টিপাইমুখ বাঁধঃ আন্তর্জাতিক আইন

লিখেছেন লিখেছেন বিবেকের কষ্ঠিপাথর ০১ জানুয়ারি, ২০১৪, ১১:১৮:৫৯ রাত

পরিবেশ সংক্রান্ত দুটি কনভেনশন হয়। প্রথমটি হয় ১৯৭২ সালে যেটা Stockholm Declaration নামে পরিচিত। দ্বিতীয় এবং সর্ববৃহৎটি হয় ১৯৯২ সালে যেটা Rio Declaration নামে পরিচিত যেখানে বাংলাদেশ ও ভারত উভয়েই যোগদান করেছিল।

Stockholm Declaration এর ২১ নং Article এবং Rio Declaration এর ২ নং Article অনুসারে কোন রাষ্ট্র এমন কোন কাজ করতে পারেনা যা অন্য রাষ্ট্রের পরিবেশের জন্য হুমকীস্বরূপ। যদি এরপরও এরূপ কোন কাজ করে তবে অভিযুক্ত রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত রাষ্ট্রকে Stockholm Declaration এর ২২ নং Article ও এর ১৩ নং Article অনুসারে ক্ষতিপূরণ কিতে বাধ্য। যেহেতু এ Declaration গুলো ভারত এবং বাংলাদেশ উভয়েই মেনে নিয়েছে তাই এগুলো বাংলাদেশ এবং ভারত উভয় দেশের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।

এমনকি ভারত Stockholm Declaration কে বাস্তবায়নের জন্য নিজ দেশে দুটি গুরুত্বপূর্ণ আইন ও করেছে। সেগুলো হলো The Air ( Prevention and Control) Act, 1981 এবং The Environment (protection) Act, 1986 । তাই বুঝাই যাচ্ছে, ভারত Stockholm Declaration দ্বারা বাধ্য অর্থাৎ সেটি নিজ দেশের আইন অনুসারেই বাংলাদেশের জন্য ক্ষতিকর কোন কিছু নির্মাণ করতে পারেনা।

ভারত Rio Declaration দ্বারা ও বাধ্য। দেশটি ১৯৯২ সালে RIO DE GENIRO তে অনুষ্ঠিত Bio Diversity Convention অনুমোদন (ratify ) করেছে ১৯৯৪ সালে যার Article ৫ এ পরিবেশ সংক্রান্ত ব্যাপারে অন্যান্য দেশের সাথে অসহযোগিতা না করে সহযোগিতা করার কথা বলা হয়েছে।

এ Convention এর Article ১৪ (ঘ) তে পরিবেশ সংক্রান্ত কোন হুমকী অর্থাৎ অন্যদেশের জীববৈচিত্র্য কে হুমকীতে ফেলতে পারে এমন কোন সম্ভাবনা দেখা দিলে হুমকী সৃষ্টিকারী দেশের অন্য দেশ কে জানানোর বাধ্যবাদকতার কথা বলা হয়েছে। ভারত উল্টা কোন তথ্যতো দিচ্ছেই না বরং কাজটি করছে অত্যন্ত গোপনে যাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ব্যাপারটি জানতে না পারে কারণ এটি আন্তর্জাতিক চুক্তির স্পষ্ট লঙ্ঘন যা ভারত নিজেই স্বাক্ষর করেছে। টিপাইমুখ বাঁধ এদেশের জীববৈচিত্র্যকে কতটুকু হুমকীর মধ্যে ফেলবে তা প্রমাণের অপেক্ষা রাখেনা। ফারাক্কা বাঁধ ই এর জ্বলন্ত স্বাক্ষী।

এ Convention এর Article ৩৪ এ বলা হয়েছে অনুমোদনকারী রাষ্ট্রসমূহ এ কনভেনশন ঊদ্ভূত obligation দ্বারা বাধ্য।

এ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ সরকার কি করতে পারে? এ সম্বন্ধে Article ২৭ এ দিক-নির্দেশনা রয়েছে। এখানে বিরোধ মীমাংসার কথা বলা হয়েছে। এ Article অনুসারে প্রথমে arbitration ও mediation এর মাধ্যমে বিরোধ মীমাংসার চেষ্টা করতে হবে। এটি হবে উভয়ের সম্মতির ভিত্তিতে। যদি তাতে ও কাজ না হয় তবে ICJ বা আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। এ কনভেনশন উভয় দেশ ratify করার কারণে এটি ICJ এর Mandatory Jurisdiction এর মধ্যে পড়বে অর্থাৎ ICJ তে মামলা করার জন্য Indiaর সম্মতির দরকার হবে না।

টিপাইমুখ বাঁধ ভারতের ঐ অঞ্চলের মানুষ ও অন্যান্য জীবজন্তুর জন্য ও ভয়াবহ বিপর্যয় ঢেকে আনবে। ভারত ২০০৮ সালের নভেম্বেরে National Bio-Diversity Action plan করেছে অন্যদিকে টিপাইমুখে বাঁধ দিচ্ছে। আমি বলতে চাই এটাই কি আপনাদের Bio-Diversity সংরক্ষনের নমুনা? এটাই কি আপনাদের সংবিধানে উল্লিখিত আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন?

আন্তর্জাতিক আইন আমাদেরকে পরিবেশ রক্ষার অধিকার দিচ্ছে। কিন্তু আমাদের বর্তমান সরকার সে অধিকার কতটুকু চাচ্ছে তা নিয়েই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। অবশ্য এ প্রশ্ন করাটা পাপ কারণ অধিকার কেড়ে কিয়েছে তো কি হয়েছে? তা করলে দাদারা করেছে! তারা স্বাধীনতা এনে দিয়েছে, আমরা কি সে ঋণ আজ ও শোধ করতে পেরেছি?

বিষয়: বিবিধ

১০৪৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File