আবেগময়ী প্রেম এবং ফার্মের ভালবাসা
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ ওমর ফারুক ডেফোডিলস ০৭ মে, ২০১৪, ১০:৫৭:১৮ সকাল
গতরাতে যমুনা টিভিতে ফাঁদ নামে একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে প্রতিবেদন দেখছিলাম, সেটা এত মনোযোগ দিয়ে দেখছিলাম যে অন্য কোন প্রতিবেদন ইতিপূর্বে দেখা হয়নি
সেটা মুল প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল পেইজবুকের প্রেম, তারপর ছলনা, তারপর সবশেষ।
আদনান নামের একটা ছেলে বিদেশে থাকে, তার সাথে পেইজবুকে প্রেম হয় প্রীতি নামের একটি মেয়ের, শুরুতে শুভসকাল, শুভ বিকাল দিয়ে, তারপর ভাত খেয়েছে কিনা, কয় ঘ্রাস খেয়েছে, কয় কদম সামনে যাচ্ছে কয় কদম পিছনে যাচ্ছে, নিশ্বাসে বিশ্বাসে তার নাম মনে করছে কিনা ইত্যাদি।
ছেলেটা বিদেশ থেকে তার জন্য একেবারেই পাগল হয়ে দেখতে আসলো মেয়েটিকে।
মেয়েটির সাথে দেখা হলো , দহরম মহরম হলো, আকাশ বাতাসের প্রেমে যা হয় আরকি।
একদিন হঠাত করে মেয়েটি ছেলেটিকে বললো তার আব্বার কোন একটি বিপদ হয়েছে তাকে এক্ষুনি সেখানে চলে যেতে হবে
।
মেয়েটি চট্টগ্রামের একটি ছাত্রী হোস্টেলে থাকে।
চলে যাওয়ার মুহুর্তে ছেলেটি তাকে একটি মোবাইল দিলো যাতে সর্বক্ষনিক যোগাযোগ রাখতে পারে।
মেয়েটি একদিন বাদে তার বাড়ী গিয়ে মোবাইল খুলে ছেলেটিকে তার একটি বিপদের কথা বলে।এবং তাকে ঢাকায় আসার জন্য বলে
সেও ঢাকায় চলে যায়, মেয়েটি তাকে বলে তার বাবা নাকি অন্য যায়গায় তার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে, বিয়ে করতে হবে তার বাবার ব্যবসায়ীক পার্টনারকে যার সাথে এখন ব্যবসা করে এখন লস যাচ্ছে, যদি পনের দিনের মধ্যে তার পার্টনারের টাকা পরিশোধ করতে না পারে তাহলে তাকে বিয়ে দিতে বাধ্য থাকবে তার বাবা।
ছেলেটি কত টাকা পরিশোধ করতে হবে বললে সে বললো ১৫ লক্ষ।
এখন ছেলেটির কাছে ১৫ লক্ষ টাকা চ্যালেঞ্চ।
এক পাশে ১৫লক্ষ টাকা অন্য পাশে তার প্রেমিকা।
কাকে চাইবে সে। সর্বশেষে সে সিদ্ধান্ত নিলো তার প্রেমিকাই চাইবে যত ক্ষতি হোক তার।
সে মেয়েটির হাতে ১৫ লক্ষ টাকা তুলে দেয়ার পর আর হদিস মেলেনি সেই মেয়েটির।
ছেলেটির এখন সব শেষ।
এই ভালবাসার নাম কি?
সেটার নাম আমার ঘিন্নি বলবে একটু পরে।
ভালবাসা এমন একটা জিনিস যার নাগাল যে পেয়েছে সে তার সব কিছুই হারিয়েছে, অথবা ঘটেছে তার উল্টোটা,
পেইজবুক কিংবা মোবাইলের প্রেমকে আমি বিশ্বাস করিনা, যে আকাশের কিংবা বাতাসের মাধ্যমে প্রেম করে আমি মনে করি তার ভালবাসা প্রেম যেভাবে আকাশ দিয়ে এসেছে সেইভাবে এক সময় আকাশ কিংবা বাতাস দিয়ে আবার হারিয়ে যাবে।
আকাশ বাতাসের ভালবাসা প্রেম হলো জলে দাগ কাটার মতো, এই দিকে কাটবেন দাগ অন্য দিকে মুছে যেতে একমুহুর্তও দেরি হবার নয়।
কিছু দিন আগে ব্লগে লেখিছিলাম সব কিছুই এখন ফার্মের, কই মাছ যে ফার্মের হয় সেটা আমি বুঝেছি যখন বাজার থেকে এক কেজি নিয়ে গিন্নির হাতে তুলে দিই তখন।
মনে মনে খুব খুশি হয়েছিলাম, এত কম দামে কই মাছ!
ওর চেচামেচিতে বুঝেছি আরো বেশ কিছু ফার্মের থাকতে পারে যা আমরা এখনো বুঝতেছিনা,
আজ থেকে এক সাপ্তাহ আগের , ঘিন্নির প্রয়োজন একটি নারিকেলের, যে বলা সেই কাজ তার ,
সামনে আনতেই আবার চেচামেচি, এটা তো ফার্মের!
কী ফার্মের যা তা বলছো, নারিকেল কি আবার ফার্মের হয়? আমার কঠিন প্রশ্ন।
পরে জানলাম তার ধারনাই ঠিক, যার থেকে নিয়েছিলাম সেই বললো এই কথা। তিনি বললেন এখন ফার্মের ডাব বিক্রি হয়, যে গুলো ফার্মের সেগুলো কখনো নারকেল হয়না, পানি ফানসে টাইপের।
গুনাগুন নেই বললেই চলে।
এখন আমি কিছুই কিনতে পারিনা, সব কিছুই ফার্মের মনে হয়।
যে দিকে তাকাই সেদিকেই মনে হয় ফার্মের সৃষ্টি।
অবশ্য এই কথা সত্যি যে আমি ছোট কাল থেকেই বাজার করতে পারিনা, কিংবা বাজার করার পরিস্থিতি হয়নি,
তো গত পরশুর ঘটনা।
আমরা দুই জনে শাহরুখ খানের রাওয়ান দেখতেছিলাম,
সেখানে তার ছেলেকে দেখি আমার খুব অবাক হলো, এত সুন্দর ছেলে!
তার বাপ নিশ্চয় একে নিয়ে খুব সুখী,
ঈস! আমার সন্তান যদি এই রকম হতো!
আমার মুখ থেকে এই কথা বের হতে না হতেই ঘিন্নি বলে উঠলো
সেটা ফার্মের সন্তান!
ঘিন্নি বলে কি!
সব কিছুতে তুমি ফার্মের দেখো কেন?
ঘিন্নি বললো তুমি যাকে দেখে এতো সুন্দর বলে হা হুতাস করছো সেটা টেসটিউব সন্তান,
যেভাবে মাতৃগর্ভে থাকা উচিত সেইভাবে গর্ভধারন না করে অন্যভাবে গর্ভধারন করাকে টেস্টটিউব বলে।
এই ছেলের সব কিছুই হবে ফার্মের মতো, ছেলে তার মা বাবার প্রতি ভালবাসার আকর্ষন তাকবেনা, ফার্মের মুরগির মতো সব সময় জিমুনি দিতে বাধ্য থাকবে।
ঘিন্নিকে এই বার আসল প্রশ্ন করি,
আচ্ছা আর কি কি থাকতে পারে ফার্মের?
ঘিন্নি উত্তর দিলো জটপট- আকাশ আর বাতাসের ভালবাসা
মানে মোবাইল আর পেইজবুকের ভালবাসা।
এই ভালবাসা গুলো ফার্মের।
স্থায়ীত্ব হলো বাতাসের মতো, নেটওয়ার্ক থাকলে প্রেম না থাকলে সংযুক দেয়া সম্ভব না।
........................................................................
বিষয়: বিবিধ
১৮৩৩ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এমনকি আমাদের ভালবাসাও ফার্মের হয়ে যাচ্ছে ভাই,
আমরা কোথাই যাবো????????
বেশি স্বাদ, বেশি লাভ, বেশি কাপ চা হে হে হে।
সেই জন্যই মনে হয়- সব স্ত্রীরা চায় স্বামী গুম হয়না কেন?
যাতে আর একটা বিয়ে করতে পারে!!
ভাইজান মনে হয় নিজের গিন্নীকে খুব ঘেন্না করেন ?
ঘিন্নি নামে ডাকি যখন সে সুন্দর ভাবে কাজ করে,
মহারানী নামে ডাকলে সে খুশী হয়, মহারানী নামে ডাকি যখন সে টাকা পয়সার হিসাব খুজে,
মেম সাহেব নামে ডাকি যখন সে আমাকে খবর দারী করে শাসন করে, ( অবশ্যই শাসন গুলো প্রেমের জালে সীমাবদ্ধ)
মন্তব্য করতে লগইন করুন