ঘুষ বৈধ হবার নেপথ্য কারন ও জাতিস্বরের প্রতিক্রিয়া
লিখেছেন লিখেছেন হাসনাতের ব্লগ ১০ ডিসেম্বর, ২০১৪, ০৯:১৪:১০ রাত
" হাসনাত"
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বঙ্গ ভবন। মাননীয় প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ক্যাবিনেট মিটিং চলছে। মিটিংয়ে উপস্থিত রয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, মন্ত্রী শেখ সেলিম, সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত, সাহারা খাতুন, কামরুল ইসলাম, মায়া, লতিফ সিদ্দিকি। আর বিশেষ বিবেচনায় জাতির পক্ষে উপস্থিত রয়েছে জাতিস্বর নামের এক যুবক। শুভেচ্ছা বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বললেন, সভায় সময় মত উপস্থিত হবার জন্য ধন্যবাদ। আপনারা জানেন ঘুষ বিরোধী বক্তব্য দিয়ে আমরা ক্ষমতায় এসেছিলাম। কিন্তু এখন আমাদের বিরুদ্ধেই ব্যাপক ভাবে ঘুষের অভিযোগ উঠছে। বিরোধীদল বলছে আমরা নাকি সরকারী সকল কাজে ঘুষ এবং কমিশন বানিজ্য করছি। বিরোধীদলের এই অভিযোগ মোকাবেলায় কি করা যায় সে বিষয়ে পরামর্শের জন্যই আজকের এই মিটিং ডাকা হয়েছে। আশাকরি আপনারা সকলেই সুচিন্তিত মতামত দিবেন। তিনি জাতিস্বরকে উদ্দেশ্য করে বললেন, তুমি যেহেতু ক্যাবিনেট মেম্বার নও তাই আজকের সভায় তুমি ব্যাক্তিগত কোন মতামত দিতে পারবেনা। তবে তোমার যদি একান্তই কিছু বলার থাকে তবে মিটিং শেষে সুযোগ দেওয়া হবে, তখন বলবে।
প্রধানমন্ত্রী প্রথমেই বক্তব্য দেবার জন্য শেখ সেলিমকে আহবান করলেন। শেখ সেলিম বলতে শুরু করলেন, বুবু তোমাকে ধন্যবাদ। তোমার মনে আছে কিনা ওয়ান ইলেভেনের সময় ওরা আমাকে তোমার ঘুষ গ্রহন পদ্ধতি নিয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল। আমি নিরুপায় হয়ে কিছু তথ্য দিয়েছিলাম, যেমন তোমার ঘুষের রেট কত, বিদেশে কিভাবে কমিশন নাও, ঘুষের টাকা কিভাবে লাগেজে বহন কর ইত্যাদি সংক্রান্ত। কি করব বুবু এসব তথ্য না দিলে ওরা আমাকে ঘুমাতে দিচ্ছিলনা। প্রধানমন্ত্রী বললেন, সেলিম পুরান কথা বাদ দাও, বিরোধী দলের অভিযোগ খন্ডাতে কি করা যায় সেটি বল। শেখ সেলিম বলল, বুবু এইটা একধম সহজ কাজ। তুমি জান বিএনপিকে আমরা রাজপথ ছাড়া করেছি, সংসদ ছাড়া করেছি। সামনে ওদেরে দেশ ছাড়া করব ইনশাল্যাহ। ওরা দেশ ছাড়া হলে আমাদের ঘুষ নিয়ে আলোচনার কেউ থাকবেনা। প্রধানমন্ত্রী বললেন, সেলিম তুমিতো গায়ের জোরে কথা বলছ। আমি কৌশলী বক্তব্য চাই।
এবার তিনি সাহার খাতুনকে তার বক্তব্য দেবার জন্য আহবান জানালেন। সুযোগ পেয়ে সাহারা খাতুন বললেন, জননেত্রী আপনি সত্যই বলেছেন, বিএনপিকে হারাতে হলে আমাদের খুবই কৌশলী হতে হবে। আমি একবার জণনিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে তালার প্রসঙ্গ এনে খুবই সমালোচি হয়েছিলাম। তবে আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি বিরোধীদের মুখে আমরা যদি তালা লাগিয়ে দিতে পারি তবে সকল সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, তালাবদ্ধ মুখে ওরা আর আমাদের সমালোচনার সুযোগই পাবেনা।
প্রধানমন্ত্রী বললেন, সাহারা খাতুন আপনার বক্তব্য শুনলাম, তবে আমি আরো বেশী কৌশলী বক্তব্য শুনতে চাই। (এই পর্যায়ে কামরুল ইসলাম হাত তুলল)। প্রধানমন্ত্রী এবার তাকে সুযোগ দিলেন।
কামরুল ইসলাম বলল, জননেত্রী আমি আইনের লোক। আইন দিয়েই সকল সমস্যার মোকাবেলা করতে চাই। যারা আপনার ঘুষ খাওয়া নিয়ে সমালোচনা করে তারা পাকিস্থানী চর, তারা যুদ্ধাপরাধী। আপনি চাইলে তাদের সকলকে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবুনালে বিচার করব, ফাসি দেব, দেখি আমাদের ঠেকায় কে।
বলানেই কওয়া নেই হঠাত লতিফ সিদ্দিকি উত্তেজিত হয়ে উঠল। সে বলল, এসব কৌশল খাটিয়ে শত্রু দমন করার জন্য আমরা মুক্তিযুদ্ধ করিনি। তাছাড়া যে কামরুল যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবুনালের দোহাই দিচ্ছে সে নিজেই তো একজন রাজাকার তার কথা আমাদের শুনতে হবে কেন? দেশ স্বাধীন করেছি আমরা দেশ নিয়ে যদি কিছু বলতে হয় আমরাই বলব, কামরুল নয়। প্রধানমন্ত্রী বললেন ঠিক আছে মিয়া ভাই আপনার প্রস্তাবটা বলেন। লতিফ সিদ্দিকি বলল, হ্যাঁ বলছি, আজ থেকে আর কোন নির্দেশ দেবনা। যারাই আমাদের বিরোদ্ধে ঘুষ নিয়ে কিছু বলবে তাদের ঘড়ে ঢুকে হত্যা করতে হবে। আমার প্রস্তাবটি নির্দেশ আকারে জারী করে দেখুন কাজ হয় কি না।
লতিফ সিদ্দিকির প্রস্তাব শুনে মায়া খুবই উত্তেজিত হয়ে উঠল। সে বলল, লতিফ ভাই সিনিওর মানুষ, তার প্রস্তাবটি খুবই যুক্তিযুক্ত। তবে এ ব্যাপারে আমারও কিছু নিজস্ব চিন্তা ভাবনা আছে। প্রধানমন্ত্রী বললেন, মায়া ভাই বলেন কি বলতে চান। এবার মায়া বলতে লাগল, মুক্তিযুদ্ধ করেছি আমরা, দেশ স্বাধীন করেছি আমরা, এদেশে সবকিছু করার অধিকার আমাদের রয়েছে। লতিফ ভাই ঠিকই বলেছে, প্রয়োজনে আমরা আমাদের সমালোচনাকারীদের হত্যা করতে পারি। আর এজন্য প্রধানমন্ত্রী আপনাকে একটি ছুট্ট কাজ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বললেন, কি কাজ? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি জানেন র্যাবের তারেক আমার মেয়ের জামাই। গত আন্দোলনে সে বিরোধী দলের মানুষ খুন করেছে পাখির মতো। কিন্তু ভুল সিগন্যালে আপনি তাকে বরখাস্ত করেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনাকে কথা দিতে পারি আমার মেয়ের জামাই যদি চাকরি ফেরত পায়, তবে আপনার সমালোচনাকারী দমনে সে একাই যথেষ্ট। প্রধানমন্ত্রী বললেন, মায়া ভাই আমি বুঝতে পেরেছি দেখি ছেলেটির জন্য কি করা যায়।
বাবু সুরঞ্জিত আমি যতদূর জানি আপনি খুবই অভিজ্ঞ এবং দক্ষ মানুষ। আমি এখন আপনার সুচিন্তিত মত শুনতে চাই। বললেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর আহবান পেয়ে বাবু কয়েকটা কাশি দিলেন, মনে হয় গলা পরিস্কার করলেন। এবার তিনি বলতে শুরু করলেন, ঘুষ দেওয়া এবং নেওয়া একটি সাংবিধানিক অধিকার। যখন আমরা সাংসদ হিসাবে নির্বাচিত হয়ে যাই, তখন ঘুষ খাওয়ার সহজাত অধিকার ও ক্ষমতা দুটোই লাভ করি। সুতরাং ঘুষ বিষয়ে বিরোধীদল কি বলল তাতে আমাদের কিছুই যায় আসেনা। তবে যেহতু আমরা সংসদে পাঁচ ষষ্ঠাংশ সংখ্যা গরিষ্ঠ সুতরাং আমরা একটি আইন করতেই পারি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চাইলে আমরা আইন করে বলে দিতে পারি অদ্য হইতে বাংলাদেশে ঘুষ বিষয়ে আলোচনা করা অবৈধ, বেআইনী ও দন্ডনীয় অপরাধ। প্রধানমন্ত্রী বললেন বাবু আপনার প্রস্তাব মন্দ নয়। সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরেই তো আমরা অনেক কিছু করতে পারি, গায়ের জোর খাটাবার দরকার কি? তবে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবার আগে আমরা আরো এমন একজনের একজনের মন্তব্য যিনি ব্যাংক কেলেংকারী, শেয়ার বাজার, পদ্মা সেতু কেলেংকারী সব কিছুকে রাবিশ ও ভোগাস বলে উড়িয়ে দিয়ে আমাদের মান রক্ষা করেছেন। জি হ্যাঁ মিঃ মাল আপনি কিছু বলুন।
ধন্যবাদ প্রধানমন্ত্রী। এতক্ষন যাবত যতসব রাবিশ আর ভোগাস কথা শুনতে শুনতে আমি ক্লান্ত হয়ে গেছি। একেক জনের কি বুদ্ধি ঘুষের সমালোচনা বন্ধে হুরুহুরি, খুনুখুনি,কোর্ট-কাচারী করতে চায়। রাবিশ কাল বিড়াল সংবিধান সংশোধন করতে চায়, যত সব ভোগাস। ঘুষ সংশোধন করতে এতকিছু (তিনি একটু উত্তেজিত) করতে হয় নাকি? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আজ থেকে বাংলাদেশে ঘুষ বলে কোন শব্দ থাকবেনা। সরকার প্রধান থেকে শুরু করে যে কোন পর্যায়ের ব্যাক্তি যদি কোন ফাইল বাবদ উপরি দাবী করেন সেটিকে ঘুষ বলা যাবেনা, সেটি হবে স্পিড মানি। এভাবে আমরা যদি ঘুষকে সঙ্গায়িত করতে পারি তবে আমাদের পকেট যেমন ভরবে ঠিক তেমনি এটি আইন সিদ্ধও হবে, কি বলেন আপনারা? প্রধানমন্ত্রী বললেন, প্রস্তাবটির পক্ষে যারা আছেন তারা হ্যাঁ বলুন আর যারা বিপক্ষে তারা না বলুন। সবাই হ্যাঁ এর পক্ষে হাত উঠালো। জাতিস্বর না এর পক্ষে হাত উঠাতে চেষ্টা করতেই প্রধানমন্ত্রী তাকে মনে করিয়ে দিল, জাতিস্বর তোমার হাত উঠাতে হবেনা তোমার ভোটাধিকার নেই। সবাই হ্যাঁ এর পক্ষে হাত উঠানোয় প্রধানমন্ত্রী হ্যাঁ কে বিজয়ী ঘোষনা করলেন। এবার তিনি জাতিস্বরের দিকে মিটিমিটি হেসে বললেন, বুঝলে জাতিস্বর এখন থেকে আমার রাজ্যে ঘুষ বলে কিছু থাকবেনা। কাজের বিনিময়ে আমরা জণসাধারন থেকে যা নেব সেটা সার্ভিস চার্জ বা স্পিড মানি। আমাদের নতুন ঘোষনাটি নিয়ে তোমার কোন ভাবনা থাকলে বলো, আমি শুনছি।
জাতিস্বর বিনীত ভাবে বলল, জ্বী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমি কিছু বলতে চাই। ঠিক আছে বলো। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি জানেন, রাষ্ট্রীয় সকল কাজে ঘুষ আদান-প্রদান এখন কোন বিষয়ই নয়। আদালত, পুলিশ, টেক্স, কাষ্টমস্, ভূমি, শিক্ষা, স্বাস্থ ও বিচার সহ এমন কোন খাত নেই যেখানে আমরা জনসাধারন ঘুষ দেইনা। তবে বিভিন্ন ঘাটে ঘাটে ঘুষ দিয়ে আমাদের এখন পকেট শুন্য, হাত শুন্য। তবে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশতো আর অমান্য করা যায় না। তাই বলছিলাম কি প্রধানমন্ত্রী আপনি যদি অর্থমন্ত্রী মহোদয়কে পাজামা খুলে পশ্চাৎদেশ উন্মুক্ত করতে বলতেন, তবে আমি কিছুটা থুথু দিতে পারতাম ঘুষ হিসাবে। রসিক প্রধানমন্ত্রী বললেন, জাতিস্বর তুমি যেহেতু আমার নির্দেশ মেনেছ তাই তোমাকে আমি নিরাস করবনা। তুমি মনের আনন্দে থুথু মারো অর্থমন্ত্রীর পশ্চাদে এটাই যে ওর প্রাপ্য।
বিষয়: বিবিধ
১৪৩৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন