আমার মেজু ভাবী মিষ্টির কাটন নিয়ে গেলেন, বিয়ের প্রস্তাব দিলন, বিয়ের প্রস্তাব শুনার পর আমার ভাবীকে ঘাট ধরে বের করে দিলেন

লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মদ ওমর ফারুক ডেফোডিলস ১৮ জানুয়ারি, ২০১৪, ১২:১৪:৫৯ দুপুর



আমার বিয়ের উপযোক্ত সময় অতিক্রম হয়েছে প্রায় ৭ বছর থেকে বেশি,

আমার বাবা মরে যাওয়ার সময় বারবার একটি কথাই উচ্চারন করতে পেরেছে- সেটা হলো বত্স ! তোমাকে বিয়ে দিয়ে আমার বৌমাকে দেখতে পেলে আমার মৃত্যুটা শান্তি হবে। প্লিজ দুয়েক একদিনের মধ্যে তোমার বউকে আমার সামনে আনো- এটা তোমার বাবার মৃত্যু যাত্রীর আদেশ এবং চাওয়া,

চাওয়াটা অমুলক নয়, তার ৫টি সন্তানের বউ দেখেছেন। আমি হলাম তার শেষ সন্তান, সুতরাং আমার জন্য তার কলিজাটা একটু কাঁপবেই, তাছাড়া আমার মা তো আমার জম্মের পরেই মারা গেছেন, সুতরাং সব মিলিয়ে তার মৃত্যুর সাকারাতটা ভিষম কষ্ট হচ্ছে-

এই দিকে আমি বউ পাবো কই? বউ তো বাড়া করা যায়না, আমার বিয়ের বয়স হতে পারে কিন্তু আমার টাকার বয়স হয়নি, তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমার ছোট ভাবীকে আপাতত আমার বউ সাজিয়ে আমার বাবার শেষ ইচ্ছেটা পূরন করে দেখাতে পারি! যে ভাবা সে কাজ- ভাবীকে নতুন করে অবিবাহিত মহিলার মতো করে সাজিয়ে তাকে আমার প্রেমিকার মতো করে আমার বাবাকে বললাম,

দেখো শারমিন! এটা তোমার শাশুড় আব্বা, তোমাকে দেখতে চাচ্ছে এবং আমার বিয়েটা কার সাথে হবে তিনি না দেখে মরবেন না, তাই ওনাকে সালাম করো!

সালাম করলো , ভাল করে তাকায়ে দেখতে লাগলেন আমার সাকারাত মৃত্যু পথের যাত্রী বাবা,

অনেক্ষন ভাল করে দেখার পর একটু হাসি দিলো বউটা আমার পছন্দ হলোনা

বাবা আমি তাকে প্রচন্ড ভালবাসলেও, তুমি রাজি না হলে আমি বিয়ে করবোনা। ঠিক আছে ?-

বাবা বললো - পৃথিবীর মানুষকে ধোকা দেয়া যায়, যারা পৃথিবীতে নেই তাদেরকে নয়।


এই বলে কয়েক ঘন্টা পরে আমার বাবার মৃত্যু হলো,

এই দৃশ্যটা দেখলে আমারো মৃত্যু যন্ত্রনা হয়, ইচ্ছে করে মাটিতে আমি ঢুকে যায়

অনেক দিন আগের কথা -আমার বাবাকে খন্দকার ব্বংশের মেয়েকে বাঙ্গালী পরিবার ছেলে বিয়ে করলে কোন অসুবিধা আছে কিনা জিজ্ঞাস করেছিলাম , তিনি বললেন- এই রকম হলে বিয়ে না করে অবিবাহিত থাকাই ভাল।

এই কথাটা আমার মনে ছিল- আমার বাবা কখনো আমাদের বিয়েতে রাজি থাকবেনা, যদি আমি তাকে আমার বাবার সাকারাত মূহুর্তে তার বৌমা হিসাবে পরিচয় দিই তাহলে তার সাকারাতটা আরো বেশি কষ্ট হতে পারে,

অথচ আমি শরমিকে প্রচন্ড ভালবাসি, সেও আমাকে অকৃত্রিম ভালবাসে, শরমি ছিল খন্দকার ব্বংশের, আমি ছিলাম বাঙ্গালি।

আমি জানতাম না আমাদের ভালবাসার মাঝে ব্বংশ একটি ফ্যাক্টর।

আজ থেকে সতের বছর আগের কথা, আমি তাকে বলেছিলাম আমার জন্য তুমি অপেক্ষা থাকিও আমি শহরে এতিম খানায় একেবারেই চলে যাচ্ছি।

ব্যস। আর দেখা হয়নি দুজনের মাঝে, কত ঝড় কত এলোমেলো সময়ের পরিবর্তন কেউ কারো দেখা মেলেনি, অথচ সে আমার প্রতিবেশি, একটি উকি দিলে তার দেখা মেলতো কিন্তু দেখিনি কারন বিয়ের পর খুব মন ভরে দেখবো বলে,

যোগাযোগ ছিলনা, কথাও হতোনা, দেখাও হতোনা, তার কথা মনেও ছিলনা,

১৫ বছর পর আমার মোবাইলে একটি কল আসলো অপরিচিত কন্ঠে আপনি কি ওমর ফারুক বলছেন?

আমি বললাম হ্যা, কিন্তু কেন?

আপনি কি বিয়ে করছেন?

না আমি করিনি,

কেন করেন নি?

না মানে দিনটা আমার ভাল যাচ্ছেনা, তাছাড়া আর্থিক অবস্থাও খুব করুন, সবে মাত্র মাস্টার্স শেষ করেছি কিন্তু এসব আপনি কেন জিজ্ঞাস করতেছেন?

শরমিকে চিনেন?

কোন শরমি?

কলেজে পড়ে, মনে নেই তাকে বলেছিলেন আপনার জন্য অপেক্ষা করতে! মনে নেই?

না, কোন মেয়ে কোথাকার মেয়ে, আমি কেন বিয়ের করার জন্য অপেক্ষা করতে বলবো? আচ্ছা তাকে মোবাইলটা দেওয়া যায়না? তার সাথে কথা বললাম- জানতে পারলাম সে ১৫ বছর আমার জন্য একটা একটা দিন, একটা একটা সেকেন্ড অপেক্ষা করেছে, এমনিক কতো বিয়ের প্রস্তাব সেই মহাকৌশনে ফেরত দিয়েছে তার হিসেব নেই, তার বিশ্বাস ছিল আমি তাকে ছাড়া বিয়ে করবোনা, সে আমাকে সারাক্ষন ভাবতো, মোবাইলে সে বলতে চাইছে তার ঘরে বিয়ের প্রস্তাব যেভাবে হোক দেয়ার জন্য,

আমি তো মহা বিপদে, কথা নেই বার্তা নেই, কিভাবে যে আমি বিয়ের প্রস্তাব দিই, এই দিকে আমার বিয়ের বয়স পার হয়েছে ৭ বছর, মানসিক অবস্থাটাও একেবারেই নাজুক । প্রত্যেক রাত বয়ে আনতো আমার জন্য মূমুর্ষ সাকারাত।

আমি আমার বড় ভাবীকে বললাম- তার কথা,

শরমিনের পরিবার অনেক বড়, ৬ ভাই, তিন বোন, শরমিন সবার ছোট

ঠিক আমাদের মতো, আমরাও ৬ ভাই তিন বোন আমিও সবার ছোট

তার বড় ভাই গ্রামের বড় সম্মানিত ডাক্তার,

ডাক্তারকে মোবাইলে কল করে আমার ঘরে আনা হয়েছে- সৌজন্যমুলক ভাবে তাকে একেবারেই নগন্য বেলা বিস্কুট দিয়ে চা দিয়ে বিয়ের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে যা তার গায়ে অপমান হিসেবে মেনে নিয়েছে,

আমি এই সবির মারপেচ কিছুই বুঝিনা বা জানিনা, আমি বড় হয়েছি এতিম খানার শহরে, সম্পূর্ণ মারপেচমুক্ত পরিবার ছাড়া,

বেলা বিস্কুট দিয়ে চা দিয়ে আপ্যায়ন মানে আমার সাথে শরমিনের বিয়েটা না হওয়া, কারন আমার পরিবারের বউয়ের মধ্যে সেই হবে সুন্দর এবং শিক্ষিত, সুতরাং ভাবীরা কখনো চায়না যে তাদের চেয়ে উন্নত ঝাল তাদের সাথে বসবাস করুক।

আমার বড় ভাবীর কৌশলটা কাজে লেগেছে, ডাক্তার সাহেব বাড়ীতে গিয়ে ঝগড়া করেছে শরমিনের সাথে, বলেছে এতক্ষনে বুঝেছে কেন শরমি অন্য বিয়েতে রাজি হচ্ছেনা,

আমরা নিয়মিত কথা বলতাম। রাতের বারটা আর শুক্রবারের বারটা,

একদিন শরমি রাতের আধারে বার টায় তার বড় ভাই ডাক্তারের রুমে ঢুকে মোবাইলটা চুরি করে নিয়ে আমার সাথে কথা বলতে লাগলো, সে অনেক কান্না কাটি করতে লাগলো আমি যেন তাকে বিয়ে করি নতুবা সে কর্ণফুলী নদীতে আত্মহত্যা করে বসবে, কথা বলার একফাকে আবিস্কার করলাম একটি টাস করে আওয়াজ, আমার বুঝতে বাকী রইল না তাকে ডাক্তার সাথেব খসে তার গালে মেরেছে। পরিবারের সবাই জানা জানি হলো, তার উপর মানসিক শারিরিক নির্যাতন শুরু হলো,

সে উপায় খুজতে লাগলো কি করা যায়, সে খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দিলো না খেয়ে খেয়ে একেবারেই পাতলা হয়ে গেলো,

তার এহেন করুন অবস্থা দেখে পরিবারের অন্য সবাই রাজি হলো, মা বাবা ডাক্তার সাহেবকে রাজি করালো-

রাজি হয়েছে তবে ছেলেকে চাকরীজীবি হতে হবে,

তার কথা অনুযায়ী আমি চাকরী খুজতে খুজতে চাকরীও পেয়ে গেলাম

এই সচরাচর নিয়মে বিয়ের প্রস্তাব দেয়ার জন্য এই বার আমার সেজু ভাবীকে নির্ধারন করলাম, কারন ওনার সাথে শরমিনের পরিবারের পরিচয়টা বেশ ভাল

ওনি মিষ্টির কাটন নিয়ে গেলেন, বিয়ের প্রস্তাব দিলন, বিয়ের প্রস্তাব শুনার পর আমার ভাবীকে ঘাট ধরে বের করে দিলেন

তাহলে আমার ভাবী কী এমন বলেছিলেন যে তাকে ঘাট ধরে বের করে দিবেন?

তাহলে শুনে নেন- আমার ভাবী বলেছিলেন “দেখুন আমরা সবাই জানি আপনারা আমার দেবর ওমর ফারুককে আপনাদের মেয়ে দিচ্ছেন না, তাই আমরা ঠিক করেছি আমার ছেলেও আল্লাহর রহমতে দুটো চাকরী করে সে সুবাদে আপনার মেয়ের সাথে তাকে মানেবেও বেশ ভাল,

ব্যস! আমার স্বপ্ন চুরমার হয়ে গেলো,

শরমিকে সেমুহুর্তে মারধর করতে লাগলো ডাক্তার সাহেব, বলতে লাগলো তুমি যদি আর একবার ওমরের কথা বলিছ তাহলে আমার মরা মুখ দেখবি, নে কোরান নিয়ে শপথ করে বল আর কোন দিন তার কথা বলবিনা, বল এখন বল।

তার সাথে আমার দেখা হয়েছে ১৭ বছর,

আহা ! সতের বছরের বিদ্ধমান ভালবাসা কি করে মুচবো!

কি করে ভুলবো! আমার জীবন এমন এলোমেলো কেন হলো,

সে তার হাতে মেহেদী পড়েছে ঠিকই সংসার করছে ঠিকই কিন্তু আমি পারছিনা,

আহা ! যাকে আমি ১৭ বছর ভালবেসেছি তাকে আমি বিয়ে করতে পারলাম না

বিষয়: বিবিধ

৪৩৪৪ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

163874
১৮ জানুয়ারি ২০১৪ দুপুর ০১:০১
প্রেসিডেন্ট লিখেছেন : দুঃখজনক! Worried Worried
১৮ জানুয়ারি ২০১৪ দুপুর ০১:০৪
118145
মোহাম্মদ ওমর ফারুক ডেফোডিলস লিখেছেন : ধন্যবাদ আপনাকে
163935
১৮ জানুয়ারি ২০১৪ দুপুর ০৩:২৮
আলোর আভা লিখেছেন : দুঃখ করে আর কি করবেন আপনিও বিয়েশাদী করে সুখে সংসার করেন এই কামনা থাকল ।
১৮ জানুয়ারি ২০১৪ দুপুর ০৩:৪৭
118197
মোহাম্মদ ওমর ফারুক ডেফোডিলস লিখেছেন : ধন্যবাদ আপনাকে
167212
২৫ জানুয়ারি ২০১৪ দুপুর ০১:১২
বিন হারুন লিখেছেন : আচ্ছা কত বছর বয়স হলে বিয়ের বয়স ৭ বছর পার হয়? দয়াকরে কিছু মনে করবেন না. নিজের হিসেব করার জন্য বললাম.
২৫ জানুয়ারি ২০১৪ বিকাল ০৪:০১
121271
মোহাম্মদ ওমর ফারুক ডেফোডিলস লিখেছেন : যখন আমার লেখা পড়া শেষ হয়েছে তখন আমার বিয়ের বয়স শুরু, ২০ বছর হয়েছে আমার

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File