এদেশের রাজনীতিতে মৌল সংকট
লিখেছেন লিখেছেন বিবেকের কষ্ঠিপাথর ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৩, ০৮:৫৪:১১ রাত
'দেশের ভবিষ্যতে কি হবে বা দেশের কপালে কি আছে' এরকম প্রশ্নে চিন্তিত অনেকের মতো আমিও চিন্তিত। তাই ভাবলাম আমার ভাবনায় যা এসেছে তা দ্বিধাহীনভাবে শেয়ার করি।
৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধ ছিল এক ভাইয়ের ষোষণ-বঞ্ছনার বিরূদ্ধে আরেক ভাইয়ের সংগ্রামের মাধ্যমে অর্জিত এক বাড়ি থেকে আলাদা হয়ে যাওয়ার একটি রাজনৈতিক সমাধান। এক মুসলিম ভাই আরেক মুসলিম ভাই এর সাথে সংগ্রামে লিপ্ত হলে যে ধরে নিতে হবে তারা ইসলামের বিরূদ্ধে যুদ্ধ করছে তা নির্জলা মিথ্যা কথা। ইসলাম অনেক বড় ব্যাপার; সেখানে রাজনীতি একটি অংশ মাত্র। ইসলামে আছে ফরজ, নফল। ইসলামের সব নির্দেশনা অমান্য করলেই যে ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যায় তা নয়। বাংলাদেশের জনগন পাকিস্তানের বিরূদ্ধে যুদ্ধ করে আলাদা ভূখন্ড অর্জন করেছে এটার অর্থ এই নয় যে তারা ইসলামের বিরূদ্ধে যুদ্ধ করে কুফরীকে বিজয়ী করেছে আর ইসলামী বিশ্বভ্রাতৃত্ববোধ থেকে আলাদা হয়ে গেছে। সকল মুসলিম ভাই ভাই, বিশ্বের যেই প্রান্তেই সে থাকুক। এটি ইসলামের পক্ষে বিপক্ষে যুদ্ধ নয়, রাজনৈতিক সমাধান। কিন্তু জামায়াতে ইসলামী সেটিতে সমর্থন দেয় নি এ আশংকায় যে এর ড্রাইভাররা নাকি আবার একে পাকিস্তানের বিপরীতে ভারতের আধিপত্যবাদের শৃংখলে আবদ্ধ করে অথবা এ যুদ্ধের চেতনাকে ইসলামের বিরুদ্ধে ব্যবহার করে কারন তারা ছিল ধর্মনিরপেক্ষতাধারী ও নাস্তিকতার পৃষ্ঠপোষক। তাদের আশংকার কারন ছিল কেননা ১৯৭০ সালে পল্টনে জামায়াতের জনসভায় আওয়ামীলীগ গুলি চালিয়ে অনেক মানুষকে হত্যা করে, তখন তো মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তাদের বিরোধ ছিলনা। এখন আওয়ামি লীগ যদি ধর্মনিরপেক্ষতা ছেড়ে এদেশের অধিকাংশ মানুষের মতকে সমর্থন করে মুক্তিযুদ্ধকে ইসলামের পক্ষে ব্যবহার না করে, অথবা ধর্মনিরপেক্ষতাকে কেবল ইহজাগতিকতা অর্থে ব্যবহার না করে বা তাদের ইসলাম শূন্যকরন সম্পর্কিত ভুলের জন্য ক্ষমা না চায় তবে জামায়াতের আশংকাই সত্য হবে এবং তাদের সে ভূমিকার যৌক্তিকতাই দাঁড়িয়ে যাবে। আর যদি আওয়ামী লীগ ইসলামকে মেনে নেয় অথবা সেকুলারিসমকে ধর্মনিরপেক্ষতা অর্থের পরিবরতে ইহজাগতিকতা অর্থে মেনে নেয় এবং মুক্তিযুদ্দের চেতনাকে ধর্ম থেকে আলাদা করে বিবেচনা করে অর্থাৎ ধর্মনিরপেক্ষতাকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হিসেবে না দেখায় তবে নিশ্চয়ি জামায়াত ও তাদের ভূমিকার জন্য ক্ষমা চাইতে দ্বিধাবোধ করবে না। জাতীয় ঐক্য ও তৈরী হবে। আপনারা একটু কষ্ট করে খেয়াল করলেই বুঝতে পারবেন ৭২ থেকে এ পর্যন্ত সকল সহিংসতার মূলে জাতির এ বিভাজনই দায়ি, বিএনপি টিকে আছে ইসলামপন্থীদের এ ভাবাবেগকে ধারন/পুঁজি করেই, যেখানে তাদের আলাদা সত্তা নেই। তাই বিএনপি আওয়ামীলীগের মধ্যকার যুদ্ধকেও এই একই তলেই বিবেচনা করতে হবে। এছাড়া সংলাপের সকল চেষ্টাই বৃথা যাবে। আর এর বলি হতে থাকবে এদেশের সকল মানুষ। সঙ্ঘ্যাগরিষ্ঠ মানুষের এ চিন্তা-বিশ্বাসের (ইসলাম) সাথে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কোন সমঝোতা কখনো সফল হতে পারে না। আমার বুঝে আসেনা, অধিকাংশ জনগনের ভোটে নিড়্রবাচিত দলকে যদি আমরা রাষ্ট্রীয় সরকার মানতে পারি, এদশের অধিকাংশ মানুষের ভাষা রাষ্ট্রভাষা হতে পারলে অধিকাংশ মানুষের ধর্মকে রাষ্ট্রধর্ম মানতে বাধা কোথায়? ধর্মতো ভাষার চেয়ে গুরুত্বপূর্ন। রাষ্ট্র ভাষা থাকলেও যেমন অন্য ভাষায় কথা বলার বাধাহীন স্বাধীনতা থাকে, রাষ্ট্রধর্ম থাকলেও তো তেমনি অন্য ধর্ম পালনের স্বাধীনতা থাকে। রাষ্টড়ধর্ম আর রাষ্ট্রভাষা বলে শুধু সংখ্যাগরিষ্ঠ মতকে সম্মান করা মাত্র।আর সেটা তো আমরা সকল ক্ষেত্রেই করে থাকি। ইসলামের ইতিহাসে ইসলামের অন্য ধর্মাবলম্বীদের উপর হামলার কোন নজীর নেই। হিন্দুরাও তো তা মানবে কারন সংখ্যাগরিশঠ সকল কিছুকেই তো তারা অন্য অবস্তায় ও মেনে নেয়। মুসলমানরাও তো সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুদের দেশে হিন্দুকে রাষ্ট্রধর্ম মেনে নেয়। ধর্মনিরপেক্ষতাকে তো আওয়ামীলীগ সংবিধানে ৭২ সালে চুরি বা ডাকাতি করে ঢুকিয়েছে। মূলত এক্ষেত্রে তখন আমাদের মুসলিমদের এ কথা ধরে নিতে কোন দ্বিধা থাকবে না যে আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে মূলত মানুষকে ধোঁকা দিয়ে ইসলামের বিরুদ্ধেই যুদ্ধ করছে; এবং তখন অবহেলিত এ মুসলমানদের ও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা ছাড়া ইসলাম রক্ষার আর কোন উপায় থাকবে না। এটিই মুক্তিযুদ্ধের আসল ব্যবচ্ছেদ। এটি দেশের মঙ্গলের একমাত্র পথ। দেশের সকল পক্ষ এটি যত তাড়াতাড়ি বুঝবে এবং কাজ শুরু করবে ততই অন্ধকার দূর হওয়ার সম্ভাবনা কাছে আসবে অন্যথায় সম্ভাবনা তত দূরে সরে যাবে। কারন এটা তো সত্য যে একজন মুসলিম আর কখনো অন্য ধর্মে ফিরে যাবে না কারণ মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী হলে এপারেই বিপদ শেষ, কিন্তু ইসলামের চেতনা বিরোধী হলে বিপদ এপারেই শেষ নয়- একজন মুসলিম অন্তত তাই বিশ্বাস করেন। তাই সে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী হয়ে হলেও মুসলিম থাকার চেষ্টা করবে। তাই আওয়ামীলীগ হয়তো এ যুদ্ধকে মনে করবে মুক্তিযুদ্ধএর পক্ষ ও বিপক্ষ শক্তির মধ্যকার যুদ্ধ হিসেবে আর ইসলামের চর্চাকারীরা দেখবে ইসলামের পক্ষ ও বিপক্ষ শক্তির মধ্যকার যুদ্ধ হিসেবে। এ মতে কেউ কষ্ট ও পেতে পারেন তবে এটিই বাস্তব। আমি কোন পক্ষে- বাস্তব তা মেনে নেব না। আমাকেই বাস্তবকে স্বীকার করে নিতে হবে। না হয় আমিই হারিয়ে যাব। আমি তা মনে করি। আশা করি সকলে বুঝতে পারবে........ আপনারা কি বলেন?
বিষয়: বিবিধ
১৬৪৭ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন