জন্ম-মৃত্যু-উৎসব ও একটি তারিখ- ১৫ই আগষ্ট

লিখেছেন লিখেছেন হাসনাতের ব্লগ ১৪ আগস্ট, ২০১৪, ০৫:৩৯:১৬ বিকাল

“ব্যারিস্টার হাসনাত তালুকদার”

একটি বিশেষ ঘটনার উল্লেখ করে আমার আজকের লেখাটি শুরু করতে চাই । বর্তমান বিশ্বে এমন একজন মানুষ খুজে পাওয়া দুষ্কর যিনি লৌহ মানবী খ্যাত, মার্গারেট হিলদা থ্যাচারের নাম শুনেননি । পুরো আশির দশক তিনি যুক্তরাজ্য শাসন করেছেন অত্যন্ত সাহসিকতা এবং দক্ষতার সাথে । তার শাসন কালেই বৃটেনের অর্থনীতি ঘোরে দাড়াতে শুরু করে । তিনি রুগ্ন শিল্প-কারখানা গুলো বন্ধ করে দেন । তার শাসন কালের সুনাম সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পরেছিল । সেই মার্গারেট থ্যাচার যখন ৮ই এপ্রিল ২০১৩ সালে মারা গেলেন, বৃটেন বাসী শোকে মূহ্যমান হল । কেউ কেউ চোখের জল ফেলল। যেদিন তার শেষ বিদায়ের দিন ধার্য হল সেদিন একটি বিশেষ ঘটনা ঘটে । একদল মানুষ তার শেষ কৃত্যের একই দিনে নাচ,গান সহ বিশেষ আনন্দ উৎসবের আয়োজন করে ।

খবর নিয়ে জানা গেল এই আনন্দ উৎসবে অংশ গ্রহনকারীরা সেই সকল ব্যাক্তি এবং তাদের উত্তরসূরী, যারা থ্যাচার আমলে শিল্প-কারখানা বন্ধ হবার কারনে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল । দাবী অনুযায়ী, চাকুরী হারিয়ে তারা স্ব-পরিবার মানবেতর জীবন যাপন করেছে । তারা মনে করে তাদের এই বেকারত্ত্ব, দুঃখ-দূর্দশা,হতাশা আর অর্থনৈতিক দৈন্যতার জন্য দায়ী মার্গারেট থ্যাচারের ভ্রান্ত নীতি তথা তিনি নিজে । যে কারনে ঐ শ্রমিক শ্রেনী এবং তাদের উত্তরসূরীরা মনে করে থ্যাচারের মৃত্যুর দিনটি তাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের একটি দিন । আর আনন্দের বহিঃপ্রকাশ ঘটাতেই তাদের এই আয়োজন । মার্গারেট থ্যাচার যে টুরী দলের নেতা ছিলেন তার প্রিয় সেই দলটিই এখন রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠীত । সরকার ইচ্ছে করলে আনন্দ উৎসব পালনে নিষেধাজ্ঞা জারী করতে পারত, কিন্তু তারা সেটা করলনা । বরং প্রতিবাদীরা যাতে জনজীবনে নুন্যতম ব্যাঘাত ঘটিয়ে তাদের উৎসব পালন করতে পারে সে জন্য সম্ভব সব ধরনের ব্যবস্থা সরকার তরফে নেয়া হয় । জাতীয় নেতার শোক কৃত্য আর তার মৃত্যুতে আনন্দে আত্মহারা প্রতিবাদীদের আনন্দ উৎসব পালন হয়েছে একই দিনে এবং একই সরকারের ব্যাবস্থাপনায় । শোক কৃত্য আর উৎসব পালনকারী দুপক্ষই তাদের কর্মসূচি পালন করেছে একে অপরের কর্মসূচির ব্যাঘাত না ঘটিয়েই । গণতান্ত্রিক দেশে সকল শ্রেনীর মানুষ তাদের মত প্রকাশে সমান সুযোগ ভোগ করবেন এটাই গণতন্ত্রের মূল মন্ত্র ।

এবার আসি আমার লেখার মূল আলোচনায় । ১৯৭৫ সনের ১৫ই আগষ্ট তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিব স্ব-পরিবারে মিলিটারী ক্যুতে নিহত হন । সেই দিনটি স্বরণ করে আওয়ামিলীগ প্রতি বৎসর ১৫ই আগষ্ট শোক দিবস পালন করে । শোক দিবসের কর্মসূচির মধ্যে থাকে বিভিন্ন শ্রেনী-পেশার মানুষ থেকে উঠানো চাঁদার টাকায় বিরানী ভূজ,সাংস্কৃতিক উৎসব,ব্যান্ড পার্টি বা কখনও উঠানো চাঁদার টাকার ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে মল্লযুদ্ধ । অথচ যে দিনটি তারা পালন করতে পারত কোরান খতম,মিলাদ পাঠ,কাঙ্গাল ভূজ আর তাদের নেতার জীবন ও কর্মের উপর বিশেষ আলোচনা সভা আয়োজনের মধ্য দিয়ে । যাই হোক দিনটিকে তারা তাদের মতো করেই পালন করে । এতে তাদের আনন্দ উৎসবে পরিণত হওয়া শোক সভা নিয়ে কেউ উচ্চবাচ্য করেনা । তাহলে আর সমস্যা কোথায় ? সমস্যা আছে, এবার সেই সমস্যা বিষয়ে আসছি ।

১৫ই আগষ্ট দিনটি ঘটনা ক্রমে বেগম জিয়ার জন্ম দিন । কাজেই বেগম জিয়ার দল বিএনপি এই দিনটি পালন করে তাদের মতো করে । দলের নেতা কর্মীরা কেক কাটে,প্রিয় নেতাকে ফুলের তূরা উপহার দেয় । অনুষ্ঠান বলতে মোটামুটি ওই টুকুই, যেখানে কোন বাড়াবাড়ির লেশমাত্র থাকবার কারন নেই । কিন্তু বেগম জিয়ার জন্ম দিন কে ঘিড়ে আওয়ালীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা কর্মীর মাথা ব্যাথার শেষ নেই । তারা বলতে চায় ১৫ই আগষ্ট দিনটি বেগম জিয়ার জন্ম দিন নয়, আর প্রকৃত পক্ষে জন্ম দিন হলেও তা পালন করা উচিত নয় । কারন সেদিন তাদের প্রিয় নেতার নির্মম মৃত্যু হয়েছিল । দলের অনেক নেতা কর্মীর মত মতিয়া, হানিফ এবং সজিব জয়ও বেগম জিয়ার জন্ম দিন উৎযাপন নিয়ে বিভিন্ন সময় সামাজিক মাধ্যমে তার অসন্তুষ্টির কথা প্রকাশ করেছে । এখন প্রশ্ন হল বেগম জিয়া ওই দিনটি তার জন্মদিন হিসাবে পালন করতে পারেন কিনা, কিংবা সজিব জয়রা তাকে জন্মদিন পালনে কোন প্রকার বিধি নিষেধ আরোপ করতে পারেন কিনা ?

সজিব জয় দাবী করে সে একজন হার্বার্ড গ্রাজুয়েট । তার মানে সে পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত । সে সব সময় মত প্রকাশের স্বাধীনতার কথা বলে । তবে মত প্রকাশের স্বাধীনতা বলতে কেবল সজিব জয় বা তার মায়ের দল আওয়ামিলীগের মত প্রকাশকে বুঝায় না বরং দেশের সকল দলের মত প্রকাশকে বুঝায় এটা তাকে বুঝতে হবে । বেগম জিয়ার জন্ম তারিখ ১৫ই আগষ্ট এবং এটি তার পাসপোর্ট থেকে প্রমানীত । তিনি বা তার দল অত্যন্ত ঘরোয়া পরিবেশে দিনটি পালন করে থাকেন । এখানে গুরুত্ব পূর্ন বিষয়টি হল তারা দিনটিকে জন্মদিন হিসেবেই পালন করে । বেগম জিয়া বা তার দল কখনোই বলেননি ওই দিন তারা কেক কেটে আনন্দ করেন, কারন তাদের বিরুধী দলের সাবেক নেতা শেখ মুজিব সেদিন নিহত হয়েছিলেন । আর গণতান্ত্রিক দেশে বেগম জিয়া কেন,একজন নগন্য ফালানীর মাও তার জন্মদিনটি যে নিজের মত করে পালন করার অধিকার রাখেন। কথায় কথায় পশ্চিমা গণতন্ত্র আর ওয়েষ্ট মিনিষ্টার স্টাইলের রেফারেন্স টানা সজিব জয়কে এটা বুঝতে হবে ।

পরিশেষে আর একটি বিশেষ ঘটনার উল্লেখ করেই আমার লেখার ইতি টানব । ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় ৭২-৭৫ আওয়ামী-বাকশালী শাসন আমলে ৪০ হাজার বাম নেতা কর্মী রক্ষী বাহিনীর হাতে নিহত হয়েছিল । অসংখ্য মা বোন রক্ষীবাহিনী এবং বাকশাল নেতাদের হাতে লাঞ্চিত হয়েছিল । বাসন্তীরা পরনের কাপড় না পেয়ে জাল পড়ে লজ্জা নিবারন করেছিল । অসংখ্য মিডিয়া কর্মী সেদিন হত্যা নির্যাতনের শিকার হয়েছিল । চারটি বাদে সকল পত্রিকা বন্ধ করে দেবার কারনে হাজার হাজার মিডিয়া কর্মী চাকুরী হারিয়ে সেদিন পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করেছে । তারা মনে করে এই নির্যাতন, হত্যা, বেকারত্ত্ব, দুঃখ-দূর্দশা,হতাশা আর অর্থনৈতিক দৈন্যতার জন্য দায়ী তৎকালীন বাকশালী সরকার, শেখ মুজিবের ভ্রান্ত নীতি, তথা তিনি নিজে । অত্যন্ত নির্মম হলেও সত্য, সেই সব নির্যাতিত মানুষরা হাফ ছেড়ে বেচেঁছিল শেখ মুজিব নিহত হবার পর, যখন বাকশালী শাসনের অবসান হয় । যে কারনে এই নির্যাতিত শ্রেনী এবং তাদের উত্তরসূরীরা যদি শেখ মুজিবের মৃত্যুর দিনটি তাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের একটি দিন হিসেবে গণ্য করে উৎসব পালন করে তবে তাদের দুষ দেওয়া যায়না। সত্যিই যদি নিহত বাম কর্মী, নির্যাতিত জনগন বা চাকুরী হারানো কর্মজীবিদের বর্তমান বংশধররা এই দিনে উৎসব পালন করতে চায়, সরকারের উচিত তাদের পূর্ন সহযোগীতা করা। ভেংচি কাটা মতিয়া, হাইব্রিড নেতা হানিফ বা সজিব জয়দের উচিত বেগম জিয়ার জন্মদিন পালনকে তার বা তার অনুসারীদের নিজস্ব বিষয় হিসাবে জ্ঞান করা। শেখ মুজিব নিহত হওয়ায় যারা কষ্ট পেয়েছেন, তারা দিনটিকে শোক দিবস হিসাবে পালন করুন। আজ আমার নেত্রীর জন্মদিন। আমি আজ কেক কাটব, অনেক আনন্দে দিনটি পালন করব। মুজিব ভক্তদের উচিত আমার আনন্দ-উৎসব নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে তাদের কাঙ্গালী ভূজে মনোনিবেশ করা।

বিষয়: বিবিধ

২২০২ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

254274
১৪ আগস্ট ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:০৬
কাজি সাকিব লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File