বর্ষবরণ উদযাপনঃ আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি

লিখেছেন লিখেছেন বিবেকের কষ্ঠিপাথর ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৩, ১০:৫৪:১৩ রাত

একজন মানুষ পৃথিবীর একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলেই জন্মে। আমি জন্মেছি বাংলাদেশে। আরেকজন জন্মেছে হয়তো আমেরিকায়, মক্কায়, ভারতে বা পাকিস্তানে। জন্মস্থান নির্ধারনে তার কোনো ভুমিকা নেই বা জন্মস্থানের ও বিশেষ কোন কৃতিত্ব নেই। আমি বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রে জন্মেছি বলে আমি বাংলাদেশী। আমি আমেরিকায় জন্ম নিলে বাংলাদেশী হতাম না অথবা একজন আমেরিকান বাংলাদেশে জন্ম নিলে আমেরিকান হত না। যেখানে একজন মানুষ জন্ম নেয়, সেখানকার চারপাশের সংস্কৃতি ও ভাষাতেই (culture and language) সে বেড়ে উঠে। কিন্তু কথা হল সে যে দেশেই জন্মাক না কেন সে একজন মানুষ। সে ভিনদেশের মানুষের মতই সাধারনত দিনের চব্বিশ ঘন্টার ছয় ঘন্টা ঘুমিয়ে কাটায়, প্রাকৃতিক প্রয়োজন পূরণ করে, পেটের দায়ে রুটি-রুজি সংগ্রহে অহোরাত্র পরিশ্রম করে এবং অন্য সবার মতই মৃত্যুবরণ করে প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে। সুতরাং মানুষের স্বভাবজাত কর্মকাণ্ডগুলো দেশ, কাল ও মানুষ নির্মিত সীমানা (boundary) পেরিয়ে যায়। যেমন ধরুন, আমার ধর্ম চুলায় যাক, আমি প্রকৃতির নিয়মে মারা গেলাম। আমাকে রাষ্ট্রিক বা আঞ্চলিক নিয়মে কি করবেন? মাটিতে পুঁতে রাখবেন, না পুড়িয়ে ফেলবেন, না পানিতে ভাসিয়ে দিবেন? যদি মাটিতে পুঁতে রাখেন তবে আপনি ইসলাম ধর্মের অনুসরন করলেন, আর যদি পুড়িয়ে ফেলেন তবে হিন্দু ধর্মের অনুসরণ করলেন আর যদি পানিতে ভাসিয়ে দেন তবে পানি দূষিত করলেন। ধরুন, আমি কোন ধর্মের না। আমি শুধুই বাঙ্গালী বা আমি শুধুই বাউল বা আমি নাস্তিক (atheist) বা ধর্মনিরপেক্ষ (secular)। তাহলে কি আমাকে মরতে হবে না? যদি মরতে হয় তবে মরার পর কি হবে? । মানুষের স্রষ্টা (creator/maker) যদি মানুষ হয় তবে ধরা যায় মরার পর মানুষের কিছু হবে না কারণ মরার পর মৃত মানুষের উপর জীবিত মানুষের কোন নিয়ন্ত্রন থাকে না। মানুষের যদি অন্য কোন স্রষ্টা থেকে থাকে, তা প্রকৃতি বা অন্য কেউ, তবে মৃত্যুর পর মানুষের কিছু একটা হতে পারে কারণ তা নির্ভর করে সে স্রষ্টার ইচ্ছার উপর। পৃথিবীতে মানুষের নিকট দুটি জিনিস আছে, একটি ভাল (good) আরেকটি মন্দ (evil); একটি ন্যায় (just) আরেকটি অন্যায় (unjust)। যেমন, আমি বিনা কারনে একটি লোককে মেরে ফেললাম। এটি অন্যায় বা মন্দ। আর আমি একটি লোককে বাঘের কবল থেকে উদ্ধার করলাম। এটি ভাল বা ন্যায়ের কাজ অর্থাৎ সুকর্ম (good deed)। আমি দুটি জিনিসের প্রতিদান (fruit) একই অথবা সুকর্মের জন্য শাস্তি (punishment) এবং দুষ্কর্মের জন্য পুরষ্কার (reward) দিতে পারি কি? নিশ্চয়ই না। এটাও তো পারিনা যে, কাউকেই কোন প্রতিদান না দিতে কারণ প্রতিদান কাউকেই না দেওয়া মানে প্রতিদান একই হওয়া। আর প্রতিদান একই হওয়া মানে ভাল ও মন্দকে সমান করে ফেলা। আমরা জানি পৃথিবীতে (material earth) প্রতিদান পাওয়া যায় না বা পাওয়া গেলে ও তা যথাযথ (adequate) নয়। হিটলারের বিচার হয় নি, হবে না বুশের বিচার ও। এরকম জানা অজানা লাখ লাখ জঘন্য অপরাধীর ও। বিচার যদি হয় ও তখন একজনকে হত্যার দায়ে আপনি একজন অপরাধীকে যতবার শাস্তি দিচ্ছেন হাজার লোক কে হত্যার জন্য ও আরেক জন কে ততবারই শাস্তি দিচ্ছেন। এটা কি ন্যায়বিচার (justice) হল? যদি ও দুনিয়ার দৃষ্টিকোন থেকে এটিই ন্যায়বিচার কারণ এর চেয়ে বেশী আর সম্ভব নয় দুনিয়ার সহজাত অসম্ভবতার (inherent limitation) কারণে। অপরদিকে সুকীর্তির পুরষ্কার পায়নি জানা অজানা লাখ লাখ কীর্তিমান ও; পেলেও তা যথাযথ নয়। এমনকি দুষ্কৃতির জন্য পুরষ্কারের নজীর ও কম নয়। বিবেকবোধ (rationality), যা সকল মানুষের মধ্যেই রয়েছে, যার কারণে আমরা ভালগুলোকে পুরষ্কারযোগ্য (rewardable) এবং মন্দ গুলোকে শাস্তিযোগ্য (punishable) বলে মনে করি। দুনিয়ায় মরার আগে যেহেতু বিচার (trial) করা যাচ্ছে না বা করলেও অপর্যাপ্ত (inadequate) সুতরাং বিবেকের স্রষ্টা যদি কেউ থেকে থাকে সে প্রকৃতি বা অন্য কেউ, যেই হোক তার দায়িত্ব থাকবে মৃত্যুর পরে সে বিচারটি করার। আমাকে যেহেতু আমি সৃষ্টি করিনি তাই আমি অর্থাৎ মানুষভিন্ন সে বিবেকের স্রষ্টা যদি তা না করেন তবে তিনি সৃষ্ট সে বিবেকের কাছে দায়ী থাকবেন কারণ তখন বিবেক বলবে তাহলে আমাকে কেন সৃষ্টি করলে যার কারনে আমি শত প্রলোভন সত্ত্বেও মন্দ ত্যাগ করলাম আর শত ত্যাগ স্বীকার করেও ভাল কাজ করলাম। স্রষ্টা নিশ্চয়ই সৃষ্টির কাছে পাকড়াও হওয়ার জন্য কোন কিছু সৃষ্টি করেননি। পিতা যদি জানে তার জন্ম দেয়া শিশু পরে তাকে হত্যা করবে তবে নিশ্চয় সে শিশুটিকে জন্মই দিবেনা। সুতরাং বিবেক বলে সে বিচারটি হবে। এখন কথা হল স্রষ্টা যদি কেউ না থাকে? স্রষ্টা কেউ না থাকলে কোন না কোন ভাবে তো মানুষ জন্মেছে। তখন সে কোন না কোন ভাবের নিয়মের উপরই সে দায়িত্ব বর্তাবে। এ পরকালীন বিচারের কথাই বলা হয়েছে ইসলামে, হিন্দু ধর্মে, খ্রীষ্টান ও ইহুদী ধর্মে। এখন আমি ধর্ম বাদ দিয়ে খাঁটি বাঙ্গালী হলে কি বাঙ্গালীত্ববাদ আমাকে মৃত্যু থেকে রক্ষা করতে পারবে, না রক্ষা করতে পারবে পরকালীন সে বিচার থেকে? আমাকে বাংলায় জন্মেও বাংলা বিদ্বেষী মনে করবেন না। মনে করার কারণ রয়েছে কারণ ইদানিং সত্য কথা বললে যে রাজনৈতিক দলের পক্ষে যায় তার দোসর আর যার বিরুদ্ধে যায় তার বিরুদ্ধবাদী বলে মনে করার সিলসিলা চালু হয়েছে, সত্য কে নিজ রাজনৈতিক দলের সাথে গুলিয়ে ফেলা হয়েছে; তাই সত্য বলাই অসম্ভব হয়ে দাড়িয়েছে। আড়িয়ালবিলে, শেয়ারবাজারে বিক্ষোভকারীরা হয়ে পড়েছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাধাগ্রস্ত করার ষড়যন্ত্রকারীরূপে- আমার এ কথাটাও কোন রাজনৈতিক দলের পক্ষে আর কারো বিপক্ষে গেছে বলে আমি ও এখন সে সে দলের পক্ষে ও বিপক্ষে চলে গেছি। তাই সে সে দলের সমর্থনকারীরা বলবেন আমার পুরো লেখাটিই পক্ষপাতদুষ্ট (biased) ও পরিত্যাজ্য (abandoned)। ঠিক এ রোগেই ধরেছে আজ পুরো জাতিকে যার কারনে কোন সুপরিবর্তন (positive change) নেই রাজনৈতিক দলে ও রাষ্ট্রব্যাবস্থায় প্রায় স্বাধীনতার ৪০ বছর পরেও। যাই হোক, আমি সত্য বলেই যাব; এতে কোন সত্য অনুসন্ধানী পাঠকের এ নাম গোত্রহীন মানুষের লেখা পাঠে নষ্ট হওয়া মূল্যবান সময় কিঞ্চিত কাজে লাগতে ও পারে।

যা বলছিলাম তা হচ্ছে শুধু একটি বিশেষ ধর্ম বাদ দিলেই বাঙ্গালিত্ববাদ ষোলকলায় পরিপূর্ণ হয়ে উঠে না। আমি বাঙ্গালিয়ানার বা আমেরিকানার বিরূদ্ধে নয়। আমি বলতে চাচ্ছি আমার জীবনঘনিষ্ঠ (life concerning) প্রশ্নের উত্তরের সাথে সামঞ্জস্য রেখেই আমার সকল কর্মকাণ্ড করতে হবে সেটা বাংলা বর্ষবরণ হোক আর খৃষ্টবর্ষবরণ। আমার সে জীবনঘনিষ্ঠ প্রশ্নের সঠিক উত্তর আমার কাছে যদি মনে হয় ইসলামই দিচ্ছে তবে আমার সে সব কর্মকাণ্ড করতে হবে ইসলামের ভিতর দিয়েই। আল্লাহর পরকালীন বিচারের সময় বাঙ্গালীত্ববাদ, আমেরিকাবাদ বা কোন ব্যক্তি যেমন বাংলাদেশে অবিবাহিত ছেলেমেয়েদের মধ্যে ভালোবাসার প্রবর্তক শফিক রেহমানরা (with due respect) কোন উপকার করতে পারবে কি? না, তারা উপকার করার সে দাবী ও করেনা। এরকম ও কি হবে যে যেসব মুসলমান এহেন পন্থায় পহেলা বৈশাখ উদযাপন করেছে তাদের বিচার কোরআন ভিন্ন অন্য কোন ধর্মগ্রন্থের আলোকে হবে বা বিচার শিথিল করা হবে? যদি না হয় তাহলে আমি আমার ইসলাম কে জলাঞ্জলি দিয়ে, ইসলাম কথিত চিরস্থায়ী জীবন (perpetual/eternal life) জলাঞ্জলি দিয়ে কেন একটি দিবস উদযাপন করতে যাব? জীবন ঘনিষ্ঠ উত্তর কি তাহলে ধর্মনিরপেক্ষতা বা নাস্তিকতাবাদ দেয় না? না। কারণ ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ বা নাস্তিকতাবাদ বস্তুবাদের (materialism) উপর প্রতিষ্ঠিত। বস্তুর বাইরে আরেকটি জিনিসের নাম প্রাণ বা রূহ যা দেখা যায় না, বস্তুবাদের মাধ্যমে তাকে চলে যাওয়া থেকে রক্ষা করাও যায় না, চলে যাওয়ার পর কোথায় যায় তা ও জানা যায় না। অথচ প্রাণ মানে মানুষের জীবন। এ কারণেই একজন আজীবন নাস্তিক কে বা ধর্মনিরপেক্ষ কে ধর্ম অনুসারেই হয় কবর (engrave) দিতে হয় অথবা পুড়াতে (fire) হয়। হাসপাতালে দেহ দান একজন ধার্মিক ও করতে পারেন। আর সবার দেহ তো হাসপাতালে রাখা সম্ভব নয়। মঙ্গলশোভাযাত্রা, কপালে টিপ দেয়া যদি হিন্দু ধর্ম থেকে উদ্ভব হয় তবে সে বর্ষবরণ কিভাবে অসাম্প্রদায়িক (non-communal) হয়? তাই অসাম্প্রদায়িকতার ধ্বজাধারীরা অসাম্প্রদায়িক হতে চেয়ে ও পারে না। হিন্দুধর্মাবলম্বীদের এক্ষেত্রে ধন্যবাদ কারণ পহেলা বৈশাখের বর্ষবরণে ও তারা তাদের ধর্ম রক্ষা করেই বর্ষবরণ করেছেন। আমার প্রশ্ন তাদের প্রতি যারা নিজেদের , বলে দাবী করেন। অনেক মুসলমানের ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞতা এই পর্যায়ে পৌছেছে যে তারা বলবে, নববর্ষ উদযাপনে আমরা ইসলামের আবার কি অমান্য করলাম? এখন জানা যাক, মুসলমানদের মহান প্রভূ আল্লাহ পবিত্র কোরআনে এ ব্যাপারে কি নির্দেশ দিয়েছেন?

“আল্লাহ সত্য কথা বলতে সংকোচ করেন না। ............ তোমরা তাদের (মহিলাদের) কাছে কোন কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। এটা তোমাদের অন্তরের জন্যে এবং তাদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ।............ তোমরা খোলাখুলি বল বা গোপন রাখ আল্লাহ সব বিষয়ে সর্বজ্ঞ”। (আল আহযাবঃ ৫৩-৫৪)।

“ঈমানদার পুরুষদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাজত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে। নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ তা অবহিত আছেন। ঈমানদার নারীদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাজত করে। তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে। তারা যেন তাদের মাথার চাদর দ্বারা বক্ষদেশ আবৃত রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক, অধিকারভূক্ত দাসী, এবং নারীদের গোপনাঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ যৌনকামনামুক্ত পুরুষ ও বালক ব্যতীত কারো কাছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজসজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারনা না করে। মুমিনগন, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা করো যাতে তোমরা সফলকাম হও”। (সূরা আন-নূরঃ ৩০-৩১)।

“যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় করো তবে পরপুরুষের সামনে কোমল ও আকর্ষণীয় ভঙ্গীতে কথা বলোনা যার ফলে সে কুবাসনা করতে পারে যার মনে ব্যাধি আছে। ............. তোমরা মূর্খতা যুগের ন্যায় নিজেদের প্রদর্শন করে বেড়াবে না। আল্লাহ কেবল চান তোমাদের অপবিত্রতা থেকে দূরে রাখতে এবং পূত-পবিত্র রাখতে। .................. যৌনাঙ্গ হেফাযতকারী পুরুষ ও নারীদের জন্য আল্লাহ প্রস্তুত করে রেখেছেন ক্ষমা ও মহাপুরষ্কার”। (আল আহযাবঃ ৩২-৩৫)। এ আয়াতটি নবী-পত্নীদের উদ্দেশ্য করে নাযিল হলেও সকল নারীদের জন্যই তা সমানভাবে প্রযোজ্য কারণ অন্য মুমিন নারীদের ক্ষেত্রে ও আল্লাহ চান না তারা অপবিত্র থাকুক।

মুহাম্মদ (স) বলেছেন, “কোন নারী যদি সুগন্ধি মেখে বের হয় এবং কোন পুরুষ তার সুগন্ধ পায় তবে সে মহিলা যেন যিনা করল”। (সহীহ সনদ সহ মুসনাদ আহমদ, সুনানে তিরমিজি, সুনানে নাসাঈতে বর্ণিত)

মুহাম্মদ (স) আরো বলেছেন, “তোমার যে নারীকে স্পর্শ করার অনুমতি নেই তাকে স্পর্শ করার চাইতে তোমার মাথায় লোহার পেরেক ঢুকিয়ে দেয়া তোমার জন্য অনেক উত্তম”। (তাবারানি, সহীহ আল জামি, ৫০৪৫)

আপনি পহেলা বৈশাখ, বসন্তবরণ বা থার্টি ফার্স্ট নাইট বা বিজয় দিবস বা জন্মদিন বা বিবাহ উৎসব উদযাপন করছেন অথবা আপনি (পবিত্র!) প্রেম করছেন। যে নামেই হোক না কেন দেখার বিষয় হচ্ছে সেটা আপনি কিভাবে উদযাপন করেছেন, সেটা কি আল্লাহ নির্ধারিত বিধি লঙ্ঘন করে, না করেনা? যদি লঙ্ঘন করে তবে আপনি যে নামই দেন না কেন তা আল্লাহর নিকট গ্রহনযোগ্য হবে না। একবার একব্যক্তি মুদি দোকানে গেলেন চিনি কিনতে। মুদিকে চিনির কথা বললে তিনি একটি বস্তার দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করে ক্রেতাকে পুঁটলিতে তা ভরতে বললেন। ক্রেতা শুধালো, ঐ বস্তায় তো লবণ লেখা। মুদি তখন বলল, আরে না, সেখানে চিনিই আছে, পিঁপড়া যাতে না উঠতে পারে তার জন্য আমি উপর দিয়ে লবণ লিখে রেখেছি। চিনির উপর লবণ লিখে পিঁপড়াকে ফাঁকি দেয়া যাবে কিনা আমি জানিনা, তবে আমি এটা জানি যে নিছক উপর দিয়ে নাম বা লেবেল লাগিয়ে মানুষের মনের গহিনের খবর সংরক্ষণকারী মহান আল্লাহকে ফাঁকি দেয়া যায় না। অন্তত একজন মুসলিম তাই বিশ্বাস করেন। আমরা দেখেছি ছেলেমেয়েরা সেদিন কিভাবে চলেছিল। কিভাবে রাস্তায়, রিক্সায়, ট্যাক্সিতে, বাসে, বারে, নাইটক্লাবে, ফ্যান্টাসি কিংডমে, কনসার্টে, সী বীচে, পার্কে জড়াজড়ি করে দুজন অবিবাহিত নারী পুরুষ চলাফেরা করছিল। সেদিন তাদের মধ্যে দৈহিকভাবে যা ইচ্ছা তা করতে কোন সংকোচ কাজ করেনি। গ্রামের মানুষকে বলছি, বিশ্বাস করুন! সত্যিই সেদিন যা ইচ্ছে তা করতে তাদের মধ্যে কোন সংকোচ কাজ করেনি। শহরের বিশেষতঃ ঢাকার মানুষকে এভাবে বিশ্বাস করানোর প্রয়োজন নেই কারণ তারা স্বচক্ষেই দেখেছেন সব। তবে তাদের মধ্যে ও রকমফের আছে। কেউ কেউ মুখ খুলতে চান না কারন তিনি এসব অশ্লীলতা মানতে চাননা আবার তা পরিবর্তন করতে পারার অক্ষমতা ও প্রকাশ করতে চাননা। আবার কেউ আছেন যারা এসব অশ্লীলতাকে প্রগতির ও আধুনিকতার পথে একধাপ অগ্রগতি বলে মনে করেন এবং তারা বলবেন কই এরকম খারাপ কিছু তো দেখিনি। আমি তাদেরকে বলব এর চাইতে একজন নারী বা পুরুষ বেশি কি করতে পারে। নারী তার দেহের আর কি দেখাতে পারে? তাতে আছে কি? একজোড়া স্তন আর জননেন্দ্রিয়টি ছাড়া? সেগুলো তো বাইর থেকে স্বচ্ছ পোশাকে দেখিয়েই বেড়ানো হয়েছে। এর চাইতে কতটুকু আর খারাপ হতে পারত? তার ও ভেতরে আছে রক্ত আর কৃমি। খুলতে খুলতে এমন অবস্থা যেন সেদিকেও যাওয়ার প্রাণান্ত প্রচেষ্টা! যাদের কাছে নগ্নতাই অশ্লীলতা নয় তাদের কাছে খারাপ বলতে কিছু নেই। বিনয়ের সাথে বলছি, তাদের জন্য এ লেখা নয়। আবার কেউ ইসলামহীনতার ও ইসলামের অপমানের মধ্যে অসাম্প্রদায়িকতার বড় উল্লম্ফন দেখতে পান। অনেকে এ প্রজন্মের এতটা অধঃপতন দেখে রাগে-ক্ষোভে-দুঃখে বাকরূদ্ধ হয়ে কিছু বলতে পারছেন না। কেউ আছেন এ অধঃপতনের বর্ণনা লজ্জায় দিতে পারছেন না। এ ভদ্রলোকদের আমি শ্রদ্ধা জানাই তবে যে লজ্জা নির্লজ্জতার পথ সুগম করে সে লজ্জাকে আমার ঘৃণা করতে কোন লজ্জাবোধ নেই। অন্যদের মধ্যে কেউ বোঝার বয়সে পৌছান নি আর কেউ হয়তো সব কিছুকে ভাগ্যের উপর ছেড়ে দিয়ে যমের অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন। একজন বিবাহিত নারীপুরুষ যা করতে পারে তার সবটুকুই সেদিনকার নারী-পুরুষগুলি করতে চেয়েছে। সর্বশেষ যা বাকি থাকে তাও করত যদি রাস্তায়ই সেরকম একটু নিষ্কন্টক জায়গা আমরা করে দিতে পারতাম তখন মানুষ ও জীবে আর কোন তফাত থাকতনা; মানুষ হতে পারত পুরোপুরি স্বাধীন!! মানুষের ঘর রাখার সর্বপ্রধান প্রয়োজনটুকু শেষ হয়ে যেত। সেটুকু করতে না পারার ব্যর্থতার জন্য প্রগতি ও আধুনিকতাকে সারাটি বছর আক্ষেপ করেই যেতে হবে। আশা করি পরের বছর হয়তো সে গ্লানি মুছে ফেলা সম্ভব হবে। পত্রিকায় ভিডিও দেখানো যায় না, তাই সেটা পাঠককে দেখাতে পারতেছি না। সেদিনকার বর্ণনা কাগজ থেকেই জানা যায়। পহেলা বৈশাখের পরের সংখ্যার আমার দেশ পত্রিকান্তরে জানা যায় পহেলা বৈশাখের দিন শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টি,এস,সি তেই প্রকাশ্যে লাঞ্ছিত হয়েছে ১৩ জন নারী। আর কত হাজার জন ভীড়ের ভিতর শারীরিক দলন-মর্দনের শিকার হয়েছেন তা জানা যায় না কারণ সে নির্যাতন শান্তিপূর্ণ এবং অসম্মতিহীন। একেই বলে (ব্যক্তি) স্বাধীনতার সুখ, অসাম্প্রদায়িকতার সুখ, সমান হওয়ার সুখ। চর্ম ও যৌন বিভাগের কোন বইই নারীর বক্ষকে যৌন অঙ্গের বাইরে গন্য করেনি। নারী-পুরুষের অবাধ সমাবেশে সে অঙ্গটি কোথায় থাকে? সেসকল নারী তো নারী নয় পুরুষ কারণ সে ও তার স্পর্শকাতর অঙ্গটি সবার জন্য উন্মূক্ত করে দিয়েছে। পুরুষের দেহ স্পর্শ করা দোষের না হলে এই ভীড়ে সে সমস্ত নারী রূপী পুরুষকে স্পর্শ করা দোষের হবে কেন? বক্সিং খেলায় অংশ নিয়ে আমি বলতে পারিনা আমাকে ঘুষি দেয়া যাবেনা। বাসে উঠে আমি বলতে পারিনা আমার কাছ থেকে ভাড়া নেয়া যাবেনা। এগুলো হচ্ছে নিহিত সম্মতি (implied consent)। যদি সেটা দোষের হয় ও তাকে আমরা আইন অনুসারে পারস্পরিক বা অংশগ্রহনমূলক দোষ (contributory offence) ধরি। সুতরাং এসব নারীরা যে পুরো নারী জাতিকেই প্রতিনিয়ত অপমানিত করছে তা কি তারা একটুও খেয়াল করছে? উপরতলার ভদ্রলোকরা কি একটু চিন্তা করছে যে তারা আধুনিকতার নাম করে আসলে (আধুনিকতার ফেরিওয়ালাদের কথিত) আদিম অবাধ যৌনতার দিকেই যাচ্ছে?

আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী এসব অবৈধ কর্মকান্ডগুলো নির্বিঘ্ন করতেই পাহারা দিচ্ছে, অথচ তাদের দায়িত্ব ছিল তা বন্ধ করার। আজ পর্যন্ত ও রাষ্ট্রধর্ম কিন্তু ইসলাম আর আল্লাহর উপর আস্থা ও বিশ্বাস, নৈতিকতা রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি। কুদরাত ই এলাহি পনির বনাম বাংলাদেশ [44 DLR (AD) 319] মামলার মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের আপিলেট ডিভিশনে সিদ্ধান্ত হয় যে রাষ্ট্রপরিচালনার মূলনীতি বিরোধী সকল কর্মকান্ড রাষ্ট্র বন্ধ করতে পারে এবং তা রাষ্ট্রের কর্তব্য। আমরা রাষ্ট্রকে জিজ্ঞেস করি, হে রাষ্ট্র তুমি সে দায়িত্ব কতটুকু পালন করেছ? উপরোক্ত কর্মগুলো অবশ্য আমাদের প্রতিদিনই রাস্তাঘাটে দেখতে হয়। ছেলেমেয়েরা (পবিত্র!) প্রেম করে। কিভাবে করে? তারা দুজনে একত্রে রিক্সায়- গাড়িতে বসে একে অপরকে আদর করে, চুমু খায়, জড়াজড়ি করে ঈদের মতই আলিঙ্গণ করে দুজনে। বারে যায়, হোটেলে যায়, যায় খোলা পার্কে। পার্কে তাদের রাত-দিনের কর্মকান্ড খোলাখুলি স্বচক্ষেই দেখি আমাদের মত ভদ্ররা। এটা হচ্ছে আমাদের মত সাচ্চা ভদ্রদের ছেলেমেয়ে বা ভাইবোনদের (পবিত্র!) প্রেম। এটা যেন ছেলেমেয়েদের কর্তব্যে পরিনত হয়েছে। এসবকিছু হচ্ছে প্রেমের নাম দিয়ে। এটার সাথে আল্লাহর আয়াতগুলি মিলিয়ে দেখুন। মিলাতে যাওয়াটাও একটা হাস্যকর ব্যাপার যেখানে আল্লাহ বলছেন তোমরা দৃষ্টি নত রাখ আর তারা বিবাহ ছাড়াই একে অপরকে প্রকাশ্যে চুমু খাচ্ছে। যেখানে আলাহ বলছেন তোমরা তাদের কাছে কোন কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাও, আর তারা পার্কে, কন্সার্টে নাচানাচি করছে। আল্লাহ বলছেন তোমরা সবকিছু ঢাকার পর চাদরের কীয়দংশ বক্ষের উপর ফেলে রাখ, সেখানে তারা বক্ষদেশ কার কতটুকু উঁচু বা নিচু তা প্রদর্শনীর প্রতিযোগিতায় মত্ত। যেখানে আল্লাহ ব্যাভিচারের শাস্তি রজম বা মৃত্যুদন্ড লিখে দিয়েছেন সেখানে তারা কত মজা করে বিবাহবহির্ভূত যৌনতা উপভোগ করেছে আর তা বর্ণনা করছে যায় যায় দিনের মত ম্যাগাজিনে, চটি বইতে; তারা হোটেলে, বারে রাত কাটাচ্ছে, বিজ্ঞাপন দেওয়া হচ্ছে হিরো থাকলে রিস্ক নেই। রাসূল (স) এর ভাষ্য- সুগন্ধি মেখে বাহির হওয়া কে যিনার সাথে তূলনা আর একাকী ছেলেমেয়ের মেলামেশাকে নিষিদ্ধ বলাটা তো একেবারেই হাস্যকর ব্যাপার। দেখুন আমাদের দেশটি কতটা ভয়াবহ স্থানে চলে গেছে। কোরআনের পতাকাধারীদের তো একটু বেশীই লজ্জা। এসব বর্ণনা করে এগুলো বন্ধ করার চেষ্টা করলে অন্যরা আবার যদি বেশরম বা সাম্প্রদায়িক বলে!

এমন পাতলা পোশাক পরিধান করা এখন এদেশের বিশেষতঃ শহুরে নারীদের ফ্যাশনে পরিনত হয়েছে যার মধ্য দিয়ে শরীরের কোন অংশই দেখার বাকী থাকেনা, পাহাড়, পর্বত বা গিরিখাত। আমাকে অশ্লীল বলবেননা, প্লিজ। আমার কথা যদি মিথ্যা হয় তবে আমাকে দোষারোপ করবেন, যদি সত্য হয় তবে আমাকে অশ্লীল না বলে যে বাস্তবে তা করছে বা যারা বাস্তবে তাদের নিজ চক্ষে আড়ভাবে বা সোজাসুজি দেখছেন বা যাদের মা-বোন-বৌদের সেভাবে চলতে দিচ্ছেন তাদের অশ্লীল বলুন। প্রতিদিন রাস্তাঘাটে, বাসে, পোস্টারে আমরা যেসব দেখি বা হাতে লিফলেট পাই সেগুলোকে অশ্লীল বলুন। লিঙ্গ হঠাত নিস্তেজ, স্ত্রী মিলনে ভয় পাচ্ছেন, বক্ষ বড়, আকর্ষণীয় ও সুঢৌল করা হয় সম্বলিত পোস্টার, লিফলেট। সেগুলোর বিরুদ্ধে তো কোন প্রতিবাদ-ঘৃণা দেখিনা। তাতে আমরা নিরেট ভদ্ররা নীরবে সম্মতি দিয়ে চলেছি অম্লানবদনে। হিন্দী চ্যানেল ছাড়া কোন ঘরে কোন টিভি চলেনা। কিন্তু সেখানে বাচ্চা, মা-বাবা, ভাই-বোন, ভাগ্নে- ভাগ্নীদের নিয়ে কি দেখছেন? দেখছেন শাহরুখ খান, অক্ষয়, অনিল, অভিষেক কিভাবে ক্যাটরিনা, ঐশ্বরিয়া, মাধুরী, বা দীপিকার ৯৯ ভাগ নগ্ন দেহের প্রতিটি অঙ্গ ধরে ধরে চুষে খাচ্ছে, গড়াগড়ি করছে। একটা মেয়ের সাথে একটি ছেলে আর কি করতে পারে? এগুলো একত্রে বসে দেখার পরে বাবা-মেয়ে, মা-ছেলে, ভাই-বোনসহ অন্যান্য সম্পর্ক কোথায় যায় তা কি আমরা একটিবার ও ভেবে দেখেছি? আমরা ভাই বোন খুব ফ্রি অনেকসময় এরকম কথাগুলো বলতে শুনা যায়। তাহলে সেক্সটাও ফ্রি করতে সমস্যা কোথায়? ৯০% মুসলমানদের আবাসভূমি পুরোটাই যেন একটি ফ্রি সেক্সের দেশে পরিনত হয়েছে। এখানে যারা ফ্রি সেক্সের শিকার তারা আমরা ভদ্ররা, ভদ্রদের ভদ্র মা, বোন, স্ত্রীরা। এসব ভদ্রতা দেখে পাশ্চাত্যের পামেলা, ব্রিটনি, শাকিরা, কার্লা ব্রুনিরা যারা প্রথম বা দ্বিতীয় সন্তান নেয়ার আগে বয়ফ্রেন্ডের সাথে বিয়ের কথা ভাবেননা বলে অভিরুচি প্রকাশ করেন তারাও লজ্জা পাবে। আমরা সহজেই বুঝি একটি আকর্ষণীয় বস্তু অর্ধেক উন্মূক্ত রাখা পুরোটার চাইতে বেশী আকর্ষণীয় ও কৌতুহলপূর্ণ। একটি মর্মস্পর্শী কাজ অর্ধেক করে রেখে দেয়া আরো বেশি মর্মস্পর্শী। একটি মানুষ উপর থেকে পড়ে মারা গেল। আর ধরুন, একটি মানুষ ছাদের কার্ণিশ ধরে ঝুলে আছে, আপ্রাণ চেষ্টা করে চলেছে বাঁচার জন্য কিন্তু কোন রকমেই উপরে উঠে যেতে পারছেনা। দুটি দৃশ্য দেখুন। আপনার কাছে কোনটা বেশি কৌতুহলপূর্ণ, চাঞ্চল্যকর? অর্ধনগ্নতাও তাই। নগ্নতার চেয়ে অর্ধনগ্নতা আরো বেশি আকর্ষনীয় অর্থাৎ অর্ধনগ্নতা নগ্নতার চাইতে বেশি নগ্ন। মিষ্টির প্রতি বিশেষভাবে কাতর লোকদের বলছি। আপনারা মিষ্টি খেলেন। আর ধরুন মিষ্টি আপনার মুখের সামনে খরে রাখা হল। কোন ক্ষেত্রে আপনার জিভে বেশি পানি আসবে? নিশ্চয়ই মুখের উপর ধরে রাখলে, তাই নয়কি? তেঁতুলের প্রতি বিশেষভাবে সংবেদনশীল লোকদের বলছি। তেঁতুল আপনি খেলেন। আর ধরুন, আপনার মুখের উপর তেঁতুল ধরে রাখা হল। কোনটি আপনার জিভে বেশি জল উৎপাদন করবে? আপনিই বলুন? রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছুটি গল্পটিতে একটি ঘটনার উল্লেখ আছে যেখানে দেখা যায় ফটিকের ভাই মাখন গাছের গুঁড়ির উপর বসে আছে যেটি দুষ্ট বালকদিগের সর্বসম্মতিক্রমে মালিকের অগোচর করার জন্য স্থানান্তর করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। নাছোড়বান্দা মাখনকে অনেকবার বলা সত্ত্বেও না উঠায় সিদ্ধান্ত হল তাকে সুদ্ধই প্রকাণ্ড শালকাষ্ঠটিকে গড়িয়ে নেয়া হবে। এতে সুবিধা হল মাখনকে ও উঠানো লাগলো না আর গুঁড়িটিকেও সরানো গেলো। এতে রথ দেখা হল ও কলা ও বেচা হল, সাপ ও মরে লাঠি ও ভাঙ্গে না। মাখনের যে অবস্থা হবে সেটি উপলব্ধি করেই সবার সম্মতি। কাঁচের মত স্বচ্ছ পোশাক পরিধানের উদ্দেশ্য ও তাই যেখানে পোশাক যে পরেছে তাও সবাইকে দেখানো যাবে আর দৈহিক গিরি-খাতের নৈসর্গিক লীলাভূমি ও দেখানো যাবে। সেটা দেখানোর উদ্দেশ্য কি? তার উত্তর পাওয়া যাবে ছুটি ছোটগল্পেই। উল্লিখিত ঘটনাটির পূর্ব লাইনেই লেখা হয়েছে কেন বালকেরা গুঁড়িটিকে সরানোর সিদ্ধান্ত সর্বসম্মতিক্রমে নিল। গুঁড়িটির মালিকের আবশ্যককালে মাস্তুল তৈরী করবার সময় গুঁড়িটি না পাওয়ার পর কতটুকু অসুবিধা, বিরক্তি উৎপাদিত হতে পারে সে আনন্দের কথাটি সবার মনে বর্তমান থাকায়ই সবাই সেটিকে স্থানান্তর করার সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নিল। খোলামেলা চলতে উতসাহী নারীদের ও তাই। এ ধরণের পোশাক পরলে একজন সক্ষম পুরুষকে কি পরিমাণ মানসিক কষ্ট, যন্ত্রণা, অস্থিরতা তাড়া করে বেড়াবে তা উপলব্ধি করেই নারীদের এমন নিষ্ঠুর সমাজ বিনাশী পরিধান। মনে হয় যেন একজন পুরুষের এ ধরনের কষ্টে সে স্বর্গসুখ লাভ করে। আমি এমন নারীকে বলি আপনি এতে স্বর্গসুখ লাভ করায় কি অন্য সকল দুঃখমোচন হয়ে যায়? সকল চাহিদা কি পূর্ণ হয়ে যায়? সকল না পাওয়ার বেদনা কি চুকে যায়? যদি তা না হয় তাহলে আমার বিনীত পরামর্শ আপনি আমাদের প্রজন্ম ধ্বংস করবেন না। সে অধিকার আপনার নাইও। আপনাদের যারা স্ত্রী, মা, বোন, বা মেয়ে আছে তাদেরকে বলুন তারা যেন সমাজটাকে একটি অসভ্য সমাজে পরিণত করার ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন না করেন। আসলে সমস্যা হচ্ছে একজনের কাছে যে ঢিল ছোঁড়া শুধুই খেলা বা দুষ্টুমি সে ঢিল ব্যাঙের কাছে জীবনবিনাশী। মৃত্যুযন্ত্রণার কথা যদি ঢিল ছোঁড়া বালকটি জানত? কারো পৌষ মাস, কারো সর্বনাশ। কিন্তু এভাবে চললে এসব দুষ্ট নারীদিগের কি কোনই সমস্যা হয় না? না, তেমন কিছু না, একটু ইভটিজিং আর কি! আর মাঝে মাঝে দু-একটি আত্মহত্যা। সমাজকে অস্থির করে আপনি পার পাবেননা কারণ যৌতুক নিয়ে আপনি মনে করেন বিরাট কিছু অর্জন করেছেন। সে অর্জন ফিকে হয়ে যায় আবার যখনই আপনার বোনকে বিয়ে দিতে যান। আপনি আপনার দেহসৌষ্ঠব দেখিয়ে আরেকজনের ভাইকে নষ্ট করবেন, আরেকটি মেয়েও আপনার ভাইটিকে নষ্ট করবে। এভাবেই চলছে। আর পুরো সমাজ হচ্ছে কলুষিত, একজনের আরেকজনের উপর থেকে উঠে যাচ্ছে বিশ্বাস নামক সোনার হরিণটুকু।

যেখানে সেখানে ছেলে মেয়েরা একজন আরেকজনকে প্রকাশ্যে চুমু খাচ্ছে, হাত ধরে চলছে। আবাসিক হোটেলগুলোর অবস্থা আরো খারাপ। বাস না পেয়ে আমি হেঁটে হেঁটেই মগবাজার থেকে মালিবাগ যাচ্ছিলাম। একটি আবাসিক হোটেল সামনে পড়তেই একজন লোক আমাকে অশ্লীল একটা প্রস্তাব দিল। আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম। পরে আমার বন্ধুদের সাথে আলাপে জানতে পারলাম প্রায় সব হোটেলেরই নাকি এ অবস্থা। একবার ধর্ষণের সেঞ্চুরীর জন্য খ্যাত ক্যাম্পাস জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি গেলাম। সেখানে দেখলাম গাছের ফাঁকে ফাঁকে স্থানে স্থানে পড়ে আছে ব্যবহৃত কনডম। আমাকে অনেকে অশ্লীল বলবে শুধু এসব বর্ণনা করার কারণে। মেকী লজ্জায় আমি বিশ্বাস করিনা। স্ট্রস কান ও ভদ্র ছিলেন, ভদ্র ছিলেন ক্লিনটন, নিতান্ত ভদ্র মেয়ে ছিল আমাদের মডেল প্রভা ও। এ মেকি ভদ্রতার আবরণ ভিতরের নোংরামীকে ঢেকে ভবিষ্যতে নোংরামী আরো বেশি করে করবার জন্য। বর্ণিত অশ্লীল কাজটি করা বা তা চেয়ে চেয়ে দেখা অশ্লীল নয়, শুধু অশ্লীল হয় সচেতন করার জন্য তা বর্ণনা করলে। রাস্তায় পিটিয়ে মানুষ মারলে তা খুব বেশি বিভৎসতা হয় না, যতটা তা অন্যকে দেখালে। কারণ পাছে আবার গনরোষ জেগে উঠে বা আবার একই কর্ম করার পথ বন্ধ হয়ে যায়। ঠিক যেন নাৎসি বাহিনীর কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পের মত যেখানে পৈশাচিক কায়দায় মানুষ হত্যা করাটা যতটা বিভৎস তার চেয়ে বেশী বিভৎস হিসেবে গন্য তা বাইরে প্রচার করা বা দেখানো। প্রতিদিন পত্রিকার পাতা খুললে দেখা যায় গৃহবধূকে পালাক্রমে ধর্ষণ, গনধর্ষণ, হোটেল থেকে ১০০-২০০ পতিতা খদ্দের আটক। গত জুলাই, ২০১১ এর ১৬ তারিখে খবরে প্রকাশ সাভারের আবাসিক হোটেল থেকে অসামাজিক কাজে লিপ্ত অবস্থায় ৩৮ তরুণ-তরুণীকে আটক করেছে পুলিশ যার অধিকাংশই স্কুল কলেজের ছাত্রী। আমরা এতদিন ধরে জানতাম, গার্মেন্টস কর্মীরাই এসব অশ্লীল কাজ করছে। এসব কারা? এদেশের লোক নয়? পত্রিকায় এসব পড়া যায় প্রতিদিন। পড়া যায় রাস্তার ধারের যৌন চটি বই। সেগুলো অশ্লীল নয়, অশ্লীল শুধু তার বিরূদ্ধে লেখাটা। শত্রুকে ঘায়েল করার জন্য অতি জৈবিক মানুষটি হঠাত করে অতি ব্রাত্য হয়ে উঠে, অতি নিষ্ঠুর মানুষটি অতি মানবিক হয়ে উঠে। জালিমরা যুগে যুগে এ অস্ত্রটি ব্যবহার করেই সরল মানুষকে বোকা বানিয়েছে। ইসরাইল শিশুর হাতে পাথর দেখিয়ে বিশ্বকে দেখাচ্ছে একজন ফিলিস্তিনি শিশু থেকেই কিভাবে সন্ত্রাসী হয়ে উঠে। অপরপক্ষে সে শিশুটির বাবাকে যে মেরে ফেলা হয়েছে, মাকে বোনকে যে ধর্ষণ করা হয়েছে তা কি তখন দেখানো হয়েছে? কোরআনের নারীনীতি বিরোধী আন্দোলনে দেখানো হয়েছে শিশুকে আন্দোলনে আনা হয়েছে। কিন্তু শিশুর হাফেজ ভাইটিকে যে এর আগে যশোরে পুলিশ নিষ্ঠুরভাবে মেরে ফেলেছে তা কি দেখানো হয়েছে? আমার এবার আর রক্ষা নেই কারণ আমি কারো কারো বিরুদ্ধে বলেছি। খুব সম্ভব প্লেটো বলতেন, আমি হয়তো তোমার মত সমর্থন করিনা, কিন্তু তোমার মত প্রকাশের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আমি আজীবন সংগ্রাম করে যাবো। কেন, কারো কি সরকারের নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার অধিকার নেই; সে যেই হোক? নারীনীতি যদি সত্যিই ইসলাম-বিরোধী হয়ে থাকে (ইসলাম বিরোধী কিনা তার আলোচনা অন্যত্র), কোরআনকে লাথি মেরে কোরআনবিরোধী আইন যদি করা যায় তবে পুলিশের লাঠির আঘাতে কোরআন হাত থেকে পড়লে আইনপ্রণেতাদের কোরআনের প্রতি মেকী ভালোবাসা দেখানো মানুষকে ধোঁকা দিয়ে সত্য খুঁজতে বাধা দেয়া ছাড়া আর কিছু নয়।

সৎ লজ্জাশীলদের বলবো, মনে মনে আমরা সকলেই যা জানি, না বললেও সে সবাই যে জানে তা বাহির থেকে বুঝা যায় যখন দেখা যায় বিয়ের কিছু দিন পরেই প্রত্যেক বিবাহিতেরই বাচ্চা আসে। নিশ্চয়ই তা সকল স্তন্যপায়ী প্রাণীর যেভাবে আসে মানুষ নামক জীবের ও সেভাবে আসে। যে অশ্লীলতার কথা জানি বা চোখে প্রকাশ্যে দেখি সে অশ্লীলতা বন্ধের জন্য মুখ ফুটিয়ে আহবান জানানোর মধ্যে আমি শুধু দোষ দেখিনা তাই নয়, কর্তব্য ও মনে করি। বরং সেসময় নিরবতাকেই আমি দোষের মনে করি। আমার কাছে যা লজ্জার, একজন ডাক্তারের কাছেও তা লজ্জার মনে হওয়া নিশ্চিতভাবেই রোগীকে সংকটাপন্ন করে তুলবে। এ সংকট অবস্থাই এখন চলছে এদেশে। ছেলের কাছে যা লজ্জার তা বাবার কাছে লজ্জার নাও হতে পারে প্রয়োজনের তাগিদে। এমনকি আগেকার দিনে যাকে লজ্জার বলে ভাবা হত তা এখন আর ভাবা হয় না। ক্লাসিক্যাল যুগের সাহিত্য পড়ুন আর তা বর্তমান সমাজের সাথে মিলিয়ে দেখুন, কত পার্থক্য! পোশাকের নিচে কি আছে তা আমরা সকলেই জানি, তবু আমরা পোশাক পরিধান করি। কি জন্যে? প্রয়োজনে। প্রয়োজনেই আমার অশ্লীল হওয়া। এখন প্রশ্ন হল এ অবস্থা থেকে উত্তরণের আদৌ প্রয়োজন আছে কিনা? প্রশ্নটি এদেশের মুসলমানদের নিকট যারা কোরআনকে সত্য বলে জানেন।

যিনা এমন একটি কবিরা গুনাহ যা আল্লাহ খুব কমই ক্ষমা করেন। এর শাস্তি ভয়াবহ। দুনিয়ায় পাথর মেরে হত্যাই যার শাস্তি। আখিরাতে জাহান্নামের শাস্তি কেমন হতে পারে তা অনুমানের জন্য নিম্মোক্ত আয়াতগুলো কিছুটা সাহায্য করতে পারে।

আল্লাহ বলছেন, “হে মুসলিমেরা, তোমরা তোমাদের নিজেদের এবং নিজের পরিবারদের জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচাও, জাহান্নামের ইন্ধন হচ্ছে মানুষ এবং পাথর”।(কোরআনঃ ৬৬-৬)

মুহাম্মদ (স) বলেন, “জাহান্নামের মধ্যে সবচেয়ে কম শাস্তি যার হবে তার পায়ে একটি আগুনের বেড়ী পরানো হবে যাতে তার মাথার মগজ কড়াইয়ে ফুটন্ত পানির ন্যায় ফুটতে থাকবে আর সে ভাববে তাকেই সবচেয়ে বেশি শাস্তি দেয়া হচ্ছে অথচ তাকেই সবচেয়ে কম শাস্তি দেয়া হচ্ছে”। (বুখারী ও মুসলিম)।

মুহাম্মদ (স) আরো বলেন, “সারাজীবনভর কষ্টে ছিল এমন একজন জান্নাতীকে জান্নাতে প্রবেশের পরপর জিজ্ঞেস করা হবে আপনার দুনিয়ার জীবনে কেমন কষ্ট ছিল? সে উত্তরে বলবে, না, কোন কষ্টই ছিলনা। আর সারাজীবন সুখ ভোগকারী জাহান্নামীকে জিজ্ঞেস করা হবে দুনিয়াতে কেমন সুখ ভোগ করেছেন? সে উত্তরে বলবে, না, কখনোই সুখ ভোগ করিনি”। (সহীহ মুসলিম)। “জাহান্নামের একেকটি সাপ হবে উটের ন্যায় আর একবার কামড় দিলে তার যন্ত্রণা থাকবে ৪০ বছর পর্যন্ত”। (সহীহ বুখারী)

মহান আল্লাহ বলছেন, “......... তারা সেখানে চির জীবন থাকবে আগুনের মধ্যে, পিপাসায় তাদেরকে দেয়া হবে ফুটন্ত পানি যা তাদের নাড়ি ভূড়ি ছিন্ন ভিন্ন করে দেবে”। (কোরআনঃ ৪৭-১৫)। “তাদের খেতে দেয়া হবে কাঁটাময় তরু যাক্কুম। পানীয় হবে দুর্গন্ধময় পুঁজ আর রক্ত”। (কোরআনঃ ৩৫-৩৬)

মোটকথা জাহান্নামের অবর্ণনীয় দূর্ভোগের কথা বলে শেষ করা যাবেনা। সহীহ বুখারী ও মুসলিম শরীফের জান্নাত জাহান্নাম অধ্যায়টা পড়ে দেখতে পারেন এর ভয়াবহতা সম্পর্কে কিঞ্চিত জ্ঞান লাভের জন্য। আরেকটি আয়াতে আল্লাহ বলছেন, “অবিশ্বাসীদের বলুন যা ভোগ করার তাড়াতাড়ি ভোগ করে নিতে কারণ তাদের জন্য তো অপেক্ষা করছে ভয়াবহ আগুন”। তারপরও কি তারা সাবধান হবে না?

কিন্তু এখানে যাবে কারা? সেটা বলা আছে কোরআনের অসংখ্য জায়গায়। সূরা আন নাযিয়াতের ৩৭-৪১ নং আয়াত পরিষ্কারভাবে বলছে, “যে ব্যাক্তি সীমালঙ্ঘন করে এবং দুনিয়া (ভোগ-বিলাস) কে (পরকালীন জীবন থেকে) বেশি গুরুত্ব দেয় তার জন্য জাহান্নাম অবধারিত আর যে ব্যাক্তি আল্লাহর সামনে দাঁড়ানোর ভয় করে এবং নিজেকে কুপ্রবৃত্তির হাত থেকে রক্ষা করে তার জন্য জান্নাত অবধারিত”। এবার আপনি বুঝুন অশ্লীলতার সময় আপনার কাছে আল্লাহর ভয় ই মূখ্য থাকে না ভোগের হাতছানিটা। এ থেকে পরিত্রানপ্রাপ্তের জন্য রয়েছে মহা পুরষ্কার।

আল্লাহ সেদিন যখন আরশের ছায়া ছাড়া আর কোন ছায়া থাকবেনা নিজ আরশের ছায়ার নিচে সে ব্যক্তিকে স্থান দিবেন যাকে দুনিয়ায় কোন সম্ভ্রান্ত বংশীয় সুন্দরী রমনী তার কামনা চরিতার্থ করার জন্য ডাকে আর সে এই বলে প্রত্যাখ্যান করে যে আমি আল্লাহকে ভয় করি। (সহীহ বুখারী)

হে বাঙ্গালী মুসলমানরা, আপনারা একসময় ছিলেন অবহেলিত, অস্পৃশ্য, দাসশ্রেণী, অত্যাচারিত শুদ্র। আপনাদেরকে সে অত্যাচার, অবহেলা, অস্পৃশ্যতা থেকে উদ্ধার করে ইসলাম মর্যাদা দিয়েছে, আজ শাসক বানিয়েছে, বিশ্বভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করে বিশ্ব দরবারে তৃতীয় বৃহত্তম মুসলিম জাতির মত মর্যাদায় আসীন করেছে। আজ আপনারা চলেছেন পাশ্চাত্যের শোষণের হাতিয়ার হিসেবে যেসব তত্ত্ব ব্যবহৃত হয় তার অন্ধ মোহে। আপনারা জানেন না আপনাদের শান্তিপূর্ণ পারিবারিক ব্যবস্থার মত কোন ব্যবস্থা পাশ্চাত্যে নেই, পাশ্চাত্যের দর্শনে নেই বিশ্বভ্রাতৃত্বের বন্ধন, নেই মানবিক আবেদন। সেখানে শুধু আছে জৈবিক ভোগের উপচার যার আবেদন একসময় শেষ হয়ে যায়, ফিরে আসতে হয় মানবিকতার কাছে। সে সেখানে আসবেনা কারন পাশ্চাত্যের ধাম্ভিকতা আর চোখ ধাঁধানো বস্তুগত ঐশ্বর্যের বড়ি আমরা এখনো গিলে চলছি। কিন্তু তাদের মানবিকতার ঐশ্বর্যের ভান্ডার যেহেতু পুরোটাই খালি, সুতরাং তার আর পেছনে যাওয়ার সুযোগ নেই, সুযোগ আছে লেজ কাটা বানরের ন্যায় মুসলিমদের ও বুঝিয়ে সুজিয়ে লেজ কাটার ব্যাবস্থা করা। আমাদের সুখ শান্তির নীড় পারিবারিক পবিত্রতাকে নষ্ট করার জন্য তারা তাদের অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। তা করছে মিডিয়ার মাধ্যমে, শিক্ষা-সংস্কৃতিতে রোল মডেল তৈরীর মাধ্যমে, ইন্টারনেট-পর্নোগ্রাফির মাধ্যমে, ব্যক্তিস্বাধীনতার নামে। তার ফাঁদেই আপনারা চিরকালীন দুর্ভাগারা পা দিয়েছেন।

আল্লাহ তাদের ইহকাল ও পরকালে কঠিন শাস্তি দিবেন যারা চায় মুসলমানদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার ঘটুক। (সূরা নূর-১৯) আপনারা যারা ধর্মচর্চা করেন তাদের পোশাকের ব্যাপারটাকে কঠিনভাবে নেয়া উচিত। হিজাবের প্রচলন ঘটা উচিত সব নারীর মধ্যে। হিজাবের মাধ্যমে একজন সুন্দরীর সৌন্দর্য কমে যায়না। বরং সৌন্দর্য ও পবিত্রতা দুইই থাকে। পারিবারিক বন্ধন অটুট রাখা অপরিহার্য। না হলে কোনক্রমেই ধর্ম রক্ষা হবেনা। শাহজালাল আর শরিয়াতুল্লাহর মত দু এক জন মানুষ এ উপমহাদেশে ইসলাম প্রচার করে কোটি কোটি মানুষকে শান্তির অনাবিল ছায়ায় নিয়ে এসেছেন পর্বত প্রমান বাধা অতিক্রম করে। যদিও আজও “নাগিনীরা চারিদিকে ফেলিতেছে বিষাক্ত নিঃশ্বাস, শান্তির ললিত বাণী শোনাইবে ব্যর্থ পরিহাস”,(রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, প্রান্তিক) তবু কঠিন প্রতিজ্ঞায়, “কদাচ প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ না হয় যার, মানুষ তাহারে বলি মানুষ কে আর” (ঈশ্বর চন্দ্র গুপ্ত)- এ মন্ত্রে প্রত্যেক মানুষ আজ ও পারে সে নজীর স্থাপন করতে। তবে প্রতিবাদ, তর্কে জয়লাভ হয়না, কারণ প্রতিপক্ষের হৃদয় তাতে পাওয়া যায়না (ফ্রাঙ্কলিন), বরং “আমার এ ঘর ভাঙ্গিয়াছে যেবা আমি বাঁধি তার ঘর, আপন করিতে কাঁদিয়া বেড়াই যে মোরে করেছে পর” (জসীম উদ্দীন)- এ মন্ত্রেই কেবল দৃড় সংকল্পের মাধ্যমে চিরবিদায়ের আগে আমরা একবার প্রকৃত মানুষ হওয়ার স্বাদ নিতে পারি। আমি জানিনা আমাদের দেশের ভদ্র হিসেবে খ্যাত লোকদের জেগে উঠতে দেশের অবস্থা আর কতটা খারাপ হওয়া লাগবে?

পাদটীকাঃ

• আমার এ পুরো লেখাটি সে সংশয়বাদীর জন্য নয় যাদের কোরআনের সত্যতা নিয়ে সন্দেহ-সংশয় রয়েছে বা সে অহংকারীর জন্য ও নয় কেউ ভালো কথা বললে যে বলে এমন অনেক নছিহত শুনেছি। শুধু তার জন্য যার কোরআনে পূর্ণ বিশ্বাস রয়েছে, আছে কোরআনের কথা যেই বলুক নতশীরে তা মেনে নেয়ার মত অনুগত হৃদয়। এ লেখাটি পাঠের সময় সন্দেহে পতিত লোকদের আরো যেসব প্রশ্নের উত্তর জানার প্রয়োজন দেখা দেবে তা হল আল্লাহ সত্যিই আছেন কিনা, আল্লাহ যদি থেকেই থাকেন কোরআন আসলেই আল্লাহর প্রেরিত গ্রন্থ কিনা, ইসলামই যদি সত্য হয় তবে অন্য সব ধর্মাবলম্বীরা কি দোযখে যাবে? আল্লাহ নাকি তাকদীরে সবই লিখে রেখেছেন, তাহলে আমাদের জাহান্নাম থেকে বাঁচার চেষ্টা করে কি লাভ? মানুষের সসীম অপরাধের জন্য কি অসীম সময় ধরে শাস্তি বিবেকসম্মত? এসব প্রশ্নের জবাব পেতে যোগাযোগ করতে পারেন

• এ লেখায় পাশ্চাত্য শব্দের মাধ্যমে দুনিয়াকেন্দ্রিক ভোগবাদী দর্শন কে বোঝানো হয়েছে, ভৌগলিক সীমারেখাকে নয়।

বিষয়: বিবিধ

১৫৮৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File