জিয়ার মাজার বগুড়া যাচ্ছে, মুজিব সৌধ কি বঙ্গোপসাগরে?
লিখেছেন লিখেছেন হাসনাতের ব্লগ ২৫ জুলাই, ২০১৪, ০২:৫৮:২৮ দুপুর
।। ব্যারিস্টার হাসনাত তালুকদার ।।
অত্যন্ত অরুচিশীল কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ আজকের আলোচনার জন্য লেখার প্রiরম্ভেই সম্মানিত পাঠকের কাছে ক্ষমা চাইছি। বাংলাদেশের অনেক মানুষের বিবেচনায় শেখ মুজিব হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী, বাঙ্গালী জাতির পিতা, বঙ্গবন্ধু ইত্যাদি ভূষনে ভূষিত হয়েছেন। কিন্তু তার অনেক অতীত কর্মকান্ড বিবেচনায় ব্যাক্তিগত ভাবে আমি তাকে পছন্দ করিনা। তবে মুক্তি আন্দোলনের অন্যতম প্রধান নেতা, একজন সাবেক প্রেসিডেন্ট, সর্বোপরি একজন প্রয়াত নেতাকে নিয়ে কখনো এমন কিছু লিখতে চাইনি যাতে তার অসম্মান হয়। কিন্তু তার দলের অতি অর্বাচিণ নেতৃত্ব যখন আমার চেতনা, বিশ্বাস, ভালবাসা আর অস্তিত্বের স্তম্ভ শহীদ প্রেসডেন্ট জিয়াউর রহমানকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে, তখন তার জবাব দেওয়া অপরিহার্য হয়ে পরে। কারন উগ্র মুজিববাদের এমন ফ্যাসিস্ট আচরনের প্রতিবাদ না করা মানে আমার আদর্শকে হত্যা করা।
জিয়া উদ্যানে অবস্থিত শহীদ জিয়ার মাজারটি এখন আর কোন সাধারন কবর নয়। এটি এখন বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের জন্য একটি তীর্থ স্থানের মত। যে কোন কর্মসূচিতে জাতীয়তাবদের অনুসারিরা দল বেধে, সারিবদ্ধ হয়ে যখন সেখানে যান, তাদের মন আনন্দে ভরে উঠে। তারা সেখানে যান এই কারনে যে, এই কবরেই ঘুমিয়ে আছে তার আদর্শ, রাজনৈতিক বিশ্বাস, চেতনা আর ভাবাসার মানুষটি। ফিড়ে আসেন একবুক ভাললাগা নিয়ে, যা তাকে আগামীর পথ চলতে প্রেরণা দেয়। বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী প্রতিটি মানুষ প্রতিক্ষায় থাকে আবার কখন শহীদ জিয়ার মাজার জিয়ারত করবে।
খবরটি যখন প্রথম শুনলাম, আমি বিশ্ময়ে বাকরুদ্ধ, এটাও কি সম্ভব? একজন স্বাধীনতার বীর সেনানী, মহান স্বাধীনতার ঘোষক, বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি, যিনি তেত্রিশ বৎসর যাবত ঘুমিয়ে আছেন জিয়া উদ্যানে, সেখান থেকে তাকে উচ্ছেদ করা হবে, এমন সিদ্ধান্ত কোন সুস্থ মস্তিষ্কের সাভাবিক মানুষ নিতে পারে এটা বিশ্বাস করা কষ্টকর বৈকি। তবে আমি এখন বিশ্বাস করি আওয়ামিলীগ নামক ফ্যাসিস্ট দলটির পক্ষে সবই সম্ভব। প্রথম যখন বেগম জিয়াকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদের কানাঘুষা শুনা যায়, অনেকেই বিশ্বাস করেনি-এটি কি সম্ভব? কিন্তু প্রতিক্রিয়া তীব্র না হওয়ায় সেই অসম্ভবকে সম্ভব করেছে নব্য ফ্যাসিস্ট আওয়ামিলীগ সরকার। এখন শহীদ জিয়ার মাজার পর্যন্ত ভেনিস করার দুঃসাহসিক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমরা জাতীয়তাবাদীরা তীব্র প্রতিক্রিয়া না দেখাতে পারলে গত ১৭ই জুন অনুষ্ঠিত অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী বৈঠকের অনির্ধারিত আলোচনায় নেওয়া সিদ্ধান্তই বাস্তবায়ন হবে।
প্রবল পরাক্রমশালী হিটলার আজ নেই, তার সমাধীস্থল কোথায় সে প্রশ্ন বিশ্ববাসীর নিকট গৌণ। ইরাকি পার্লামেন্ট সর্বসম্মতিক্রমে সাদ্দাম হোসেনকে আজীবন প্রেসিডেন্ট ঘোষনা করেছিল। কিন্তু তার পরিণতি আমরা জানি। ঠিক তেমনি চল্লিশ বছর পরে হলেও মুয়াম্মার আল গাদ্দাফির সূচনীয় বিদায় হয়েছে। আফ্রিকার বাদশাদের বাদশার করুন মৃত্যু হয়েছে, কবর হয়েছে অচেনা-অজানা জায়গায়। বিশ্ব মোড়ল অ্যামেরিকার হাতের ক্রিড়ানক বিন লাদেন যার ভয়ে একদা রুশ বাহিনী পালিয়ে বাচত, তার ভাগ্যে কবর পর্যন্ত জুটেনি। তাকে প্যাকেটে ভরে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে সাগরের অজানা গভীরে। আজ ভূল করে যিনি মনে করছেন কখনো ক্ষমতা হারাবেন না, তিনি ভুলে যাচ্ছেন সৈরাচারি আচরণের মাত্রা যত তীব্র হয়, তার পরিণতিও তেমন নির্মম হয়।
জিহ্যাঁ, ইতিহাসের স্বতঃসিদ্ধ নিয়ম থেকেই বলা যায়, শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনও একদিন হবে। কারন পৃথিবীতে যা কিছুর শুরু আছে তার শেষ আছে। শেখ হাসিনা যে নির্মম ও পৈচাশিক ভাবে দেশ শাসন করছে, তার বিদায় করুন হতে বাধ্য। যেদিন হাসিনা ক্ষমতা হারাবেন সেদিন তার স্বাধের সুধাসদন থাকবে কি? জাতীয়তাবদীরা যদি প্রতিশোধ পরায়ন হয়, তবে সরকারী দানে গড়ে উঠা ঐ বাড়িটির একটি ইট-কাঠও অবশিষ্ট থাকবার কথা নয়। ঐ স্থানে গড়ে উঠতে পারে বহুতল বিশিষ্ট অনাথ আশ্রম। আর শহীদ জিয়ার মাজারটি বগুড়ায় পাঠাবার মত দুঃসাহস যদি শেখ হাসিনার সরকার দেখায় তখন? জনগনের কষ্টার্জিত অর্থে গড়ে উঠা মুজিব সৌধটিতো গোপালগঞ্জ পাঠানো যাবেনা, কারন ওটা সেখানেই আছে। তবে বেশী বাড়াবারি করলে গরীবের হক লুন্ঠিত অর্থে গড়ে উঠা তিলোত্তমা মুজিব সৌধটি কণ্যার কৃত পাপের ভারে চিরতরে হারিয়ে যেতে পারে বঙ্গোপসাগরে।
বিষয়: বিবিধ
১৮০১ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এটা একদিক দিয়ে বিএনপির জন্য শাপে বর হবে । এতে বিএনপির হোমসিক নেতাগুলো নড়াচড়া করতে শুরু করবে ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন