উন্নয়নের জোয়ারে তালবেতাল সরকারের লোকজন কি তাহলে ''ডুবন্ত শৈল খন্ডের'' অস্তিত্ব টের পেয়েছেন ?
লিখেছেন লিখেছেন হাসনাতের ব্লগ ০৯ মে, ২০১৭, ০৭:২৫:১৬ সন্ধ্যা
ব্যারিস্টার হাসনাত তালুকদার
গত এক দশকে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে দৃশ্যমান পরিবর্তন ঘটেছে।যেমন ধরুন ঢাকার আকাশে উড়াল সেতু, চার লাইন বিশিষ্ট মহাসড়ক, আন্তঃজেলা সংযোগ সড়ক সহ আরো কত গড্ডালিকায় বেড়ে ওঠা সুরম্যসব অট্টালিকা- তার মধ্যে ঝলমইলা রংমহলা ! সে উন্নয়ন না হয় পর্দার আড়ালের ব্যাপার। তা না হয় নাই বললাম! এছাড়া বাহারি চোখ ধাঁধানো শপিংমল সহ আরো কত্তকিছু ....। এত্তো এত্তোসব উন্নয়ন ঘটেছে যে তার সব ফিরিস্তি অল্পবিস্তর সময়ে লেখা প্রায় অসম্ভব বটে। তবে আরো একটা উন্নয়ন না বললেই নয় তাহলো গত কাল প্রকাশিত সংবাদে পড়লাম দেশে এখনো দুই কোটির বেশি মানুষ দিনান্তে আধপেটা খেয়ে বেঁচে আছেন। লক্ষ লক্ষ জরিমন-করিমনদের ইজ্জত ডেকে রাখতে হচ্ছে ছালা পিন্দা। যেমনটা '৭৪ সালে ইজ্জত ডাকতে জাল পড়তে হয়েছিল ষোড়শী যুবতী বাসন্তী রানীর।হয়তো '৭৪ সালের সেই দুর্ভিক্ষের ঘটনা সকলের মনে আছে। একদিকে মানুষ ক্ষুধার যন্ত্রনায় বমি ভক্ষণে বাধ্য হয়েছিল। অন্যদিকে লক্ষ লক্ষ টাকার বিদেশি মদ আর বিদেশি সিগারেট আমদানি করছিলো সরকার। তখন উন্নয়নের স্বপ্ন দেখা হতো। আর এখন উন্নয়ন হচ্ছে বৈকি ! আলহামদুলিলাহ !! এরই মাঝে ইতোমধ্যেই আমরা 'মধ্যম আয়ের' দেশে পরিণত হয়েছি। আমাদের অনেকেরই উন্নত অবয়ব ফুটে উঠেছে। যাই হোক, বলছিলাম উন্নয়ন দৃশ্যমান হয়েছে! তবে এটা তো একটি খাসা সত্য যে , বিশ্বব্যাংককে চ্যালেঞ্জ করে আমরা পদ্মাসেতুর কাজ দ্রুত এগিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছি।তাছাড়া এলিভেটর এক্সপ্রেস, গভীর সমুদ্রবন্দর, বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণ কাজও এগিয়ে যাচ্ছে বলে খবর চাউর হয়েছে।আরো একটা সাফল্য হলো আমাদের মহাশূণ্যে স্যাটেলাইট নিক্ষেপ।এতে ব্যয় হয়েছে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার বেশি। অবশ্য দিনান্তে আধাপেটা খেয়ে থাকা মানুষগুলোর একটু খানি ভাগ্য পরিবর্তনে ব্যয় হতো এক হাজার কোটি টাকার কম। তবে স্যাটেলাইট বিষয় আমি বিশেষজ্ঞ নই তাই বলতে পারবো না যে ওটা নিক্ষেপ করে আমাদের আত্মবিলাস ছাড়া আর কী ফায়দা? তবে শুনেছি প্রতিবেশী ভারতের একান্ত আগ্রহের কারণে ওটা নিক্ষেপে গতি পেয়েছে বেশি।অবশ্য তারাও একটা নিক্ষেপ করবে বলে শোনা যাচ্ছে। তবে তার দাম পর্বে মাত্র সাড়ে চার শ' কোটি টাকা। আহামরি না হলেও এটা সত্য যে, ডিজিটালাইজেশনের সার্বিক সুবিধা সকল নাগরিকের দোরগোড়ায় না পৌঁছলেও এর প্রাথমিক সুফল সর্বজন গ্রহণযোগ্য হয়েছে। তার থেকে বড়কথা- ডিজিটাল পদ্ধতির সাথে সাধারণ মানুষের সাথে সংযোগ স্থাপন করতে সরকার সক্ষম হয়েছে। এই সরকার এই কৃতীত্বের একক দাবিদার। বিদ্যুৎ খাতে পূর্ববর্তী সরকারের তুলনায় বর্তমান সরকার আকাশছোঁয়ার দাবি করে আসছে। তবে সাধারণ মানুষই এবিষয়ে ভালো জানেন।কারণ তারাই এই পণ্যের পত্যক্ষ ভোক্তা। শিক্ষায় আধুনিকতা আর বিস্তর সুযোগ এনে দিয়েছে মর্মে যে সরকার দাবি করছে তা প্রশ্ন পত্র ফাঁস বাণিজ্যে ম্লান তো অবশ্যই ! তার সাথে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে 'ছাত্রলীগ কোটারি' ভর্তি বাণিজ্য, দলীয় কোটারিতে চাকরি বাণিজ্য- এমনকি বিসিএস পরীক্ষায় ছাত্রলীগ-দলীয় কোটারি বাণিজ্য সকল কালের রেকর্ড পরিমান সাফল্য এই সরকারের আমলে হয়েছে নিশ্চয়ই- তা এই সরকার দাবি করতেই পারে। তবে বেসরকারি ভার্সিটির উন্নয়ন হয়েছে, যদিও এর শুরু হয়েছিল পূর্ববর্তী সরকরের হাত ধরে নব্বই দশকের প্রথম দিকে। তাও দেখছি ৫ জানুয়ারি প্রসবিত সরকার দাবি করছে। সে যাই হোক গত এক দশকে তরুণ-যুব সমাজের যে অভূতপূর্ব উন্নয়ন ঘটেছে তা আর বলার কি অপেক্ষা রাখে ! ডিজে ওয়ালে তরুণ-তরুণীদের কতটা উন্নয়ন ঘটেছে? তার উদাহরণ তো একটা দিলেই মনে হয় যথেষ্ট। যখন পুলিশের গোয়েন্দা শাখার কর্ম কর্তা দম্পতি খুন হন তাদের মাদকাসক্ত তরুণী কন্যার উপর্যপুরি ছুরিকাঘাতে।তখন আর আমাদের বুঝতে বাকি থাকার কথা নয়। এই আধুনিকতার সুবিধাভোগী মধ্যবিত্ত কিংবা নিম্নবিত্তের শিক্ষিত যুবক আর এখন রাস্তায় অহেতুক আন্দোলোনের ঝামেলায় যেতে চায় না কারণ তারা ভাবছে- এই বেশ ভালো আছি। তারা জাতীয় ইস্যু তো দূরে থাক- নিজভাগ্য যেখানে জড়িত সেই ইস্যুতেও এই শ্রেণী নিজেদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে নিরাপদ দূরত্বে রাখে। তাদের এখন ভাবনা হলো সরকার পরিবর্তনের সাথে তাদের ভাগ্যের পরিবির্তনেরই বা সম্পর্কটা কিসের ! চাচা আপন প্রাণ বাঁচা। মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেও কোনোপ্রকার একটা পিওনের নকরি পেলেই তারা খুশি। সরকারের এখানে আরেকটি সাফল্য তাহলো সরকারি চাকর-নকর্দের বেতন-ভাতা দেদার বৃদ্দি।এরপর উপরিসুপরি তো আছেই। জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল ও এর শীর্ষ নেতাদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে নির্মূল করে মূলত বিএনপির নির্বাচনী মিত্র নির্মূল করতে সক্ষম হয়েছে সরকার। এটা মূলত বিরোধী দল নিধনেই সাফল্য বটে। মাঠের আন্দোলনে সরগরম হয়ে গণমানুষের দাবী আদায়ে যখন বিএনপির রাজপথ থাকার কথা।তারপরিবর্তে বেকায়দায় পড়ে দলটি এখন মিলাদ মাহফিল, সাংবাদিক সম্মেলন আর ড্রয়িংরুম পলিটিক্সে সময় ব্যয় করছে। আর কতিপয় নেতা অবৈধ সম্পদ রক্ষায় সরকারের পা লেহন করছে। সর্পোরি সরকারি কঠোরতায় স্তব্ধ দলটি বিভিন্ন ইস্যুতে জনসভা করতে একান্তই সরকারি অনুমতি নির্ভর। কর্মীসভা নির্বিগ্নে করতে সক্ষম হলেও কর্মীদের দলীয় কোন্দল থেমে নাই। সুশীল সমাজ বিরোধীদলকে অথর্ব প্রমানে যথেষ্ট পারঙ্গম হলেও সরকারের ব্যর্থতার সমালোচনা করতে একেবারেই পক্ষাঘাতগ্রস্থ। পৃথিবীর কোনো দেশে এমন আজব গণতন্ত্র আছে বলে শুনিনি।এটা শুধুমাত্র বাংলাদেশেই একই দল সরকার এবং বিরোধীদলের ভূমিকা পালন করছে। এটা স্বৈরিণী প্রযোজিত সুপার-ডুপার গণতন্ত্র-র নতুন সংযোজন। তবে আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে আমরা নজর দিলে দেখতে পাই যে, রাশিয়ার প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় বাসার আল আসাদ সিরিয়ায় রক্তচক্ষু-ক্ষমতা চর্চা করে যাচ্ছে।জীবন- মৃত্যু-ধ্বংস কিংবা রাষ্ট্রের ভৌগোলিক অখণ্ডতা কিংবা স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বেরও কোনো কেয়ার করছে না। উত্তর কোরিয়ার ওয়ার্কার্স পার্টির চেয়ারম্যান কিম ঝং উন যাকেতাকে যখনতখন বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করছে। বাঘের লেজ দিয়ে কান খোঁচাতেও দ্বিধা করছে না।সিংহের ঠাঠা গর্জণও তার কাছে থোরা কেয়ার মাত্র - তার পাশে রয়েছে আরেক পরাশক্তি চীন। [এদিকে আমেরিকার ইচ্ছায় গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে এক বছরের মাথায় উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করে নিয়েছে পরাশক্তির মুখাপেক্ষি সিসি সরকার।] পরাশক্তির এই খেলা থেকে বাংলাদেশও বাদ যায়নি। ৫ জানুয়ারী-২০১৪ পরবর্তী বাংলাদেশ সরকার পার্শ্ববর্তি ভারতের আশ্রিত সরকার তা আমরা সকলে জানি। যেমনটা কিম ঝং উন, বাসার আল আসাদ, সিসি , মালিকি বা কারজাই সরকার পরাশক্তির আশীর্বাদে দীর্ঘদিন টিকে আছে জনমত উপেক্ষাকরে। আরো কিছুদিন হয়তো টিকে থাকবে।বাংলাদেশের বর্তমান সরকারও একই ধারায় এগিয়ে যাচ্ছে। তার পরনির্ভর ক্ষমতা নিয়মতান্ত্রিক গণতন্ত্রের বিপরীতে। কিন্তু দীর্ঘ সময়ে টিকে আছে বা টিকে থাকবে আরো কিছু দিন। কিন্তু মৌলিক প্রশ্ন হচ্ছে শেষ রক্ষা হবে তো ! হালে আলামত তো ভালো দেখতেছি না। কতিপয় মন্ত্রীর কথাবার্তা শুনে মনে হয় সরকারের পায়ের তলায় মাটি নেই তা তারা বুঝতে পেরেছেন। পেটোয়া পুলিশ বাহিনী, প্রশাসন যতটা আস্থাশীল , তলে তলে তার চেয়ে নেতা- মন্ত্রীদের আত্মবিশ্বাসে নাভিশ্বাস উঠেছে বেশি বলে মনে হচ্ছে। সৈয়দ আশরাফ সম্প্রতিক তার দলের নেতাদের খাই খাই স্ববাভ পরিহার করে এক 'গ্রে সংকেত' দিয়ে বলেছেন ''ক্ষমতা কিন্তু চিরস্থায়ী নয়''। সরকারের আরেক মন্ত্রী যিনি আবার দলের মহাসচিব ওবায়দুল কাদের নেতা-কর্মীদের হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন ক্ষমতা হারালে অর্জিত ( মূলত চৌর্য উপায়) সম্পদ নিয়ে পালিয়ে থাকতে হবে। এছাড়া মতিয়া চৌধুরী এবং কামরুল ইসলামের মুখে আরো মারাত্মক সংকেত- ক্ষমতা হারালে ''নেতা- কর্মীদের মরতে হবে''। সরকারের মন্ত্রীদের একযোগে হতাশ হবার কারণ কি? উন্নয়নের সাগরে ভাসমান টাইটানিকের নাবিকরা কি তবে ডুবন্ত হিম শৈল খন্ডের নিকট অস্তিত্ব টের পেয়েছেন ?
বিষয়: বিবিধ
১০২৪ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ঠিলে ঠালে চলতে থাকা নেতা কর্মীদের ঘাঁ মেরে জাগিয়ে তুলতেই এমন কথা বলতেছেন লিডাররা। উনারা হয়ত আত্মীয়তার সূত্রে পার পেয়ে যাবেন , কিন্তু উঠতি/পাতি নেতাদের সাফারিংসের কথা মাথায় রেখেই এমনটি বলা।
মন্তব্য করতে লগইন করুন