্তব্যেই তা মোটামুটি পরিষ্কার। তাই আওয়ামী লীগকে হয় যুদ্ধাপরাধ ইস্যু বাদ দিতে হবে, অথবা দেশকে ভারতের মর্জির উপর ছেড়ে দিতে হবে। আর কঠিন হলেও বাস্তব যে, দেশপ্রেমিক জনতাকে যদি দেশকে ভারতের হাত থেকে উদ্ধার করতে হয়, তবে যুদ্ধাপরাধ ইস্যু থেকে সরকারকে সরাতে হবে অর্থাৎ এই ইস্যু থেকে সরকারকে না সরিয়ে দেশকে উদ্ধারের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হবে কারণ এটি সামাল দিতে এ সরকারকে বাধ্য হয়েই ভারতের উপর নির্ভর করতে হবে।
এখানে অনেকে বলবে, আমি আকারে ইঙ্গিতে জামায়াতের ভিতরে বিএনপি কে ঢুকাচ্ছি। আমি বলব, এটি বলে বলেই দেশের দেশপ্রেমিক শক্তিকে বিভক্ত ও দূর্বল করে ফেলে ফায়দা হাসিল করা হচ্ছে আর এ সুযোগে দেশটাকে অন্যের গোলামীর জিঞ্জীরে আবদ্ধ করে ফেলা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, জামায়াতের প্রয়োজন হলে বিএনপির কাছে যাবে আর বিএনপির প্রয়োজন হলে জামায়াতের কাছে যাবে নিজ নিজ প্রয়োজনে। এখানে কেউ কারো ভিতর ঢুকে যাচ্ছে না। পারস্পরিক সহযোগিতা মানে এক জনের আরেক জনের ভিতরে ঢুকে যাওয়া নয়। দেশ ধ্বংস হলে এর প্রভাব বিএনপি, জামায়াত সবার উপরই পড়বে আর দেশ ইসলামশূন্য হলে বিএনপির মুসলমানদের উপর ও পড়বে। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ভাষাগত পার্থক্য নেই কারন পশ্চিমবঙ্গে বাংলা আছে। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ও খুব বেশী পার্থক্য নেই। তাহলে বাংলাদেশের পৃথক অস্তিত্বের জায়গা কোনটি? ধর্ম অর্থাত ইসলাম। সুতরাং এদেশের ইসলাম রক্ষার মাধ্যমেই কেবল স্বকীয় সত্তা রক্ষা করা সম্ভব। ধর্মনিরপেক্ষতা দিয়ে উভয় দেশের সংবিধান কে এক করা হয়ে যায় যা এদেশের স্বকীয়তা পরিপন্থী। ধর্মনিরপেক্ষতার চেয়ে ইসলামই বেশী ধর্মীয় স্বাধীনতা উপভোগের নিশ্চয়তা দিচ্ছে। রাজনীতিতে ঘৃণা থাকবে, সহনশীলতা ও থাকবে। না হলে তো স্বৈরাচার কায়েম হবে। সহনশীলতাই যদি থাকে তবে রাজনৈতিক বিজয় হবে কিভাবে? সবাই সহনশীল হতে পারে না, সুতরাং সহনশীলতাই একটি রাজনৈতিক বিজয় যদি তা গনতন্ত্র হয়। জামায়াতে ইসলামী একটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল। তার সভা-সমাবেশ করার স্বাধীনতা রয়েছে। তাহলে তাকে সভা-সমাবেশ করতে না দিলে, মিছিল বের করতে গেলেই পুলিশ দিয়ে পেটালে তারা কি করবে? মানুষ তার অধিকার চর্চার বিকল্প পথ খুঁজবে। সে খুঁজেও নিয়েছে। সরকার বলছে নির্বাচনের পর তারা আরো বেশি কঠোর হবে এবং জামায়াত-শিবিরকে নিশ্চিহ্ন করে দেবে। ‘এর বেশি ভালোবাসা যায় না, ও আমার প্রাণ পাখি ময়না’ গানের মত করে আমি বলবো ‘এর বেশি কঠোর হওয়া যায় না, ও আমার গুলিপ্রিয় হায়না’। জামায়াত-শিবিরকেও তাই কঠোর হয়ে নিশ্চিহ্ন করা যাবে না। কারন এটা তো সত্য যে একজন মুসলিম আর কখনো অন্য ধর্মে ফিরে যাবে না কারণ মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী হলে এপারেই বিপদ শেষ, কিন্তু ইসলামের চেতনা বিরোধী হলে বিপদ এপারেই শেষ নয়- একজন মুসলিম অন্তত তাই বিশ্বাস করেন। তাই সে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী হয়ে হলেও মুসলিম থাকার চেষ্টা করবে। তাই আওয়ামীলীগ হয়তো এ যুদ্ধকে মনে করবে মুক্তিযুদ্ধএর পক্ষ ও বিপক্ষ শক্তির মধ্যকার যুদ্ধ হিসেবে আর ইসলামের চর্চাকারীরা দেখবে ইসলামের পক্ষ ও বিপক্ষ শক্তির মধ্যকার যুদ্ধ হিসেবে।আদর্শবাদী মানুষকে বা মানবগোষ্ঠীকে কখনো নির্মূল করা যায় না, পৃথিবীতে সেটা কখনো হয়নি; তার চিন্তা করা কল্পনা বিলাস। যখন গুলির সামনে জামায়াত-শিবির বুক পেতে দিতে শিখেছে, তাদেরকে আরো কঠোর হয়ে ও দমানো যাবে না। দমানো যায়নি ফরাসী বিপ্লবের মানুষদের, ইরান বিপ্লব, চীন বিপ্লব আর বলশেভিক বিপ্লব আর ইদানিং কালের মিশর, তিউনিশিয়া আর লিবিয়া বিপ্লবের মানুষদের। জামায়াতের লোকজনও নিশ্চয়ই মানুষ! তারাও যে মানুষের উত্তরাধিকার!
পরিসরের স্বল্পতায় উপরোক্ত লেখায় কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিস্তারিত প্রমান দিতে পারলাম না। এ লেখাটি পড়ে যেসব ব্যাপার অপ্রমানিত বা প্রমান সাপেক্ষ বলে মনে হবে তা আরো বিস্তারিত জানতে চাইলে যোগাযোগ করতে পারেন।
বিষয়: বিবিধ
২১৫১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন