জাতীয়তাবাদের ভুল ও এক ইবলিশের পূনঃ জন্ম
লিখেছেন লিখেছেন হাসনাতের ব্লগ ১৯ আগস্ট, ২০১৪, ০৯:৫৫:১৭ রাত
।।ব্যারিস্টার হাসনাত তালুকদার ।।
মহান আল্লাহ মানবজাতি সৃষ্টির বহুপূর্বে জ্বিন জাতি সৃষ্টি করেন তার ইবাদত বন্দেগী করবার জন্য। একসময় জ্বিন জাতি আল্লার ইবাদত বন্দেগী ভুলে যায়। তারা পার্থীব লোভ-লালসায় ডুবে গিয়ে পরস্পর পরস্পরের সাথে মারামারি-হানাহানিতে লিপ্ত হয়।আল্লাহতায়ালার পথে ফিরে আসার সমস্ত আহবান বিফলে যায়।একপর্যায়ে মহান আল্লাহ তাদের প্রতি ভীষন রুষ্ট হন এবং ফেরেশতাদের আদেশ প্রদান করেন যাতে তাদের ধ্বংস করে দেওয়া হয়। মহান আল্লাহর আদেশ এমন ছিল যে, জ্বিনদের জগৎ যেন সম্পূর্ন ভাবে ধ্বংস করে দেওয়া হয়, একটি জ্বিন শিশুকেও যেন জীবিত পাওয়া না যায়। ফেরেশতারা কখনো আল্লার আদেশ বরখেলাপ করেনা। তারা আল্লার আদেশ অক্ষরে-অক্ষরে পালণ করতে জ্বিন জগতের উপর ধ্বংসজগ্গ চালায়। একপর্যায়ে আবাস স্থল সহ আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সকল জ্বিন ধ্বংস হয়ে যায়। ফেরেশতাগণ খুজতে থাকে আর কোন জ্বিন অবশিষ্ট রয়েছে কিনা যে তখনও মারা যায়নি। অনেক খুজতে খুজতে একটি ফুটফুটে জীবিত জ্বীন শিশু পাওয়া যায়। সুশ্রী,নিরীহ ও অত্যন্ত মায়াবী চেহারার জ্বিন শিশুটিকে দেখে কিছু ফেরেস্তার দয়া হল। তারা প্রস্তাব করল এই জ্বিনটি হত্যা না করে মহান আল্লাহর দরবারে নিয়ে যাওয়া হোক। বাকী ফেরেশতাগণ দ্বিমত পোষন করে বলল, একে হত্যা করতে হবে, কারন তা না করা হলে আল্লাহতায়ালার নির্দেশ অমান্য করা হবে। বাদানুবাদের এক পর্যায়ে ফেরশতাগণ একমত হল জ্বিন শিশুটিকে জীবিত অবস্থায়ই আল্লাহর সম্মুখে হাজির করা হবে। কথামতো জ্বিন জাতি ধ্বংস করে তারা মহান আল্লাহর দরবারে ফেরত গেল। আল্লাহ তাদের জিজ্ঞাসা করলেন সমস্ত জ্বিন জাতি সমূলে ধ্বংস করা হয়েছে কিনা।মহান আল্লাহর এমন জিজ্ঞাসায় ফেরেশতাগন জানাল একটি মাত্র জ্বিন শিশু ছাড়া সমস্ত জ্বীন ধ্বংস করা হয়েছে। কিন্তু তাদের এমন উত্তরে মহান আল্লাহ অসন্তষ্ট হয়ে আবার জিজ্ঞাসা করলেন একটি জ্বিন তারা বাচিঁয়ে রাখল কেন? ফেরেশতাগন জানাল এটি খুবই নিরীহ, শান্ত এবং মায়াবী তাই তারা একে হত্যা না করে সাথে নিয়ে এসেছে। তারা মহান আল্লাহকে আরো বলল, অনুমতি পাওয়া গেলে তারা এই জ্বিন শিশুটিকে তাদের সাথে লালন-পালন করবে। আল্লাহতায়ালা অসন্তুষ্ট হয়েও ফেরেশতাদের আবদার মেনে নিলেন।জ্বিন শিশুটি ফেরেশতাদের সাথে লালিত-পালিত হতে থাকল। ফেরেশতাগণ যেমন সদা আল্লার ইবাদতে মশগুল থাকে, সেও তেমনি ইবাদতে মশগুল থাকল। একসময় সে বড় হল এবং এতবেশী আল্লাহর ইবাদত করল যে আসমান-জমিনে এমন কোন জায়গা অবশিষ্ট রইলনা যেখানে সে আল্লাহর ইবাদত করেনি। মহান আল্লাহ তার ইবাদতে সন্তষ্ট হয়ে তাকে ফেরেশতাদের সর্দার নিয়োগ করেন।
মহান আল্লাহ একদিন সমস্ত ফেরেশতাকে ডেকে জানালেন তিনি তার ইবাদত পালন করার জন্য আদম সৃষ্টি করতে চান। ফেরেশতারা বলল আদম সৃষ্টির দরকার কি, তারাইতো যথেষ্ট পরিমান ইবাদত পালন করছে। কিন্তু আল্লাহ তার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মাটি থেকে আদমকে সৃষ্টি করলেন এবং আদমকে সেজদা করার জন্য ফেরেশতাদের নির্দেশ দিলেন।ফেরেশতারা আদিষ্ট হয়েই আদমকে সজদা করল। কিন্তু ফেরেশতাদের সর্দার সেই জ্বিন শাবক আদমকে সেজদা করতে অপারগতা প্রকাশ করে জানাল আগুনের তৈরী জ্বিন হয়ে সে মাটির আদমকে সেজদা করবে কেন? আল্লাহতায়ালা তখন তাকে কিছু প্রশ্ন করল যার উত্তর তার জানা ছিলনা। কিন্তু একই প্রশ্ন মাটির আদমকে জিজ্ঞাসা করা হলে সে আল্লাহর কুদরতে গরগর করে সব প্রশ্নের উত্তর দেয়। আল্লাহ তখন জ্বিনকে বলে তোমাকে আমি আগুন থেকে সৃষ্টি করেছি আর আদমকে সৃষ্টি করেছি মাটি থেকে। কিন্তু জ্ঞান-গরিমায় সে তোমার চেয়ে উত্তম, তাই আমার নির্দেশ তুমি তাকে সেজদা কর। কিন্তু সে তখনও আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করল। ফেরেশতাগন তাকে অনুরোধ করল, কিন্তু সে সবার অনুরোধ অবজ্ঞা করল। এক পর্যায়ে আল্লাহতায়ালা তাকে নির্দেশ করলেন হয় আদমকে সেজদা করো না হয় অভিশপ্ত শয়তানে পরিণত হও। উদ্ধত জ্বিন এ পর্যায়েও আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করল এবং শয়তানে পরিনত হল, যাকে আমরা আজ ইবলিশ শয়তান হিসেবে জানি।দীর্ঘ সময় পর ফেরেশতাগণ বুঝতে পারল কেন সেদিন মহান আল্লাহ নিরীহ-শান্ত জ্বিন শাবকটিকেও হত্যা করতে বলেছিলেন।
১৬ই ডিসেম্বার ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীণ হয়। সদ্য স্বাধীণ দেশটি পূনর্গঠনে তখন অপরিহার্য ছিল শত্রু-মিত্র,ধনী-গরীব, ডান-বাম ভুলে সবাই এক কাতারে এসে কাজ করা। কিন্তু দুঃখজনকভাবে এক শ্রেনীর মানুষের নজীর বিহীন সন্ত্রাস, ধর্ষন, লুটপাট আর অত্যাচারে সাধারন মানুষের স্বাধীতার স্বাদ শুরুতেই তিতা হয়ে যায়। ৭৩ সালে ভোটের অধিকার হরণ করা হয় আর ৭৪ সালে ভাতের অধিকার হারিয়ে দেশবাসী নজীরবিহীন দুর্ভিক্ষের শিকার হন।৭৫ সালে আনুষ্ঠানিক ভাবে বাকশাল গঠিত হয়। আর এসময় থেকেই দেশ চুড়ান্তভাবে আইনের শাসন, ন্যায়বিচার আর মানবাধিকারের অভাববোধ করতে থাকে। হানাহানি-খুনুখুনি-ধর্ষন-রাহাজানি এমন পর্যায়ে এসে উপনীত হয় যে বাংলাদেশটা জ্বিনের রাজ্যে পরিণত হয়, যেখানে জোর যার মূল্লুক তার।অনাহারি মানুষের ক্রন্দন, সন্তান হারা পিতা-মাতার আর্তনাদ, ধর্ষিতার বুক ফাটা টিৎকার আর সম্পদ হারা মজলুমের দীর্ঘ শ্বাসে বাংলাদেশের আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠলে সৃষ্টি কর্তা উৎসাহী হন ফিতনা সৃষ্টিকারী নব্য জ্বিনদের ধ্বংস করতে।এক সময় জাতির জীবনে ১৫ই আগষ্টের সেই ভোর এসে আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা সকল জ্বিন ধ্বংস করে দেয়।জাতি জ্বিনের অত্যাচার মুক্ত হয়ে নতুন করে বাচাঁর স্বপ্ন দেখে। কিন্তু তখনো কেউ জানতোনা ১৫ই আগষ্টের বীর সেনানীদের আয়ত্বের বাহিরে থাকায় বেচেঁ যাওয়া দুটি জ্বিন শাবক তাদের স্বপ্ন পূরনে কতোটা বাধা হয়ে দাড়াতে পারে।
১৫ই আগষ্ট পরবর্তি সময়ে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ ক্ষমতাসীন হয়।নব্য ক্ষমতাসীনরা মুক্ত চিন্তা প্রতিষ্ঠার নামে জ্বিন সম্রাজ্যে নিষিদ্ধ ঘোষিত সকল পত্রিকা প্রকাশের সুযোগ করে দেয়। সকল দলকে রাজনীতি করার সুযোগ প্রদান করা হয়। গুটি কয়েক অত্যাচারী জ্বিনের প্রান গেলেও বেশীর ভাগ জ্বিন অনুসারীকে গুরু পাপে লঘু শাস্তি প্রদান করে মূল ধারায় রাজনীতি করার সুযোগ করে দেওয়া হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পূর্ববর্তী নাজি পার্টী বা গ্যাষ্টাপুরা আজও জার্মানে নিষিদ্ধ। অথচ একই মাপের অপরাধী হয়েও বাকশাল ও আওয়ামিলীগ নিষিদ্ধ হয়নি বা রক্ষিবাহীনিকে তেমন কোন শাস্তিই পেতে হয়নি।ফলে বাকশালী জ্বিন অনুসারীরা সাময়িক অবদমিত থাকলেও তাদের ঘুরে দাড়াবার চেষ্টা অব্যাহত থাকে। আর এই চেষ্টা প্রথম ধাপে সাফল্য পায় যখন ৮১ সালের মে মাসে, ১৫ই আগষ্টে বেচেঁ যাওয়া জ্বিন শাবকটি দেশে ফেরার অনুমতি পায়।দেশে ফিড়েই কথিত জ্বিন শাবকটি আবারও বাকশালীদের একত্রিকরনে মনোনিবেশ করে এবং দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রের সহায়তায় সে সফলতারও মুখ দেখে।
৭৫ পরবর্তিতে আওয়ামীলীগ ও বাকশাল চিরতরে নিষিদ্ধ হবার কথা ছিল। সকল পত্রিকা প্রকাশের অনুমতি পেলেও বাকশালের মুখপত্র চার পত্রিকা কোন ভাবেই প্রকাশের অধিকার রাখেনা। সকল রাজনীতিবিদ রাজনীতি করার অনুমতি প্রাপ্ত হলেও তোফায়েল, আমু, রাজ্জাক কিংবা সাজেদারা প্রকাশ্য রাজনীতি করার অধিকার রাখেনা। কারন এরাই একদিন বাকশাল সৃষ্টি করে অপরের রাজনীতি করার অধিকার হরণ করেছিল। আর রক্ষীবাহিনী নেতৃত্ব দিয়ে যে তোফায়েল অজস্র মুক্তিযুদ্ধাকে হত্যা করল, সেতো আর বিনা বিচারে পার পেতে পারেনা। সেদিনের ক্ষমতাসীনরা যদি বিচারের বিশ্ব মান বজায় রেখে বাকশালী মতাদর্শ প্রকাশ, প্রচার ও প্রকাশনা নিসিদ্ধ করতো, রক্ষিবাহিনীর অত্যাচারী জালেমদের কঠিন বিচারের মুখূমুখি করত, তবে দেশ পূনরায় জ্বিন শাসনের কবলে পরতোনা।কথায় কথায় কালো আইন জারী হতোনা, ভোট ও ভাতের অধিকার হরণ হতোনা। তুচ্ছ কারনে নিজ দেশের নিরস্র জনগণ পুলিশের গুলিতে প্রান নেওয়া গনতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সম্ভব না হলেও নাজী শাসন বা বাকশালী রাজ্যে তা খুবই বাধারন ব্যাপার। সেদিনের সামান্য ভুল বা উদাসীনতায় সংগঠিত হবার সুযোগে জ্বিন শাবকটি আজ পরিক্ষ ইবলিশ, তার অত্যাচার সইতে হবে এটিই তো স্বাভাবিক।
বিষয়: রাজনীতি
১৮৫০ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন