"উন্নয়নের নৌকা চড়ে গণতন্ত্র দেশান্তরে"

লিখেছেন লিখেছেন হাসনাতের ব্লগ ১৫ এপ্রিল, ২০১৬, ০২:৫৬:৫২ দুপুর



ব্যারিস্টার আবুল হাসনাত তালুকদার

অষ্টম সংসদীয় নির্বাচনের প্রক্কালে বর্তমান সরকার কতিপয় মনোলোভা প্রতিশ্রুতি প্রদান করে সংখ্যা গুরু ভোটারের সমর্থন লাভে সমর্থ হয়। তারা ভোটারদের বোঝাতে পেরেছিল তাদের বিজয় মানেই গণতন্ত্রের বিজয়, উন্নয়নের বিজয়, স্বাধীনতার স্বপক্ষীয় শক্তির বিজয়।তাদের বিজয় মানেই হাভাতের খাদ্য আর বেকারের কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা, কর্পোরেট শ্রেনীর উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় ডিজিটাল সংযোজন।তাদের বিজয় মানে মৌলবাদের বদ্যভূমিতে ধর্মনিরপক্ষ মহীরুহের পুনুর্জন্ম। তাদের বিজয় মানে ক্রসফায়ারের অপমৃতু কিংবা দূরনীতির অবসান।আশাবাদি মানুষ স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসে। তারা চায় এমন একটি দেশ যেখানে শাসক হবে শাসিতের পরম আততীয়, দেখতে হবেনা তার রক্তচক্ষু কিম্বা চরিত্রগতভাবে সে হবেনা ভাম্পায়ার গোত্রীয়। জনগণ তাদের আশ্বাস এ বিশ্বাস স্থাপন করলে বিজয় হয় দলটির, আপাততদৃষ্টিতে বিজয় হয় গণতন্ত্রের।

মধুচন্দ্রিমার ঘোর না কাটতেই আশার বীনায় নৈরাসের সুর বেজেউঠে যখন তারা শুনতে পায় দশটাকা কেজি চাল , বিনেপয়সায় সার, নিরবছিন্ন বিদ্যুত, ঘরে ঘরে চাকরির মতো আকর্ষনীয় অথচ অবাস্তবায়নযোগ্য প্রতিশ্রুতি সরকারের নির্বাচনী এজেন্ডাতেই ছিলনা। অথচ এসব অবাস্তবায়নযোগ্য প্রতিশ্রুতির আকর্ষনেই ভোটার কুল প্রলোব্ধ হয়েছিল।নূতন সরকার অচিরেই বোঝতে পারে কালাকানুন বাতিল করাযাবেনা - বন্ধ করাযাবেনা ক্রসফায়ার নামক বিচার বহিঃ ভুত হত্যাকান্ড। ঘরে ঘরে চাকরি নামক মন্ত্রবটিকা গলধকরনে যে নিম্নবিত্তের শিক্ষিত যুবক চাঙ্গা হয়ে উঠেছিলো তার স্বপ্ন ভেঙ্গে খানখান হয় - যখন সে মন্ত্রিমহোদয়ের ঘোষণা শোনে " নম্বর যাই পাক চাকরি দিতেহবে দেখে দেখে কেবল ছাত্রলীগ আর যুবলীগকে।

শিক্ষায় সাফল্য নিয়ে সরকারের মাতামাতির শেষ নেই। পাশের হার প্রায় শতভাগের কাছাকাছি। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এ সরকার দলের একক আধিপত্য। বিরোধী দলের অস্তিত্ব প্রশ্নের মুখে। তবে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এ আন্তদলীয় খুনোখুনি আর গণহারে পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাস হওয়ায় শিক্ষা নিয়ে সরকার সাফল্য দাবী করলেও অভিভাবকের জন্য এসবই দুর্ভাবনার বিষয়।" আমার সরকারে কোনো দুর্নীতিবাজ মন্ত্রি নেই" এটি সরকার প্রধান গর্বভরে উচ্চারণ করলেও আর্থিক খাতে ডাউস সাইজ কেলেঙ্কারীর পর জনগণ আর ভরসা পায়না। আর্থিক লেনদেনে দুর্নীতি, ক্রয়-বিক্রয়ে দুর্নীতি, ব্যাঙ্কলোন সংক্রান্ত দুর্নীতিতে মানুষ গা সওয়া হলেও কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক লোপাট একান্তই নূতন ধারণা।

বর্তমান সরকার ও তার দলের প্রথম ও প্রধান প্রতিশ্রুতি ছিলো গণতন্ত্রের বিকাশ ও তার স্থিতিশীলতা বজায় রেখে জীবনমানের প্রভূত উন্নন সাধন। অথচ গত সংসদ নির্বাচনে ১৫৩ জন সাংসদ বিনা ভোটে পারপাওয়া , পরপর সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, উপজেলা পরিষদ কিংবা হালের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন দেখে বোঝার উপায় নাই দেশে আদৌ গণতন্ত্রের সিটেফোটাও অবশিষ্ট রয়েছে । স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে যে দলটির জন্ম হয়েছিল বলে দাবি করা হয়, সেই দলের সরকার এখন বলছে গণতন্ত্র গণতন্ত্র বলে মুখে ফেনা তুলে লাভ নেই, উন্নয়নতো দিচ্ছি। অথচ এমন স্লোগান একদার সৈরশাসক আয়ুব খান কিংবা এরশাদকেই মানায়।

রাজকোষ ভরেগেছে রিয়াল, ডলার, পাউনড কিংবা ইউরোতে। এ নিয়ে সরকারের গৌরব গাথা শুনতে শুনতে ক্লান্ত আপামোর জনসাধারণ। কিন্ত রাজভান্ডার ভরপুরে অবদান রাখা সেই গার্মেন্টস এর ভাই বা বোনটি, মরুর বুকে তপ্ত বালিতে জীবন খোওয়ানো যুবক , উন্নত জীবনের হাতছানিতে ইউরোপ পাড়িদিতে গিয়ে ভূমধ্য সাগরে ডুবে যাওয়া ভাগ্যাহত যুবকটির পরিবারের উন্নয়নে সরকারের অবদান কতটোকু? রানাপ্লাজার দূর্ঘটনা বা দেশে বিদেশে বিপদগ্রস্থ শ্রমিকদের কল্যাণে সরকারের ভমিকা কতটুকু? গরিবের ভাগ্য লালনে প্রতিশ্রুত সরকার এখন এলিট লালনে ব্যাস্ত।

জোট আমলের বিদ্যুত কেন্দ্রিক বের্থতার বিপরীতে হাল সরকারের প্রতিশ্রুতি ছিল মনোলোভা। বিদ্যুৎ উত্পাদন বেড়েছে বৈকি - তবে কুইক রেন্টাল ঠিকাদারের আয়ের সাথে তার বেড়ে উঠার প্রতিযোগীতাকে বড় বেশি বেসামাল মনেহয়। তাইতো বিদ্যুত এর বাড়তি চাহিদার মূল্য মেটাতে হিমশিম খায় কৃষক, শ্রমিক, আর স্বল্প আয়ের মহনতি মানুষ। সরকারের কুইক রেন্টাল ব্যাপক সমালোচনায় পরেছে। তার বিপরীতে দীর্ঘস্থায়ী বিদ্যুত উত্পাদনের পদ্ধতি হিসাবে দিনাজপুর পারমানবিক বিদ্যুত উত্পাদন কেন্দ্র , রামপালের কয়লা বিদ্যুত উত্পাদনকেন্দ্র, বাশখালী কয়লা বিদ্যুত উত্পাদনকেন্দ্র, নির্মানে সরকার বদ্ধ পরিকর। ঝুকিপূর্ণ ও পরিবেশ অবান্ধব পারমানবিক বিদ্যুত উত্পাদন প্রকল্প ইতিমধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ বন্ধ করতে দিচ্ছে। রামপালের কয়লা বিদ্যুত উত্পাদন প্রকল্প ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সুন্দরবনের জন্য প্রমানিত হুমকি আর বাশখালী কয়লা বিদ্যুত উত্পাদন প্রকল্প নিয়ে খুনুখুনি চলছে। অথচ সরকার চাইলে ঝুকিমুক্ত ও পরিবেশ বান্ধব বিবেচিত সৌর বিদ্যুত আর বায়োবিদ্যুত প্রকল্পে অধিক বিনিওগ ঘটিয়ে সহজেই এ সমসার সমাধান করতে পারতো।

দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে এখন আর কেউ কথা বলেনা, সবই গাসওয়া হয়ে গেছে। ক্রসফায়ারে মানুষ মরছে , রাস্তাঘাটে দূর্ঘটনায় মানুষ মরছে, ছিনতাই ডাকাতির কবলে পরে মানুষ মরছে, চিকিত্সার ভুলে মানুষ মরছে। রাস্তাঘাটে কিংবা পুকুর ডোবায় মানুষের লাশ পাওয়া যায়।পর্বত প্রমাণ অপমৃতু ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার লাগাম টেনে জন্ম নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হিসাবে কাজ করছে। ধর্ষণ নিয়ে এখন আর কেউ মাতামাতি করেনা, অসহায় মা - বোনদের জন্য এটি এখন উপভোগ করার বিষয় যতক্ষণ না তা হত্যাকান্ডে পরিণত হয়। ধর্ষণের বিচার চাইতেগিয়ে পূনরায় ধর্ষিত হবার পরিসংখানও কম নয়।

সরকার রেমিটেন্স নিয়ে গর্ববোধ করে। অথচ রেমিটেন্সের যোগানদাতা ইইউ, মিডল ইস্ট কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সরকারের সম্পর্ক ক্রমান্নয়েই শীতল থেকে শীতল হচ্ছে। রাশিয়ার সাথে অহেতুক মাখামাখিতে দুবাইকে হাতছাড়া করার কোনো মানে হয়না। আমাদের গার্মেন্টস, পাটজাত দ্রব্য , হিমায়িত খাদ্য পণ্য সহ সকল রপ্তানি পন্যের প্রধান খরিদ্দার ইইউ ও যুক্তরাষ্ট্র হলেও বিভিন্ন ইস্সুতে তাদের সাথে অবণত সম্পর্ক উন্নয়নে সরকার কাজ করছে বলে মনে হয়না। সরকার প্রায়শই পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রে বলিষ্ট ভূমিকার কথা বলে এটি নিসন্দেহে ভালো। নিজস্ব স্বকীয়তা বজায় রেখে একটি জাতি মাথাতোলে দাড়াতে চেষ্টা করবে এটিতো স্বাভাবিক। প্রতিবেশী দেশের সাথে আমাদের ব্যাপক বানিজ্য ঘাটতি মোকাবেলায় সরকার দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতে অক্ষম। কিন্তু গ্লোবাল যুগে পারস্পরিক লেনদেনে বার্গেইনিং পজিশন না থাকলে দেশ ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এতকিছুর পরও সরকারের দাবী দেশ এখন উন্নয়নের সাগরে ভাসছে।

উন্নত ভৌত অবকাঠামো ও সার্বিক নাগরিক সুবিধা তখনই উপভোগ্য হয়ে উঠে যখন কোন রাষ্ট্রে আইনের শাসন বিদ্যমান থাকে, গণতান্ত্রিক পরিবেশে নির্ভয়ে নিজের মতামত প্রদান করতে পারে, শাসকের সমালোচনা করতে পারে। পরমত সহিসনতাকে বৃদ্ধ আঙ্গলি প্রদর্শন করলে , ভিন্নমত পোষণ করাকে রাষ্ট্রদ্রোহিতার সামিল বিবেচনা করলে, কথায় কথায় বিরোধীদলকে পদর্দুস্তু করলে, শান্তিপূর্ণ মিছিল সমাবেশে আগ্নেয়াস্র ব্যাবহৃত হলে, অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত না হলে রাষ্ট্র যতই উন্নত হোক, সাধারণ নাগরিকের কিছুই যায় আসেনা। সুতরাং আগে উন্নয়ন পরে গণতন্ত্রের ধারণাগত রাষ্ট্রে গণমানুষ না হয় উন্নয়নের হকদার না পায় গণতন্ত্র - এটিই বিড়ম্বনা।

বিষয়: রাজনীতি

১৩৭২ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

365804
১৫ এপ্রিল ২০১৬ রাত ০৮:০৭
শেখের পোলা লিখেছেন : গণতন্ত্র নয় সাধারন জনগন ভাত চায়৷ গণতন্ত্র গিলতে গিলতে আমাশয় হয়ে গেছে৷ ধন্যবাদ৷
365813
১৫ এপ্রিল ২০১৬ রাত ০৮:৩৬
হাসনাতের ব্লগ লিখেছেন : গণতন্ত্র না থাকলে জনগণ ভাত চাইবে কার কাছে ?

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File